সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

2014 থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ছুটি

ছোটবেলায় আমার আনন্দের জায়গাগুলো ছিলো খুব সীমিত। একটা আইসক্রিম খেতে পারা, বেলুন কিনতে পারা কিংবা চিউয়িংগাম, অথবা কার্টুনের স্টিকার কেনা...। আর স্কুলের পর সারাদিন বাসায় অলস সময়ে বিভিন্ন ক্র্যাফটস বানানো ! এগুলো করতে করতেই আমি বড় হয়ে গেছি। তারপর… সেই আনন্দের জায়গাগুলি নিয়েই আমি সন্তুষ্ট ছিলাম। আমার সমবয়েসীরা প্রতি ক্লাস উপরে ওঠার সাথে সাথে আর বয়স বাড়ার সাথে সাথে আনন্দের জায়গাগুলোকে বদলাতে লাগলো। সাধ্যের সবকিছুই স্পর্শ করলো তারা। কিন্তু আমি আমার নিজস্ব জগতেই রয়ে গেলাম। এমনি করে কিভাবে যেনো স্কুল পাশ করে ফেললাম, কলেজে ভর্তি হলাম। এসময়েই জানি না কিভাবে আমার আনন্দের জায়গাটা হঠাৎ বদলে গেলো। কিন্তু সেটাও সমবয়েসী আর সবার সাথে মিললো না ! এখনও মেলে না। সবাই যখন নানা রকম খাওয়া-দাওয়া, দেশ-বিদেশ ঘোরা, গান-মুভি-আড্ডা-প্রেম ইত্যাদি ডাইভার্সিফাইড বিষয়ের মাঝে জীবনের আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে, তখন আমি এগুলোতে কোনো আগ্রহই পাই না। গুলশান ক্যাম্পাসে থাকতে প্রায়ই বিভিন্ন ফাস্টফুডে যাওয়া হতো, আর আমার কাছে যে বিষয়টা হাস্যকর লাগতো তা হলো, শুধু “খাওয়ার” উদ্দেশ্যে আমরা সবাই মিলে কোথাও যাচ্ছি। কিংবা খেতে খেতে সবার খ

আশুরা : ভালোবাসা ও যুক্তিতর্ক

আজ ১০ই মহররম (আশুরা)। কারবালার প্রান্তরে দুশ্চরিত্র জালিম শাসক ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার সেনাবাহিনীর হাতে ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর ৭২ জন সাথীর শাহাদাত দিবস। কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা সবারই কমবেশি জানা আছে, এবং এ বিষয়ে ইন্টারনেটে প্রচুর লেখা রয়েছে, যা সার্চ করলেই পাওয়া যাবে। তাই সেই ঘটনার উপর আলোকপাত করছি না। কিন্তু ইয়াজিদপন্থীদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে যারা জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে কারবালার মহিমাকে খাটো করার জন্য নানারূপ কথা বলছেন, বিশেষত এই দিনে শোক পালনের বিরোধিতা করছেন, ইন্টারনেটে তাদের নানামুখী অপপ্রচার ও হৃদয়হীন বাক্যের সয়লাব দেখে কিছু কথা লেখা নিতান্তই প্রয়োজন হয়ে পড়লো। সহজ দৃষ্টিকোণ : কারবালার ঘটনা স্মরণ করে এইদিনে একদল মানুষ শোক প্রকাশ করছে। আরেকদল শোক প্রকাশকারীদের শোক পালনের বিরোধিতা করছে এবং এইদিনে ইসলামের ইতিহাসে আরো কী কী গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দের ঘটনা ঘটেছিলো, তা প্রচার করছে।

জিহাদ আল আকবার : নফসের সাথে যুদ্ধ

জিহাদ আল আকবার : নফসের সাথে যুদ্ধ আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভি আল খোমেইনী অধ্যায় – ০ : বাংলা অনুবাদকের মুখবন্ধ (বইটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন ।) "জিহাদ আল আকবার : নফসের সাথে যুদ্ধ" বইটি ইমাম খোমেইনীর (র.) কিছু নির্বাচিত লেকচারের সংগ্রহ। ইমাম খোমেইনীকে (র.) অধিকাংশ মানুষ চেনে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মহান নায়ক হিসেবে। কিন্তু এর উর্ধ্বে তাঁর যে পরিচয় তাঁকে আল্লাহর কাছে সম্মানিত করেছে এবং আধ্যাত্মিকতায় আগ্রহী ব্যক্তিদের বিস্মিত করেছে, তা হলো : ইমাম খোমেইনী (র.) ছিলেন একজন উচ্চস্তরের আধ্যাত্মিক সাধক। মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে তাঁর আধ্যাত্মিক সম্পর্ক কতখানি গভীর ছিলো, তা পরিপূর্ণ অনুধাবন করতেও বোধকরি উচ্চ তাক্বওয়ার অধিকারী হওয়া প্রয়োজন। তবে ইমাম খোমেইনীর (র.) সম্পর্কে জানেন, এমন ব্যক্তি জিহাদ আল আকবার বইটি পড়লে তাঁকে ভিন্ন আলোকে চিনতে পারবেন, এবং অন্ততঃ এটুকু উপলব্ধি করতে পারবেন যে, তিনি কেবলমাত্র একটি ইসলামী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা-ই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন খোদার একজন প্রকৃত আ'রেফ। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বিশেষ আধ্যাত্মিক সম্পর্ক স্থাপন

বেহেশতের রঙ অথবা শঙ্খচিলের গল্প

এখন ভোর। আকাশের মেঘ দ্রুত সরে সরে যাচ্ছে। সদা জাগ্রত সশব্দ শহরে এটুকুই নীরবতা। এই একই ভোর, আর আকাশের সেই মৃদু আলোতে মেঘেদের দ্রুত পলায়ন  –  এই ঘটনা জীবনে হাজারবার ঘটেছে। কখনো সেটা হয়েছে প্রচণ্ড শীতে পুকুর পাড়ে মাছ ধরা দেখতে দেখতে, কখনো মাটির চুলায় পিঠার হাঁড়ির পাশে, কখনোবা বড়দের সাথে হাত ধরে হাঁটতে বের হয়ে, আর কখনো শিশিরভেজা শিউলি ফুল কুড়াতে গিয়ে। অথবা কাগজ-কলম হাতে অঝোর ধারার বৃষ্টি দেখে দেখে। আর অসংখ্যবার এমন ভোর পার হয়েছে নির্বোধের মতন ঘুমিয়ে। অথচ প্রতিটা ভোরেরই আলাদা রহস্য আছে : বেহেশতের রঙ বয়ে আনে তারা। কিন্তু সোনা-রূপায় বন্দী মানুষ তড়িঘড়ি করে রাত্রির অন্ধকার খোঁজে। হতাশ ফেরেশতারা রঙের ডালি নিয়ে ফিরে যায়। "আয় খোদা ! এরা যে নিজেদের দুনিয়ার রঙে রাঙিয়েছে।" সাত আসমানের ওপারে খোদা আবারো মৃদু হাসেন। পরদিন ভোর হলে ফেরেশতারা আবারো আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন বলতে বলতে দুনিয়ায় আসে। রঙের খরিদ্দার খোঁজে।

তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থনা ও আল্লাহর নিকট পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ

সারকথা : " আপনি কি তাদেরকে দেখেননি , যারা দাবী করে যে , তারা বিশ্বাস করে যা আপনার উপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা আপনার পূর্ববর্তীদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে। ( কিন্তু ) তারা বিরোধের বিষয়ে বিচারের জন্য তাগুতের মুখাপেক্ষী হয় , যদিও তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে একে ( তাগুতকে ) প্রত্যাখ্যান করতে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। " ( – সূরা নিসা , ৪ : ৬০ ) আবদুল্লাহ ইউসুফ আলী : এখানে সাধারণ অর্থে সেসব মানুষকে বুঝানো হয়েছে , যারা নিজেদের হকপন্থী বলে দাবী করে , কিন্তু নিজেদের লাভের জন্য ন্যায়বিচারক নয় , এমন মানুষকে বিচারক মেনে নেয়। ইমাম খোমেইনী : স্বৈরাচারী সরকারের বিচারব্যবস্থা , নির্বাহী ও রাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গ মিলেই হলো " তাগুত " । কারণ তারা শয়তানি আইন তৈরী , প্রয়োগ এবং তাকে বিচারব্যবস্থার ভিত্তি করার মাধ্যমে ঐশী বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। এদেরকে অবিশ্বাস ( প্রত্যাখ্যান ) করতে আল্লাহ আমাদেরকে নির্দেশ করেছেন। ম ুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব : তাগুত ৫ প্রকার , এর মাঝে এক প্রকার হলো আল্লাহর আইন বিরোধী অত্যাচারী শাসক। ( আলোচনাটিকে নিরপেক্ষ

ঐশী গ্রন্থ চেনার উপায় : কুরআনের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য

ঐশী গ্রন্থ চেনার উপায় ও কুরআনের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করার আগে মানুষের চিরন্তন অপূর্ণতা সংক্রান্ত দর্শনের উপর কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন। মানুষের সকল ধর্মচিন্তার মূলে রয়েছে উৎসের সন্ধান। এমনকি ছোট একটি বাচ্চাও কোনো শব্দ শুনলে সেই শব্দের উৎসের সন্ধান করে : শব্দের দিকে মুখ ফিরিয়ে খুঁজতে থাকে – কোথা থেকে শব্দটা এলো ? ঘরের মাঝে অচেনা কোনো জিনিস দেখলে সোৎসাহে সেটার দিকে ছুটে যায় , জিনিসটা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে : ভাবে – কোথা থেকে এলো এই অদ্ভুত জিনিস ? আরো বড় হবার পর জীবনের একটা সময়ে মানুষের মাঝে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা আসে। নিজের উৎসের সন্ধান করতে করতে মানুষ চিন্তা করে যে , দুনিয়ার প্রথম মা ' কে কে সৃষ্টি করেছিলো ? পৃথিবীর প্রথম মানুষটির সৃষ্টি হয়েছিলো কিভাবে ? এই উৎসের সন্ধান মানুষের নিতান্তই মৌলিক চাহিদা। প্রতিদিনকার খাওয়া দাওয়ার চাহিদা পূরণ হওয়া সত্ত্বেও মানুষের মাঝে নিজের উৎসকে জানার চাহিদা বিদ্যমান থাকে। এমনকি দুনিয়ার আরাম - আয়েস , সুখ - শান্তি ইত্যাদি সকল কিছু পাবার পরও দিনশেষে মানুষ অতৃপ্ত থেকে যায়। নিজের উৎস সম্পর্কে না জানা পর্যন্ত সে তৃপ্ত হয় না। ঠিক যেভ

নবী চেনার উপায়

নবী রাসূলগণ আজীবন নিষ্পাপ ছিলেন কিনা , নিষ্পাপ হলেও নির্ভুল ছিলেন কিনা , এই মূল আলোচনা শুরু করার জন্য যে গ্রাউন্ড সেট ( পটভূমি বিস্তার ) করা প্রয়োজন , তাতেই মূল প্রশ্নের উত্তর আলোচিত হয়ে যাবে আশা করি। প্রথম প্রশ্ন হলো : নবী কী ? আলোচনা শুরুর আগে মানুষ ও তার সৃষ্টিকর্তার মাঝের সম্পর্ক ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রথমেই সংক্ষেপে উল্লেখ করা প্রয়োজন। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইচ্ছায় তাঁর সৃষ্টিক্ষমতার স্বাধীন বহিঃপ্রকাশ হিসেবে। মানুষকে পৃথিবীতে থাকতে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষেরই জীবনকাল সীমিত। এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা মানুষের দুনিয়াবি জীবনে তার উপর বিভিন্ন নিয়ম - নীতি ও সীমা আরোপ করে দিয়েছেন , যাকে সার্বিকভাবে কার্যকারণবিধি (cause and effect law, or, law of causality) বলা যেতে পারে। আল্লাহ তায়ালা সকল পজিটিভ ( গুণবাচক , ধণাত্মক ) গুণের অধিকারী , এবং “সীমা” বিষয়টি তাঁর জন্যে প্রযোজ্য নয়। অপরপক্ষে , মানুষ “সৃষ্টি” , অর্থাৎ সৃষ্টবস্তু (created) বলেই সে সীমিত গুণবৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আল্লাহ মানুষকে সীমিত পরিমাণে স্বাধীনতা ( অর্থাৎ স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি অনুযায়ী কাজ করার ক্ষমতা