সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

UNTITLED-7

সব সাংবাদিকই কি এভাবে গান গায় ? যেমনটা আব্বু গায় -- "হুঁহু হুঁহু হুঁ.... উহু হু... হু হু হু... মমম.. হম... হুম... হু..."
সেজাপু বলে, সাংবাদিকেরা সবাই নাকি এভাবেই গান গায়। অবশ্য আমাদের তেমন একটা সাংবাদিক দেখা হয় না -- আমরা প্রায় আলাদা একটা দুনিয়ায় বাস করি। তবে খেয়াল করেছি, আরিফ ভাইয়াও এভাবে গান গায়। (হঠাৎ মনে পড়লো, বিয়ের আগে আরিফ ভাইয়া যখন শুধু আমাদের বাসায় আসত আর আমরা তাকে সত্ত্বর বিয়ে দেওয়ার পক্ষে বাসায় ওকালতি করতাম, তখন সে শুধু তার ল্যাপটপ বের করে "আমি তোমার মনের ভিতর" গানটা বাজাত !)
আমি গান গাইতে পারি না।
একটু আগে এভাবে গাইছিলাম, আর পুরনো ব্লগগুলোর স্ট্যাটস দেখছিলাম -- কে কবে কোত্থেকে এলো, এইসব। একসময় বেশ দেখতাম। দেখে মজা পেতাম। এজন্যে ট্র্যাকারও লাগিয়েছিলাম। ভিজিটরদের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম (বানান কি ঠিক হলো ???) ডিটেইলস দেখতাম। দেখতাম -- কে দীর্ঘক্ষণ আমার ব্লগ পড়ে, অথচ কমেন্ট করে না, শুধু এসে পড়ে চলে যায়।
এখন আর দেখি না। ট্র্যাকার তুলে দিয়েছি। পোস্টে কেউ কমেন্ট করলো কি করলো না, তাতে কিছু আসে যায় না। কেউ পড়লো কি পড়লো না, তাতেও কিছু আসে যায় না। মাঝে মাঝে ব্লগটা হয়ে যায় ব্লগার লামিয়ার মত চিন্তা ঝাড়ার জায়গা। মাঝে মাঝে ব্লগার যীনাতের মত গল্প লেখার জায়গা। কখনোবা ব্লগার মাহবুবার মত হালকা মুডের জলবৎ-তরলং টাইপের কিছু লেখার অপচেষ্টা। কখনোবা এতসব প্রভাব (!) থেকে বেরিয়ে এসে নিজের মত করে লেখা।

মিড টার্ম পরীক্ষা শেষ হলো গতপরশু। কাল আবার ক্লাস আছে। গতকাল মুভি দেখেছি একটা -- Edward Scissorhands। বেশ ভালো লাগলো মুভিটা। আমি সাধারণত মুভি দেখি না। মনে হয়, অনেক সময় চলে যাচ্ছে। তাছাড়া, আগ্রহও পাই না। অনেক সময়ই বন্ধুরা অনেক মুভির কথা বলে। কিন্তু শুধু হুঁ-হাঁ পর্যন্তই, দেখা আর হয়ে ওঠে না। কেবলমাত্র বাসায় যে মুভিটা অত্যধিক প্রশংসিত হয় (প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস এবং গন উইথ দ্য উইন্ড ছাড়া ) তা হয়তো দেখা হয় এমন সব সময়ে।

গতকাল আমি নানাজীর বাসায় কাটিয়েছি। নানাজী অবশ্য বাসায় ছিলো না। ওদিকে বেশ খ্রিষ্টান থাকে। ওদের বাড়িগুলোও একটু ভিন্নধরণের। সাত তলার বারান্দা কিংবা নয় তলার ছাদ থেকে তাকালে বেশ দেখা যায়। বিকেলে আম্মু আর ছোট খালা বলার পরও ছাদে উঠতে চাইলাম না -- অত্যধিক মশলাযুক্ত খাবার খেতে খেতে স্বাভাবিক খাবারের প্রতি নিরাসক্তি চলে এসেছে।

ওখানে পাঁচতলা একটা বাড়ি আছে। তার একদম উপরের তলাটায় মাত্র দুটো রুম। বাকি অংশটুকু খোলা ছাদের মতন। বেশ একটা দৃশ্য। সেখানে ছোট একটা মেয়ে খেলে। কে জানে হয়ত ক্লাস থ্রি-ফোরে পড়ে। আমার তো আর তার সাথে কথা হয় নি, শুধু --
আমি দূর হতে তোমারে দেখেছি
আর মুগ্ধ হয়ে চোখে চেয়ে থেকেছি
আমি অবশ্য মেয়েটার চোখে চেয়ে থাকি নি। আর দূরত্বের কারণের তার চোখের দিকে ঠাহর করা সম্ভবপর নয়। আমি শুধু তাকে দেখেছি। কিভাবে করে সে একা একা খেলে। যখনই আমি নানাজীর বাসায় যাই, বিকেলে থাকা হলে একবারের জন্য হলেও বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই। দেখি, আমার ছোট্ট বান্ধবীটির একা একা খেলার সময় হলো কিনা। কে জানে হয়তো তার কোনো ভাই বোন নেই। কিংবা আছে -- তারা / সে অনেক বড়, কথা হয়ে ওঠে না। কিংবা ব্যস্ত থাকে। কত কিছুই হতে পারে !
আমি মেয়েটার নাম জানি না, কিন্তু তার খেলা দেখে একটা নাম মাথায় এসেছে -- তন্বী।
(আমার এক ছাত্রীর নাম তন্বী, তবে তার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। নামটি আমার এমনিই মাথায় এসেছে)
প্রায় আধাঘন্টা কি পৌনে এক ঘন্টা হবে, সে রেজর স্কুটারে পুরো ছাদটা ঘুরলো। মাঝে মাঝে একা একাই হাত নেড়ে নাচের ভঙ্গি করলো। কে জানে মেয়েটা নাচতে পারে কিনা। তবে সে এই রেজর স্কুটারে বেশ পারদর্শী। কী সুন্দর করে বাম পা দিয়ে মেঝেতে আলতো ধাক্কা দিয়েই পা তুলে নেয় সে, আর তারপর বেশ অনেকটা দূর এমনিই চলে যায় !
খেলতে খেলতে হঠাৎই তার কী যেনো মনে হলো, চলন্ত অবস্থায়ই সেই স্কুটার থেকে নেমে গেলো, আর সেটা কাত হয়ে পড়ে গেলো। তারপর লাল রঙের স্যান্ডাল পরলো। কিছুক্ষণ কী ভেবে তারপর স্যান্ডাল দুটো ছাদের 'পর ছুঁড়ে ফেলে আবার উঠে পড়লো তার খেলনায়।
মেয়েটা একটা ফতুয়া / টি-শার্ট আর টাইটস পরে ছিলো। আর খুব সম্ভব তার  বড় চুল ফিতা দিয়ে মাথার উপরে বাঁধা ছিলো।

ছোটবেলায় সংসদ ভবন এরিয়ায়, বিশেষত সেই বি.রোড - এ যখন এমন করে কিছু বাচ্চাকে খেলতে দেখতাম, তখন আমারও খুব ইচ্ছা হতো। কিন্তু কখনোই সেটা কাউকে বলা হয়ে ওঠে নি। মাঝে মাঝে নিজেকে কল্পনাও করে দেখতাম। আর ওসব কিনলে পরে কী কী ব্যাপার হতে পারে, কোথায় রাখা যেতে পারে কিংবা কোন রাস্তায় খেলতে বেরোনো যেতে পারে, তা ভাবতাম।

আমার দুটো জিনিসের খুব শখ ছিলো ছোটবেলায়, যা আর কখনো করা হবে না বা হয়ে উঠবে না। এক. এই রেজর স্কুটার, দুই. খুব সুন্দর দেখতে সাইকেল।
ছোটবেলায়, যখন এগুলো করার সময় থাকে, প্রবল আগ্রহ থাকে, আছাড় খেয়ে উঠে হাসবার মত অবস্থা থাকে, তখন এই ইচ্ছাগুলোকে কবর দিয়েছিলাম।

সেই থেকে আমার আর সাইক্লিং করা হলো না। এখন এসব নিয়ে বড়জোর ত্রিশ মিনিট ব্লগ লেখা যেতে পারে, কিংবা নানার বাসায় গেলে অচেনা তন্বীকে ছাদে খেলতে দেখে নস্ট্যালজিক হওয়া যেতে পারে, কিন্তু সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত অথবা শখের বশে সাইকেল চালানো চলে না।

এখনতো আমার -- "সময়" নেই।



নূরে আলম,
মার্চ ২৭, ২০১২।

মন্তব্যসমূহ

  1. রহস্য বালিকা has left a new comment on your post "UNTITLED-7":

    আমার লেখা জলবৎ তরলং টাইপের জেনে খুশি না অখুশি হওয়া উচিৎ বুঝলাম না :-|
    সাংবাদিক সংগীতটা একটা universal হাস্যকর জিনিস :D
    ব্লগ পড়লাম... ব্লগে জোরপূর্বক ব্যস্ততা দেখানো হইছে, এইটা ভালো না।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. ছোটবেলার ওই পিচ্চিগুলোর জায়গাতে নিজেকে বসানো হয়েছে না? আমি ওই কাজটা করতে সাহস পাইনা। আমার অমন শত শত ইচ্ছে, কল্পনা অনুভূতিগুলোকে আমি উপেক্ষা করতে করতে অন্য এক জগতে চলে এসেছি। এখানে এসে অতীতের কিছু টেনে আনলে তা বিশ-পচিশটা বইয়ের নিচেরটাকে জোরে টান দেয়ার মতন ভয়ংকর -- সব পড়ে যেতে পারে। মানুষভেদে কখনো কখনো স্মৃতিচারণেও কত সীমাবদ্ধতা, তাইনা? :) ....... লেখাটা সুন্দর। অনেক আপন টাইপের সুন্দর

      মুছুন
    2. বিশ পঁচিশটা বইয়ের নিচেরটাকে টান দেয়া ? হুম... উপমাটা বড়ই চমৎকার, একেবারেই যথার্থ।
      ধন্যবাদ।

      মুছুন
  2. কিছু বলার নাই।
    লেখাটা খারাপ হয়নাই।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[ব্লগে কমেন্ট পোস্ট করার পরও যদি না দেখায়, তাহলে দ্বিতীয়বার পোস্ট করার প্রয়োজন নেই। খুব সম্ভবত স্প্যাম গার্ড সেটাকে সরিয়ে নিয়েছে, আমি পাবলিশ করে দেবো।]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা