সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

একজন মানুষের ভবিষ্যত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ৯৫%-এর ভিত্তি স্থাপিত হয় তার জীবনের প্রথম সাত বছরে। অর্থাৎ, জন্মের পর থেকে কমবেশি সাত বছর বয়সে পৌঁছানো পর্যন্ত সে যে মনোদৈহিক আচরণ পেয়ে থাকে, সেটাই নির্ধারণ করে দেয় সে ভবিষ্যতে সাহসী হবে নাকি ভীতু হবে, সত্যবাদী নাকি মিথ্যাবাদী হবে, সচ্চরিত্র নাকি দুশ্চরিত্র হবে, ইত্যাদি। ঈর্ষাপরায়ন হবে কিনা, গিবত করবে কিনা, আত্মপীড়ন কিংবা আত্মহত্যা করবে কিনা, ইত্যাদি। আর এই ব্যাপারটা ঘটে পরিবারে। যে পরিবার তার সন্তানের শিশু অবস্থায় তার সাথে যত উন্নত ও ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করেছে, সে সন্তান তত উন্নত মানুষ হতে পেরেছে। অতএব, আপনি যা হবার, তা আসলে অলরেডি হয়ে গেছেন, এবং এখন নিজেকে নানাভাবে বদলানোর প্রবল ইচ্ছা হলেও তাতে সফল হওয়া খুবই কষ্টকর ব্যাপার।

এখন কারো কারো নিজের পরিবার নিয়ে কিছু বিষয়ে আফসোস হতে পারে যে: "ওমুক বিষয়টি আমি পরিবারে পাইনি…।" কিংবা কেউ হয়ত পিতামাতাকে দোষারোপও করে বসতে পারে।
দোষারোপ কিংবা আফসোস -- কোনোকিছুতেই কিছু অর্জিত হয় না। কেবল সমস্যার সমাধান করলেই কিছু না কিছু অর্জিত হয়।

যাহোক, এই পর্যায়ে আমি আশা করব প্রত্যেকে নিজের পরিবার থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাগুলোর ভালোমন্দ যাচাই করবেন, এবং কোন কোন বিষয়ে শিক্ষা পাওয়া প্রয়োজন ছিল কিন্তু পাননি-- তা আইডেন্টিফাই করবেন। তারপর সেই জ্ঞানকে ভবিষ্যতে কাজে লাগাবেন।

তো, একারণেই ইসলাম পরিবারব্যবস্থাকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। একইসাথে দেখবেন যে, শয়তানের অধিকাংশ কর্মকাণ্ডই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের পারিবারিক জীবনকে নষ্ট করে দিচ্ছে, কিংবা সুস্থ পরিবারব্যবস্থায় আঘাত হানছে। কেননা, যে ব্যক্তি একটি ভারসাম্যপূর্ণ ইসলামী পরিবারে বেড়ে ওঠে, তার তুলনায় সেই ব্যক্তিকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করা অধিক সহজ, যে ব্যক্তি উন্নত পারিবারিক পরিবেশ পায়নি, কিংবা আদৌ হয়ত পারিবারিক পরিবেশ পায়নি।

যাহোক, ইসলামী পরিবার ও পারিবারিক জীবন কেমন হওয়া উচিত, তা আমাদের জানতে হবে।

এবং একইসাথে রাষ্ট্রব্যবস্থা, অর্থনীতি, আয়-উপার্জন-ক্যারিয়ার ইত্যাদি সবকিছুকে এমনভাবে সাজাতে হবে, যেন তা সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবার গড়ে তুলতে সাহায্য করে, একইসাথে পারিবারিক ইন্টারঅ্যাকশানকে প্রমোট ও বৃদ্ধি করে।

………………………………………………

এই বিষয়টি অনেক বিস্তারিত আলোচনা করা প্রয়োজন। কিন্তু আমার যোগাযোগ-ক্ষমতা (কথা বলা ও লেখা) দ্রুত কমে আসছে, অতএব আর আগের মত করে লেখা বা বলা সম্ভব হবে না। তবুও এতটুকু অনেক কষ্ট করে লিখলাম, যেন আমার প্রিয়জনদের দুই-চারজনও যদি একটু উপকৃত হয়, সেই আশায়।

আমাদের প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ব্যক্তিগত চারিত্রিক দোষ-ত্রুটির গভীরে অনুসন্ধান করতে হবে এবং নিজের চাইল্ডহুড-এর কোন ঘটনা/ আচরণ/ কারণ থেকে উক্ত দোষ উৎসরিত, তা নির্ধারণ করে সমাধানের জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

……………………………………………………

এখন রজব মাস চলছে। এই মাসে সাপ্তাহিক দুটি রোজা (সোমবার ও বৃহস্পতিবার) রাখুন এবং তার পরবর্তী শাবান মাসে সাপ্তাহিক রোজার সাথে চাঁদের রোজাও (আরবি মাসের ১৩-১৪-১৫ তিনদিন) রাখুন। তাহলে রমজান মাসে ত্রিশটা রোজা ভালোভাবে রাখা যাবে।
……………………………………………………………

আমাদের দেশে পরিবারব্যবস্থা আশঙ্কাজনক হারে দুর্বল হয়ে পড়ছে; ফলস্বরূপ তারুণ্যের মাঝে অশান্তি ও অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলোসহ আরো নানান সমস্যার সমাধান হবে যদি "সুস্থ পরিবার ও পারিবারিক জীবনের" দিকে সকলে লক্ষ্য রাখে।

আমি আমার নিজেকে এবং আমার প্রিয়জনদেরকে খোদায়ী শক্তির নিকট সমর্পন করছি।

খোদা হাফেজ।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা