সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ডায়রি : মার্চ ২৮, সন্ধ্যা।


আসরের আগ দিয়ে দোকানে গেলাম কিছু জিনিস আনার জন্য। লিস্ট দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ দেখলাম দু’জন মহিলা এসে দাঁড়িয়েছে দোকানের সামনে।
ঐ চেহারাদুটো আমি দেখেছি একটানা পাঁচ বছর। এই দু’জন ম্যাডাম-ই আমার খুব প্রিয় ছিল।
আলেয়া ম্যাডাম।
বিউটি কর (আমরা বলতাম দিদিমণি) ম্যাডাম।
আমি দোকানের ভিতরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আলেয়া ম্যাডাম আর দিদিমণি ম্যাডাম ভদ্রতা করছেন- কে কিনবেন। আমি আর সে সুযোগ দিলাম কই ? ম্যাডামদের দেখে আমি যেন ক্লাস সিক্সের সেই বাচ্চা ছেলেটা হয়ে গেলাম। খুব খুশি লাগছিলো। দোকান থেকে নেমে গিয়ে দু’জনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম- “সালাম, ম্যাডাম আমাকে চিনতে পারসেন ?”
তাঁরাও খুব খুশি আমাকে দেখে : “ হ্যা, চিনতে পারব না কেন ? পরিবর্তন বলতে লম্বা হইসো।” বলে আলেয়া ম্যাডাম আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত তর্জনী দিয়ে উচ্চতাটা নির্দেশ করলেন।
ম্যাডাম কেমন আছেন ? অনেকদিন পর আপনাদের দেখে খুব ভালো লাগলো।”- আমি বাচ্চা ছেলেটি হয়ে গেলাম ম্যাডামদের সামনে, আর দোকানের ছেলে তিনটা কাজ বাদ দিয়ে তা-ই দেখতে লাগল।

এখন কী করছ ?”
আমি কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ারিং এ।”
আর তোমার বোনটা ?”
Pharmacy তে।
আমি তো আর স্কুলে যাই না। কিছু বিল ছিল, তাই তুলতে এসেছি।” দিদিমণি ম্যাডাম বললেন। আলেয়া ম্যাডাম তখন দোকানের ভিতরে গিয়ে খাবার কিনছেন, আমি আর দিদিমণি ম্যাডাম দোকানের সামনে রাস্তায় দাড়িয়ে।
ম্যাডাম, স্কুল ছেড়ে দিলেন ?”
দিলাম.....। তারা যেভাবে পারে চালাক স্কুলটাকে।”
বুঝলাম- অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে সেই পুরনো গণ্ডগোল।
অবশ্য ম্যাডাম, আমাদের সময়ে অনেক ভালো ছিল, বিশেষ করে সফিক স্যারের সময়ে। এর পরের খবর তো আর জানি না.....।”
হ্যাঁ, ঐ সময় প্রচুর উন্নতি হয়েছে স্কুলের।”
ম্যাডাম, এখন তো CSE পড়তেসি; ভার্সিটিতেও কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে হয়, বাসায়ও কম্পিউটারে বসে থাকতে হয়। অবশ্য এখন একটা মজা হইসে, আগে তো আব্বু-আম্মু কম্পিউটারে বসতে নিষেধ করত, এখন আর কিছু বলতে পারে না !”
আমি ম্যাডামদের সাথে কী গল্প করব বুঝতে পারছিলাম না, শুধু মনে হচ্ছিল ম্যাডামরা আরো অনেক্ষণ থাকুক, আমি তাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি।
তাই !” দিদিমণি ম্যাডাম হাসলেন। ততক্ষণে আলেয়া ম্যাডাম পাউরুটি আর ফ্রুটো কিনে নিয়েছেন। বললেন- “এখন আর তোমাদের চিন্তা নাই। এখন তোমরা খুঁটি ধরে ফেলেছো, এটাকে শক্ত করে ধরে রাখো.....।”
জ্বী ম্যাডাম, দোয়া করবেন যেন ভালোভাবে পড়াটা শেষ করতে পারি।”
আলেয়া ম্যাডামের শেষের কথাটাতে যে আমার কী চমৎকার অনুভুতি হল.....। মনে হল, এমন সব অনুভুতির জোরেই আমি কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ার হয়ে যাবো !

আমি দোকানের ভিতরে ঢুকে বাজারের ব্যাগটা হাতে নিলাম। ততক্ষণে ওরা ব্যাগ রেডি করে ফেলেছে। ব্যাগটা নিয়ে নামতে নামতে খেয়াল করলাম, ওদের তিনজনেরই চেহারা কেমন যেন আলোকিত হয়ে আছে : আনন্দিত, সেই সাথে হয়তো কিছুটা নস্ট্যালজিক।
ওরা স্কুলে কতদূর পড়াশুনা করেছে, কখনো জানা হয় নি।
........................................................................................................
(পোস্টের বাইরের কথা : ইদানিং এই গানটা শুনছি )

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[ব্লগে কমেন্ট পোস্ট করার পরও যদি না দেখায়, তাহলে দ্বিতীয়বার পোস্ট করার প্রয়োজন নেই। খুব সম্ভবত স্প্যাম গার্ড সেটাকে সরিয়ে নিয়েছে, আমি পাবলিশ করে দেবো।]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা