সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রকমারি - ৩

জীবনের অনেক সময় অনেক কাজে নষ্ট করেছি।
কিন্তু সেজন্যে অনুতাপ করি না।
মনে হয় জীবনের অনেকটা সময় বাকি আছে।
মনে হয় আরো অনেক কিছু করতে পারবো।

রঙিন মুহুর্ত তৈরী করার পিছনে অনেক সময় ব্যয় করেছি। যখনই সুযোগ পেয়েছি, আর সব ফেলে রেখে সর্বোচ্চ সময় ব্যয় করেছি। স্মৃতি তৈরী করেছি। ডায়রির পাতা ভরিয়েছি।
পরে, এক একটা সময়ে ঐ কাজগুলোকে অর্থহীন মনে হয়েছে; যখন দেখেছি সেই রঙগুলো সাদাকালো হয়ে গিয়েছে ! কিন্তু তবু আমি অনুতাপ করি নি। মনে হয় করবোও না কখনো। কারণ , অন্তত ঐ মুহুর্তের জন্যে হলেও তো সময়গুলো চমৎকার ছিলো ! এটা তো নির্দোষ মদের মত, যে মদে পাপ হয় না। খাবার সময়টা অনেক সুখানুভুতি, কিন্তু আফটার ইফেক্টস সুখের হবে কিনা, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না !

এই নির্দোষ মদে অনেক সময় পার করেছি। আফটার ইফেক্টগুলো যখন চমৎকার হয় নি, তখন ঘড়ির দু' ঘন্টাকে চার ঘন্টা মনে হয়েছে। মনে হয়েছে, চারটি ঘন্টা শেষ করে ফেলেছি, এবং তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
তবে অনুতাপ করি নি।

শিক্ষা হয়েছে অনেক। এখন মনে হয় ভালো মদ চিনতে শিখেছি ! নইলে অন্তত "মাত্রা" জানি ! তবু এই নেশা ছাড়তে পারি না। ভাগ্যের শিশুর মত বারবার ফিরে যাই। এটা দুর্বলতা। কিন্তু এই দুর্বলতায় প্রবল আনন্দ।


আমার রুমের জানালা দিয়ে বহু দূরে এয়ারপোর্টের আকাশ-আলো-করা লাইট দেখা যায়। এইমাত্র অন্ধকার আকাশে টিমটিম করে হারিকেনের মত আলো জ্বালাতে জ্বালাতে একটা প্লেন গেলো। জানালা দিয়ে ঢাকা-শহরের এলোমেলো অপরিকল্পিত বিল্ডিং ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। ভালো লাগার জিনিস বলতে রাতের বেলা এয়ারপোর্ট। যখন দেখি ওখানে আলো জ্বলছে, কিংবা একটা প্লেন উড়ে যাচ্ছে বহু দূর দিয়ে, তখন বেশ কিছু কল্পনা এসে গল্প রচনা করে যায়।

যদিও আমি যীনাতের মত করে আলো গুনতে পারি না, তবে মনে হচ্ছে যেনো সত্যিই গতরাতের চেয়ে আজ রাতে আলো বেশ কম জ্বলছে এই রাতের ঢাকায় !

এখন রোজা। সেহরির সময় উঠে খুব বেশি বাড়িতে আলো জ্বলতে দেখি না। এখানে খ্রিষ্টান বেশি থাকে। এজন্যে বোধহয় আলো কম। তবে একটা সুবিধা হলো, ঘন্টা বাজিয়ে তারা জানান দেয় -- সময় বেশি নেই !

এখানে পাশেই আরেকটা বাড়ি হচ্ছে। সারা রাত সেজন্যে ট্রাকে করে ইট-বালু নামায়। এখন সেই কাজ হচ্ছে। পাথরের টুকরা নামানোর শব্দ হচ্ছে এখন। আমি নিেচ তাকালেই দেখতে পাচ্ছি। ওরা পুরো অন্ধকার একটা রাস্তায় ১০০ ওয়াটের বাল্ব জ্বালিয়ে কাজ করছে। চারিদিক চুপচাপ, শুধু ওদের শব্দ ছাড়া। আমার কাছে এই দৃশ্যটা সবসময়ই পিকনিক পিকনিক মনে হয়। আমি একদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওদের কাজ দেখেছিলাম অনেক্ষণ। তখন অবশ্য দানবীয় মেশিন দিয়ে মাটি খোঁড়া হচ্ছিলো -- অনেক আগের কথা সেটা। লোকটা প্রথমে মেশিনের মধ্যে আলো জ্বালিয়ে ঘুমাচ্ছিলো। তারপর একটা গাড়ি আসলো। দুইটা মানুষ নামলো। একজন এগিয়ে গিয়ে ডাক দিলো। ঘুমন্ত লোকটা উঠে কিছুক্ষণের মাঝে মেশিন দিয়ে মাটি খুঁড়তে শুরু করে দিলো। তারপর সেই যান্ত্রিক হাত দিয়েই মাটি ট্রাকে তুলে গুছিয়ে দিলো সুন্দর করে ! ঐ ট্রাক যাবার কিছুক্ষণের মাঝেই আরেকটা ট্রাক। এভাবে চলতে লাগলো। সুন্দর দৃশ্য।

আজ ইউনিভার্সিটিতে ওয়ার্কশপ করেছি। বিষয়টা ছিলো ব্লগিং। আমার করা দ্বিতীয় ওয়ার্কশপ এটা। এর আগেরটায় টেকনিক্যাল কথা অনেক ছিলো। মানুষ পছন্দ করেছে, তবে রেসপন্স পেয়েছি কম। আজ আমরা সবাই মিলে একটা ব্লগ পোস্ট পড়েছি। আবার, আমি আমার ব্লগিঙেতিহাস বলেছি কিছুটা। আজ মজা পেয়েছি, উৎসাহও পেয়েছি এজন্যে যে সবাই মাঝে মাঝেই নানান কথায় হেসেছে। যেমন, ব্লগিঙের জনক জর্ন বারগারের ছবিটা সাজ্জাদ স্যারের মত দেখতে। আরো অনেক কথা। সামহোয়্যারইনে আমি কত গালি খেতাম, ঐসব কথা। অনেকদিন পর, ওয়ার্কশপ করার জন্যে এসব কথা স্মৃতির জঞ্জাল ঘেঁটে বের করে আনলাম। ঐসব স্মৃতিকেও তো আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছি !

এই রোজায় রাত জাগা হচ্ছে অনেক। একবারে সেহরি খেয়ে ঘুমাচ্ছি।
কত রোজা গেলো আজ ?

আমি কী সব আবোল-তাবোল লিখছি ? আসলে আমি মদ খাচ্ছি। তবে এ হলো নির্দোষ মদ। এই মদে রোজা নষ্ট হয় না।



নূরে আলম
জুলাই ২৬, ২০১২।

মন্তব্যসমূহ

  1. ওইদিনের ওয়ার্কশপ অন্নেক ভালো হইছিল !আর আমরা চাই আপনি বেশি বেশি ভিবিন্ন ভিবিন্ন রকম মদ পান করবেন আর আমাদের ওয়ার্কশপ এ উপহার দিবেন!!!!!!!!!!

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. হা হা হা...
      আপনার মদ কই ? আপনি কবে লেখালেখি শুরু করবেন !

      মুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[ব্লগে কমেন্ট পোস্ট করার পরও যদি না দেখায়, তাহলে দ্বিতীয়বার পোস্ট করার প্রয়োজন নেই। খুব সম্ভবত স্প্যাম গার্ড সেটাকে সরিয়ে নিয়েছে, আমি পাবলিশ করে দেবো।]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা