সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

DIY Laptop Stand

কুলিং প্যাডে ল্যাপটপ cool হয় না। আর বিভিন্ন ল্যাপটপের কনস্ট্রাকশন বিভিন্ন রকম, একারণে বাজারের কুলিং প্যাডে কাজ হয় না -- সেগুলোতে কেবল মাঝখানে একটা ফ্যান লাগানো থাকে : কোথায় বাতাস দেয়ার দরকার তা না বুঝে বোকার মত মাঝখানেই বাতাস দিতে থাকে, লাভের মধ্যে ব্যাটারি ড্রেইন হয়ে যায়। আমার ল্যাপটপের নিচে ভেন্ট হলো একদম সামনের দিকে, গরম হলে সেখানেই হয় -- কুলিং প্যাড তার কোনো উপকারই করে না :

ল্যাপটপের ভেন্ট এর অবস্থান বুঝে বানাতে হবে।

কিছুদিন আগে মেজাপু তার ল্যাপটপের কুলিং প্যাড বাদ দিয়ে দুটো বন্দুক রেখে তার উপর ল্যাপটপ রাখা শুরু করলো -- এখন ল্যাপটপ একদম cool ! অথচ আগে ওটাতে প্রায় ডিম পোচ করা যেতো। ওহ, বন্দুক মানে হচ্ছে অনেকগুলো কলম একটার পর একটা স্ট্যাক করে দুটো লম্বা লাঠির মত জিনিস -- সামনে থেকে দেখলে বন্দুকের নল মনে হয়।
যাকগে। সেদিন নেটে একজনের সাথে কথা বলছি, তার দেশে গরম সবে শুরু হয়েছে -- ল্যাপটপ ঠাণ্ডা করতে সে কার্ডবোর্ড বক্স পদ্ধতি প্রয়োগ করেছে : নিচ দিয়ে প্রচুর বাতাস যাতায়াতের সুযোগ থাকায় এখন তার ল্যাপটপ ঠাণ্ডা। (তারও মোটামুটি মেজাপুরটার মত একই ল্যাপটপ -- Dell Inspiron n5110 -- কেউ এইটা কিনবেন না, খুবই গরম !)

আমিও কুলিং প্যাড ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলাম -- কারণ এতে মানসিকভাবেই ল্যাপটপ ঠাণ্ডা হয়, বাস্তবে ল্যাপটপে আরো কিছু ধুলা ঢুকানো ছাড়া লাভ হয় না। আমার আইডিয়া মোটামুটি এরকম :
কয়েকটা সিডি রেখে তার উপর চারটা উঁচু পায়া বসিয়ে দেয়া, আর তার উপরে ল্যাপটপ থাকবে।

সিডি সংক্রান্ত অপ্রয়োজনীয় বর্ণনা : Ubuntu 10.04 এর ডিভিডি, নকিয়া এক্সপ্রেস মিউজক ফোনের সিডি, আর অন্যটা হলো কিউবি থেকে দেয়া ওদের কনসার্টের ডিভিডি।

যা যা ব্যবহার করলাম :

১. কয়েকটা সিডি
২. পর্দার স্ট্যান্ড এর হোল্ডার
৩. ছয়-সাত মিলিমিটার ব্যাসের নরম প্লাস্টিক টিউব
৪. নষ্ট সাউন্ড বক্স এর নব
৫. সুপার গ্লু, এন্টি কাটার, কেচি, রুলার, সাইনপেন ইত্যাদি।

বানানোর পদ্ধতি :

এই জিনিসের সুবিধা হলো, নিজের ল্যাপটপের ভেন্ট অনুযায়ী বিভিন্ন পজিশনে পায়া লাগিয়ে নিতে পারবেন, অর্থাৎ -- কাস্টমাইজড হবে, আর নিজে বানানোর আনন্দও পাওয়া যাবে। :-)
আমার ল্যাপটপের মাঝের দিকে কোনো ভেন্ট নেই, একদম সামনে চিকন দুটো আছে, তাই আমার জন্য আয়তাকার হলেই সুবিধা হবে। ছবিতে দেখুন আমার বানানো ল্যাপটপ স্ট্যান্ড, পায়াগুলোর বর্ণনা পরে দিচ্ছি :

টেবিলের উপর সাইনপেন দিয়ে রুলারের সাহায্যে প্রয়োজনীয় দাগ দিয়ে নিয়েছি, যেনো তিনটা সিডির কেন্দ্র এক সরলরেখায় থাকে, এবং সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি রেখেছি। (টেবিলের কাটাকুটি দাগ বহু বছরের বহু এক্সপেরিমেন্টের সাক্ষী :-) )

পায়া তৈরী :

পায়া বানানোটাই যা একটু ঝামেলা। ঘরের মধ্যে এদিক ওদিন অপ্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজে দেখুন, আরো সহজ কোনো জিনিস পেয়ে গেলে তো হলোই। যেমন, আড়াই-দুই সেন্টিমিটার ব্যাসের সলিড কোনো টিউব / পাইপ / রড, যেটাকে এক ইঞ্চি উচ্চতায় কেটে চারটা পায়া বানানো যাবে। আমি তেমন কিছু পাই নি, সুতরাং জটিল পদ্ধতিতেই করতে হলো। পায়া তৈরীতে ব্যবহার করেছি পর্দার স্ট্যান্ডের স্ক্রু টাইপ হোল্ডার, ল্যাপটপ যেনো স্লিপ না করে সেজন্য নরম প্লাস্টিক টিউব, আর সাউন্ড বক্সের নব। পরবর্তী নয়টা ছবির বিশেষ বর্ণনার দরকার নেই, ক্যাপশন দেখলেই হবে :

২ ইঞ্চি লম্বা টিউব চার পিস নিয়েছি।
সাউন্ড বক্সের নব এর দৈর্ঘ্যের সমান আট পিস নিয়েছি। দৈর্ঘ বরাবর প্রতিটা কেটেছি।

প্রতিটা নব দুটো করে পিস দিয়ে আঠা ছাড়াই লাগিয়েছি।

এর ফলে মেটাল আবরণ পরালে সেটা টাইট হবে।

২ ইঞ্চি টিউব এভাবে ধরে তার উপরে পর্দার স্ট্যান্ড এর স্ক্রু-হোল্ডার চেপে বসিয়ে দিতে হবে।

স্ক্রু-হোল্ডারকে নব এর উপরে মোটামুটিভাবে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।

সতর্কতার জন্য বের হয়ে থাকা অংশের কিছুটা সাবধানে এন্টি কাটার দিয়ে কেটেছি, যেনো পরবর্তীতে প্লেইন সারফেসে গ্লু করতে ঝামেলা না করে।

একইভাবে বাকি তিনটা পায়া তৈরী করেছি।

পায়াগুলোর নিচের দিক -- প্রতিটা রিম বরার সুপার গ্লু বসাতে হবে, সেজন্যে ফ্ল্যাট সারফেসের সাথে চেক করে নেয়া ভালো, উঁচু নিচু থাকলে প্রয়োজনে রেত দিয়ে ঘষে সমান করে নিতে হবে।
ব্যাস ! এরপর চারটা পায়া সুপার গ্লু দিয়ে বসিয়ে দিলাম। ল্যাপটপকে স্ট্যান্ড এর উপরে রেখে যন্ত্রপাতি সব তুলে রাখলাম, এরপর DIY টিউটোরিয়াল লেখার জন্য ক্যামেরা হাতে নিয়ে ছবি ট্রান্সফার করবো বলে যেই ল্যাপটপের লিড তুলেছি, সাথে সাথে পিছন দিকে হেলে পড়লো ল্যাপটপ :-(
বন্ধ থাকা অবস্থায় সমস্যা ছিলো না, কিন্তু লিড তোলার পর পিছন দিকটা ভারী হয়ে যায়, আর তাই গিয়েছে পড়ে। সুতরাং আরেকটা সিডি যোগ করতে হলো পিছনের অংশকে সাপোর্ট দেবার জন্য।

চতুর্থ সিডি, লিড তোলার পর ভারী অংশটাকে সাপোর্ট দেবার জন্য। (এটাই ফাইনাল।)

পঞ্চম পায়ার ক্লোজ-আপ।


আমার টেবিল :-D

এইতো ! :-)


নূরে আলম
মার্চ ২৯, ২০১৩।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা