আমি এখন দুইটা টিউশনি করি। একজন ক্লাস সেভেনের ছাত্র, আরেকজন ক্লাস টেন-এর। গতরাতে সিদ্ধান্ত নিলাম এদেরকে নিয়ে একটা ব্লগ লেখা যেতে পারে।
আসলে গতরাতে সেহরি পর্যন্ত না ঘুমিয়ে জেগে থেকে যীনাতের সাথে নানান তত্ত্বজ্ঞানী আলোচনা করেছি। আমাদের বিভিন্ন 'বন্ধু'-'বান্ধবদের' নিয়ে। নানান কথা...। তারপর একফাঁকে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে কথা উঠল। যীনাতও নিজের প্রশংসা করার চেষ্টা করলো, আমিও করলাম। সেই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকেই আমার ছাত্রদের কথা।
সেভেনের ছাত্রটি সাজিদ। সে দুলে দুলে পড়তে থাকে। আমি বলি- সোজা হয়ে বসো। সে টেবিলের উপর একটু ঝুঁকে পড়লে আমি আবার ততটুকু পিছিয়ে যাই- এইভাবে একটা ব্যক্তিগত sphere বজায় রাখি।
তেমনি করি ক্লাস টেন-এর ছাত্র সাদমান এর ক্ষেত্রেও। সে আর আমি পাশাপাশি সোফায় বসে থাকি। দুই সোফার হাতলের উপর বই থাকে, খাতা থাকে (যদিও সামনে টেবিল আছে)। আমি সোফার হাতাদ্বয়ের উপর একটু ঝুঁকে পড়ে বুঝাই, কিন্তু যখনই ছাত্রটি wren and martin এর উপর একটু ঝুঁকে পড়ে, তখনই আমি ততটুকু ডানে সরে ব্যক্তিগত sphere বজায় রাখি।
এই ছাত্রটিকে নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়েছি। সমস্যা এই যে সে হাসে। শুধু শুধু হাসে। অকারণে হাসে। আমি ভাবলাম, মনে হয় আমার কোনকিছু খেয়াল করে হাসছে। ওর মা একদিন জিজ্ঞাসা করলেন ছাত্রের অবস্থা কী। আমি বললাম, ভালোই, তবে কথা কম বলে আর অকারণ হাসে।
আন্টি বললেন যে এই রোগ তার ছোটবেলা থেকে। ক্লাস ফোরে থাকতে এরকম শুধু শুধু হাসার কারণে একশবার কান ধরে উঠবস করিয়েছিলো স্কুলের টিচার। এবং এখনও তার সেই অভ্যাস।
:(
এখন, কেউ যদি শুধু শুধু হাসে, তখন কি না হেসে পারা যায় ? আমি প্রথমদিন থেকেই অতি সাবধানে ছোটবেলার সেই হাসি কন্ট্রোলিং পাওয়ার অ্যাপ্লাই করে ওর প্রতিটা হাসির উত্তরে মুখ গম্ভীর করে বলেছি- এতে তো হাসির কিছু নেই। কিংবা- হাসছো কেনো ?
প্রথমে সে ঠোঁটের নিচে তর্জনী আর মধ্যমা আঙুলদ্বয় এক করে চেপে ধরে মুচকি হাসে। তারপর আবার আমি যদি বলি, হাসছো কেনো, কিংবা- হাসির কিছু নেই এতে, তখন সে সারা শরীর দুলিয়ে আট-দশ সেকেন্ড ধরে বেশ করে নিঃশব্দ হেসে নেয়। আমি তখন মুখ গম্ভীর করে আট-দশ সেকেন্ড দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকি। তারপর হঠাৎই যখন তার হাসি বন্ধ হয়ে যায়, তখন আবার- to talk about the person already referred to, ইত্যাদি পড়াতে থাকি।
সাদমানের বাসা হল চার নাম্বার রোডে। আমার বাসা থেকে বের হয়ে সামনে তাকালেই চার নাম্বার রোড। কিন্তু ঐ রোডের প্রথম দুই কদম (যেহেতু আমাদের পরিচিত এক আন্টির বাড়ি) ছাড়া আমার আর কখনো সামনে আগানো হয় নি। আর কিছুদুর গেলেই ওর বাসা। এই এলাকায় পনরো বছর ধরে আছি, কিন্তু কখনো ওখানে যাওয়া হয় নি আগে !
সেদিন tense বুঝাতে গিয়ে যখন বললাম- এই যেমন আমি আজকে তোমার বাসায় আসতে গিয়ে দেখলাম রাস্তার ডান হাতে যে বাড়ি বানানো হচ্ছে, সেখান থেকে বৃষ্টির মত পানি পড়ছে, তাই আমাকে অনেক সাবধানে দৌড় দিয়ে ঐ অংশটুকু পার হতে হলো- তখন সে ব্যাপক হাসাহাসি শুরু করলো। একেবারে দুলে দুলে। কী কল্পনা করে হেসেছে আল্লাহ জানে। আমারও একটু হাসি পেয়ে গেলো। কিন্তু ভয়েই আমি সে হাসিকে কন্ট্রোল করলাম। কারণ, আমি ভয়ানক সব হাসি কন্ট্রোল করতে পারলেও মাঝে মাঝে হাসতে হাসতে আমার দম বন্ধ হবার মত অবস্থা হয়। শেষদিকে চোখে পানি চলে আসে, হাসি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে, এমনকি শরীর কাঁপতে থাকে।
একদিন যীনাত আমাকে এভাবে হাসিয়ে তো প্রায় মেরেই ফেলেছিলো। পরে যখন আমার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এলো আর শরীর কাঁপতে লাগলো, তখন ভয়েই যীনাত ভাগলো রুম থেকে।
............................................................................................
দুটো টিউশনি, সপ্তাহে কমপক্ষে তিন-তিন ছয় ঘন্টা সময় ব্যয় করা লাগে। গুলশান যাওয়া আসায় আমার সময় নষ্ট হয় অনেক। তারপর আর পড়াশুনার সময়ই থাকে না :( টাকা পাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু টাকা দিয়ে সময় কেনা যায় না।
time and money, waits for none.
............................................................................................
চারদিকে পাগল বেড়ে যাচ্ছে। বোহলুল, খলিফা হারুনকে বলেছিলো, প্রাসাদের ভিতরে থেকে বাইরে তাকালে দেখি পাগল, আর বাইরে থেকে প্রাসাদের ভিতরে তাকালেও তা-ই। সর্বত্রই পাগল।
আমিও তা-ই দেখছি। তবে বাসার বাইরে তাকালেই শুধু। বাইরে থেকে ভিতরে তাকাই নি। বাসার পাগলে সব একপদের- এক ঘরে বহু পীর, কিন্তু বাইরের বাকি সব পাগল একরকম।
গতরাতে যীনাতের সাথে সব পাগল নিয়ে আলোচনা করলাম। যীনাতের দেখা পাগল। আমার দেখা পাগল। আমাদের উভয়ের দেখা পাগল। সাম্প্রতিক পাগল, পুরনো পাগল, চেতন পাগল, অচেতন পাগল। আর বন্ধু পাগল আর বান্ধবী পাগল।
পাগলদের গল্প আরেকদিন হবে।
আজ এ পর্যন্তই।
নূরে আলম
অগাস্ট ২৬, ২০১১।
আসলে গতরাতে সেহরি পর্যন্ত না ঘুমিয়ে জেগে থেকে যীনাতের সাথে নানান তত্ত্বজ্ঞানী আলোচনা করেছি। আমাদের বিভিন্ন 'বন্ধু'-'বান্ধবদের' নিয়ে। নানান কথা...। তারপর একফাঁকে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে কথা উঠল। যীনাতও নিজের প্রশংসা করার চেষ্টা করলো, আমিও করলাম। সেই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকেই আমার ছাত্রদের কথা।
সেভেনের ছাত্রটি সাজিদ। সে দুলে দুলে পড়তে থাকে। আমি বলি- সোজা হয়ে বসো। সে টেবিলের উপর একটু ঝুঁকে পড়লে আমি আবার ততটুকু পিছিয়ে যাই- এইভাবে একটা ব্যক্তিগত sphere বজায় রাখি।
তেমনি করি ক্লাস টেন-এর ছাত্র সাদমান এর ক্ষেত্রেও। সে আর আমি পাশাপাশি সোফায় বসে থাকি। দুই সোফার হাতলের উপর বই থাকে, খাতা থাকে (যদিও সামনে টেবিল আছে)। আমি সোফার হাতাদ্বয়ের উপর একটু ঝুঁকে পড়ে বুঝাই, কিন্তু যখনই ছাত্রটি wren and martin এর উপর একটু ঝুঁকে পড়ে, তখনই আমি ততটুকু ডানে সরে ব্যক্তিগত sphere বজায় রাখি।
এই ছাত্রটিকে নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়েছি। সমস্যা এই যে সে হাসে। শুধু শুধু হাসে। অকারণে হাসে। আমি ভাবলাম, মনে হয় আমার কোনকিছু খেয়াল করে হাসছে। ওর মা একদিন জিজ্ঞাসা করলেন ছাত্রের অবস্থা কী। আমি বললাম, ভালোই, তবে কথা কম বলে আর অকারণ হাসে।
আন্টি বললেন যে এই রোগ তার ছোটবেলা থেকে। ক্লাস ফোরে থাকতে এরকম শুধু শুধু হাসার কারণে একশবার কান ধরে উঠবস করিয়েছিলো স্কুলের টিচার। এবং এখনও তার সেই অভ্যাস।
:(
এখন, কেউ যদি শুধু শুধু হাসে, তখন কি না হেসে পারা যায় ? আমি প্রথমদিন থেকেই অতি সাবধানে ছোটবেলার সেই হাসি কন্ট্রোলিং পাওয়ার অ্যাপ্লাই করে ওর প্রতিটা হাসির উত্তরে মুখ গম্ভীর করে বলেছি- এতে তো হাসির কিছু নেই। কিংবা- হাসছো কেনো ?
প্রথমে সে ঠোঁটের নিচে তর্জনী আর মধ্যমা আঙুলদ্বয় এক করে চেপে ধরে মুচকি হাসে। তারপর আবার আমি যদি বলি, হাসছো কেনো, কিংবা- হাসির কিছু নেই এতে, তখন সে সারা শরীর দুলিয়ে আট-দশ সেকেন্ড ধরে বেশ করে নিঃশব্দ হেসে নেয়। আমি তখন মুখ গম্ভীর করে আট-দশ সেকেন্ড দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকি। তারপর হঠাৎই যখন তার হাসি বন্ধ হয়ে যায়, তখন আবার- to talk about the person already referred to, ইত্যাদি পড়াতে থাকি।
সাদমানের বাসা হল চার নাম্বার রোডে। আমার বাসা থেকে বের হয়ে সামনে তাকালেই চার নাম্বার রোড। কিন্তু ঐ রোডের প্রথম দুই কদম (যেহেতু আমাদের পরিচিত এক আন্টির বাড়ি) ছাড়া আমার আর কখনো সামনে আগানো হয় নি। আর কিছুদুর গেলেই ওর বাসা। এই এলাকায় পনরো বছর ধরে আছি, কিন্তু কখনো ওখানে যাওয়া হয় নি আগে !
সেদিন tense বুঝাতে গিয়ে যখন বললাম- এই যেমন আমি আজকে তোমার বাসায় আসতে গিয়ে দেখলাম রাস্তার ডান হাতে যে বাড়ি বানানো হচ্ছে, সেখান থেকে বৃষ্টির মত পানি পড়ছে, তাই আমাকে অনেক সাবধানে দৌড় দিয়ে ঐ অংশটুকু পার হতে হলো- তখন সে ব্যাপক হাসাহাসি শুরু করলো। একেবারে দুলে দুলে। কী কল্পনা করে হেসেছে আল্লাহ জানে। আমারও একটু হাসি পেয়ে গেলো। কিন্তু ভয়েই আমি সে হাসিকে কন্ট্রোল করলাম। কারণ, আমি ভয়ানক সব হাসি কন্ট্রোল করতে পারলেও মাঝে মাঝে হাসতে হাসতে আমার দম বন্ধ হবার মত অবস্থা হয়। শেষদিকে চোখে পানি চলে আসে, হাসি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে, এমনকি শরীর কাঁপতে থাকে।
একদিন যীনাত আমাকে এভাবে হাসিয়ে তো প্রায় মেরেই ফেলেছিলো। পরে যখন আমার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এলো আর শরীর কাঁপতে লাগলো, তখন ভয়েই যীনাত ভাগলো রুম থেকে।
............................................................................................
দুটো টিউশনি, সপ্তাহে কমপক্ষে তিন-তিন ছয় ঘন্টা সময় ব্যয় করা লাগে। গুলশান যাওয়া আসায় আমার সময় নষ্ট হয় অনেক। তারপর আর পড়াশুনার সময়ই থাকে না :( টাকা পাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু টাকা দিয়ে সময় কেনা যায় না।
time and money, waits for none.
............................................................................................
চারদিকে পাগল বেড়ে যাচ্ছে। বোহলুল, খলিফা হারুনকে বলেছিলো, প্রাসাদের ভিতরে থেকে বাইরে তাকালে দেখি পাগল, আর বাইরে থেকে প্রাসাদের ভিতরে তাকালেও তা-ই। সর্বত্রই পাগল।
আমিও তা-ই দেখছি। তবে বাসার বাইরে তাকালেই শুধু। বাইরে থেকে ভিতরে তাকাই নি। বাসার পাগলে সব একপদের- এক ঘরে বহু পীর, কিন্তু বাইরের বাকি সব পাগল একরকম।
গতরাতে যীনাতের সাথে সব পাগল নিয়ে আলোচনা করলাম। যীনাতের দেখা পাগল। আমার দেখা পাগল। আমাদের উভয়ের দেখা পাগল। সাম্প্রতিক পাগল, পুরনো পাগল, চেতন পাগল, অচেতন পাগল। আর বন্ধু পাগল আর বান্ধবী পাগল।
পাগলদের গল্প আরেকদিন হবে।
আজ এ পর্যন্তই।
নূরে আলম
অগাস্ট ২৬, ২০১১।
I think we are all a little bit crazy! And 'laughter is the best medicine' - hashi khushi thaka bhalo. beshi hasha bole kichu nai. (obossho amake manush bole ami beshi hashi.. maybe ei jonno amar kache mone hoy eta bhalo!)
উত্তরমুছুনar sayingta hocche - time and 'tide' waits for none. :)
ভাই, বেশি হাসা ভালো, কিন্ত বেশি হাসতে গিয়ে যদি আমার মত মরার অবস্থা হয় তো...
উত্তরমুছুনtime and tide- এটুকু ঠিকই জানি। কেনো দুইটা সাবজেক্ট থাকা সত্ত্বেও verb এর সাথে s হলো ? ছাত্রকে এগুলো পড়ালাম ক'দিন আগে।
ভাবলাম নতুন একটা কিছু বানাই। তাই আরকি ;(
হ্যা.... ছাত্র-ছাদ্রীদের নিয়ে এই এক সমস্যা। কতটুকু করলে বেশি হয়ে যায় আর কতটুকু হলে কম হয়ে যায়, সেটা ঠিক রাখা কঠিন।
উত্তরমুছুনচমৎকার পোস্ট।
উত্তরমুছুনপড়লাম আর হাসলাম।
আগামী পোস্ট(পাগলদের নিয়ে) এর অপেক্ষায় থাকলাম।
বিশেষ ঘোষনা : শিঘ্রই আসছে পাগলদের নিয়ে পোস্ট- "তুই পাগল না আমি পাগল ?" ;)
উত্তরমুছুনপেইজ লেআউট ক্রোমে ভাঙছে কেনো বুঝলাম না।
পেইজ লে আউট ক্রোমে ঠিক আছে মনে হয়। আমিতো দেখতেচিহ ঠিকাছে।
উত্তরমুছুনবাচ্চা পুলাপাইনরা কতো আজিব হয়! আমি তো এরকম আজিব ছিলাম না!
মনে হয় আমি উবুন্টু কনফিগার করতে গিয়ে ঝামেলা করে ফেলেছি।
উত্তরমুছুন(আপনি মনে হয় তাহলে বাচ্চা ছিলেন না কখনো, জন্মের পর থেকেই আমার মত তত্ত্বজ্ঞানী ;) )