সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

Journey...

আমার ক্লাস টেন পর্যন্ত আম্মু আমাকে স্কুলে আনা-নেওয়া করেছে। আমার ক্লাসমেটদের কাছে এটাকে স্বাধীনতা খর্ব করা বলে মনে হতো, কিন্তু আমার এতে কোনো আক্ষেপ ছিল না। কারণ বাসার বাইরে থেকে আমার পাবার মত কিছু ছিল না: আমার প্রয়োজনীয় সবকিছু আমি বাসাতেই পেয়েছি। না, এমন না যে আমাদের অনেক টাকা পয়সা ছিল আর খেলনা দিয়ে ঘর বোঝাই থাকত! বরং কোনো খেলনা বা কোনোকিছুর জন্য আবদারই করতাম না আমরা ভাইবোনেরা। কারণ আমরা ছোটবেলা থেকেই জানতাম, আমাদের সেই সামর্থ্য নেই। খুব টাকা-পয়সা কখনোই ছিল না, এখনও নেই। মাঠে-ঘাটে খেলতে যাওয়া নেই, ঘরভর্তি খেলনা তো দূরের কথা, একটা টিভি পর্যন্ত নেই -- কেবল ঘরের ভিতরে আর ঘরের দরজা-জানালা দিয়ে আম্মুর চোখ যতদূরে যায়, ততদূর পর্যন্ত ছিল আমাদের চলাফেলার সীমানা। সমবয়েসী প্রতিবেশীদের সাথে খেলা বা গল্প -- সেটাও ঐ সীমানার ভিতরেই। শুনলে খুব নিরানন্দ মনে হতে পারে, কিন্তু আমাদের আনন্দের জায়গাটা ছিল অন্যখানে। চিলের থেকে ছানাকে বাঁচানোর জন্য মা মুরগি ডানা দিয়ে বাচ্চাগুলোকে ঢেকে রাখে: সেই ডানার নিচেই আমাদের একটা ছোট্ট বাসা ছিল, ভাড়া বাসা। সেখানের একটা ঘরে মেঝে থেকে ছ
সাম্প্রতিক পোস্টগুলি

জান্নাতের পথে চলো...

১. “ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদ” -- নানাজীর মুখ থেকে এই কথাটাই আমি সর্বশেষ শুনেছি। দরুদের শুরুর অংশটা পড়ছিলাম আমি, আর শেষ অংশটা নানাজী। ঠাণ্ডা লেগে বুকে কফ বসে গিয়েছিল; কারো সাথে কোনো কথা বলছিলেন না, শুধু মাথা নেড়ে আর ইশারায় কথা। কিন্তু আমি যখন বললাম, নানাজী, আমার সাথে সাথে দরুদ পড়েন, দরুদ পড়লে চোখের জ্যোতি বাড়ে -- তারপর আমরা অর্ধেক-অর্ধেক করে দরুদ পড়লাম। ওটাই ছিল নানাজীর সাথে আমার শেষ কথা। কতই না সুন্দর সে কথা! “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ” - “ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদ।” মুহাম্মদের (সা.) উপর দরুদই হলো সেই একটিমাত্র কাজ, যা আল্লাহ নিজে করেন, তাঁর ফেরেশতাকুল করেন এবং পাশাপাশি মুমিনগণকে সেই কাজে শামিল হতে আদেশ করেন। দরুদের অনেক মর্তবা। নানাজী এসব জানেন। তারপর আমার তসবিটা নানাজীর হাতে দিয়ে দিলাম। চলে আসার আগদিয়ে দেখলাম নির্জীব হয়ে শুয়ে আছেন, কিন্তু তসবি পড়ছেন। সেদিন ঢাকা মেডিকেলে নানাজী ভর্তি হবার দ্বিতীয় দিন; ছোট খালা আর আমার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম। প্রথমদিনও গিয়েছিলাম, আম্মুকে নিয়ে। তখন দেখেছি সাততলায় ৩ নং লিফটের সামনে মেঝেতে নানাজীকে রেখেছে। চারিদিকে পুলিশ, কাছে যাওয়া যা

~~ কৈফিয়ত ~~

বিয়ে করেছি আজকে দুই সপ্তাহ হলো। এই নিয়ে আমাকে গত দুইটা মাস ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। না, অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে নয়। বরং ব্যস্ত থাকতে হয়েছে একটা নতুন বাসা খোঁজা আর সেই বাসার জন্য ন্যুনতম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে। কেননা আমার মা চাননি যে আমি তার বাসায় আমার বউ নিয়ে থাকি। কারণ এই মুহুর্তে আমি বিয়ে করি সেটা তিনি চাননি। এছাড়াও, প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের স্বাধীনতা আছে। বিয়ে নিয়ে আমার মায়ের সাথে আমার কথা হয়েছে তিন মিনিট। আমি বলেছিলাম, ওমুকের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দেন। আম্মু বলল, করোগে যাকে খুশি বিয়ে। বিয়ে করে চলে যাও। আমি বাধা দেব না। বললাম, বাধা দেবার এখতিয়ার তো আপনার নেই। না সেক্যুলার ল'তে আছে, আর না ইসলামিক ল'তে আছে। আপনি কেবল সামাজিকতায় উপস্থিত হবেন, এটুকুই। আর সেটা যদি আপনি যেতে না চান, আপনার ব্যক্তি স্বাধীনতা। এটা আমার কোনো অধিকারও না যে আমি তা দাবী করব। এরপর বহু লোকে আমাকে বহু দিন ধরে 'বুঝিয়েছে' যে, "তোমার মাকে একটু বুঝাও, মা তো, অবশ্যই বুঝবে।" আমি তাদের আবেগটাকে মর্যাদা সহকারে গ্রহণ করেছি, কিন্তু আমি আমার মাকে চিনি, কেননা আমি তার শরীরেরই অংশ। প্রচ

কুরবানীর হাকীকত

আমাকে বাসা থেকে গতকাল জিজ্ঞাসা করেছে, কিছু টাকা দিতে পারব কিনা: বাসায় বাজার করার টাকা নেই। এদিকে আমার হাতও শূন্য। সবাইকে রোজা থাকতে বলে দিয়েছি। তবে, ঈদের দিনতো রোজা রাখা যাবে না। আমি অবশ্য রোজা থাকলেও দুবেলা খাই, না থাকলেও দুই বেলাই খাই। কিন্তু বাসার সবাই রোজা থাকলেও সেই দুই বেলার খাবারই বা আসবে কোথা থেকে? সে আল্লাহ জানেন। তাঁর বান্দা, তিনি খাওয়াবেন। আমি তা নিয়ে চিন্তিত নই। আমি কেবল এটুকু ভাবছি যে, তিনিতো অন্য বান্দার মাধ্যমে খাওয়ান, সেজন্যে কুরআনে কঠোর আদেশও করেন। যারা তা করে না, তাদের নামাজই হয় না বলে ধ্বংসের কথাও বলেন। কিন্তু সেই বান্দারা আমাকে "ভাই, গরু কিনেছেন?" প্রশ্ন আর ইনবক্সে গণ-ফরোয়ার্ডের "ঈদ মোবারক" জানাচ্ছেন। আমি ভাবলাম, তাইতো! আমারও তো সবাইকে ঈদ মোবারক জানানো দরকার। তাই বহুদিন পর ফেইসবুকে একটু লিখতে বসলাম। আপনাদেরকে ঈদ মোবারক! তারপর আমি ভাবলাম, আমি নাহয় এটা সেটা খেয়ে নেক্সট বেতন পাওয়া পর্যন্ত দিনগুলো চালিয়ে নিতে পারব। কিংবা -- যদিও কুরবানির ঈদের সময় টাকা ধার পাওয়া কঠিন, তবুও নানাজনের কাছে হাত পেতে বাজারের টাকা যোগাড় করতে পারব -- কিন্তু যাদের সে সামর্থ্য

অশ্রুপাতের বেলা শেষ

সালাম। বাংলাদেশে এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ -- এমন নিউজ আমরা পেয়েছি। ওদিকে মুক্তিপণ না পেয়ে সাত বছরে বাচ্চাকে হত্যা করেছে মসজিদের 'ইমাম' সাহেব। এছাড়াও মাদ্রাসাগুলোতে বাচ্চাদেরকে নির্মভাবে পিটানো হয়, এবং এতে মৃত্যুর ঘটনা কিছুদিন আগেও ঘটেছে, সেসব সংবাদও আপনারা কমবেশি অনলাইনে দেখেছেন। নুসরাতের শাহাদাতে সবাই ব্যথিত, ক্ষুব্ধ এবং দিশাহারা ও অসহায় বোধ করছেন। মাদ্রাসা ও মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ফাইনালি বহু লোকে ভাবতে শুরু করেছেন। আমি দুটো কথা বলতে চাই। ১. দোষারোপে কোনো সমাধান হয় না। অবশ্যই দোষীকে শনাক্ত ও দণ্ড দেয়া জরুরি। কিন্তু একইসাথে আরো বেশি জরুরি হলো দোষের কারণ খুঁজে বের করা এবং 'রোগের গোড়া মেরে সমাধান' করা। ফেইসবুকসহ টিভি-পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি মিডিয়াতে বিভিন্ন ঘটনা দেখে আমরা 'ওমুকরা দোষী', 'ওমুকরা দায়ী' এটা বের করি বটে, কিন্তু পরবর্তী পদক্ষেপ, যা হলো অপরাধীর দণ্ড কার্যকর করা -- তা দুঃখজনকভাবে আমাদের হাতে নেই; আর যাদের হাতে আছে, তারা নিজেরাই করাপ্টেড। মাছের মাথা পচে গেলে দেহেও পচন ধরে: জালিম সরকার দীর্ঘদিন থাকলে জনগণ

ইরানে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাহ উৎসব: বাংলাদেশের জন্য অনুসরণীয় মডেল

“জান্নাত পর্যন্ত সহযাত্রী” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে গত ১১ মার্চ তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাহ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ৬০০ ছাত্রছাত্রী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিভিন্ন বাংলা সংবাদমাধ্যমে এবিষয়ে লেখা প্রকাশিত হলেও ঘটনাটি বাংলাদেশী তরুণদের মাঝে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে যখন সপ্তাহখানেক পর The Beauty of DU Campus নামের একটি পেইজ এবিষয়ে ফেইসবুকে পোস্ট করে। এখন পর্যন্ত সেই পোস্টে ১২ হাজার লাইক-কমেন্ট-শেয়ার হয়েছে; আর এই পোস্টটা এমন সময়েই করা হয়েছে, যার ঠিক আগেরদিনই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রীহলে ট্রাঙ্কের ভিতর থেকে নবজাতক উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনা আমাদেরকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে; একইসাথে আমাদের তরুণেরা ইরানের মত এমন ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাহ উৎসব’-কে দেখছে এহেন অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াবার অন্যতম সুন্দর সমাধান হিসেবে। সেই ফেইসবুক পোস্টটির বেশকিছু উল্লেখযোগ্য মন্তব্যের মাঝে কানিজ ফাতেমা নামে একজন মন্তব্য করেছেন যে, তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এমন একটা ক্যাম্পাস যদি বাংলাদেশে থাকত (যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ ও অর্থায়নে বিবাহ উৎসব হয়), তাহলে ছাত্রছাত্রীদের বিষণ্ণতা ৫০% কমে যেত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের

একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

একজন মানুষের ভবিষ্যত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ৯৫%-এর ভিত্তি স্থাপিত হয় তার জীবনের প্রথম সাত বছরে। অর্থাৎ, জন্মের পর থেকে কমবেশি সাত বছর বয়সে পৌঁছানো পর্যন্ত সে যে মনোদৈহিক আচরণ পেয়ে থাকে, সেটাই নির্ধারণ করে দেয় সে ভবিষ্যতে সাহসী হবে নাকি ভীতু হবে, সত্যবাদী নাকি মিথ্যাবাদী হবে, সচ্চরিত্র নাকি দুশ্চরিত্র হবে, ইত্যাদি। ঈর্ষাপরায়ন হবে কিনা, গিবত করবে কিনা, আত্মপীড়ন কিংবা আত্মহত্যা করবে কিনা, ইত্যাদি। আর এই ব্যাপারটা ঘটে পরিবারে। যে পরিবার তার সন্তানের শিশু অবস্থায় তার সাথে যত উন্নত ও ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করেছে, সে সন্তান তত উন্নত মানুষ হতে পেরেছে। অতএব, আপনি যা হবার, তা আসলে অলরেডি হয়ে গেছেন, এবং এখন নিজেকে নানাভাবে বদলানোর প্রবল ইচ্ছা হলেও তাতে সফল হওয়া খুবই কষ্টকর ব্যাপার। এখন কারো কারো নিজের পরিবার নিয়ে কিছু বিষয়ে আফসোস হতে পারে যে: "ওমুক বিষয়টি আমি পরিবারে পাইনি…।" কিংবা কেউ হয়ত পিতামাতাকে দোষারোপও করে বসতে পারে। দোষারোপ কিংবা আফসোস -- কোনোকিছুতেই কিছু অর্জিত হয় না। কেবল সমস্যার সমাধান করলেই কিছু না কিছু অর্জিত হয়। যাহোক, এই পর্যায়ে আমি আশা করব প্রত্যেকে নিজের পরিবার থেকে প্রা

Iran ‒ Russia relation: competition, cooperation or strategic alliance?

Iran ‒ Russia relation: competition, cooperation or strategic alliance? Nure Alam Masud January 20, 2019 This paper is submitted to Javad Keypour as part of the course “Introduction to Caspian Studies” taught at Tallinn University of Technology, Tallinn, Estonia in the semester Autumn 2018/2019.    

ডিপার্চার লাউঞ্জ

তোমরা বাড়ি পৌঁছে গেছ? আমি কিন্তু এখনও ডিপার্চার লাউঞ্জে। এখানে অনেক মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে হাত বাড়িয়ে -- হ্যান্ডশেইক করে। আমি বাঁ-হাতটা বাড়িয়ে দেই আমার মুঠো করা ডান হাতটার দিকে তাকিয়ে, ওরাও হাত বদল করে। ওরাতো জানে না, কতটা লুকিয়ে কয়েক বিন্দু অশ্রুজল এনেছি আমি! তোমরা বাড়ি পৌঁছে গেছ? আমি কিন্তু এখনও ডিপার্চার লাউঞ্জে। হাতের মুঠোয় কয়েক বিন্দু অশ্রুজল খেলা করে! এখানেও শিশুরা হাসে ছুটে বেড়ায় এদিক-ওদিক, দৌড়ে আসে কাছে, আবার হেসে চলে যায়: খেলছে, আপন-মনে। অথচ ওরাতো জানে না শেকড় কেটে নেয়া হয়েছে ওদের -- এ-যে ডিপার্চার লাউঞ্জ, এখান থেকে যে কেউ আর ফিরে যায় না! তেমনি এক শিশু ছুটে আসে কাছে দু-হাত বাড়িয়ে, আলিঙ্গনে নিতে যেয়েও নিজেকে না-বলে উঠি। কিভাবে? এ দেহে যে তোমাদের আলিঙ্গনের ছাপ! তোমরা বাড়ি পৌঁছে গেছ? আমি কিন্তু এখনও ডিপার্চার লাউঞ্জে। চোখ বুঁজলে তোমাদের আলিঙ্গন এখনও অনুভবে আসে! প্রিয়মুখ -- চোখে ভাসে, শেষ চুম্বন রক্তে দোলে আলিঙ্গনে বাঁচবার ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠলে ‘পরে বোর্ডিঙের ডাক চলে আসে। তোমরা বাড়ি পৌঁছে গেছ? আমি কিন্তু এখন বোর্ডিঙের পথে। অশ্রুজল

Love Is My Religion

আমার একটা মেটালের চাবির রিঙ ছিল, সেটা হাতে নিলে প্রথমে একটু শীতল অনুভব হতো, কিন্তু খানিক পরেই হাতের উষ্ণতায় সেটা গরম হয়ে উঠত আর -- তখন আর সেটাকে ধরে রাখতে ভালো লাগত না। তখন আমি স্কুলে পড়ি। সেজাপুকে বললাম, "এই চাবির রিঙটা হলো মানুষের মত, বেশিক্ষণ এর সঙ্গ আমাকে আনন্দ দিতে পারে না।" সেজাপু তাই নিয়ে আমাকে বেশ গঞ্জনা দিলো। কথাটার জন্য কেন তিরস্কৃত হয়েছিলাম, তার ব্যাখ্যাটা সেজাপুই ভালো দিতে পারবে। এক যুগ পর, এস্তোনিয়ায় বসে মুজাহিদ আমাকে বলছে, "শুধুমাত্র মানুষের ভালোবাসা একটা সময় মানুষকে ক্লান্ত করে ফেলে।" আমি সম্পূরক কথাটুকু বললাম: "অবশ্যই স্রষ্টার সান্নিধ্য ও খোদাপ্রেমের একটা জায়গা মানবজীবনে থাকতে হবে।" আমি জানি না এখন সেজাপুর মন্তব্য কী হবে। আমার বয়স সাতাশ, এর মাঝে আমি বহু মানুষের সান্নিধ্যে খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে গেছি। ভালোবাসা পেয়েছি, ভালো বেসেছি, তারপর ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। জ্যোতিষবিদ কিরো একথা বহু আগে বলেছিল, এবং স্কুলে থাকতেই সেকথা আমি জেনে গিয়েছিলাম: বুধ গ্রহের 'কু'-প্রভাব এটা। কিন্তু জ্যোতিষীরা আমাকে যা জানাতে পারেনি, তা আমি জেন

উপহার

কারেন্ট চলে গেলে মোম জ্বালানো হতো, আর সে মোম গলে পড়ে মেঝেতে কিংবা টেবিলের উপর ছোট্ট গোল আকৃতি তৈরী করত। কারেন্ট আসলে সবাই ফুঁ দিয়ে সবগুলো রুমের মোম নিভাতো। আর আগে থেকেই আমাদের ভাই-বোনদের ডিক্লেয়ার করা থাকত: কোন মোমের গলে পড়া অংশ কে নেবে; মোম নিভানোর পর ঠাণ্ডা হয়ে যেত দুই মিনিটেই, আর সেগুলো যে যারটা নিয়ে নিতাম। তো, এরকম বিভিন্ন 'সম্পদ' থাকত আমাদের। এমনকি স্কুলে পড়ি, তখনও। একবার সেজাপুর বার্থডেতে আমি আর আমার ছোটবোন মিলে একটা গিফট দিলাম। 'প্রজাপতি ম্যাচ' এর একটা খালি বাক্স, তার ভিতরে একটা পোড়া ম্যাচের কাঠি, এবং ঐ গলে পড়া সবচে সুন্দর শেপ-এর এক টুকরা মোম। সেজাপুও যত্ন করে সেটা রেখে দিল। আমরা সবাই-ই কিন্তু তখন স্কুলে পড়ি, প্রাইমারিতে। মোর্শেদের সাথে কথা হচ্ছিল, হঠাৎ সেই 'উপহার' এর কথা মনে পড়ল। ও বলছে, "নাসিমের বাসায় আজকে রান্না হয়নি, ওকে নিয়ে আসলাম, ও আর একজন গেস্ট মিলে আমার খাবারটা অর্ধেক করে খেল, আর আমি ন্যুডলস রান্না করে খেলাম, তেল ছিল না, পানিতে সেদ্ধ ন্যুডলস।" আমি বললাম, "বাহ! কী সুন্দর।" সুন্নাহ মোতাবেক খাওয়া: "একজনের খাবার

কৈফিয়ত

১. গোলামী যেন দেশবাসীর অভ্যাসে পরিণত না হয়। ২. বিএনপি-জামাতের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব ও হঠকারী কূপমণ্ডুকতা সম্পর্কে খুব স্পষ্টভাবে জানতে মাহমুদুর রহমানের এই লেখাটা পড়ুন । ৩. এবার আমার কিছু কথা (অনলাইন-অফলাইনে আগেও বলেছি): 0. বাংলাদেশের বর্তমান দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা স্ট্রাকচারালি কার্যতঃ স্বৈরতান্ত্রিক (সবচে বড় দলের প্রধানই দেশব্যাপী এমপি-মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ইত্যাদি নিয়োগ দিয়ে থাকে)। অতএব, এই স্ট্রাকচার যতদিন না বদলাবে, ততদিন এই সিস্টেমের খেলোয়াড়দের ভিতর থেকে স্বৈরাচার জন্ম নিতে থাকবে। এই বুঝটা না থাকলে আপনি কেবল হাসিনা-খালেদা ক্যালকুলেশানই করবেন, এবং আপনার পরের জেনারেশান তাদের যুগে জন্ম নেয়া নতুন হাসিনা-খালেদার ক্যালকুলেশান করবে, কিন্তু এটা বুঝবে না যে, আমাদের সিস্টেমটাই স্বৈরাচার জন্ম দেবার সিস্টেম। 1. বাংলাদেশে বর্তমানে স্বৈরশাসন চলছে। কিন্তু জনগণের মাঝে এই অনুভূতিটা দৃঢ়ভাবে নেই; অর্থাৎ, জনগণ স্পষ্টভাবে মনে করছে না যে দেশে স্বৈরশাসন চলছে। তারা এখনও কমবেশি 'ভোট, ইলেকশান, সরকারী দল-বিরোধী দল' ইত্যাদি নিয়েই ভাবে। এর ফলে 'ইলেকশান ম

ব্ল্যাক ম্যাজিক ও পথ

১. ব্ল্যাক ম্যাজিক মানুষ করে থাকে দুইভাবে: জ্বীন ব্যবহার করে ও শক্তির জগতের কিছু বিশেষ key এর মাধ্যমে। এর বাইরে জ্বীনদের ভিতর থেকে কেউ কেউ নিজে থেকে এসেই মানুষকে ডিসটার্ব করে থাকে। আপনি জ্বীন স্বীকার করেন বা না করেন, ব্ল্যাক ম্যাজিককে সত্য জানেন বা না জানেন, ধার্মিক হন কি নাস্তিক হন -- আপনি এগুলো দ্বারা অ্যাফেক্টেড হতে পারেন, আপনি এর বাইরে নন। ২. মডার্ন টাইমে এসবের প্র্যাকটিস কমে গেছে (luckily)। তবুও কিছু মানুষ যাদু-বান-টোনা ইত্যাদির চর্চা করে থাকে এবং টাকার বিনিময়ে কিংবা নিজে থেকেই কারো প্রতি শত্রুতা করে ব্ল্যাক ম্যাজিক থ্রো করে। এগুলো কাটানোর উপায় কী? দেখা গেছে, দেশ ছেড়ে সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে বসবাস করছে, তাকেও দেশ থেকে যাদু করেছে এবং নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। ব্ল্যাক ম্যাজিক ইত্যাদিকে অস্বীকারকারী নিতান্তই নাস্তিক টাইপ মানুষও ব্ল্যাক ম্যাজিকের শিকার হয়ে নাচার হয়ে পড়েছেন, এমন ঘটনাও আছে। এগুলো থেকে উদ্ধার পাবার উপায় কী? কিংবা প্রতিরোধমূলক কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে? ৩. ব্ল্যাক ম্যাজিক জিনিসটা কোনো বিশেষ ধর্মের সাথে জড়িত নয়। জ্বীন জাতির সাথে কমিউনিকেইট করাটা হিন্দু-মুসল

জীবনের বিনিময়

আমার কলেজের এক বান্ধবী -- প্রথমবার যখন আমাদের বাসায় আসলো, তখন সেজাপুর কাছে হাত দেখিয়েছিল। আমরা সব ভাইবোনই তখন কমবেশি জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চা করি, তার মাঝে সেজাপু সবচে' ভালো পারত। তার হাত দেখে সেজাপু এমন কিছু বিষয় প্রকাশ করে দিল, যা তার ভালো লাগেনি। তারপর থেকে কলেজে আমি যখনই কারো হাত দেখতাম কিংবা সংখ্যাতত্ত্বের আলোচনা করতাম, আমার সেই বান্ধবীটি আগ বাড়িয়ে খুব করে বিরোধিতা করত। কী অদ্ভুত সাইকোলজি! অথচ এই জ্যোতিষবিদ্যার প্রতি সে-ও মুগ্ধ ছিল, এবং এটা যে একটা খাঁটি বিদ্যা, তা বুঝত। সেসময় আমি বেশ চর্চার মধ্যে ছিলাম, কারো সাথে পাঁচ মিনিট কথা বলেই অনেকসময় জন্মতারিখ বলে দিতে পারতাম, কিংবা জন্মমাস। এসব সে দেখেছে, জানত। তবুও, ঐদিনের পর থেকে খুব করে বিরোধিতা করত, জ্যোতিষবিদ্যাকে ভুয়া প্রমাণের চেষ্টা করত। কী অদ্ভুত! নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্য সেই যুগ থেকে আজকে পর্যন্ত কোটি কোটি নারী-পুরুষ জান-কোরবান, অথচ সেই মুহাম্মদ (সা.)-কেই তাঁর স্ত্রীদের কেউ কেউ যতটা না নবী হিসেবে দেখেছিলেন, তার চেয়ে বেশি দেখেছিলেন 'আমার স্বামী' -- এই হিসেবে। যেকারণে পারস্পরিক ঈর্ষা-বিদ্বেষ, কুটনামী, নবীর বিরুদ্ধে ষড়

দেবশিশু

বাংলাদেশে এখন শীত। সেখানে আমার রুমের মেঝেতে কার্পেট পাতা আছে। জানালায় ভারী পর্দা আঁটা আছে, আর টেবিলের কাছে একটা ছোট্ট হিটার ঘুরে ঘুরে ঘর গরম করছে। দুই সিটের সোফার উপর কিছু শীতের পোষাক এলোমেলো রাখা আছে; পাশেই দুটো খেজুর পাতার পাটি আছে: একটা শোবার, একটা খাবার। আরেকটা ছিল, প্রার্থনার। এইখানে ঈশ্বর গল্প রচনা করেছে। চোখ বুঁজলে দেখা যায়। এস্তোনিয়ায় সারা বছরই শীত: কম আর বেশি। এখানেও ঈশ্বর আছে; গল্প আছে। কেজানে কে কোন ঈশ্বরের পূজো করে? ঈশ্বর ছিল এক কাঁচের আয়না। তারপর সে মাটিকে ভালোবাসল। মাটিতে পড়ে এক ঈশ্বর ভেঙে শত খোদা হলো। সেই কাঁচের টুকরা গিয়ে বিঁধল কারো চোখে, কারো বুকে, কারোবা আবার ঠোঁটে। মর্ত্যের মানুষ স্বর্গলাভ করল। -- আর আমি? - তুমিতো ঈশ্বর! -- সত্যি? - হুম। তারপর সে দেবশিশু বড় হয়। যে আগে নিজেই পূজো দিত, এখন সে-ই পূজনীয় হয়ে ওঠে। ঈশ্বরের কলম থামে না। দিন যায়, বছর ঘুরে বছর আসে। ঈশ্বরের কলম থামে না। ঈশ্বরের কলম থামে না। নূরে আলম নভেম্বর ২৯, ২০১৮ তালিন, এস্তোনিয়া

মায়া: নতুন ভোরের অপেক্ষা

আমার পীর লা-মাকাম এর মানুষ ছিলেন। অন্ততঃ তাঁকে যারা দেখেছেন, তারা এমনটাই বলেন। আমার দুর্ভাগ্য, আমি তাঁকে দেখিনি। কিন্তু যারা দেখেছেন, তারা বলেছেন। নিজের বাড়ি থেকে শেষবারের মত বের হবার সময় প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি বলেছিলেন, "খানম, খোদা হাফেজ! চিরদিনের জন্য তোমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি, আর ফিরে আসব না...।" কারণ তিনি জানতেন, তিনি কোথায় যাচ্ছেন, কখন যাবেন। আরও বলেছিলেন, "দুনিয়ার জীবন বড়ই কন্টকাকীর্ণ।" আমি মাঝে মাঝে তাঁর কথা ভাবি। সাগরের মত বিশাল, অথচ পর্বতের মত অটল। আমরা সাধারণ মানুষেরা তাঁদের ভালোবাসা বুঝতেও পারব না। মায়ার জগতে বন্দী এই আমরা পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব আর দুই-চারটা প্রিয়জনের ভালোবাসার ছোট্ট ডোবায় হাবুডুবু খেতে খেতেই জীবনটা পার করে দিই। অথচ এর বাইরেও যে আরো কত রকমের ভালোবাসা আছে, আছে তার প্রাবল্যের কত মাত্রা! এইবার দেশ থেকে আসাটা আমার জন্যে বেশ কঠিন হয়েছে। কারণ খোদাতায়ালা আমাকে একটি সুন্দর গল্প উপহার দিয়েছিলেন, আর আমি তাকে মেহনত করেছি। আমি মৃতদেহে প্রাণ সঞ্চার হতে দেখেছি... তারপর তাকে আলিঙ্গনপাশ-মুক্ত করে এতদূরে আস

যেপথে তুমি খালিপায়ে হেঁটেছ...

তরুণ সমাজের কি রাজনীতিতে আসা উচিত? ...................................................... ১. না। বরং, যোগ্য ব্যক্তির রাজনীতিতে আসা উচিত। নেতৃত্ব হলো যোগ্যতার বিষয়, বয়সের বিষয় নয়। ইয়াং বয়সেই যদি কেউ নেতৃত্বের যোগ্যতা অর্জন করে, তবে তার নিজেরও যেমন দায়িত্ব লিড দেয়া, তেমনি সমাজেরও দায়িত্ব তার নেতৃত্ব মেনে নেয়া। ২. "আই হেইট পলিটিক্স", আর বিপরীতে "আই লাভ পলিটিক্স" -- কোনোটাতেই কাজ নেই। পলিটিক্স ভালোবাসারও জিনিস না, ঘৃণা করারও জিনিস না। এটা বোঝার জিনিস। "আই আন্ডারস্ট্যান্ড পলিটিক্স রিয়েলি ওয়েল" -- এইটা ইয়াং জেনারেশানের বলার কথা ছিল। এবং আশা করি, অনেকে সেটা বলার মত যোগ্যতা অর্জন করবে। এবং আমার পরিচিতদের মধ্যে আমি তেমন দেখেছিও। ৩. ম্যাক্রো ভিউ ও মাইক্রো ভিউ বলে একটা ব্যাপার আছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অতিষ্ঠ হয়ে গেলে তখন আমরা নির্দিষ্ট দুই চারটা বিষয়ের দিকে এত মনোযোগী হয়ে যাই যে, সামগ্রিক দৃশ্য আর আমাদের চোখে থাকে না। মাইক্রো-ভিউ এ বন্দী হয়ে পড়ি। বর্তমানে বাংলাদেশে যে রাজনীতি চলছে, তার সাথে জাতীয়-আন্তর্জাতিক বহু রাজনীতি, অর্থনীতি ইত

Kiss me, kiss me a lot, for I am afraid to lose you, to lose you afterwards...

প্রতিটা প্লেন কত স্বপ্ন বয়ে আনে। এই স্বপ্নগুলোকে সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট মানুষদের চেষ্টার কমতি থাকে না। তবুও দুর্ঘটনা ঘটে যায়, কিছু করার থাকে না। ইউএস বাংলার ফ্লাইট BS211 নেপালের কাঠমাণ্ডুতে বিধ্বস্ত হয়েছে। ফেইসবুকে সেসব ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। নববিবাহিতার মেহেদী রাঙা হাত, আঙুলে রিঙ পরা -- ধ্বংসস্তুপের নিচে। হানিমুনে 'সাধ্যের মধ্যে' নেপাল যাচ্ছিল হয়ত! মেডিকেলের একটা বই -- আধপোড়া। চার বছর বাংলাদেশে পড়াশুনা করে নিজদেশ নেপালে ফিরে যাচ্ছিল, স্বপ্নের 'ডাক্তার' হবার জন্য! কেজানে সেজন্যে গত চারটা বছর কত সাধ আহ্লাদ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেছে, নির্ঘুম রাত পার করেছে! একটা ছোট চিরকুট, তাতে ইংলিশে লেখা -- "জানি না তোমার এটা পছন্দ হবে কিনা, তবুও এটা প'রো।" এমন আরো অনেক ছবি। প্রতিটা ছবি এক একটা গল্প। এগুলো আমরা জানতে পারছি, কারণ ফ্লাই করার আগে তাদের সেলফি দেবার মত ক্যামেরা ছিল, উপহার দেবার মত টাকা ছিল, চিরকুটে ভালোবাসার কথা লিখবার মত সুন্দর আবেগ ছিল, কিংবা নেপাল থেকে বাংলাদেশে গিয়ে ডাক্তারি পড়বার টাকা ছিল। অপরদিকে ঢাকার মিরপুরে যে বস্তিতে আগুন লেগে আট হাজার ঘর পুড়ে