আসরের আগ দিয়ে দোকানে গেলাম কিছু জিনিস আনার জন্য। লিস্ট দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ দেখলাম দু’জন মহিলা এসে দাঁড়িয়েছে দোকানের সামনে।
ঐ চেহারাদুটো আমি দেখেছি একটানা পাঁচ বছর। এই দু’জন ম্যাডাম-ই আমার খুব প্রিয় ছিল।
আলেয়া ম্যাডাম।
বিউটি কর (আমরা বলতাম দিদিমণি) ম্যাডাম।
আমি দোকানের ভিতরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আলেয়া ম্যাডাম আর দিদিমণি ম্যাডাম ভদ্রতা করছেন- কে কিনবেন। আমি আর সে সুযোগ দিলাম কই ? ম্যাডামদের দেখে আমি যেন ক্লাস সিক্সের সেই বাচ্চা ছেলেটা হয়ে গেলাম। খুব খুশি লাগছিলো। দোকান থেকে নেমে গিয়ে দু’জনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম- “সালাম, ম্যাডাম আমাকে চিনতে পারসেন ?”
তাঁরাও খুব খুশি আমাকে দেখে : “ হ্যা, চিনতে পারব না কেন ? পরিবর্তন বলতে লম্বা হইসো।” বলে আলেয়া ম্যাডাম আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত তর্জনী দিয়ে উচ্চতাটা নির্দেশ করলেন।
“ম্যাডাম কেমন আছেন ? অনেকদিন পর আপনাদের দেখে খুব ভালো লাগলো।”- আমি বাচ্চা ছেলেটি হয়ে গেলাম ম্যাডামদের সামনে, আর দোকানের ছেলে তিনটা কাজ বাদ দিয়ে তা-ই দেখতে লাগল।
“এখন কী করছ ?”
“আমি কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ারিং এ।”
“আর তোমার বোনটা ?”
“ও Pharmacy তে।”
“ আমি তো আর স্কুলে যাই না। কিছু বিল ছিল, তাই তুলতে এসেছি।” দিদিমণি ম্যাডাম বললেন। আলেয়া ম্যাডাম তখন দোকানের ভিতরে গিয়ে খাবার কিনছেন, আমি আর দিদিমণি ম্যাডাম দোকানের সামনে রাস্তায় দাড়িয়ে।
“ম্যাডাম, স্কুল ছেড়ে দিলেন ?”
“দিলাম.....। তারা যেভাবে পারে চালাক স্কুলটাকে।”
বুঝলাম- অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে সেই পুরনো গণ্ডগোল।
“অবশ্য ম্যাডাম, আমাদের সময়ে অনেক ভালো ছিল, বিশেষ করে সফিক স্যারের সময়ে। এর পরের খবর তো আর জানি না.....।”
“হ্যাঁ, ঐ সময় প্রচুর উন্নতি হয়েছে স্কুলের।”
“ম্যাডাম, এখন তো CSE পড়তেসি; ভার্সিটিতেও কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে হয়, বাসায়ও কম্পিউটারে বসে থাকতে হয়। অবশ্য এখন একটা মজা হইসে, আগে তো আব্বু-আম্মু কম্পিউটারে বসতে নিষেধ করত, এখন আর কিছু বলতে পারে না !”
আমি ম্যাডামদের সাথে কী গল্প করব বুঝতে পারছিলাম না, শুধু মনে হচ্ছিল ম্যাডামরা আরো অনেক্ষণ থাকুক, আমি তাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি।
“তাই !” দিদিমণি ম্যাডাম হাসলেন। ততক্ষণে আলেয়া ম্যাডাম পাউরুটি আর ফ্রুটো কিনে নিয়েছেন। বললেন- “এখন আর তোমাদের চিন্তা নাই। এখন তোমরা খুঁটি ধরে ফেলেছো, এটাকে শক্ত করে ধরে রাখো.....।”
“জ্বী ম্যাডাম, দোয়া করবেন যেন ভালোভাবে পড়াটা শেষ করতে পারি।”
আলেয়া ম্যাডামের শেষের কথাটাতে যে আমার কী চমৎকার অনুভুতি হল.....। মনে হল, এমন সব অনুভুতির জোরেই আমি কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ার হয়ে যাবো !
আমি দোকানের ভিতরে ঢুকে বাজারের ব্যাগটা হাতে নিলাম। ততক্ষণে ওরা ব্যাগ রেডি করে ফেলেছে। ব্যাগটা নিয়ে নামতে নামতে খেয়াল করলাম, ওদের তিনজনেরই চেহারা কেমন যেন আলোকিত হয়ে আছে : আনন্দিত, সেই সাথে হয়তো কিছুটা নস্ট্যালজিক।
ওরা স্কুলে কতদূর পড়াশুনা করেছে, কখনো জানা হয় নি।
........................................................................................................
(পোস্টের বাইরের কথা : ইদানিং এই গানটা শুনছি )
nice post.....
উত্তরমুছুনএখন তোমরা খুঁটি ধরে ফেলেছো, এটাকে শক্ত করে ধরে রাখো.....।
:)
উত্তরমুছুন