সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম
যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ।

আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজুডিস থেকে সত্য গ্রহণের অনীহা, ইত্যাদি দুনিয়ার বুকে আল্লাহর কাজ আঞ্জাম দেয়ার পথে পরিপন্থী বলেই মনে হয়। আল্লাহ তা'আলা মানুষকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন, এবং মুসলমনাদের দায়িত্ব হলো ঐক্যবদ্ধভাবে সেই কাজ আঞ্জাম দেয়া। কিন্তু সেই কাজ আঞ্জাম দেয়ার পরিবর্তে অনেকেই অন্তর্কোন্দলে এত বেশি ব্যতিব্যস্ত যে, শত্রুকে চেনা ও জানার সুযোগ ও যোগ্যতা -- কোনোটিই হয়ে উঠছে না।

মুসলিম জাতির এই আভ্যন্তরীণ কোন্দল সাম্প্রতিক সময়ে ফেইসুবকে পর্যন্ত উঠে এসেছে (বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে)। এমনই কিছু চরমপন্থী ও নিন্দনীয় প্রচার-প্রপাগ্যান্ডা দেখে সত্যকে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি। তা থেকেই কিছুদিন আগে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব বিষয়ে কিছু জিনিস পরিষ্কারভাবে জানার চেষ্টা করেছি। দীর্ঘদিন যাবৎ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করছেন, এমন একজনের কাছে কিছু প্রশ্ন পাঠিয়েছিলাম, যার জবাব এখানে তুলে ধরছি। প্রশ্নগুলো ছিলো :

১. "গাদিরে খুম" এর বিষয়টি কী ?
২. খিলাফতের প্রথম তিন ইমাম সম্পর্কে শিয়া দৃষ্টিভঙ্গি কী ? প্রচলিত সুন্নি মতামতের সাথে মতানৈক্য কোথায় ?
৩. "বারো ইমাম" কারা, এবং তাদের ব্যাপারে শিয়া ও সুন্নিদের দৃষ্টিভঙ্গি কী ?
৪. হযরত আয়েশা (রা.) এর ব্যাপারে শিয়াদের প্রতি সুন্নি অ্যালিগেশানগুলো কী কী ?
৫. "১১৪টি সূরার কোরআনকে শিয়ারা মূল কোরআন মনে করে না, তাদের আরো কিছু সূরা আছে" -- এজাতীয় অ্যালিগেশান কিসের থেকে এসেছে বা এমনটা আগে শুনেছেন কিনা।

উত্তরটি হুবহু তুলে দেবার আগে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার প্রয়োজন বোধ করছি। আস্থাপূর্ণ উৎস মানুষের জ্ঞান অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এমন আস্থার ব্যক্তি বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু-শিক্ষক, দ্বীনি আলেম, সাহাবীগণ, নবীগণ এবং কুরআন পর্যন্ত বিস্তৃত। সবার পক্ষে সম্ভব নয় যে দীর্ঘ সময় জ্ঞান গবেষণা করে প্রয়োজনীয় সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নেবে। আমি এখানে যেই উত্তর তুলে ধরছি, সেটির সোর্স এর ব্যাপারে আমার আস্থা আছে। তবে অন্য কারো আস্থা না থাকাটাই স্বাভাবিক, এবং পাঠকদেরকে মুক্ত বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিতেই লেখাটিকে বিচার করতে অনুরোধ করছি। বিতর্ক, বিশেষত ফ্যালাসি এড়ানোর জন্য সোর্স অনুল্লেখিত রাখছি।
এছাড়াও, এই লেখার বিষয়বস্তুকে ডিফেন্ড করার জন্য আমি দায়বদ্ধ নই। তাছাড়া লেখায় শিয়া-সুন্নি উভয় মতামত নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে তুলনামূলকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
লেখার ভাষা তুলনামূলকভাবে কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু স্পর্শকাতর বিষয়ে সম্পাদনা করা থেকে বিরত থেকেছি।

-- নূরে আলম।
নভেম্বর ২, ২০১৩।
(নিচের লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।)

কয়েকটি সংবেদনশীল মাযহাবী প্রশ্নের জবাব

গ্বাদীরে খুমের ঘটনা

গ্বাদীরে খুম্‌ মক্কাহ্‌ থেকে মদীনাহ্‌ শরীফে যাবার পথে মক্কাহ্‌র অদূরবর্তী একটি নীচু জায়গা। হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ) বিদায় হজ্বের পর মদীনাহ্‌ ফিরে যাবার পথে ১৮ই যিল্‌হাজ্ব তারিখে গ্বাদীরে খুমে উপনীত হবার পর - যখন তাঁর সাথে হজ্ব করতে আসা ছ্বাহাবীদের অনেকে তাঁর আগে অনেক দূর চলে গিয়েছিলেন, অনেকে তাঁর থেকে পিছনে পড়ে ছিলেন এবং অনেকে তাঁর সাথে ছিলেন - তিনি তাঁর সাথের ছ্বাহাবীদের থামার জন্য নির্দেশ দিলেন, যারা আগে চলে গিয়েছিলেন তাঁদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য লোক পাঠালেন এবং যারা পিছনে পড়ে ছিলেন তাঁদের পৌঁছার জন্য অপেক্ষা করলেন। মরুভূমির প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে সকলে এসে পৌঁছার পর কয়েকটি উটের জিন্‌ একত্র করে একটি মঞ্চ তৈরী করা হলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ) হযরত ‘আলী (রাঃ)কে সাথে নিয়ে মঞ্চে উঠলেন এবং সকলের উদ্দেশে একটি ভাষণ দিলেন। এ ভাষণের শেষে তিনি হযরত ‘আলী (রাঃ)-এর হাত উঁচু করে তুলে ধরে বললেনঃ “আমি যার মাওলা, অতঃপর এই ‘আলী তার মাওলা।”
এ ঘটনাটি শিয়া-সুন্নী উভয় ধারার হাদীছ্‌-গ্রন্থসমূহে বিপুল সংখ্যক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যার সত্যতায় বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই এবং কোনো হাদীছ-বিশারদ সন্দেহ করেন নি। এ ভাষণের বিস্তারিত পাঠ (text) সম্পর্কে কিছু মতপার্থক্য থাকলেও ওপরে উদ্ধৃত মূল ঘটনা ও উপরোক্ত “আমি যার মাওলা, অতঃপর এই ‘আলী তার মাওলা।” বাক্যটি সম্পর্কে কোনোরূপ মতপার্থক্য নেই। মতপার্থক্য যা আছে তা হচ্ছে এ বাক্যে ব্যবহৃত “মাওলা” শব্দের তাৎপর্য সম্পর্কে।

আরবী ভাষায় ‘মাওলা’ একটি বহু-অর্থ জ্ঞাপক শব্দ। এর অর্থ মনিব, দাস, বন্ধু, অভিভাবক ও শাসক।
শিয়া মাযহাবের মতে, এখানে ‘মাওলা’ বলতে ‘অভিভাবক ও শাসক’ বুঝানো হয়েছে। কিন্তু সুন্নী আলেমদের মতে, এখানে ‘বন্ধু’ বুঝানো হয়েছে।
সুন্নী আলেমদের দাবীর জবাবে শিয়া আলেমদের বক্তব্য হচ্ছে, কোরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াত অনুযায়ী মুসলমানরা সকলেই পরস্পরের বন্ধু। এমতাবস্থায় হযরত ‘আলী (রাঃ)কে আলাদাভাবে মুসলমানদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত করানো, তা-ও ঐ প্রচণ্ড গরমের মধ্যে এতো বড় একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, বিচারবুদ্ধির (عقل Ñ reason) দৃষ্টিতে একটি বাহুল্য ও বাড়াবাড়িমূলক কাজ হিসেবে গণ্য হতে বাধ্য - যে ধরনের কাজ কোনো নবী-রাসূলের পক্ষেই সম্ভব নয়। অতএব, নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ) একটি গুরুদায়িত্ব পালনের জন্যই তপ্ত মরুর কষ্টকর পরিস্থিতিতে এ ধরনের একটি বিশাল সমাবেশ ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ কথাটি ঘোষণা করেন। আর যেহেতু তাঁকে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিলো যে, তিনি আর বেশীদিন বাঁচবেন না - বিদায় হজ্বের ভাষণে তিনি যেদিকে ইঙ্গিত করেছিলেন, সেহেতু ইন্তেকালের আগে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তি (মুসলিম উম্মাহ্‌র শাসক এবং পার্থিব ও দ্বীনী অভিভাবক)কে উম্মাহ্‌র সামনে পরিচিত করিয়ে যান।
শিয়া মাযহাবের পক্ষ থেকে তাদের এ ব্যাখ্যার সমর্থনে শিয়া-সুন্নী উভয় সূত্রে বর্ণিত আরো বহু হাদীছ ও ঐতিহাসিক ঘটনা এবং কোরআন মজীদের কোনো কোনো আয়াত উল্লেখ করা হয়।
এর মধ্যে একটি ঘটনা হচ্ছে এই যে, রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ) নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনের জন্য আদিষ্ট হওয়ার পর তিনি যখন গোপনে বাছাই করা লোকদের মধ্যে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন তার এক পর্যায়ে আল্লাহ তাঁকে স্বীয় ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন (সূরাহ্‌ আশ্‌-শু‘আরা : ২১৪)। তখন তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনকে তাঁর বাড়ীতে আপ্যায়ন করে ইসলামের দাওয়াত দেন। উক্ত মজলিসে তিনি সকলের সামনে হযরত ‘আলী (রাঃ)কে দ্বীনের কাজে তাঁর ওয়াযীর্‌ (বোঝা/ দায়িত্ব বহনকারী বা সহকারী), ওয়াছ্বী (trustee) ও খলীফাহ্‌ (প্রতিনিধি ও স্থলাভিষিক্ত) হিসেবে ঘোষণা করেন।
উভয় ধারার কাছে গ্রহণযোগ্য আরেকটি হাদীছ অনুযায়ী, রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ) হযরত ‘আলী (রাঃ)কে সম্বোধন করে এরশাদ করেনঃ “তোমার সাথে আমার সম্পর্ক হচ্ছে হারূনের সাথে মূসার সম্পর্কের ন্যায়, কিন্তু আমার পরে আর কোনো নবী নেই।”
উভয় সূত্রে বর্ণিত আরো কতক হাদীছ অনুযায়ী, রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ) এরশাদ করেনঃ “‘আলী আমা থেকে এবং আমি ‘আলী থেকেঃ ‘আলীকে যে ভালোবাসলো সে আমাকে ভালোবাসলো এবং আলীর সাথে যে দুশমনী করলো সে আমার সাথে দুশমনী করলো।”
রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ) বিভিন্ন যুদ্ধে যখন সেনাবাহিনী পাঠান তার অনেকগুলোতে হযরত ‘আলীকে সেনাপতি করে পাঠান এবং শীর্ষস্থানীয় ছ্বাহাবীগণকে তাঁর অধীনে যুদ্ধ করার জন্য পাঠান, কিন্তু যে সব যুদ্ধে অন্য কাউকে সেনাপতি করে পাঠান সে সব যুদ্ধে হযরত ‘আলীকে পাঠান নি, বরং তাঁকে নিজের কাছে রেখে দেন।

শিয়া মাযহাবের যুক্তি হচ্ছে, এ সব ঘটনা ও হাদীছ এটাই প্রমাণ করে যে, হযরত ‘আলী (রাঃ) ছিলেন রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর সহকারী এবং তাঁর দ্বারা পরবর্তী নেতা ও শাসক হিসেবে মনোনীত।
শিয়া মাযহাবের পক্ষ থেকে এ মর্মে বিচারবুদ্ধির (reason) দলীল উপস্থাপন করা হয় যে, যেহেতু রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর পরে আর কোনো নবী আসবেন না সেহেতু ইসলামী উম্মাহকে বিভ্রান্তি ও পথচ্যুতি থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীর গুণাবলীর অধিকারী নিষ্পাপ ও নির্ভুল নেতা ও শাসক মনোনীত হওয়া অপরিহার্য, আর এ ধরনের ব্যক্তি ছিলেন (পর্যায়ক্রমে) হযরত ‘আলী ও তাঁর বংশে আগত এগারো জন ইমাম। হযরত ‘আলী যে নিষ্পাপ ছিলেন তার প্রমাণ, কোরআন মজীদে রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর আহলে বাইতের পবিত্রতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে (সূরাহ্‌ আল্‌-আহযাব : ৩৩) এবং শিয়া-সুন্নী উভয় সূত্রের হাদীছ অনুযায়ী আহলে বাইত্‌ বলতে হযরত ফাতেমাহ্‌, হযরত ‘আলী, হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ)কে বুঝানো হয়েছে।
সুন্নীদের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর ইন্তেকালের পরে মুসলিম উম্মাহ্‌র জন্য কোরআন-সুন্নাহ্‌ই যথেষ্ট এবং তারা নিজেরাই নিজেদের নেতা নির্বাচন করতে পারে; আল্লাহর পক্ষ থেকে নেতা মনোনীত করার প্রয়োজন নেই। এর জবাবে শিয়াদের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত নিষ্পাপ ও নির্ভুল নেতা ব্যতীত অন্য নেতার ভুল না করার কোনোই নিশ্চয়তা নেই এবং ইসলামের ইতিহাস প্রমাণ করে যে, এ সব নেতারা ভুল করেছেন এবং মুসলিম উম্মাহ্‌র মধ্যে ফিতনাহ্‌-ফাসাদ, রক্তপাত ও গোম্‌রাহী (এমনকি খলীফাহকে হত্যার মতো ঘটনা) এ কারণেই ঘটেছে।
তাদের মতে, কোরআন নিজেই যথেষ্ট নয়; এর জন্য নিষ্পাপ ও নির্ভুল ব্যাখ্যাকারী ও বাস্তবায়নকারী প্রয়োজন, নচেৎ আল্লাহ জিব্‌রাঈলের মাধ্যমে সরাসরি কোরআন পাঠাতেন, কোরআনের সাথে রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)কে পাঠাতেন না। এছাড়া রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর ইন্তেকালের পরে চার জন খলীফাহ্‌ চার নিয়মে দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হয়েছেন - যাকে সঠিক বলে গ্রহণ করলে মানতে হবে যে, ইসলামে কোনো সুনির্দিষ্ট শাসকনিয়োগ পদ্ধতি নেই।

অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর পর কোরআন-সুন্নাহকে যথেষ্ট বলা হলেও প্রথম তিন খলীফাহ্‌ রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর খুব কম সংখ্যক হাদীছের সাথে পরিচিত ছিলেন, কারণ, তাঁদের কেউই নবুওয়াতের তেইশ বছর পুরোপুরি রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর সাহচর্যে ছিলেন না; একমাত্র হযরত ‘আলীই তাঁর পূর্ণাঙ্গ সাহচর্যে ছিলেন এবং এ সাহচর্যের কারণে কোরআনের পূর্ণাঙ্গ তাৎপর্য ও রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর সমগ্র সুন্নাতের সাথে পরিচিত ছিলেন - যে কারণে, (শিয়া-সুন্নী উভয় সূত্র অনুযায়ী) রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ) বলেছেনঃ “আমি জ্ঞানের নগরী, আর ‘আলী তার (তাতে প্রবেশের) দরযা।” তাছাড়া প্রথম খলীফাহ্‌ ও দ্বিতীয় খলীফাহ্‌ হাদীছ লিপিবদ্ধকরণ নিষিদ্ধ করেন এবং অনেক লিখিত হাদীছ পুড়িয়ে ফেলেন। কোনো কোনো শিয়া মনীষীর মতে, দু’টি কারণে তাঁরা হাদীছ্‌ লিপিবদ্ধকরণে বাধা সৃষ্টি করেন। একটি কারণ হচ্ছে এই যে, যেহেতু তাঁরা রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর সুন্নাতের জ্ঞানে পারদর্শী ছিলেন না সেহেতু বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভুল করতেন এবং সুন্নাতের জ্ঞানে পারদর্শী ছ্বাহাবীগণ তাঁদেরকে শুধরে দিতেন (যার অনেক দৃষ্টান্ত সুন্নী ঐতিহাসিক সূত্রে উল্লিখিত হয়েছে), এমতাবস্থায় হাদীছ লিপিবদ্ধ করা হলে তাঁদেরকে সুন্নাত্‌-বিশেষজ্ঞ ছ্বাহাবীদের ওপর আরো বেশী নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হতো এবং তা খলীফাহ্‌ হিসেবে তাঁদের মর্যাদাকে ম্লান করে ফেলতো। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে এই যে, সুন্নাত্‌ লিপিবদ্ধ করা হলে তা অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের নিজস্ব বিবেচনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতো। তাই তাঁরা হাদীছ্‌ লিপিবদ্ধকরণ নিষিদ্ধ করে অধিকতর স্বাধীনতা ভোগ করতে চেয়েছিলেন। আর তাঁরা যে সব সময় সুন্নাতের অনুসরণ করেন নি তার প্রমাণ হযরত ওমর (রাঃ)-এর পরে হযরত ‘আলী (রাঃ)কে দুই খলীফাহ্‌র নীতি অনুসরণ করার শর্তে খলীফাহ্‌ করার প্রস্তাব দেয়া হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এমনকি হাদীছ্‌ লিপিবদ্ধকরণ নিষিদ্ধের পিছনে নিহিত তাঁদের উদ্দেশ্য যদি ভালোও হয়ে থাকে তথাপি তা ছিলো বিরাট একটি ভুল কাজ যার ফলে পরবর্তীকালে হাজার হাজার জাল হাদীছ রচিত হওয়া সহ মুসলিম উম্মাহ্‌র মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তি ও মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছিলো; যেহেতু তাঁরা আল্লাহর মনোনীত নিষ্পাপ ও নির্ভুল নেতা এবং রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর যথার্থ স্থলাভিষিক্ত ছিলেন না এ কারণেই তাঁরা এতো বড় ভুল করেছিলেন।

প্রথম তিন খলীফাহ্‌ সম্বন্ধে শিয়া মাযহাবের দৃষ্টিভঙ্গি

এতদসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব ওপরের আলোচনা থেকে অনেকটাই সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখানে আরো কিছুটা আলোকপাত করছি।
সুন্নী মাযহাব সমূহের ওলামায়ে কেরাম সাধারণতঃ রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর ইন্তেকালের পরে পর্যায়ক্রমে ইসলামী হুকুমতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত প্রথম চার খলীফাহকে “খুলাফায়ে রাশেদীন” (সঠিক পথানুসারী খলীফাহ্‌গণ) বলে অভিহিত করে থাকেন। [এটা একটা রাজনৈতিক উপাধি, আল্লাহ বা রাসূল (ছ্বাঃ)-এর কাছ থেকে প্রাপ্ত নয়।] কিন্তু ‘সাধারণভাবে’ শিয়া মাযহাবের অনুসারীরা প্রথম তিন খলীফাহকে বৈধ গণ্য করে না। আর তা না করার কারণ ওপরের আলোচনায় উল্লিখিত হয়েছে। যেহেতু তারা হযরত ‘আলী (রাঃ) ও তাঁর বংশে আগত আরো এগার জন ইমামকে মুসলিম উম্মাহ্‌র জন্য আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মনোনীত ও রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর মাধ্যমে ঘোষিত ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয়-রাজনৈতিক নেতা মনে করে সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই তারা তিন খলীফাহকে অবৈধ শাসক গণ্য করে থাকে।

তবে শিয়া মাযহাবের অন্যতম গৌণ ধারা ‘যায়েদীয়াহ্‌’ প্রথম দুই খলীফাহকে বৈধ গণ্য করে। অন্যদিকে শিয়া মাযহাবের মূল ধারা অর্থাৎ ইছনা'আশারীয়াহ্‌ বা ‘বারো ইমামী’ ধারা সাধারণভাবে প্রথম তিন খলীফাহকে অবৈধ গণ্য করলেও বর্তমান ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ধর্মীয়-রাজনৈতিক নেতাদের অনেকে প্রথম তিন খলীফাহ্‌র শাসনকে যোগ্যতম ব্যক্তির উপস্থিতিতে ন্যূনতম যোগ্যতার অধিকারী ব্যক্তির নামাযে ইমামতী করার সাথে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ তাঁদের মতে, হযরত ‘আলী (রাঃ)-এর উপস্থিতিতে প্রথম তিন খলীফাহকে খেলাফতে অধিষ্ঠিতকরণ ছিলো ঐ ধরনের ভুল পদক্ষেপ যার ফলে তাঁদের শাসন অবৈধ না হলেও তাঁদের শাসনামলে ইসলামী উম্মাহ্‌ উপযুক্ততম ব্যক্তির শাসনের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলো। তাঁরা আরো বলেন, উপযুক্ততম, এমনকি আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত নেতার নেতৃত্ব ও শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে উম্মাহ্‌ কর্তৃক তাঁকে “আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত নেতা ও শাসক” হিসেবে চিনতে পারা; যারা চিনতে পেরেছে তাদের জন্য তাঁর নেতৃত্ব মেনে নেয়া ফরয (এবং চিনতে পারা সত্ত্বেও মেনে না নিলে তা হবে নেফাক্ব), কিন্তু যারা চিনতে পারে নি তাদের ওপর এ ব্যাপারে কোনো দায়িত্ব নেই। এমতাবস্থায় ছ্বাহাবীদের মধ্যে অনেকেই হয়তো হযরত ‘আলী (রাঃ)-এর নেতৃত্ব ও শাসনকর্তৃত্বকে ফরয বলে মনে করেন নি।
তবে বারো ইমামী শিয়া মাযহাবের অতীতের আলেমগণ মনে করতেন (এবং সম্ভবতঃ বর্তমান আলেমদেরও একটি বিরাট অংশ মনে করেন) যে, হযরত ‘আলী (রাঃ)-এর পরিবর্তে প্রথম তিন খলীফাহকে শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিতকরণের বিষয়টি সচেতনভাবে ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়েছিলো অর্থাৎ এর পিছনে ইসলামপূর্ব যুগের গোত্রপ্রীতির অবশিষ্ট প্রভাব কাজ করেছিলো। অর্থাৎ নেতৃত্ব ও শাসনকর্তৃত্বকে বানী হাশেমের [রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর বংশের] হাত থেকে বের করে নেয়ার উদ্দেশ্যেই এটা করা হয়েছিলো।

তাঁরা তাঁদের এ মতের সপক্ষে গ্বাদীরে খুমের ঘটনা ছাড়াও আরো অনেক যুক্তি উপস্থাপন করে থাকেন। গ্বাদীরে খুমে রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর উক্তি সম্পর্কে তাঁদের কথা এই যে, এমনকি এতে হযরত ‘আলী (রাঃ)-এর নেতা ও শাসক মনোনীত হওয়ার বিষয়টিকে যদি কেউ অকাট্য বলে মনে না-ও করে তথাপি যেহেতু এটাও একটা সম্ভাবনা এবং রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ) আন্য কারো ব্যাপারে এ ধরনের কথা (অন্ততঃ এরূপ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে) বলেন নি, সেহেতু ইসলামের নীতিমালার অন্যতম ‘সতর্কতার নীতিমালা’ অনুযায়ী তাঁকেই খলীফাহ্‌ করা উচিত ছিলো; তা না করে উম্মাতের ভবিষ্যতকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেন।
তিন খলীফাহ্‌র খেলাফতে অধিষ্ঠানের প্রক্রিয়ার ত্রুটি ও দুর্বলতাও তাঁদের অন্যতম যুক্তি। হযরত ‘আলী (রাঃ) সহ বানী হাশেমের বিশিষ্ট ছ্বাহাবীগণ যখন রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করার কাজে ব্যস্ত তখন তাঁদেরকে বাদ দিয়ে কিছু সংখ্যক ছ্বাহাবী একত্রিত হয়ে হযরত ওমরের (রাঃ) প্রস্তাবক্রমে হযরত আবূ বকর (রাঃ)কে খলীফাহ্‌ নির্বাচন করেন এবং এ সংবাদ সর্বত্র প্রচার করেন, ফলে অন্য ছ্বাহাবীগণ কোনোরূপ চিন্তাভাবনার অবকাশ না পেয়ে ‘ইতিমধ্যেই নির্বাচিত খলীফাহ্‌’ হিসেবে তাঁর পক্ষে বাই‘আত্‌ করেন। তাঁদের মতে, রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর কাফন-দাফনে অংশ না নিয়ে, বানী হাশেমকে বাদ দিয়ে এবং মসজিদে নববীর পরিবর্তে অন্যত্র বসে অল্প সংখ্যক ছ্বাহাবীকে নিয়ে খলীফাহ্‌ নির্বাচনের বিষয়টি ছিলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত।

এখানে উল্লেখ্য যে, ইসলাম গ্রহণ ও পালন এবং ইসলামের জন্য নিষ্ঠা ও ত্যাগ স্বীকারের ক্ষেত্রে বানী হাশেমের লোকেরা সকলের তুলনায় অগ্রগণ্য ছিলেন। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের প্রতি, বিশেষ করে আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা পোষণকে মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য করেছেন এবং একে রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর দ্বীনী দাওয়াতের পারিশ্রমিক হিসেবে গণ্য করেছেন, এরশাদ হয়েছেঃ “(হে রাসূল!) বলুন, আমি এর (নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনের জন্য) জন্য আমার ঘনিষ্ঠ স্বজনদের প্রতি ভালোবাসা ব্যতীত কোনো পারিশ্রমিক চাই না।” (সূরাহ্‌ আশ্‌-শূরা : ২৩)
সুন্নীদের দৃষ্টিতে হযরত ‘আলী (রাঃ) খুলাফায়ে রাশেদীনের অন্যতম এবং হযরত ফাতেমাহ্‌ (রাঃ) নারীকুলের শ্রেষ্ঠ ও বেহেশতে নারীদের নেত্রী - যার মর্যাদা হযরত মার্‌ইয়াম্‌ (‘আঃ)-এরও ওপরে। কিন্তু তাঁরা উভয় ও বানী হাশেমের ছ্বাহাবীগণ হযরত আবূ বকর(রাঃ)কে খলীফাহ্‌ হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন, কারণ, তাঁরা খেলাফতের অধিকার হযরত ‘আলী (রাঃ)-এর বলে মনে করতেন। তাঁদের এ অস্বীকৃতি এবং হযরত ফাতেমাহ্‌র গৃহে আশ্রয় গ্রহণের কারণে হযরত ওমর হযরত ফাতেমাহ্‌র গৃহে আগুন দিতে চেয়েছিলেন। পরে অন্যরা চাপের মুখে (অনেককে বন্দী করে নেয়া হয়েছিলো) বাই‘আত্‌ করলেও হযরত ফাতেমাহ্‌ ও হযরত ‘আলী (রাঃ) বাই‘আত্‌ করেন নি। হযরত ফাতেমাহ্‌ সুস্পষ্ট ভাষায় হযরত আবূ বকরের খেলাফতকে অবৈধ বলেন, তাঁর সাথে বিতর্ক করেন এবং তাঁর প্রতি অসন্তুষ্টি ঘোষণা করেন। তাঁর অসন্তুষ্টির গুরুত্ব এখানে যে, শিয়া-সুন্নী উভয় ধারার হাদীছ্‌ অনুযায়ী, রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ) এরশাদ করেছেনঃ “ফাতেমাহ্‌র সন্তুষ্টিতে আমার সন্তুষ্টি, আর আমার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং ফাতেমাহ্‌র অসন্তুষ্টিতে আমার অসন্তুষ্টি, আর আমার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।”
হযরত ফাতেমাহ্‌ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর ইন্তেকালের পর মোটামুটি ছয় মাসের মতো বেঁচে ছিলেন। এ সময় তিনি হযরত আবূ বকর (রাঃ)-এর অনুকূলে বাই‘আত্‌ করা তো দূরের কথা, প্রতিবাদস্বরূপ তাঁর সাথে কথা বলা থেকেও বিরত থাকেন। অন্ততঃ এ ছয় মাসের মধ্যে হযরত ‘আলী (রাঃ)-ও বাই‘আত্‌ করেন নি; এর পরে তিনি বাই‘আত্‌ হয়েছেন কিনা তার কোনো অকাট্য প্রমাণ নেই, তবে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ্‌র বৃহত্তর স্বার্থে তিনি হযরত আবূ বকর (রাঃ)কে (এবং পরবর্তী দুই খলীফাহকেও), বিশেষ করে ফিক্বহী ও বিচারিক বিষয়াদিতে ইসলামের সঠিক বিধান ব্যক্ত করে সহযোগিতা করেছেন।

প্রথম খলীফাহ্‌ হযরত আবূ বকর (রাঃ) অল্প সংখ্যক ছ্বাহাবী কর্তৃক নির্বাচিত হলেও তিনি তাঁর পরবর্তী খলীফাহ্‌র পদে হযরত ওমরকে মনোনীত করে যান এবং এটাকেও ছ্বাহাবীগণ ‘সম্পাদিত কাজ’ হিসেবে মেনে নেন। অর্থাৎ সুন্নীদের দাবী অনুযায়ী জনগণ কর্তৃক নির্বাচনের ধারণা এখানেও বাস্তবায়িত হয় নি। অনেক শিয়া মনীষীর মতে, যেহেতু হযরত ওমরের চেষ্টায়ই হযরত আবূ বকর খলীফাহ্‌ হয়েছিলেন সেহেতু তিনি ওমরকে খলীফাহ্‌ করে এর প্রতিদান দিয়েছেন এবং ‘আলীর অধিকারকে উপেক্ষা করেছেন। আর হযরত ওমর (রাঃ) ইন্তেকালের পূর্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়ে তাঁদের নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে খলীফাহ্‌ করার জন্য ‘অলঙ্ঘনীয়’ নির্দেশ দিয়ে যান (অর্থাৎ এখানেও জনগণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার ছিলো না)
কমিটি প্রথমে হযরত ‘আলী (রাঃ)কে এ শর্তে খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানায় যে, তিনি আল্লাহর কোরআন, রাসূলের সুন্নাত্‌ ও পূর্ববর্তী দুই খলীফাহ্‌র অনুসৃত নীতি অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করবেন। কিন্তু হযরত ‘আলী (রাঃ) বলেন যে, তিনি খলীফাহ্‌ হলে কোরআন, সুন্নাতে রাসূল (ছ্বাঃ) ও এরপর তাঁর নিজের বিচারবুদ্ধি অনুযায়ী শাসনকার্য চালাবেন। অর্থাৎ তিনি পূর্ববর্তী দুই খলীফাহ্‌র সকল নীতিকে সঠিক মনে করতেন না। এমতাবস্থায় হযরত ওসমান (রাঃ) কমিটির শর্ত মেনে নিয়ে খলীফাহ্‌ হন, কিন্তু তিনি যেভাবে শাসনকার্য চালান তাতে দেশে অসন্তোষ ও শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহ সৃষ্টি হয় এবং হযরত আবূ বকর (রাঃ)-এর পুত্র আবদুর রহমান বিন্‌ আবূ বকর সহ শীর্ষস্থানীয় অনেক ছ্বাহাবীর নেতৃত্বে হাজার হাজার ছ্বাহাবীর অংশগ্রহণে সৃষ্ট গণ-অভ্যুত্থানে হযরত ওসমান (রাঃ) নিহত হন। এরপর সর্বস্তরের জনগণ পরবর্তী খলীফাহ্‌ হিসেবে হযরত ‘আলী (রাঃ)কে নির্বাচিত করে। এই প্রথম বারের মতো আক্ষরিক অর্থে জনগণ খলীফাহ্‌ নির্বাচিত করলো।

বারো ইমাম

বারো ইমামী শিয়া তথা শিয়া মাযহাবের মূল ধারার অনুসারীদের মতে, রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর পরে পর্যায়ক্রমিকভাবে মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং শাসনকর্তৃত্বের জন্য আল্লাহ তা‘আলা বারো জন নিষ্পাপ ও নির্ভুল ব্যক্তিত্বকে মনোনীত করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর মাধ্যমে ঘোষণা করেছেন। তাঁরা হলেন যথাক্রমে হযরত ‘আলী (রাঃ), তাঁর পুত্রদ্বয় হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) ও হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ), হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ)-এর পুত্র হযরত ইমাম যায়নুল ‘আবেদীন (ওরফে ইমাম সাজ্জাদ), তাঁর পুত্র হযরত ইমাম বাক্বের, তাঁর পুত্র হযরত ইমাম জা‘ফার্‌ ছ্বাদেক্ব, তাঁর পুত্র হযরত ইমাম মূসা কাযেম্‌, তাঁর পুত্র হযরত ইমাম রেযা, তাঁর পুত্র হযরত ইমাম মুহাম্মাদ তাক্বী, তাঁর পুত্র হযরত ইমাম ‘আলী নাক্বী, তাঁর পুত্র হযরত ইমাম হাসান ‘আসকারী ও তাঁর পুত্র হযরত ইমাম মাহ্‌দী (‘আঃ)
এদের মধ্যে হযরত ‘আলী (রাঃ) মসজিদে নামাযরত অবস্থায় খারেজী নামে পরিচিত একটি বিভ্রান্ত গোষ্ঠীর সদস্য জনৈক ব্যক্তির তলোয়ারের আঘাতে আহত হয়ে শহীদ হন, হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ) কারবালায় ইয়াযীদী বাহিনীর হাতে শহীদ হন, শিয়া মাযহাবের সূত্র অনুযায়ী হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) সহ নয় জন ইমাম তাঁদের সমসাময়িক উমাইয়াহ্‌ ও ‘আব্বাসী শাসকদের ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগের ফলে শহীদ হন এবং এখন থেকে সহস্রাধিক বছর পূর্বে জন্মগ্রহণকারী হযরত ইমাম মাহ্‌দী (‘আঃ) আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় দীর্ঘ জীবন লাভ করে আত্মগোপনরত অবস্থায় এখনো বেঁচে আছেন এবং যথোপযুক্ত সময়ে আত্মপ্রকাশ করবেন।
সুন্নীদেরও কতক হাদীছে রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ) কর্তৃক তাঁর বংশে বারো জন ইমামের আবির্ভাব সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীর কথা উল্লিখিত হয়েছে, তবে এ সব হাদীছের গ্রহণযোগ্যতা সম্বন্ধে সুন্নী আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু এ সত্ত্বেও শিয়াদের প্রতিপক্ষ সুন্নী ধারায় এ ধরনের হাদীছের অস্তিত্ব যথেষ্ট গুরুত্ববহ।

ইতিপূর্বে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, কোরআন মজীদে রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর আহলে বাইতের পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে। শিয়াদের মতে, আহলে বাইত্‌ বলতে হযরত ফাতেমাহ্‌ (রাঃ) ও উক্ত বারো জন ইমামকে বুঝানো হয়েছে। সুন্নী আলেমগণ এ দাবীটি সম্পর্কে সাধারণতঃ নীরব থাকেন। কিন্তু হযরত ফাতেমাহ্‌, হযরত ‘আলী, হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ)-এর আহলে বাইত্‌-এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি বিতর্কের উর্ধে। তাই হযরত ‘আলী (রাঃ)-এর পরে হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ)-এর মুসলিম উম্মাহ্‌র নেতৃত্ব ও শাসনকর্তৃত্বের অধিকারের বিষয়ে দ্বিমত নেই।
উল্লেখ্য, সুন্নীদের জুম্‌‘আহ্‌ ও ঈদের খোত্‌বায় বিশেষভাবে আহলে বাইতের এ চার ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়। আরো স্মর্তব্য যে, হানাফীদের (যারা সুন্নীদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ) নামাযের দরূদে আলে মুহাম্মাদ্‌-এর প্রতি দরূদ প্রেরণ করা হয় (শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বালী মাযহাবেও তা-ই কিনা তা অনুসন্ধানের বিষয়), আর এ দরূদে আলে মুহাম্মাদকে আলে ইবরাহীমের (যারা ছিলেন নবী, অতএব, নিষ্পাপ ও নির্ভুল) সাথে তুলনা করা হয়েছে।
এছাড়া এ চার ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে সুন্নী ধারার হাদীছে উল্লিখিত আছে যে, হযরত আদম (‘আঃ) নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার পর যখন কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না তখন তিনি ‘আরশের দিকে মনোনিবেশ করলে সেখানে পাঁচটি নূরানী ছায়ামূর্তি বা নাম দেখতে পান এবং আল্লাহর কাছে জানতে চান যে, এরা কা‘রা। তখন আল্লাহ বলেন, এরা তোমার বংশে আসবে এমন পাঁচ ব্যক্তি যাদেরকে সৃষ্টির সিদ্ধান্ত না নিলে আমি কিছুই সৃষ্টি করতাম না। তখন আদম (‘আঃ) তাঁদেরকে উসীলাহ্‌ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ আদম ও হাওয়া (‘আঃ)কে ক্ষমা করে দেন। এ পাঁচটি নাম (বা নূরানী ছায়ামূর্তি) : মুহাম্মাদ, ‘আলী, ফাতেমাহ্‌, হাসান ও হোসেন।
এ সব দলীল থেকে ইসলামে এ চার ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান বুঝা যায়।

এরপর, সুন্নী সমাজে সাধারণভাবে হযরত ইমাম যায়নুল ‘আবেদীন্‌ (রঃ)কে খুবই ভক্তি ও ভালোবাসার সাথে স্মরণ করা হয় এবং তাঁর নাম ‘ইমাম’ শব্দ সহকারে উল্লেখ করা হয় এবং তাঁর যুগে তাঁর চেয়ে অধিকতর উত্তম কোনো লোক তথা তাঁর চেয়ে বড় কোনো অলি-আল্লাহ ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় না। এর মানে হচ্ছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত মনে করা হোক বা না হোক, তাঁর যুগে দ্বীন-দুনিয়ার নেতৃত্বের অধিকার তাঁরই ছিলো বলে সুন্নীদের পক্ষ থেকে পরোক্ষভাবে স্বীকার করা হয়।
হযরত ইমাম বাক্বের (রঃ) ছিলেন স্বীয় যুগে সবচেয়ে বড় আলেম এবং দ্বীনী দৃষ্টিতে তাঁর চেয়ে যোগ্য কেউ ছিলেন না; সুন্নী আলেমগণ তাঁর নাম ‘ইমাম’ শব্দ সহকারে উল্লেখ করে থাকেন। অর্থাৎ তাঁর যুগে তিনি ছিলেন দ্বীন-দুনিয়ার নেতৃত্বের জন্য যোগ্যতম ব্যক্তি। কোনো কোনো মতে, হযরত ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ স্বল্পকালের জন্য হলেও তাঁর ছাত্র ছিলেন বা নিদেন পক্ষে তাঁর শিক্ষাদান মজলিসে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ কারণে তিনি সুন্নী সমাজের কাছেও বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র।
হযরত ইমাম জা‘ফার্‌ ছ্বাদেক্ব (রঃ)কে-ও সুন্নী আলেমগণ ‘ইমাম’ শব্দ সহকারে উল্লেখ করে থাকেন। তিনি কেবল স্বীয় যুগেরই শ্রেষ্ঠতম জ্ঞানী ছিলেন না, বরং রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ) ও হযরত ‘আলী (রাঃ)-এর পরে সম্ভবতঃ তিনি ছিলেন মানব জাতির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম জ্ঞানী। হযরত ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) দুই বছর তাঁর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) বলেনঃ “আমি জা‘ফার্‌ ইবনে মুহাম্মাদের চেয়ে বড় কোনো আলেমকে দেখি নি।” হযরত ইমাম মালেক (রঃ)-ও ইমাম জা‘ফার্‌ ছ্বাদেক্ব (রঃ)-এর ছাত্র ছিলেন। নিঃসন্দেহে ইমাম জা‘ফার্‌ ছ্বাদেক্ব (রঃ) ছিলেন স্বীয় যুগে দ্বীন-দুনিয়ার নেতৃত্বের জন্য যোগ্যতম ব্যক্তি। কিন্তু ইমাম মালেক স্বৈরাচারী ‘আব্বাসী খলীফাহ্‌ মান্‌ছূরের সাথে সমঝোতায় পৌঁছার পর ইমাম জা‘ফার্‌ ছ্বাদেক্ব (রঃ)-এর কাছ থেকে দূরে সরে যান। অন্যদিকে ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) মানছূরের সাথে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করায় তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়; অতঃপর তাঁর শিষ্য আবূ ইউসুফ্‌ ও মুহাম্মাদ্‌ বিন্‌ হাসান্‌ শায়বানী তাঁর নীতির বরখেলাফ করে মান্‌ছূরের সাথে সহযোগিতা করেন এবং ইমাম জা‘ফার্‌ ছ্বাদেক্ব (রঃ) এর থেকে দূরে সরে গিয়ে ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ)-এর নাম ব্যবহার করে হানাফী মাযহাব তৈরী করেন। বস্তুতঃ এভাবেই আহলে বাইতের ইমামগণের ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সুন্নী ধারা গড়ে তোলা হয়।
পরবর্তী পাঁচ জন ইমাম সম্পর্কে সুন্নী সমাজে তেমন একটা আলোচনা নেই, অবশ্য অনেক সুন্নী আলেমের কাছেই হযরত ইমাম রেযা (রঃ)-এর জ্ঞানগত যোগ্যতা একটি স্বীকৃত বিষয়। সুন্নী সমাজে সামগ্রিকভাবে তাঁদের সম্পর্কে সতর্কতার নীতি অবলম্বন করা হয়, অর্থাৎ তাঁদের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ভাষায় প্রশংসামূলক তেমন কিছু উল্লেখ করা না হলেও তাঁদের প্রসঙ্গ এলে সসম্মানে তাঁদের কথা উল্লেখ করা হয়।

হযরত ইমাম মাহ্‌দী (‘আঃ) সম্পর্কে সুন্নী সমাজে ভিন্ন মত রয়েছে। যদিও সুন্নী ধারার কোনো কোনো হাদীছে হযরত ইমাম হাসান ‘আসকারী (রঃ)-এর পুত্রকেই হযরত ইমাম মাহ্‌দী (‘আঃ) বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে সাধারণভাবে সুন্নী সমাজে বিরাজমান ধারণা হচ্ছে এই যে, হযরত ইমাম মাহ্‌দী (‘আঃ) এখনো জন্মগ্রহণ করেন নি; তিনি পরে জন্মগ্রহণ করবেন। অবশ্য এ ধারণার পিছনে অকাট্য দলীল নেই।
হযরত ইমাম মাহ্‌দী (‘আঃ) সম্পর্কে শিয়া-সুন্নী উভয় ধারার অসংখ্য হাদীছে শেষ যুগে মদীনাহ্‌র মসজিদে নববী থেকে তাঁর আত্মপ্রকাশ এবং বিশ্বব্যাপী ইসলামী বিপ্লব ও শাসন প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও সুন্নী ধারার হাদীছে আত্মপ্রকাশের আগে তাঁর জীবন কেমন হবে ও তাঁর তৎপরতা কী হবে সে সম্পর্কে কোনো কথা নেই। কিন্তু শিয়া ধারার হাদীছ্‌ অনুযায়ী হযরত ইমাম মাহ্‌দী (‘আঃ)-এর বয়স পাঁচ বছর হলে তাঁর পিতা হযরত ইমাম হাসান ‘আসকারী (রঃ) ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের সময় তাঁর দেয়া নির্দেশ অনুযায়ী হযরত ইমাম মাহ্‌দী (‘আঃ)কে গোপন করে রাখা হয় এবং তিনি হযরত ইমাম হাসান ‘আসকারী (রঃ)-এর চার জন ঘনিষ্ঠ শিষ্যের মাধ্যমে শিয়াদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। এ সময়টাকে ‘সংক্ষিপ্ত আত্মগোপনকাল’ বলা হয় - যার মেয়াদ ষাট বছর। উপরোক্ত চার ব্যক্তির মধ্যকার সর্বশেষ ব্যক্তি মারা গেলে তিনি পুরোপুরি আত্মগোপন অবস্থা পরিগ্রহণ করেন এবং এখনো সে অবস্থায় আছেন; একে ‘দীর্ঘ আত্মগোপনকাল’ বলা হয়। এখানে ‘আত্মগাপন’ মানে পুরোপুরি লোকচক্ষুর অন্তরালে অবস্থান নয়, বরং লোকদের কাছে স্বীয় পরিচয় প্রকাশ না করা; হয়তো তিনি ভিন্ন পরিচয়ে সমাজেই বসবাস করছেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করছেন, বিশেষ করে দ্বীনী ও রাজনৈতিক বিষয়াদিতে মতামত দিচ্ছেন।

হযরত ইমাম মাহদী (‘আঃ)-এর দীর্ঘ জীবন সম্বন্ধে শিয়া মাযহাবের ব্যাখ্যা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তা‘আলা চাইলে যে কাউকে দীর্ঘজীবী করতে পারেন এবং মানব জাতির ইতিহাসে বহু দীর্ঘজীবী মানুষের কথা জানা যায়, যেমন, কোরআন মজীদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত নূহ্‌ (‘আঃ) সাড়ে নয়শ’ বছর দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছিলেন। হযরত খিযির (‘আঃ)-এর দীর্ঘ জীবনও মশহূর বিষয়। আর আল্লাহ যেহেতু হযরত ইমাম মাহ্‌দী (‘আঃ)-এর মাধ্যমে তাঁর বিশেষ এক সৃষ্টিলক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চান সেহেতু পরিস্থিতির প্রয়োজনে তিনি তাঁকে দীর্ঘজীবী করবেন এটাই স্বাভাবিক।

হযরত ‘আয়েশাহ্‌ (রাঃ) সম্পর্কে শিয়া দৃষ্টিভঙ্গি

হযরত ‘আয়েশাহ্‌ (রাঃ) সহ রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর বিবিগণ সম্বন্ধে সুন্নীদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে নেহায়েতই অন্ধ ভক্তিমূলক - যার পিছনে কোনো অকাট্য দলীল নেই। কিন্তু শিয়া মাযহাবের অনুসারীগণ হযরত খাদীজাহ্‌ (রাঃ) ব্যতীত তাঁদের অন্য কারো সম্পর্কে এরূপ কোনো অন্ধ ভক্তি পোষণ করে না। [হযরত খাদীজাহ্‌ (রাঃ) এর ব্যতিক্রম। কারণ, শিয়া-সুন্নী উভয় ধারার হাদীছে তাঁকে মানবকুলের চারজন শ্রেষ্ঠতমা নারীর অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।]
অবশ্য কোরআন মজীদে রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর বিবিগণকে মু’মিনদের মা অর্থাৎ মাতৃতুল্য সম্মানার্হ (অর্থাৎ সম্মানের যোগ্য) বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর ইন্তেকালের পরে তাঁদের কাউকে বিবাহ করা উম্মাতের জন্য হারাম করা হয়েছে। কিন্তু মু’মিনদের মা হিসেবে সম্মানার্হ হওয়ার মানে এনে নয় যে, তাঁরা অনিবার্যভাবে নিষ্পাপ ও নির্ভুল হবেন; কোরআনে বা হাদীছে তাঁদের জন্য এরূপ কোনো মর্যাদা উল্লেখ করা হয় নি। তাঁদেরকে আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্তও গণ্য করা হয় নি, অর্থাৎ তাঁদের পবিত্রতা বা নিষ্পাপত্বের কথা বলা হয় নি। আখেরাতে তাঁদেরকে তাঁদের আমলের ভিত্তিতে দেখা হবে।

কোরআন মজীদে তাঁদের দ্বারা গুনাহ্‌ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা অস্বীকার করা হয় নি। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেনঃ “হে নবী! আপনার স্ত্রীদেরকে বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার সৌন্দর্য (ভোগ-বিলাসিতা) কামনা কর তাহলে এসো, আমি তোমাদেরকে ভোগ্য উপকরণাদির ব্যবস্থা করে দেই এবং তোমাদেরকে উত্তমভাবে বিদায় করে দেই। আর তোমরা যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে এবং পরকালের গৃহকে কামনা কর তাহলে অবশ্যই (জেনো যে,) আল্লাহ তোমাদের মধ্যকার উত্তম কর্ম সম্পাদনকারীদের জন্য মহাপুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন। হে নবী-পত্নীগণ! তোমাদের মধ্য থেকে যে প্রকাশ্যে অশস্নীল কাজ করবে তাকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে এবং এটা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ।” (সূরাহ্‌ আল্‌-আহ্‌যাব : ২৮-৩০)
কোরআন মজীদের সূরাহ্‌ আত্‌-তাহ্‌রীম্‌ থেকে জানা যায় যে, হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) তাঁর কোনো একজন স্ত্রীর কাছে একটি গোপন কথা বললে তিনি গোপনীয়তা ভঙ্গ করে তা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর অপর এক স্ত্রীর কাছে বলে দেন। এছাড়া তাঁর দুই স্ত্রী [যথাসম্ভব ঐ দু’জনই অর্থাৎ যারা একজন আরেক জনের কাছে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর গোপন কথা বলে দিয়েছিলেন] “রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে” পরস্পরকে সাহায্য করতে তথা তাঁর বিরুদ্ধে কোনো একটি বিষয়ে চক্রান্ত করতে যাচ্ছিলেন। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে কঠোর ভাষায় তিরষ্কার করেন ও সতর্ক করে দেন এবং তাওবাহ্‌ করার জন্য নছ্বীহত্‌ করেন। সুন্নী সূত্রের হাদীছ্‌ অনুযায়ী এ দু’জন ছিলেন হযরত ‘আয়েশাহ্‌ (রাঃ) ও হযরত হাফ্‌ছ্বাহ্‌ (রাঃ)[পবিত্র কোরআনুল্‌ করীম - মুফতী মুহাম্মাদ শফীর তাফসীরের মাওলানা মুহিউদ্দন খান কৃত বাংলা অনুবাদ, পৃঃ ১৩৮৭)]
এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে, যে কোনো ঈমানদার কর্তৃক, বিশেষ করে নবীর (সাঃ) একজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি কর্তৃক - যাকে তিনি বিশ্বাস করে কোনো গোপন কথা বলেছিলেন - তাঁর গোপন কথা অন্যের কাছে বলে দেয়া একটি গুরুতর বিষয় ছিলো। কিন্তু এখানেই শেষ নয়।
আল্লাহ তা‘আলা এরপর এরশাদ করেনঃ “তোমাদের দু’জনের অন্তর অন্যায়ের প্রতি ঝুঁকে পড়ার কারণে তোমরা যদি তাওবাহ্‌ করো (তো ভালো কথা), নচেৎ তোমরা দু’জন যদি তাঁর (রাসূলের) বিরুদ্ধে পরস্পরকে সহায়তা কর (তথা তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত কর) তাহলে (জেনে রেখো,) অবশ্যই আল্লাহই তাঁর অভিভাবক, আর এছাড়াও জিবরাঈল, উপযুক্ত মু’মিনগণ ও ফেরেশতাগণ তাঁর সাহায্যকারী।” (সূরাহ্‌ আত্‌-তাহ্‌রীমঃ ৪)
পরবর্তী আয়াত থেকে মনে হয় যে, তাঁদের দু’জনের কাজটি এমনই গুরুতর ছিলো যে কারণে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর পক্ষ থেকে তাঁদেরকে তালাক প্রদান করা হলেও অস্বাভাবিক হতো না।
এ থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর বিবিগণ মা‘ছূম (নিষ্পাপ ও নির্ভুল) ছিলেন না এবং তাঁরা আহলে বাইত্‌-এর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। কিন্তু এরপরও অনেকে ভাবাবেগের বশে কেবল আল্লাহর রাসূলের স্ত্রী হবার কারণে তাঁদেরকে পাপ ও ভুলের উর্ধে গণ্য করেন। তাঁদের এ ভুল ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য কোরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াতই যথেষ্ট হওয়া উচিত - যা হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর স্ত্রীগণের সমালোচনা ও তাঁদের উদ্দেশে উচ্চারিত হুমকির ধারাবাহিকতায় তাঁদেরকে সতর্ক করার লক্ষ্যে নাযিল হয়েছেঃ
যারা কাফের হয়েছে তাদের জন্য আল্লাহ নূহের স্ত্রী ও লূত্বের স্ত্রীর উপমা প্রদান করেছেন; তারা দু’জন আমার দু’জন নেক বান্দাহ্‌র আওতায় (বিবাহাধীনে) ছিলো, কিন্তু তারা উভয়ই তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো। ফলে তারা দু’জন (নূহ্‌ ও লূত্ব) তাদের দু’জনকে আল্লাহর (শাস্তি) থেকে রক্ষা করতে পারলো না; আর তাদেরকে বলা হলোঃ (অন্যান্য) প্রবেশকারীদের সাথে দোযখে প্রবেশ করো।” (সূরাহ্‌ আত্‌-তাহ্‌রীম্ : ১০)
এ থেকে সুস্পষ্ট যে, কেবল রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর স্ত্রী হওয়ার কারণেই কেউ সমালোচনার উর্ধে বিবেচিত হতে পারেন না। আর হযরত ‘আয়েশাহ্‌ কেবল উপরোক্ত ঘটনার সাথেই জড়িত ছিলেন না। রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর ইন্তেকালের আগে ও পরে তিনি সমালোচনাযোগ্য আরো কতগুলো কাজে জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হচ্ছে হযরত ‘আলী (রাঃ)-এর (যাকে সুন্নীরাও বৈধ খলীফাহ্‌ মনে করে) ‘উটের যুদ্ধ’ নামে বিখ্যাত যুদ্ধে ও পরে বছ্বরাহ্‌র যুদ্ধে নেতৃত্ব দান - যে দুই যুদ্ধে হাজার মুসলমান নিহত হন। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বিশেষভাবে রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর বিবিগণকে গৃহে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন (সূরাহ্‌ আল্‌-আহ্‌যাব : ৩৩)। কিন্তু তিনি আল্লাহ তা‘আলার এ আদেশের নাফরমানী করেছেন।
শিয়া মাযহাবের অনুসারীরা হযরত ‘আয়েশাহর এ সব কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে থাকে। কারণ, তারা মনে করে যে, তাঁর এ সব কর্মকাণ্ডের কারণে ইসলাম ও ইসলামী উম্মাহ্‌র অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

কোরআন ও শিয়া মাযহাব

শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে সকলেরই ঐশী গ্রন্থ কোরআন মজীদ একটিই; এতে কোনোই পার্থক্য নেই। পার্থক্য যা কিছু আছে তা কোরআনের ব্যাখ্যায় এবং ব্যাখ্যায় মতপার্থক্য একই মাযহাবের বিভিন্ন মুফাসসিরের মধ্যেও রয়েছে। যারা প্রচার করেছে যে, শিয়াদের আলাদা কোরআন রয়েছে তারা নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদী। আর যারা কোনোরূপ অনুসন্ধান না করেই এ মিথ্যাকে সত্য বলে গ্রহণ করেছে ও অন্যদেরকে বলছে তারা চরম দায়িত্ব-জ্ঞানহীন। বর্তমান বিশ্ব হচ্ছে সহজ যোগাযোগ ও তথ্যপ্রবাহের যুগ; এ যুগে এ ধরনের মূর্খতাসুলভ আচরণ বিস্ময়কর। ইরান হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশী শিয়া অধ্যুষিত দেশ। বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ সেখানে বসবাস করেছেন ও করছেন; আজ পর্যন্ত তাঁদের কেউ কি ইরানে মুদ্রিত ভিন্ন কোনো কোরআন দেখেছেন? এরূপ কেউ পেয়ে থাকলে তা দেখাতে পারেন।

(১০-০৯-২০১৩)

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।)

(যদি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকে, তবে নিচের লেখাগুলি দেখতে পারেন।)

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমদ দীদাতের ইরান অভিজ্ঞতা
আশুরা : ভালোবাসা ও যুক্তিতর্ক

ইমাম ও উলীল-আমর প্রসঙ্গে
অস্থায়ী বিবাহ প্রসঙ্গে
হযরত আলী (আ.) কর্তৃক তিন খলিফাকে মেনে নেয়া প্রসঙ্গে
মুসলমান ও শিয়া হওয়া প্রসঙ্গে
রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত ও বিবিগণ
চরমপন্থী শিয়া-সুন্নি বনাম মধ্যমপন্থী উম্মত -- ১
চরমনপ্থী শিয়া-সুন্নি বনাম মধ্যমপন্থী উম্মত -- ২
আহলে বাইতের ইমামগণ ও আহলে সুন্নাত
কারবালার চেতনা কি বিলুপ্তির পথে?
হযরত ইমাম হোসেনের (আ.) আন্দোলনের তাৎপর্য
ইমাম হোসেনের (আ.) শাহাদাত প্রসঙ্গে
শাফা'আত ও সুপারিশ প্রসঙ্গে
কোরআন মজীদের দৃষ্টিতে সাহাবী

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস
জিহাদ আল আকবার : নফসের সাথে যুদ্ধ

মন্তব্যসমূহ

  1. উপরের গবেষনালব্ধ বর্ণনাটি আমার কাছে খুবই যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সত্যের পাল্লা শিয়াদের দিকেই ঝুুকে পড়ছে।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[ব্লগে কমেন্ট পোস্ট করার পরও যদি না দেখায়, তাহলে দ্বিতীয়বার পোস্ট করার প্রয়োজন নেই। খুব সম্ভবত স্প্যাম গার্ড সেটাকে সরিয়ে নিয়েছে, আমি পাবলিশ করে দেবো।]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা