সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আশুরা : ভালোবাসা ও যুক্তিতর্ক


আজ ১০ই মহররম (আশুরা)। কারবালার প্রান্তরে দুশ্চরিত্র জালিম শাসক ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার সেনাবাহিনীর হাতে ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর ৭২ জন সাথীর শাহাদাত দিবস। কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা সবারই কমবেশি জানা আছে, এবং এ বিষয়ে ইন্টারনেটে প্রচুর লেখা রয়েছে, যা সার্চ করলেই পাওয়া যাবে। তাই সেই ঘটনার উপর আলোকপাত করছি না। কিন্তু ইয়াজিদপন্থীদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে যারা জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে কারবালার মহিমাকে খাটো করার জন্য নানারূপ কথা বলছেন, বিশেষত এই দিনে শোক পালনের বিরোধিতা করছেন, ইন্টারনেটে তাদের নানামুখী অপপ্রচার ও হৃদয়হীন বাক্যের সয়লাব দেখে কিছু কথা লেখা নিতান্তই প্রয়োজন হয়ে পড়লো।

সহজ দৃষ্টিকোণ : কারবালার ঘটনা স্মরণ করে এইদিনে একদল মানুষ শোক প্রকাশ করছে। আরেকদল শোক প্রকাশকারীদের শোক পালনের বিরোধিতা করছে এবং এইদিনে ইসলামের ইতিহাসে আরো কী কী গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দের ঘটনা ঘটেছিলো, তা প্রচার করছে।


একটু ভিন্ন কথা থেকে আসি। নাস্তিকদের দৃষ্টিতে মুসলমানদের অনেক কর্মকাণ্ডই অর্থহীন ও অযৌক্তিক বলে মনে হয়। যেমন : "কবে কোথায় ১৪০০ বছর আগে মুহাম্মদ নামে এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছিলো, আর এখন তার জন্যে মুসলমানরা নিজের জান দিয়ে দিচ্ছে, দুনিয়ার আনন্দ ত্যাগ করে শুধু শুধু কষ্ট করছে।" কিংবা "কোনোদিন চোখে দেখে নাই, কিন্তু লোকের মুখে শুনে শুনে 'আল্লাহর' আদেশ মানতে গিয়ে জীবনের কত স্বাদ-আহ্লাদ থেকে শুধু শুধু নিজেকে বঞ্চিত করছে। এমনকি 'জিহাদ' করতে গিয়ে জান পর্যন্ত দিয়ে দিচ্ছে !"
সত্যিই, একজন নাস্তিক, যে কিনা আল্লাহকে চেনে না, যে কিনা নবীজি মুহাম্মদ (সা.)কে ভালোবাসে না, সে কী করে বুঝবে একজন মুসলিমের হৃদয়ে কতখানি ব্যথা জাগে, যখন মুহাম্মদের (সা.) নামে কেউ কটুক্তি করে ! যে আল্লাহকে চেনে না, সে কী করে অনুভব করবে খোদার আদেশে জীবন বিলিয়ে দেবার ব্যাকুলতা !

এবার ইয়াকুব (আ.) এর কথা বলি। তাঁর পুত্র ইউসুফ (আ.)কে সৎভাইয়েরা কুপের মধ্যে ফেলে দিয়ে এসে পিতাকে বললো যে ইউসুফকে বন্য জন্তু খেয়ে ফেলেছে। সেদিন থেকে ইয়াকুব (আ.) প্রতিদিন তাঁর পুত্রের জন্য কান্না করতে করতে, দুঃখে ও শোকে অন্ধপ্রায় হয়ে যান। সৎভাইদের কাছে নিশ্চয়ই সেটা খুব অযৌক্তিক ছিলো : এভাবে করে হারানো সন্তানের জন্য শোক করতে করতে অন্ধ হয়ে যাওয়া। কারণ ইউসুফ (আ.)কে তাঁর পিতা নবী ইয়াকুব (আ.) যেভাবে ভালোবাসতেন, ঈর্ষাপরায়ণ সৎভাইয়েরা সেভাবে ভালোবাসত না। পিতা তাঁর সন্তানকে যেভাবে চিনতেন, যেই দৃষ্টিতে দেখতেন, সৎভাইয়েরা সেভাবে চিনত না, সেই দৃষ্টিতে দেখত না। সুতরাং, ইউসুফ (আ.) এর জন্য ঈর্ষাপরায়ণ গুনাহগার সৎভাইদের হৃদয়ে কষ্টের অনুভূতি জেগে ওঠেনি। নবী ইয়াকুব (আ.) এর এই কান্নার মর্ম কিভাবে বুঝবে সেই সৎভাইয়েরা ?

পিতা ইমাম হুসাইন (আ.) এর জন্য তাঁর পুত্র ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) এত বেশি কান্না করতেন যে, তার সাথে কেবল ইয়াকুব (আ.) এর অশ্রুপাতেরই তুলনা চলে। তিনি এরপর মৃত্যু পর্যন্ত দিনের বেলা রোজা ও রাতের বেলা ইবাদত বন্দেগীতে পার করেছিলেন। কারবালার প্রান্তরে সংঘটিত নিষ্ঠুরতার স্মরণে তিনি এত বেশি কাঁদতেন যে সেই অশ্রুতে তাঁর দাড়ি ভিজে যেত, খাবারে মিশে যেত সেই অশ্রু।
কতটা ব্যথা, আর হাহাকার থেকে এই কান্না, সেটা কি বুঝবে ইয়াজিদি ইসলামের অনুসারীরা ? বরং একথা শুনে হয়তো তাদের পাষাণ হৃদয় উল্টো প্রশ্ন করবে : " তাহলে কি ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) নিষিদ্ধ দিনগুলোতেও রোজা রাখতেন ?" কিংবা "সারারাত জেগে ইবাদত বন্দেগী করলে আর সারাদিন রোজা থাকলে ঘুমাতো কখন ?" ইত্যাদি...।

..........................................................................................

কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (আ.)কে তাঁর ৭২ জন সঙ্গীসহ নিষ্ঠুরভাবে শহীদ করা হয়েছিলো। পিপাসার পানি বন্ধ করে দিয়েছিলো ইয়াজিদি বাহিনী। তৃষ্ণার্ত ইমামকে হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে। গলায় তীর মেরে হত্যা করা হয়েছে পিপাসার্ত ছোট্ট শিশুকে। ইমামের পবিত্র দেহের উপর ছুটিয়ে দেয়া হয়েছে ঘোড়া...। কর্তিত মস্তক নিয়ে যাওয়া হয়েছে জাহান্নামী ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার দরবারে। লাঞ্ছিত করা হয়েছে ইমাম পরিবারের নারী ও শিশুদের...।

কারবালার প্রান্তরের ঘটনা কেবল এটুকুই নয়। ইমাম হুসাইন (আ.) ও কারবালা যেনো এক দীর্ঘ উপন্যাসের ক্ল্যাইম্যাক্স, যেখানে এসে মুমিন মুসলিমের হৃদয় ভেঙে যায়, চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে, অনুপ্রেরণা আসে শাহাদাতের, সন্ধান মেলে আলোর। এমন এক উপন্যাস, যার শুরু মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মের সময়ে, এবং যে উপন্যাসের শেষ গল্পটি রচিত হবে বহুল প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী (আ.) এর আগমনের মাধ্যমে।

এই উপন্যাসটিই হলো প্রতিটি মুসলিমের জন্য সিরাতুল মুস্তাকিম, অথবা আল্লাহর রজ্জু (৩:১০৩)। যে রজ্জুর শুরুতে আছে ঐশী কিতাব আল কুরআন, এবং যে রজ্জুর বাকিটুকু রচিত হয়েছে আল্লাহর রাসূল (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের (আ.) মাধ্যমে (৩৩:৩৩)। যে রজ্জু আঁকড়ে ধরার কথা নবীজি (সা.) তাঁর বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে বলে গিয়েছেন (হাদীসে সাকালাইন)।

ইমাম হুসাইন (আ.) হলেন সেই পবিত্র আহলে বাইতের (আ.) অন্যতম ইমাম, যে আহলে বাইত (আ.) কখনো কুরআন থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না বলে আল্লাহ রাসূল (সা.) বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে ঘোষণা দিয়ে গিয়েছিলেন। অতএব,
যে মুসলিমেরা রাসূল (সা.) এর মুখের এই নিশ্চয়তায় আস্থা রাখতে পারে না,
যারা কুরআনে ঘোষিত আহলে বাইতের পবিত্রতার উপরে আস্থা রাখতে পারে না (৩৩:৩৩),
যারা আল্লাহ রাসূল (সা.) যা তাঁর নবুওয়্যাতের বিনিময়ে মুমিনদের নিকট দাবী করেছেন (৪২:২৩), সেই ভালোবাসা পোষণ করে না আহলে বাইতের (আ.) প্রতি,
যারা কুরআনের ব্যাখ্যা ও রাসূলের (সা.) সুন্নাহ আহলে বাইতের (আ.) কাছ থেকে গ্রহণ করে না;

বরং যারা আহলে বাইতের (আ.) নিষ্পাপ ইমামগণের (আ.) দোষত্রুটি অনুসন্ধান করে,
যারা জেনে বা না জেনে আহলে বাইতের (আ.) শত্রুদের পক্ষ অবলম্বন করে,
যারা নামাজে আলে মুহাম্মাদের (সা.) উপর দরুদ প্রেরণ করে ও কাজের বেলায় বিরুদ্ধাচরণ করে,
যারা ইমাম হুসাইন (আ.) এর নামের সাথে 'ইমাম' শব্দটা উচ্চারণ করে কিন্তু যাদের অন্তর তাঁর আনুগত্য স্বীকার করেনি,
যারা আহলে বাইতের (আ.) গুরুত্ব ও পবিত্রতার নিশ্চয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েও আহলে বাইতের (আ.) সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে না ও ইমামগণকে (আ.) চেনার চেষ্টা করে না;

তারা ইসলামের ব্যাপারে যত নিষ্ঠাবানই হোক না কেনো, দুঃখজনকভাবে সেই নিষ্ঠা সহকারেই তারা ভুল পথে হাঁটবে এবং নিষ্ঠার সাথেই না জেনে ইসলামের ক্ষতি করে যাবে। তারা যেনো আল্লাহর হাতে মীযান উঠবার আগেই নিজেদের শুধরে নেন এবং ইসলামের প্রকৃত পথ অনুসরণ করে বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেন, সেই দোয়াই করি।

আর যেসব পাষাণ হৃদয় এই শোকের দিনে আনন্দের উৎস খুঁজছে, শোকের বিপরীতে নানান মাসলা মাসায়েল আবিষ্কার করছে কিংবা হাজির করছে নানান ইতিহাস, তাদেরকে তাদের মতই থাকতে দিন। তারা যদি ইমাম হুসাইন (আ.) এর প্রতি ইউসুফ (আ.) এর সৎভাইদের মত মনোভাব পোষণ করে, তবে যতই তারা নামাজে আলে মুহাম্মদের (সা.) উপর দরুদ প্রেরণ করুক না কেনো, সেই দরুদ ঐ সৎভাইদের লোকদেখানো কর্মকাণ্ডেই পরিণত হবে। যতদিন না তাদের এই পাষাণ হৃদয় গলবে, এবং যতদিন না তারা ইমাম হুসাইন (আ.)কে প্রকৃত অর্থে চিনতে পারবে ও ভালোবাসতে পারবে, ততদিন পর্যন্ত আশুরার দিনে তারা এমন আচরণই করে যাবে। এবং ততদিন পর্যন্ত ইয়াকুব (আ.) ও ইউসুফ (আ.) এর মধ্যকার সেই ভালোবাসা তারা অনুধাবন করতে পারবে না, যেই ভালোবাসার অশ্রুপাত চোখকে অন্ধ করে দেয় ! ততদিন পর্যন্ত তারা ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) এর কান্নার মর্ম বুঝবে না। ততদিন পর্যন্ত পবিত্র ইমামগণের (আ.) সাথে তাদের ভালোবাসার সম্পর্কের সূচনা হবে না। ততদিন পর্যন্ত আহলে বাইতের ইমামগণ (আ.) তাদের কাছে কেবলই কিতাবে বন্দী কিছু ইতিহাস কিংবা বিতর্কের বিষয়বস্তু হয়ে রইবে, ভালোবাসার বস্তু নয়।

অতএব, এই পবিত্র ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত পাষাণ হৃদয় মানুষদের প্রতি রুক্ষ হবেন না। বরং স্বর্গীয় ভালোবাসা-বঞ্চিত এই মানুষগুলির জন্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন, যেনো তারা সকল পিছুটান ও প্রেজুডিস মুক্ত হয়ে সত্যের কাছে পরিপূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করার দৃঢ়তা পায়। তারা যেনো সন্ধান পায় সেই আলোর, যে আলো স্রষ্টার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। তাদের হৃদয় যেনো খুঁজে পায় ভালোবাসা : ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াবী ভালোবাসা নয়, ঐশী ভালোবাসা।

আল্লাহ যেনো আমাদের সেইসব মুসলিম ভাইদের হৃদয়কে এই ভালোবাসার পথ দেখান। এই আলোর পথে তারা যেনো হন আমাদের সহযাত্রী, সহযোদ্ধা, পথপ্রদর্শক। কাউকে বাদ দিয়ে নয়, কাউকে ফেলে নয়, বরং দুনিয়ার সকল মুসলিম যেনো এক উম্মাহ, এক দেহ, এক প্রাণ, এক আত্মা হয়ে খোদার আরশের নিচে শেষবিচারের দিনে আশ্রয় নিতে পারি, আশুরা হোক সেই স্বর্গীয় স্বপ্ন বাস্তবায়নের নবঃ সূচনা।
আমিন।

নূরে আলম
নভেম্বর ৪, ২০১৪।

(একই প্রসঙ্গে পড়তে পারেন নিচের আর্টিকেলগুলি।)
শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব
শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমদ দীদাতের ইরান অভিজ্ঞতা
জিহাদ আল আকবার : নফসের সাথে যুদ্ধ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা