সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দুইটি ব্লগ, একসাথে


.


গুপ্তচার হ্যামফারকে বৃটিশ উপনিবেশ মন্ত্রণালয়ের ডিজি যেই হাজার পৃষ্ঠার বইটা পড়তে দেয়, তাতে মুসলমানদের দুর্বল দিক, তাদের শক্তিশালী দিক, তাদের দুর্বল দিকের সুযোগ নেবার উপায়, শক্তিশালী দিকগুলোকে দুর্বল করার উপায়- ইত্যাদি পয়েন্ট করে লেখা ছিলো। এটা ১৭১০ সালের বেশ কয়েক বছর পরের ঘটনা।
স্মৃতিকথায় হ্যামফার সেই বই থেকে মুসলমানদের ১৩টা দুর্বল দিকের তালিকা করেছে, তার মাঝে কয়েকটা এই-
শিয়া-সুন্নি বিরোধ, অজ্ঞতা ও নিরক্ষরতা, সুবিন্যস্ত মূল্যবোধ না থাকা, নারীদেরকে হেয় গণ্য করা, ইত্যাদি।
সে বইয়ে মুসলমানদের দুর্বল দিকগুলোর কথা উল্লেখ করার পর স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে- "ইসলামের বিধানে মুসলমানরা কার্যতঃ যা করছে, তার বিরপরীত নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অতএব, আমাদের জন্য জরুরী হচ্ছে মুসলমানদেরকে অজ্ঞতার মধ্যে ধরে রাখবো যাতে তারা তাদের ধর্মের প্রকৃত সত্যের সন্ধান না পায়।"
তারপর তালিকা করেছে- ইসলামী বিধানে আসলে কী বলা হয়েছে। এরপর মুসলমানদের শক্তিশালী দিকগুলোর দীর্ঘ তালিকা করে শেষে দুর্বল দিকগুলোর প্রসার ঘটানোর জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে, তার মাঝে কিছু এই-
মাদ্রাসার প্রসার বন্ধ করতে হবে,
মুসলমানদের কাছে পরকালীন পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি এবং বেহেশতকে গুরুত্বপূর্ণ ও সুন্দর হিসেবে তুলে ধরে তাদেরকে বুঝাতে হবে যে পার্থিব জীবনের জন্য তাদের করার কিছু নেই এবং এ জাতীয় বই-পুস্তকের প্রসার ঘটাতে হবে,
মুসলমানদের মাঝে এই ধারণার প্রসার ঘটাতে হবে যে মানুষের করার কিছুই নেই, সবকিছুই আল্লাহ কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত,
সূরা নিসার ৩৪ নাম্বার আয়াতকে ব্যবহার করে বলা যেতে পারে যে ইসলাম নারীদরকে তুচ্ছ ও অবজ্ঞা করে,
মদ, জুয়া, যেনা-ব্যভিচার এবং শূকরের মাংস খাওয়ার বিস্তার ঘটাতে হবে,
যেকোনো মূল্যে সূদের প্রসার ঘটাতে হবে,
উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপনের স্বাদ পাওয়াতে হবে, যেনো ইচ্ছা হলেই তারা অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে পারে,
পিতা-পুত্রের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করতে হবে, যেনো পিতার কাছ থেকে সন্তান ইসলামী শিক্ষা লাভ করতে না পারে,
মুসলমানদের বংশবৃদ্ধি রোধ করতে হবে।

আমি খুব অল্প কিছু উল্লেখ করলাম। পুরো বইটা পড়লে বিস্মিত হয়ে যেতে হয়- কত সূক্ষ্ম তাদের পরিকল্পনা, এবং সেটা এখনও বাস্তবায়ন করে চলছে তারা।

মাদ্রাসা শিক্ষাকে তো এখনকার দিনে আমরা পাত্তাই দিই না (অবশ্য মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থাকেও তারা নষ্ট করেছে)
পার্থিব জীবনের করার কিছু নেই শুধু নামাজ, দোয়া- এজাতীয় ইবাদত ছাড়া, এমন ধারণাসম্পন্ন গোষ্ঠী ইতোমধ্যে যথেষ্ট প্রসার লাভ করেছে, আমরা আশেপাশেই দেখতে পাই। তাদের চিন্তা শুধু মাটির নিচের দুনিয়া আর আসমানের উপরের দুনিয়া নিয়ে। তাই আমাদের দেশে এখন হজ্জ্বের পর দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম সমাবেশ ঘটছে প্রতিবছর।
সবকিছুই আল্লাহ কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত- এমন ধারণা পোষণকারী ব্যক্তির সংখ্যাও আমাদের চারপাশে অনেক।
পুরুষেরা নারীদের চেয়ে বেশি সম্মানের, মেয়েরা জন্মগতভাবেই নিচু, ইত্যাদি ধারণা মেয়েদের মাঝেও প্রবেশ করেছে।
যেনা-ব্যভিচারের যথেষ্ট প্রসার ঘটেছে, আর মুসলমান নামধারী, কিন্তু যথেষ্ট মদখোর, এমন মানুষও নিতান্ত কম নয় এখন। আমি নিজেই আশেপাশে এমন অনেককে দেখেছি এবং অনেকের গল্প শুনেছি।
অনেক, অনেক বেশি মানুষ সুদ খাচ্ছে, সুদের যে ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না (তাদের উদ্দেশ্য ছিল সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা মুসলমানদের মাঝে চালু করে তাদের অর্থনীতি ধ্বংস করে দেয়া, কারণ তারা জানত ইসলামী অর্থব্যবস্থা অনেক বেশি স্থিতিশীল)
পিতা-পুত্রের মাঝে দূরত্বের ব্যাপারটা খুব বেশি দেখা যায়। সেদিন এক ফ্রেন্ডকে নোংরা গালি ব্যবহার করতে দেখে বললাম, দেখো, তুমি কি মনে করো তোমার বাবা এই বয়সে থাকতে তার কোনো বন্ধুকে এই সম্বোধন করতেন ? কিংবা তুমি যদি তোমার বাবাকে তার কোনো বন্ধুকে এমন সম্বোধন করতে শুনতে, তোমার কেমন লাগতো ?
তার উত্তরটা এতটাই অসার ছিলো যে তা ভুলে গিয়েছি।
উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনের স্বাদ পাওয়ানো, যেনো অনৈতিক কাজ করতে দ্বিধা না করে- এই বিষয়টা তো হচ্ছেই টিভি ও ইন্টারনেট মিডিয়ার মাধ্যমে। আর এগুলোর প্রসারের কারণে যে অনৈতিক, অনিসলামিক কাজ অনেক বেড়ে গিয়েছে, তাও সবার জানা।
গুরুত্বপূর্ণ যে পয়েন্টটা তারা অনেকাংশে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে, তা হলো বংশবৃদ্ধি রোধ। তাই আইয়ুব খানের আমলের চার সন্তান নীতি বাংলাদেশ আমলে দুই সন্তান নীতিতে, এবং অতি সম্প্রতি এক সন্তান নীতিতে রূপলাভ করেছে। পাশ্চাত্যে কেনো মানুষেরা সন্তান নিতে চায় না, সে আলোচনা ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে আমাদের দেশে সেই 'লাইফ এনজয় করার' উপকরণগুলো সহজলভ্য করে দেয়া হচ্ছে, সমাজব্যবস্থাকে সেইদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কতটা সুকৌশলে এসব পরিকল্পনার বাস্তবায়ন তারা এখনও করছে, চিন্তা করলে অবাক হতে হয়।
আর এখন যে তারাই শুধু করছে তা নয়, আমরাও করছি। নিজ অজান্তেই।
'দিন আগে আমার এক ফ্রেন্ড বলছিলো- আমি বিয়ে করলে একটা বাচ্চা নেবো, একটাকেই ঠিকমতো বড়ো করবো। আমার নানার এগারো সন্তান, সেই কথা শোনার পর বিস্ময় প্রকাশ করে ও বলেছিলো। বললাম, মাত্র একটা বাচ্চা নিলে তো সে পাগল হবে।
- পাগল হবে কেনো ? উপযুক্ত পরিবেশ দেবো।
- দেখো না, যারা মাত্র দুই ভাইবোন কিংবা বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান, তাদের কেমন মানসিক জটিলতা তৈরী হয়ে যায় ? তুমি তো আকাশের গল্প, "অমুক" এর গল্প শুনেছোই। এরকম আরো আছে। বেশি বাচ্চা থাকলে বাচ্চারা ঘরের মাঝেই মেশার মানুষ পায়, অনেককিছু শেখার সুযোগ পায়, মানসিক দৃঢ়তা অর্জন শেখে।
- কেনো, তার খালাতো-মামাতো ভাই-বোন থাকবে, তাদের সাথে সময় কাটাবে।
- তাদের সাথে কি সারাদিন থাকবে ? আচ্ছা, তুমি বলোতো, এক সন্তানই বা কেনো নেবে ? সন্তানই বা কেনো নেবে ? কী দরকার ?
তখন উত্তর দিতে না পেরে হাসি দিয়ে বলল, এইটা কোনো কথা হলো ? বিয়ে করলে তো...
আমি কথাটা সমাপ্ত করলাম- বিয়ে করলে সন্তান বাই প্রোডাক্ট, এইতো ?
তারপর সে হাসল। আমি বললাম, এই বাই প্রোডাক্টকে যখন এক- এ লিমিটেড করতে পারছো, তখন কেনো শূন্যতে নয় ?
- সাড়ে ষোলো কোটি মানুষ নিয়ে সরকার হিমশিম খাচ্ছে, আমি আরো সেটা বাড়াই, নাকি ?
- কই হিমশিম খাচ্ছে ?
- রাস্তায় বেরোলে এত মানুষ, এত জ্যাম...
- রাস্তায় জ্যাম, এগুলো তো পরিকল্পনার অভাব। তোমার কি কখনো এমন হয়েছে যে বাজারে গিয়েছো খাবার কিনতে, কিন্তু বাজারে খাবার নেই- সাড়ে ষোলো কোটি মানুষ তুমি খাবার কেনার আগেই বাজার শূন্য করে ফেলেছে ?
তখন সে অস্থির হয়ে আমাকে বলল, তুমিই বলো জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা কী।
প্রথমদিকে বেশ সিরিয়াসলি তর্ক করছিলাম, শেষটায় এসে হাসি পেয়ে গেলো।



.

সাওম পালন (রোজা রাখা) মানে তো শুধু উপবাস থাকা নয়। এই জিনিসটা আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। এই রোজায় আমি একটু খেয়াল করার চেষ্টা করছি যদিও, তবুও প্রায়ই বিস্মৃত হচ্ছি।
রমজান মাসে জীবন-যাপনে পরিবর্তন আসছে বলতে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকা হচ্ছে। কিন্তু পথে চলতে চলতে ইয়ারফোনে এমপিথ্রি অনবরত চলছে। বাসায় বসে ল্যাপটপে-ডেস্কটপে মুভি চলছে, ভিডিও সং চলছে। রোজা রেখে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়াও হচ্ছে, সিগারেটও চলছে আর "হালার পুত", "***", "*****" আর a,b,c,d ইত্যাদি গালি সম্বোধনে বন্ধুর পিঠে চাপড়ও চলছে।
এটা তো হিন্দুদের উপবাস থাকার মত হয়ে যাচ্ছে- আর সবই চলে, খাওয়া চলে না শুধু। ও হ্যাঁ, ভালো কথা, রোজা থেকে বয়ফ্রেন্ড কিংবা গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যাওয়াও হচ্ছে, তার সাথে ইয়াহু মেসেঞ্জারে ফলিং হার্টসে বাজ দিয়ে কিস করাও হচ্ছে আর ফোনে মৃদুস্বরে "খাইসো?", "কেনো ?", "প্লিজ", "আরেকবার বলো", "এখন কি করতেসো ?", "হি হি হি..." এসব কথাও চলছে। শুধু না খেয়ে শরীরটার উপকার করা হচ্ছে, এই যা।

আমার চেয়ে ছয়-সাত বছরের বড় ভাইবোনদের সার্কেলের যে গল্প শুনি, তাতে তাদের মাঝে ইসলাম সম্পর্কে যা কিছুটা ধারণা আছে। আমাদের, আমার সার্কেলের এবং এই জেনারেশানের মাঝে একেবারেই নেই। পুরোই শূন্য।
বেশ ক'দিন আগে, আমার দুই ফ্রেন্ড (একজন মেয়ে, একজন ছেলে) বাসায় এসেছিলো। তাদের সাথে গল্প করছিলাম, আর মাঝে মাঝে পড়াশুনার কাজও কিছু হচ্ছিলো। তো, আমি কথা প্রসঙ্গে হঠাৎ খেয়াল হওয়ায় আমার জন্য ভাইয়ার নিয়ে আসা ইলেকট্রিক শেভারটা বের করে দেখালাম। তারপর একটু মজা করে শেভারটা চালু করে বন্ধুটির হাতের উপর খানিক চালিয়ে দিয়ে ন্যাড়া করে দিলাম ;)
সাথে সাথে হাত সরিয়ে নিয়ে ও বলল- অ্যাই কী করলে, গুনাহ হলো তো। তখন বান্ধবীটিও বললেন যে আমার যথেষ্ট পরিমাণ পাপ হয়েছে।
কারণ, পশম শেইভ করা- 'হারাম' ! ভ্রু প্লাক করা- 'হারাম' ! বললাম, তাহলে ছেলেরা যে চুল কাটে ?
ছেলেদের চুল কাটা জায়েজ, কিন্তু মেয়েদের নয় !
বললাম, ছেলে-মেয়ের পার্থক্য হলো জেন্ডারে, চুলে কি কোনো জেন্ডারগত পার্থক্য আছে যে দু'জনের জন্য নিয়ম ভিন্ন হবে ?
বাকি কনভার্সেশান খেয়াল নেই। কিন্তু ওরা কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারে নাই। আর বৈদ্যুতিক সার্কিটের আলোচনার কারণেও সেটা কন্টিনিউ করতে পারে নাই ঠিকমতো।
যাহোক, এই দুজনের একজন এবং কলেজের আরো কয়েকজন বন্ধুর সাথে ক্লাসরুমের সামনে করিডোরে দাঁড়িয়ে একবার তুমুল তর্ক হয়েছিলো, আমাকে কনফ্রন্ট করা হয়েছিলো- টাখনু ঢাকা পোশাক পরার হারাম হওয়া-না হওয়া নিয়ে। আমার মনে আছে, আমি প্রচণ্ড হতাশ এবং দুঃখিত হয়ে বাসায় এসে ডায়রিতে ওদের সম্পর্কে আমার দুঃখ এবং হতাশা ব্যক্ত করে অনেক পৃষ্ঠা লিখে ফেলেছিলাম। (সেই সময় পর্যন্ত আমি অবশ্য তর্ক করে জিততেই মজা পেতাম, তাই তর্ক করে যেতাম। কিন্তু কাউকে কোনো কিছু মানানোর কিংবা বুঝানোর অ্যাপ্রোচ এমনটা নয়, তা পরে বুঝেছি, যাহোক।)
আযান হলে পর বান্ধবীটি মাথায় ওড়না দিলেন এবং আযান শেষ হবার পর সচেতন নড়াচড়ায় তা আবার কাঁধের 'পর নেমে এলো। এইসমস্ত কর্মকাণ্ডের আদৌ কোনো দরকার আছে কিনা, তা নিয়ে চিন্তা করতে গেলে তাদের মাথা গরম হয়ে যাবে।
কিন্তু আমার ইদানিং চিন্তা হচ্ছে- এইরকম ইসলাম পালনের কী লাভ ? না জেনে, না বুঝে, মুর্তিপূজারীদের ইসলামিক সংস্করণ হয়ে কী লাভ ?
মূর্তিপূজারীরা নবীদের বলত, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে এইভাবে পেয়েছি, তাই আমরাও মূর্তিপূজা করি। তুমি কি আমাদের তাই পরিবর্তন করতে বলো, যা আমাদের বাপ-দাদারা করতো ?
আমাদের আশেপাশে এমনটাই দেখি। বাবা টাখনু বের করে কাপড় পরতো, তাই ছেলেও পরে। বাবা শুক্রবার জায়নামাজ নিয়ে টুপি মাথায় পাঞ্জাবি পরে মসজিদে যায়, ছেলেও তাই যাচ্ছে (যেহেতু এইটা বেশ আড়ম্বরের ব্যাপার, তাই। কিন্তু যেহেতু প্রতিদিনকার নামাজে এতটা আড়ম্বর নেই, তাই সেটা ছেলে বাদ দিয়েছে)। কেনো এগুলো করছে, তা জানে না, জানতে চায়ও না, চিন্তাও করে না। সারামাস রোজা রেখে ইদের দিন নামাজটা শেষ করে বাবা যদিওবা অকাম করছেন না, কিন্তু ছেলে সারামাসে অন্তত উপবাস থাকার পুণ্যটুকুকে মাটিতে আছড়িয়ে তার জান বের করে দিচ্ছে- "হালার পুত"দের সাথে রাস্তায় বের হয়ে সুন্দরী মেয়ে দেখে চোখ, আর কমেন্ট করে মন জুড়াচ্ছে, সিনেপ্লেক্সে গিয়ে নানান পদের জিনিস চোখ দিয়ে ভক্ষণ করছে, এবং সর্বোপরি সারামাস উপবাস থাকার জন্যেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার যন্ত্রণা থেকে নিজেকে মুক্তি দিচ্ছে আগামী এগারো মাসের জন্য (except প্রতিসপ্তাহে শুক্রবার একবার)
আবার, মা বোরকা পরে দেখে মেয়েও বোরকা পরে। কিন্তু তার বাচ্চা মেয়েকে সে ইন্ডিয়ান মুভির অনুকরণে হাতাবিহীন পিঠ বের করা জামা পরিয়ে নিজে বোরকা পরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়। মা কোরআন খতম দিয়েছে এগারোবার, মেয়ে চারবার, আর তার মেয়ে শুন্যবার। মা বাড়িতে সবসময় মাথায় আঁচল দিয়ে থাকতো, মেয়ে দেয় শুধু আযান হলে, তার মেয়ে আর তেমন পোশাকই পরে না, যাতে মাথা ঢাকবার অপশন থাকতে পারে।

আমার এক বন্ধুর গল্প বলি। সে ছোটবেলায় শিবির (এখানে এসে অ্যালার্জিক হবেন না দয়া করে) করতো। তখন সে ক্লাস সিক্স কি সেভেনে পড়ে। নিয়মিত নানান ‘বৈঠকে’ ‘অ্যাটেন্ড’ করত, নানান আনুষ্ঠানিকতা পালন করতো, ইসলামিক সাহিত্য এবং হাদিস অধ্যয়ন করতো এবং সর্বোপরি, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। তারপর অল্প কয়েক বছর পরেই তার সেই শিবির করা ছুটলো, সেই সাথে ছুটলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। কলেজে পড়াকালীন তারকাছে একদিন শুনলাম, আর যাই হোক, মাগরিবের নামাজ সে কোনমতেই মিস করে না।
(কেনো বিশেষভাবে এই মাগরিবের নামাজ, তা আমি ঠিক জানি না। কিন্তু, নামাজ পড়লে তো সবগুলোই পড়া উচিত। যাহোক, এ প্রসঙ্গে মনে পড়ল, কার বাসায় যেনো একবার একটা ক্যালেন্ডার টাইপ কাগজ টানানো দেখেছিলাম, সেখানে লেখা ছিল- কোন ওয়াক্তের নামাজ ‘ছাড়িয়া দিলে’ ‘কী হইবেক’। যেমন, এশার নামাজ ছেড়ে দিলে ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে, এশার নামাজ ছেড়ে দিলে সন্তান পাপী হবে, ইত্যাদি। আবার, দাম্পত্য জীবন অসুখী হবে, এমনটাও সম্ভবত ছিলো কোনো একটায়। আমার ধারণা, হয়তো কোথাও এজাতীয় কিছু দেখে কিংবা শুনে কোনো বিশেষ কিছুর লোভে মাগরিবের নামাজ পড়তো সে।)
সেই কলেজে পড়াকালীন সময়েই প্রথম প্রথম যখন সে আমাদের বাসায় আসতো, ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডা চলতো। কিন্তু শুক্রবারগুলোতে দুপুরে আযান হলেই সে বেরিয়ে পড়ত- জুমার নামাজ কিছুতেই মিস করা যাবে না।
কিন্তু একসময় আড্ডার নেশায় সেই জুমার নামাজ মিস তো হলোই, মাঝে মাঝে জুমার নামাজ, আসরের নামাজ কাযা হয়ে মাগরিবেরটা পর্যন্ত কাযা হবার উপক্রম হতো। জুমার নামাজ এবং অন্যান্য সব নামাজই ছুটলো সেসময়।
তারপর একবার তার জীবনে নানান আবেগীয় ঘটনা ঘটে যাবার পর তার এক বান্ধবীর অনুরোধে সে আবার পাঁচ ওযাক্ত নামাজ পড়া শুরু করে দিলো।
এখনও বোধহয় সেই নামাজ পড়াটা চলছে, জিজ্ঞাসা করা হয় নাই এব্যাপারে। কিন্তু এটাও যে যেকোনো সময় ডিসকন্টিনিউ করবার আশঙ্কামুক্ত নয়, তা নিশ্চিত।
তার নামাজ পড়ার ইতিহাসটা এরকম কেনো হলো ? কেনো এমন হলো না যে বিবেক-বুদ্ধি হবার পর থেকে সে নামাজ পড়া শুরু করলো এবং তা আর ছাড়লো না ?
কারণ প্রথম যখন সে শিবির করতো এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো, তখনও সে না বুঝে পড়তো (এই ‘না বোঝা’, আরবী বাক্যগুলোর অর্থ না বোঝা নয়)
দ্বিতীয় যখন সে শুধু জুমার নামাজ আর মাগরিবের নামাজ পড়তো, সেটাও না বুঝে পড়তো।
এবং তৃতীয় যখন নামাজ আবার পড়া শুরু করলো, সেটাও না বুঝেই করছে, একজনের অনুরোধে।
তার জীবনে নামাজ পড়ার এই ছোটো ইতিহাস থেকে একটা লুপ (while-loop) চিন্তা করে নিতে পারি, যাতে এইজাতীয় ব্যাপার ঘটতে থাকবে। লুপটা এরকম :
while(সে নামাজ পড়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য জানে না)
{
নামাজ নিয়মিত পড়বে। ;
নামাজ অনিয়মিত পড়বে। ;
নামাজ পড়া ছাড়বে। ;
}

আমার এক বন্ধুকে এই রমজান শুরুর আগে বললাম, সেহরিতে উঠতে না পারার কারণে রোজা রাখো না, এটা তো খারাপ কথা। আমি ফোন করে জাগায় দেবো। কয়েকদিন ফোন দিলাম, কিন্তু তার আর তেমন একটা রোজা রাখা হয় নাই। বেশ কয়েকদিন ফোনে বললাম- কাল থেকে রোজা রেখো বাকিগুলো। কিন্তু, তাহাও আর হইলো না।
আজ আমার খেয়াল হলো- এ তো আমার সেই বন্ধুর, বান্ধবীর অনুরোধে নিয়মিত নামাজ পড়ার ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। তাই, এখন থেকে তাহা বন্ধ হইলো।
আর, এই ব্লগটাও, আমাদের স্কুলের রিপার লেখা বাংলা প্রশ্নের উত্তরের মত হঠাৎ করে কেটে দেয়া হলো।
(পোস্ট করার পরও আবার ফিরে এসে এটুকু লিখে যাই- আমি জানি এই লেখায় অনেককেই 'আঘাত' করা হয়েছে, সেজন্যে আমি লজ্জিত।)

নূরে আলম,
অগাস্ট ১৫, ২০১১।

মন্তব্যসমূহ

  1. valo valo kotha likhechhen brother... asha kori apnar nijer and onno jara porlo sobar kaje lagbe.. :D

    উত্তরমুছুন
  2. হে হে হে... 'নিজের' কথাটি দিয়েই তো আমাকে মারিয়া দিলেন সিস্টার ;(

    উত্তরমুছুন
  3. brother sisterkul betito jatir onno lokerao porile valo hoy...

    pustok tir ekti link dilam
    http://search.4shared.com/q/1/confessions%20of%20a%20british%20spy

    shathe arekti khub relevant na hoileo contemporary-kaharo facebook hoite dekhiya loiben kindly:

    https://www.facebook.com/notes/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A7%81%E0%A6%B2-%E0%A6%A6%E0%A6%BF-%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%9F/us-debt-crisis/10150364241243313

    উত্তরমুছুন
  4. oh thanks.
    and apni eita use korben doya kore : http://goo.gl

    eto long url dile kemon dekhay ?

    উত্তরমুছুন
  5. lekhar moddhe upodesh, bektigoto acromon(!!), kichhu koutuk--specially ripar lekhar kotha and info achhe....
    gud try....
    but next lekha arektu carefully likhben jeno well organized hoy.

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[ব্লগে কমেন্ট পোস্ট করার পরও যদি না দেখায়, তাহলে দ্বিতীয়বার পোস্ট করার প্রয়োজন নেই। খুব সম্ভবত স্প্যাম গার্ড সেটাকে সরিয়ে নিয়েছে, আমি পাবলিশ করে দেবো।]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা