সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঈদ, ঈদ, ঈদ :)

আজ ঈদ (ছিল ?)।
আমি ঈদে বাইরে যাই না। গত ব্লগটাতেই এ নিয়ে বেশ কথা লেখা হয়েছে। তবু আজ আমার যাওয়া হলো।
গতকাল ব্লগটা লেখার সময়ই মনে হচ্ছিলো যে আজ ঈদ হবে। তা-ই হলো। আর, লিখেছিলাম যে বন্ধুদের সাথে দেখা করবো না, কারণ তাদের মজাও মাটি হবে, মাটি হবে আমারটাও। কিন্তু আজ দেখা হলো, বন্ধুর বাসায় যাওয়া হলো এবং-। এবং ভালোই লাগলো !

সকালে উঠে আটটার সময় এক গ্লাস পানি খেয়ে রোজা (!) ভাঙলাম। তারপর বড়াপু সেমাই টেস্ট করতে বললো, আমি এক চামচ খেয়ে বললাম- পারফেক্টো ! মেজাপু বললো- তোমরা তো বেশি মিষ্টি খাও, একটু সহনীয় মাত্রায় দাও, যেনো আমরাও খেতে পারি।
বড়াপু রান্নাঘর থেকে জবাব দিলো- সবসময় গণতন্ত্র ভালো না।
যাকগে, আমি তারপর বেশ সময় নিয়ে একগাদা পিঁয়াজ-রসুন-আদা ব্লেন্ড করে চোখ দিয়ে পানি বের করে ফেললাম। তারপর-।
তারপর দরজায় নক শুনে আম্মু গিয়ে বললো- কে ?
আমি গিয়ে দরজা খুললাম- সিফাত আর নাহিয়ান।
সিফাত ! নাহিয়ান ! আমার বাসায় !
ঘরে বসালাম। ঘটনা হলো, সকালে সজীব আমাকে ফোন দিয়ে বলেছিলো ফয়জুলের বাসায় যাবো কিনা। আমি না করায় বেশ রাগ দেখিয়ে বললো- "যাবে কি যাবে না বলো। তুমি না গেলে আমরাও আর কখনো তোমার বাসায় যাবো না।" তখন সে বসে বসে দুলাভাইয়ের সাথে Fast Track মুভি দেখছে। আমি কেঁচো মানুষ- বড় অস্বস্তি সহকারেই না করে দিলাম; বাইরে যাওয়া ধাতে সয় না। পরে সজীব হারম্যানের সামনে দাঁড়িয়ে সিফাত আর নাহিয়ানকে ফোনে বলেছে হারম্যানের সামনে যেতে। ওরা দু'জনেই কী করে ভুল শুনলো কে জানে- ওরা মাসুদের বাসায় চলে এলো !
আমার বাসায় বসে সিফাত ফোনে সজীবকে বলছে- হ্যালো সজীব, আমি তো মাসুদের বাসায়।
সজীব ফোন কেটে দিলো। সিফাত বললো- রাগ হয়েছে।
বেচারা ! আমি তখন তার দুটো নাম্বারেই ফোন দিলাম। কিন্তু ফোন বন্ধ ! বাপরে কী রাগ ! Angry Birds এর মতো ! একটু পরে ফোন দিয়ে আমাকে বলছে- ভাই দরজা খোলেন।
দরজা খুলে সজীবের চেহারার দিকে ভালোভাবে ঠাহর করলাম। বডি ল্যাঙ্গুয়েজের বইয়ে কী যেনো পড়েছিলাম... !
যাহোক, ওসব বিদ্যা কাজে লাগাবার আগেই চেহারা দেখে উনার রাগের মাত্রা নির্ণয় করা শুরু করলাম- কী ব্যাপার ভাই, মোবাইল বন্ধ করে দিলেন নাকি তখন ?
"মোবাইল ছুঁড়ে মারসিলাম।"
হা হা হা... আমি হলে জীবনেও মোবাইল ছুঁড়ে ফেলতে পারতাম না। তাও আবার রাস্তায় ! পরে আবার ফোন তুলে নিয়ে আমাকে ফোন দিয়েছে। আমি বললাম- ঠিক আছে ভাই, আমি যাবো।
তারপর...। যীনাতের কাছ থেকে অনুমতি (ইহা সাধারণ অর্থে নয়) নিয়ে বাইরে বেরোলাম। ফয়জুলের বাসায় বেশ খাওয়া দাওয়া করলাম। আমি, নাহিয়ান, সজীব, ফয়জুল। যাক- it didn't go in vain- ভালোই লাগলো। তাহলে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে এই ব্যক্তিগুলোকে সমালোচনা থেকে বাদ দেয়া যায়। :)
পুডিং, ন্যুডলস, চপ, রোস্ট, পোলাও, সেমাই, চটপটি...
বাহ ! এ যে একেবারে 'ঈদ' !
(ভালো কথা, এর মাঝে জাকির বাসায় আমাদের বসা হয়েছিলো, সেখানে চটপটি, জর্দা আর সফট ড্রিংকস খাওয়া হলো। পরে দেরী হওয়ায় সিফাত আর ফয়জুলের বাসায় যায় নি।)
এইতো, আরকি !
এটুকুতেই আমার বেশ ঈদ হয়ে গেলো- শিডিউলের বাইরে কয়েকজন বন্ধুর সাথে বাইরে বেরিয়ে আরেক বন্ধুর বাসায় যাওয়া, বসা, খাওয়া, দু-মিনিট গল্প করা, তারপর ঘর্মাক্ত শরীরে বাসায় ফেরা ! ব্যস, শেষ।
এদিকে সজীবের বিশাল শিডিউল- সকালে কলেজের বন্ধু, বিকেলে স্কুলের বন্ধু, তারপর স্টার সিনেপ্লেক্স (!!!), তারপর আরও কত কী কে জানে !
নাহিয়ানের শিডিউলগুলো জানা হয় নি, কিন্তু সেও ব্যস্ত...।
আমি বাসা থেকে দু-কদম বাইরে বেরিয়েই এসে এত বড় ব্লগ লিখে ফেললাম। ওদের মত দুনিয়া চষে বেড়ালে আর ব্লগানো সম্ভবপর হতো না।
আমার বাসায় আত্মীয়-স্বজন এসেছে এইমাত্র ! তাহলে ব্লগটা এখানেই মুড়ানো ঠিক হলো না।
যাকগে, ব্যাপার না। আরেকদিন হবে :)
সবাইকে ঈদ মোবারক !

নূরে আলম,
অগাস্ট ৩১, ২০১১।

মন্তব্যসমূহ

  1. আমাকে নিয়ে কি সব লিখেছেন?? মামলা দেব!

    উত্তরমুছুন
  2. ভালোই হয়েছিলো বিবর্ণ, শুধু তুমি আসলে আরেকটু ভালো হতো...।
    @ যীনাত: কই, তোমাকে নিয়ে আবার কী লিখলুম ?

    উত্তরমুছুন
  3. আমার চিন্তা চেতনা ভুল ? চিন্তা ভুল হলে তাও মানা যেতো, চেতনাও ভুল ? ;)
    @ স্বপ্নচারী, কার ঈদ ভালো গেলো ? আপনার না আমার ?

    উত্তরমুছুন
  4. হ হ.... বুঝছি। ভালোই পার করসো ঈদ (যেন আমার ব্লগ পড়ে সেটা জানতে হয়.... হা হা হা...)।
    আমি বলি কী, গিয়ানমূলকের চেয়ে দিনলিপি ভালো। কম ভারি, সহজে হজমযোগ্য।

    উত্তরমুছুন
  5. আমি বলি কী, গিয়ানমূলকের চেয়ে দিনলিপি ভালো। কম ভারি, সহজে হজমযোগ্য। হাহাহা। মজা পেলুম।

    @মাসুদ ভাই, আপনার আপনার। আমার কথা বলি নাই কোথাও :)

    উত্তরমুছুন
  6. হুম... ঈদ ভালোই গেলো। ঈদের পরের দিনও ভালোই গেলো। তার পরের দিনও ভালোই।
    আপনার ঈদ কেমন হলো ?

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[ব্লগে কমেন্ট পোস্ট করার পরও যদি না দেখায়, তাহলে দ্বিতীয়বার পোস্ট করার প্রয়োজন নেই। খুব সম্ভবত স্প্যাম গার্ড সেটাকে সরিয়ে নিয়েছে, আমি পাবলিশ করে দেবো।]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা