সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কৈফিয়ত

১. গোলামী যেন দেশবাসীর অভ্যাসে পরিণত না হয়।
২. বিএনপি-জামাতের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব ও হঠকারী কূপমণ্ডুকতা সম্পর্কে খুব স্পষ্টভাবে জানতে মাহমুদুর রহমানের এই লেখাটা পড়ুন
৩. এবার আমার কিছু কথা (অনলাইন-অফলাইনে আগেও বলেছি):
0. বাংলাদেশের বর্তমান দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা স্ট্রাকচারালি কার্যতঃ স্বৈরতান্ত্রিক (সবচে বড় দলের প্রধানই দেশব্যাপী এমপি-মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ইত্যাদি নিয়োগ দিয়ে থাকে)। অতএব, এই স্ট্রাকচার যতদিন না বদলাবে, ততদিন এই সিস্টেমের খেলোয়াড়দের ভিতর থেকে স্বৈরাচার জন্ম নিতে থাকবে। এই বুঝটা না থাকলে আপনি কেবল হাসিনা-খালেদা ক্যালকুলেশানই করবেন, এবং আপনার পরের জেনারেশান তাদের যুগে জন্ম নেয়া নতুন হাসিনা-খালেদার ক্যালকুলেশান করবে, কিন্তু এটা বুঝবে না যে, আমাদের সিস্টেমটাই স্বৈরাচার জন্ম দেবার সিস্টেম।
1. বাংলাদেশে বর্তমানে স্বৈরশাসন চলছে। কিন্তু জনগণের মাঝে এই অনুভূতিটা দৃঢ়ভাবে নেই; অর্থাৎ, জনগণ স্পষ্টভাবে মনে করছে না যে দেশে স্বৈরশাসন চলছে। তারা এখনও কমবেশি 'ভোট, ইলেকশান, সরকারী দল-বিরোধী দল' ইত্যাদি নিয়েই ভাবে।
এর ফলে 'ইলেকশান মহড়া' কিংবা 'গণতান্ত্রিক নাটক' মঞ্চস্থ করে স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখা আরো সহজ হচ্ছে।

2. বাংলাদেশে বর্তমানে বিএনপি বলে কিছু নাই, জামাত বলেও কিছু নাই, এমনকি আওয়ামী লীগ বলেও কিছু নাই। অথচ জনগণ সেটাই ভাবছে, সেভাবেই দেখছে, সেভাবেই ক্যালকুলেশান করছে। কার্যতঃ বাংলাদেশে আছে জালিম স্বৈরশাসক ও মজলুম জনগণ। তা সেই স্বৈরশাসক যে দলের নামই ধারণ করুক না কেন, আর সে মজলুম জনগণ যত বিভিন্ন দলের সাপোর্টারই হোক না কেন।

3. স্বৈরশাসনের বিপরীতে বিপ্লবই একমাত্র কার্যকরী পন্থা। কিন্তু জনগণ যেহেতু বর্তমান পরিস্থিতিকে 'স্বৈরশাসন' হিসেবে সচেতনভাবে recognize করছে না, বরং এখনও তারা 'গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ক্যালকুলেশান' করে, সেহেতু বিপ্লবী পরিস্থিতি তৈরীও হবে না, এবং এই স্বৈরশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য দীর্ঘায়িত হবে।

4. বাংলাদেশে গণবিপ্লব করার মত কোনো যোগ্য নেতৃত্ব নেই: বিএনপি থেকেও নেই, জামাত থেকে তো নয়ই, এর বাইরেও নির্দলীয় কোনো বিপ্লবী ব্যক্তিত্ব নেই। এমতাবস্থায় স্বৈরশাসকের দেয়া 'রাজনীতি রাজনীতি খেলা'-তে কারো অংশগ্রহণ করা উচিত নয় (সাধারণ জনগণ বা রাজনীতিবীদ)। কেননা, তা স্বৈরশাসকের এই 'গণতান্ত্রিক মুখোশ'-কে দীর্ঘায়িত করবে।

5. তবুও এঁটো-কাঁটার আশায় অধিকাংশ রাজনীতিবীদই এসবে অংশগ্রহণ করবে। কেননা, গণবিপ্লব হলো জনগণের নিঃস্বার্থ খেদমত করতে গিয়ে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া, কিন্তু আমাদের দেশের ৯৯% রাজনীতিবিদই পেটপূজারী, স্বার্থবাদী মানুষ। এমতাবস্থায় তাদের কাছ থেকে গণবিপ্লব আশা করা যায় না।

6. ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মত আলেম-সমাজ কর্তৃক কোনো বিপ্লবের আশাও আপনি করতে পারবেন না বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলো ও গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে। কেননা তারা হলো ব্যাঙের মত, এক পাত্রে কখনোই দশটা ব্যাঙ ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে পারে না।

7. এমতাবস্থায় করণীয় কী?
এক. আপনি যদি গণবিপ্লব করার মত যোগ্য ব্যক্তি হন, তবে আপনি আপনার করণীয় জানেন।
দুই. আর যদি আমার মত সাধারণ মানুষ হন, তাহলে ঘরের কোণে বসে আল্লাহ-বিল্লাহ করে দিন কাটিয়ে দিন; আর মানুষের খেদমত যেভাবে যতটুকু সম্ভব, করার চেষ্টা করুন।

8. আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুসহ অনেকেই মাঝেমধ্যে আমাকে খোঁটা দিয়ে বলে যে, "বিদেশে নিরাপদে বসে থেকে হ্যান ত্যান বলাই যায়।" অথচ আমি বাংলাদেশে থাকাকালীন রাজনৈতিক বিষয়ে লেখালেখিও করেছি, সেসব লেখা আমার ব্যক্তিগত ব্লগ ও ফেইসবুকে এখনও আছে। সম্প্রতি জালিম সরকার যখন মায়েদের কোলের মধ্যে হাত দিল (স্কুল-বাচ্চাদের নিরাপদ সড়ক দাবীর বিপরীতে রক্তাক্ত করলো তাদেরকে), তখন আমি দেশে বসেই লাইভ করেছি, কথা বলেছি; নিতান্তই বিবেকের তাড়না থেকে।
বর্তমান সরকারের সাথে জড়িত আমার শুভাকাঙ্খীরা নিষেধ করেছে, তবু বিবেকের দায় থেকে বলেছি।

9. আমার ব্যক্তি অবস্থানকে মানুষের কাছে জাস্টিফাই করার প্রয়োজন বোধ করি না, তবে এটুকু বললাম একারণে যে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নীরব থাকার পিছনে এক প্রকার wisdom আছে, সেটা যেন দু-একজন মানুষ হলেও দেখেন।

10. বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি বুঝে কিংবা না বুঝে বিএনপি-জামাত-হেফাজত ইত্যাদি দল/গোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দ অযথাই হাজারো প্রাণকে মৃত্যু ও জুলুমের মুখে ঠেলে দিয়েছে, আফসোস! পয়সার মত করে সাধারণ কর্মীদের জীবনকে খরচ করেছে, কিংবা মাদ্রাসা ছাত্রদেরকে সিম্পলি 'খরচ' করেছে (পরেতো বেঈমানটার তেঁতুল মিষ্টি হয়ে গেল)।

11. কোনো বিপ্লব করার মত যোগ্যতা আমার নেই, ব্যক্তিগত জীবন সে সুযোগও দেয় না। পেটের পেছনে সবাইকেই কমবেশি দৌড়াতে হয়। তবে তার মানে এই নয় যে, এই রাজনীতিগুলো আমি/আমরা বুঝি না। আমরা ঠিকই বুঝি, বরং জামাত-বিএনপি-হেফাজতের কূপমণ্ডূক রাজনীতিবিদদের চেয়ে আরো ভালোভাবে বুঝি।
এমতাবস্থায় মানুষের খেদমতে আমার যতটুকু সাধ্য, আমি ততটুকুই করার চেষ্টা করছি, আমার যতটুকু প্রজ্ঞা, সে অনুযায়ীই ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন যাপন করছি। দূরদৃষ্টিহীন হেফাজতের শফি হুজুর 'আসলেই মানুষের কতটুকু খেদমত করেছে' সেটা আজকে ক্যালকুলেশান করতে পারবেন; যদিও হয়ত সেদিন 'শাপলা চত্বরে তুমি যাওনি কেন' বলে আমাকে তিরস্কার করেছেন! আমার মূল্যবান জীবনটাতো আমি কূপমণ্ডূক, অদূরদর্শী নেতৃত্বের হাতে পয়সার মত খরচ হয়ে যেতে দিতে পারি না!
কিংবা জামাত নেতৃত্ববৃন্দ যখন জুলুমের শিকার, তখন কেন মজলুমের পক্ষ নিয়ে জামাত-শিবিরের সাথে রাস্তায় নামি নাই -- সেটা তখন বললেও, আজকে হয়ত বুঝতে পারছেন যে, সেদিন আপনারা যে প্রাণগুলোকে 'খরচ' করেছিলেন, তা বৃথাই গিয়েছে। রাজনীতি/স্বৈরশাসন এমন এক খেলা, যেখানে বিজয় নিশ্চিত না করে খেলতে নামতে হয় না। সেই খেলার বিবেচনায় একমাত্র যোগ্য বর্তমানে আওয়ামী লীগই।

12. আল্লাহ আমাকে যতটুকু সামর্থ্য দিয়েছেন, তা দিয়ে আমি আমার মত করে দুই-চারজন মানুষের খেদমত করার চেষ্টা করেছি, করে যাচ্ছি। একটা মানুষের হৃদয়ে দু-দণ্ড শান্তি কিংবা খোদাপ্রেমের আলো -- সেজন্যে নিজেকে ব্যয় করছি। সময়ের সাথে সাথে অর্জিত প্রজ্ঞা আমাকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। একটা সময় এই প্রজ্ঞা ছিল না, তখন আমিও বাংলাদেশের আর দশজন মানুষের মত রাজনৈতিক ক্যালকুলেশানেই ডুবে ছিলাম।
আমি এখনও সেসব ক্যালকুলেশান দেখি; তবে তারচেয়ে আরো একটু বেশি কিছু দেখি। জাতীয়-আন্তর্জাতিক রাজনীতি বুঝি না, তা নয়; বরং বেশিরভাগের চেয়ে ভালোই বুঝি। কিন্তু সংক্ষিপ্ত জীবনে এবং সার্বিক পরিস্থিতি-প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে কেবলমাত্র হৃদয়ের জগত নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। তবে নীরবতা মানেই জালিমের সমর্থন নয়, এটা জানবেন।

13. মওলা ইমাম আলী (আ.) এর দীর্ঘ ২৫ বছরের নীরবতা আমাদের প্রজ্ঞার অন্যতম উৎস। হৃদয়ের জগতে খোদাপ্রেমের অন্যতম দিশারীও তিনি। সেই নূরকে যে দেখেছে, সে কি তার সমান হতে পারে, যে তা দেখেনি?

আসসালামু আলাইকুম ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সলিহিন।

নূরে আলম
জানুয়ারি ২
তালিন, এস্তোনিয়া

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা