ডায়রিটা কাগজেই লেখা লাগতো। কিন্তু খুব ক্লান্তি লাগছে। কেবল ঘুম থেকে উঠলাম। আগামীকাল বা পরশু ঈদ। কেনো যেনো মনে হচ্ছে আগামীকাল হবে। কে জানে !
এই রোজায় বন্ধু-বান্ধবদের সাথে বেশি দেখা-সাক্ষাৎ করা হয়ে গিয়েছে। আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এত দ্রুত হয়ত ক্লান্ত হতাম না, কিন্তু ক্লান্ত হয়েছি এই কারণে যে ওদের সাথে সময় পার করা মানে সময় নষ্ট করা। সারবস্তুহীন কথা।থাপড়াথাপড়ি, টেপাটিপি... ক্লান্তি এসে যায় দেখলে।কতদিন পর জলির সাথে দেখা হলো ! না জানতে পারলাম ওর ডাক্তারি পড়া কেমন চলছে, না জানতে পারলাম তার দিনকাল কেমন চলছে। কিংবা আধুনিক, অযাচিত কিছু প্রশ্নের উত্তর- কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা, হলো কিনা, ইত্যাদি।
জাকির বাসা খুব কাছেই, চাইলেই ওর সাথে দেখা করতে পারি। ওর বাসায় কয়েকদিন আগেও যাওয়া হয়েছে, আমার আর লিমনের গল্প করা হয়েছে। কিন্তু সেদিন ওর-ও কোনো খবর জানা হলো না- না সে কেমন আছে, না তার ভার্সিটিতে দিনকাল কেমন চলছে।
মার্জিয়া তো পুরোটা সময় তেমন একটা কথাই বলে নাই, একা একা কী চিন্তা করছিলো কে জানে।
নাহিয়ান তো একদমই mute হয়ে ছিলো- সে আবার কার চিন্তা করছিলো আল্লাহ মালুম।
সজীব- তার সাথে আমার প্রায়ই দেখা হয়, কথা হয়, কিন্তু সেখানে গিয়ে তার সাথেও কোনো কথা হয় নি। এমনকি ব্যক্তিগতভাবে দেখা করলে যে দু-চারটা গল্প হয়, তেমন কিছুও না।
লিমনের সাথে বেশ ক'দিন আগে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। কিন্তু সেদিন ওর সাথেও তেমন একটা কথা হয় নাই। হাবিজাবি কথার স্রোতে কোনো একটা বিষয়ে কেউ দু-মিনিট টানা কথা বলতে পারে নি। ওর সাথে ইসলামের কী যেন একটা বিষয়ে তাত্ত্বিক কথা বলা শুরু করলাম; দু-চার মিনিট পর সিফাত আর মার্জিয়ার প্রবল বিরোধিতায় তা পণ্ড হয়ে গেলো।
সিফাত তো পুরোটা সময়ই অস্থির- এলোমেলো নানান কথা। একবার কাগজ ছিঁড়ে তাতে কয়েকটা নাম লিখে এক এক জনকে দিলো- কিন্তু সে কৌতুকও জমলো না। সিফাতের সাথে আমার নেটে তেমন একটা কথা হয় না। ফোনেও না। মাঝে মাঝে এমন সব আড্ডায় দেখা হয়; কিন্তু তখনও ওর দিনকাল কেমন চলছে, ভার্সিটিতে নতুন বন্ধু-বান্ধব হয়েছে কিনা, কেমন মানুষ তারা- সেসবের কিছুই জানা হলো না।
বাহ ! বেশ তো ! রোজা মুখে এত কষ্ট করে বোটানিকাল গার্ডেনের ভেতরে হাঁটাহাঁটি করলাম, তেষ্টায় গলা শুকিয়ে গেলো, তবু ওদের সাথে কথা বললাম, কিন্তু সবটাই বৃথা। সত্যি কথা বলতে, আমি এমন আড্ডায় কোনো আনন্দ পাই না। বহুদিন পর পুরনো বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা হলে তাদের সাথে কথা হবে, তারা 'কেমন আছে', তা জানা হবে, আমি কেমন আছি, তা তারা জানবে- কিন্তু তা আর হলো কই !
খানিক সময় জলি তার মোবাইল বের করে সিফাত আর জাকিকে ছবি দেখালো। জাকি কিছুক্ষণ মোবাইলে গান শুনলো। সিফাতও ফোনে দু-একটা গান বাজালো। আর হলো বন্যার স্রোতের মতো ভেসে যাওয়া কথার মাঝে শুধু অপরকে নিয়ে তামাশা করা- গণহারে 'পচানি'। আমি এ স্রোতে পায়ের আঙুল ডুবিয়ে দেখেছি- এ স্রোত বড় অযাচিত, বড় বিস্বাদ।
বাসায় ফিরে যীনাতকে বলেছি- "আমার ঘাট হয়েছে, I have had enough. পুরো সময়টাই বৃথা গিয়েছে।" ও বলেছে- “আরে ধুর, কী বলিস। আমার তো খুবই ভালো লেগেছে। পুকুরের পানির উপর যখন ভারী বৃষ্টি...।” আরে আমি কি গিয়েছি উদ্ভিদ উদ্যানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ? আমি গিয়েছিলাম বন্ধুদের সাথে দেখা করতে, তাদের খবরাখবর জানতে, আমার খবরাখবর তাদের জানাতে। সেজন্যে আমি গাছপালা, পদ্ম পুকুর, কিংবা শাপলা পুকুরের সৌন্দর্য উপভোগের চিন্তা করি নাই, পুরো আড্ডাটাই তাই বৃথা হয়েছে।
…...................................................................................................
গতকাল বৃষ্টি ছিলো। শেডের নিচ থেকে মাথা বাড়িয়ে পুকুরের উপর বৃষ্টির ভারী ভারী ফোঁটায় চমৎকার দৃশ্যের সৃষ্টি হতে দেখেছি। এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। একদম সোজা সোজা বৃষ্টি।
বৃষ্টি-বিলাস করতে করতে চেয়ারের উপর পা তুলে অলস বসে ব্লগ লেখা হয় না অনেকদিন। বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা নারিকেল পাতার দিকেও তাকানো হয় না অনেকদিন হলো। হয়তো আবার সামনের বছর হবে। এবারের বৃষ্টিটাকে তো উপভোগ করা গেলো না।
এই রমজানটা কিভাবে যেনো কেটে গেলো। বুঝে উঠবার আগেই নিমিষে শেষ। অনেক আগে, যখন ছোট বাচ্চা ছিলাম, তখন ঈদের আগের রাতে ঘুম হতো না। এখন আর তা হয় না। এখন ঘুম হয়, এবং বেশ ভালোভাবেই হয় ! তার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন পরদিন বেলা দশটা-এগারোটায় ঘুম ভাঙে।
আর সব ঈদের থেকে এবারের ঈদটা (বেঁচে থাকলে) আলাদা হবে। অবশ্য বাহ্যিকভাবে মোটামুটি একইরকম। আসলে মানুষ বদলে যায় কিনা, তাই প্রতিবছর ঈদগুলো বাহ্যিকভাবে প্রায় আগের মতন থাকলেও অন্যভাবে বদলে যায।
ছোটবেলার ঈদের কথা বলছিলাম। একটা সময় ছিলো ঈদের আগেরদিন, ঈদেরদিন আর ঈদের পরদিন ডায়রি লেখা ছিলো অবশ্য কর্তব্য। সেইদিন এখন শেষ। এখনও যদি আমার ডায়রিতে ঈদের আগেরদিন, ঈদের দিন আর তার পরদিন লেখা পাওয়া যায়, তবে বুঝতে হবে তা 'অবশ্য কর্তব্য' হিসেবে লেখা ডায়রি নয়, তা 'হয়ে যাওয়া' লেখা।
পুরনো ডায়রিগুলোতে এমন ধরণের লেখা ছিলো, যেখানে ঈদের আগেরদিন বসে পুরনো সব ঈদের কথা লেখা হতো। এসব স্মৃতিচারণে তখন বেশ মজা পাওয়া যেতো। এখন আর মজা পাওয়া যায় না। নানান চিন্তায় মাথা ব্যস্ত থাকে। ক্যারিয়ারের চিন্তাও তার মাঝে একটা জায়গা দখল করে নিয়েছে।
তবে এবার কেনো যেনো মনে হচ্ছে, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঈদে ঘুরতে বেরোলে মন্দ হতো না। শুধু যে 'মন্দ হতো না'- এমনটা মনে হচ্ছে, তা নয়; মন বলছে- 'এ-ই করো'। কিন্তু আমার তা করা হবে না। কলেজের বন্ধুরা সবাই আবার ঈদের দিন দেখা করবে, কিন্তু আমার যাওয়া হবে না। আমিই যাবো না। আমি জানি, আমি যদি যাই তবে ফিরে এসে এমনই এক ব্লগ লিখবো, যা পড়ে সেই বন্ধুরা ভাববে- “মাসুদ এত নাক উঁচু স্বভাবের, কী যে ভাবে নিজেকে...”। আর আমারও ভালো লাগবে না। এমন অভিজ্ঞতা অর্জন সুখকর নয়, আর তা নিয়ে ব্লগ লেখা এবং সেই ব্লগ-পরবর্তী অভিজ্ঞতাও সুখকর নয়। আর আমার উপস্থিতিতে তাদেরও আনন্দ মাটি হবে। কারণ, মাসুদের সামনে 'সব ধরণের' 'কৌতুক' আর 'মজা' করা যায় না।
যাহোক, কী বলতে কী বলে ফেললাম। বৃষ্টি থেমে গিয়েছে আমার লেখা শেষ হতে হতে। কী জানি কী এক অদ্ভুত কারণে মনে হচ্ছে যে আগামীকালই ঈদ হবে !
মোবাইলে টাকা ভরেছি। কিন্তু জানি, ঈদের দিনে যতই মেসেজ পাঠাই আর ফোন দিই না কেনো- নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে না। তার 'পর আবার এয়ারটেলের যে নেটওয়ার্ক- কোনোরকম আশাই করা যায় না যে ঈদের দিনে ফোনটা ব্যবহার করা যাবে।
বেশ অনেকদিন হয়েছে ডায়রি লেখা হয় নি। গত দু'দিন পরপর লিখলাম। আর আবার লিখলাম আজকে। হঠাৎই খুব করে ডায়রি লেখায় ফেরা হয়েছে !
….........................................................................................................
মোবাইলটা চেইঞ্জ করতে হয়েছে। আগেরটা ছিলো samsung sgh-c170. ফোনটা খুব স্লিম- একারণেই ছাড়তে মন চাইছে না।
যাকগে।
আজ এ পর্যন্তই।
নূরে আলম,
অগাস্ট ৩০, ২০১১।
ছোট ছোট মানুষের ছোট ছোট সমস্যা!!
উত্তরমুছুনআমার মনে হয় আপনার সিদ্ধান্ত বদলানো উচিত..বন্ধুদের সাথে দেখা হলেই ভাল লাগবে। তাছাড়া সবদিন তো আর একরকম কাটে না, তাই না?
tomra bhai bon na? ami etodin bhabsi tomra bhai bon! :O
উত্তরমুছুনহায় হায় ! আমরা তো এখনও ভাই-বোনই আছি :( হঠাৎ কী হইলো :(
উত্তরমুছুনohh accha zeenat tomake 'apni' kore dakse dekhe confused hoe gesilam loll.
উত্তরমুছুনহুমম... আমরা আবার বয়সে বড়দের সম্মান করে আপনি ডাকি :|
উত্তরমুছুন:)
উত্তরমুছুনamr valoi legese shomoi gulo.shudu pa dieso drkhe hoito valo lageni.nodite pa dubie ki r shat-ranor shad paoa jai?
উত্তরমুছুনভাই, স্রোতে ভাসবার পর কি আর খুঁটি ফিরে পাওয়া যায় ?
উত্তরমুছুনআমি আমার নিজের খুঁটি ধরে আছি, এই-ই ভালো।