দুপুর আড়াইটা।
পরীক্ষা শেষে ইউনিভার্সিটি থেকে বের হলাম সবাইকে বিদায় জানিয়ে।
পরিচিত এক আঙ্কেলের কাছে গেলাম। আঙ্কেল বলেছিলো যে আমি যেদিন বাড়ি যাবো, তার আগে তার কাছে যেতে। সে আমাকে একটা বেল্ট গিফট করলো।
বিকাল চারটা।
বাসায় আসলাম। বাসা ভাড়ার আমার অংশটুকু অপুকে দিলাম, যেনো দশ তারিখ ও ভাড়া দেওয়ার সময় আমারটাও দিয়ে দেয়।
তারপর আমার ব্যাগ গুছালাম। বোনের জন্য কিছু জিনিস কিনেছি ঈদ উপলক্ষে। আমার বার্থডে তে ফ্রেন্ড চকোলেট গিফট করেছিলো, ওখান থেকে আমি অনেকগুলো চকোলেট রেখে দিয়েছিলাম আমার বোনের আর মা-র জন্য -- ওগুলো নিলাম।
আমার রুমমেট তার অফিস থেকে অরেঞ্জ ফ্লেভারড টি এনেছিলো আমার জন্য, কারণ আমি চা খুব পছন্দ করি। সেখান থেকে কয়েকটা টি ব্যাগ আমার বোনের জন্য নিলাম।
অপু ন্যুডলস রান্না করেছিলো, সেটা বক্সে ভরে ব্যাগে নিলাম। মোবাইল আর ল্যাপটপ চার্জে দিয়ে রেখেছিলাম, সেগুলো ব্যাগে ভরলাম। ছয়টা বেজে গেলো। ব্যাগ গুছানোর সময় আম্মু একবার ফোন দিয়েছিলো। জানতে চায় আসবো কবে। আমি বলেছি বাড়ি নাও আসতে পারি। আজই আসবো, তবে নানু বাড়ি। তারপর আমার বোনকে ফোন দিলাম। ওর সাথে টুকটাক কথা হলো। আমি এখন বাসে, নানু বাড়ি যাচ্ছি। ওখানেই আমার বোন থাকে। আমার জন্মের পর পাঁচ বছর আমি ওখানেই থেকেছি। সেজন্যে নানুবাড়ির প্রতি একটু আকর্ষণ বেশি। আর আমার নানা-নানীর আমি আর আমার বোন ছাড়া আর কোনো নাতি নাতনি নাই। এজন্য তারাও চায় যেনো আমরা তাদের কাছে থাকি। নানু বাড়ি থেকে বাড়ির দূরত্ব সাত মাইল। কিন্তু আম্মু জব করে, বাসা প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তালা দেয়া থাকে। এজন্য বাড়ি যেতে ইচ্ছা করে না।
সন্ধ্যা সাড়ে ছ'টা।
গোসলে যাবার আগে জোরে সাউন্ড দিয়ে প্রিয় কয়েকটা গান শুনলাম। কারণ অনেকদিন এত জোরে শোনা হবে না। তারপর ইফতার আনলাম। আজান হলে ইফতার করেই বাসা থেকে বের হলাম। অপু আমার জন্য টিকেট কেটে রেখেছিলো, আমি সায়েদাবাদ পৌঁছে ওকে টাকা দিলাম। কাউন্টারে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর বাসে উঠলাম। ফ্রেন্ড প্রিন্স ফোন করলো, কথা বললাম। আরেক ফ্রেন্ডকে ফোন করলাম, কিন্তু রিসিভ করলো না। ওর মেবি প্রফ চলছে। অনেকদিন কথা হবে না তো, তাই ফোন দিয়েছিলাম। এই মানুষটা আমাকে অনেক শাসন করে !
রাত সাড়ে আটটা।
বাস ছাড়ার কিছু পরেই মোবাইল ওপেন করে চ্যাটে ঢুকলাম। ফ্রেন্ড মাসুদকে জিমেইলে নক করলাম। কেমন আছো -- এইসব কথা বলার পর যখন বললাম আমি এখন বাসে, বাড়ির পথে, সে বললো -- Wow !
-- বাস ফেরিতে উঠলে ন্যুডলস খাবো।
-- আমার খুবই ইচ্ছা করতেসে ফেরিতে চড়ে কোথাও যেতে।
-- তুমি কি ফেরিতে জার্নি করসো কোনো সময় ?
-- করসি। আমি জানি এটা খুব মজার।
-- একদিন আমার সাথে যাবে আমাদের বাড়িতে...
-- হয়তো যাবো। যদি আমি বড় হই।
-- কেনো, তুমি বড় হও নি ?
..... .... ... .. .
রাত ন'টা সতেরো।
-- এই বাসে সব লাইট অফ এখন।
-- একটা প্ল্যান মাথায় আসছে।
-- প্ল্যানটা আগে বলো। তারপর একটা কথা বলবো। আর তোমার ঐ মেয়ের কথা বলো, যাকে তোমার পছন্দ হইসে।
-- ওরে... এমনি। মেয়েটার অনেক ইনোসেন্ট ফেইস।
-- ছোট মেয়েই ভালো।
-- ..... .... ... .. .
রাত দশটা চল্লিশ।
মাসুদ বলায় একটা ছবি তুললাম। আগের ক্যামেরা ফোনটা বেশ ভালো ছবি তুলতো। রাতের ছবি ভালো আসে না এটাতে। তাও তুললাম। তারপর ফেসবুকে দিলাম।
এখন আমি যা দেখছি : ফেরিতে, বাস থেকে নেমে। |
এখন মাসুদ যা দেখছে : মিরপুরের চাঁদ, জানালা থেকে। |
রাত সাড়ে এগারোটা।
খুব বাতাস হচ্ছে। মাসুদকে ফোন দিলাম বাতাসের শব্দ শোনানোর জন্য। সে খুব খুশি হলো শুনে !
রাত একটা ছত্রিশ।
বাস ফেরি ছেড়েছে একটার দিকে। ফেরিতে নেমে ঝালমুড়ি খেয়েছি। আর সফট ড্রিংকস। যেকোনো "খুব ঠান্ডা" সফট ড্রিংকসই আমার প্রিয়।
এখনও মাসুদের সাথে নেটে কথা বলছি। মাসুদ এইমাত্র বললো যে আমাদের কথা নিয়ে ও একটা ব্লগ লিখছে।
ফেরি ঘাটে |
রাত দুটো।
চাঁদটা হাওয়া হয়েছে বেশ অনেক্ষণ। বাস থেকে নেমে ফেরিতে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখেছি। জ্যোৎস্না। সে সময় অনেক পুরনো কথা মনে পড়েছে। সে ব্যথাগুলোও অনেক দামী...।
রাত সোয়া দুটো।
বাসের ভিতরে অন্ধকার, বাইরে চাঁদের আলো, চাঁদ মেবি মাথার উপরে।
পাটের ঘ্রাণ পাচ্ছি। একটা বাড়ির উঠানে আলো জ্বলছে, তাতে দেখলাম রাস্তার উপর পাট রাখা। সেটারই ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম।
রাতে তেলের পাম্পগুলোকে অনেক সুন্দর লাগে। কিছু কিছু লাইটিং করা থাকে। এক একটা এক এক রকম। আমি এগুলো খুব খেয়াল করে দেখি।
মাসুদের সাথে আমার প্রিয় ফোন Nokia e63 তে কথা বলছি। ও যেমন সময় পেলেই ল্যাপটপ নিয়ে থাকে, আমিও সময় পেলে আমার এই মোবাইল নিয়ে থাকি। এটা আমার বন্ধুর মতো। আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এর সাথে।
রাত পৌনে তিনটা।
কাল রোজা থাকবো না। এ পর্যন্ত প্রায় সবগুলো রোজাই রেখেছি।
আমার আব্বুও নানা বাড়ি আছে এখন। আমি সবসময়ই আব্বুর সাথে রাগারাগি করি। কিন্তু আমি তাকে খুব ভালোবাসি। সে আমার আইডল। নিজের জন্য কিছুই করে না। সে শূন্য থেকে লাইফ শুরু করেছে। আব্বু জানে আমি তাকে একটুও পছন্দ করি না। কিন্তু আমার অসুখ কিংবা পড়াশুনার জন্য সে তার নিজের জীবনও দিতে পারবে।
আমি ছোটবেলায় আব্বুর জন্য রাত জেগে বসে থাকতাম। বাসায় আসতে আব্বুর রাত দশটা বাজত।
একটা সময়ের কথা মনে আছে। সেসময়ে আব্বুর সাথে পাশের বাড়ির জমি নিয়ে বিরোধ চলছিলো। আমি শুনেছিলাম যে জমি নিয়ে বিরোধে মানুষকে মেরে ফেলে অনেক সময়। আমি খাটের উপর বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতাম। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে অনেক সময় আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তো। তারপর একসময় আব্বু আসতো, আমি খুব খুশি হতাম। কিন্তু আব্বু এসে আমাকে বকত -- আমার পড়া শেষ হয়েছে কিন্তু ঘুমাই নি কেনো ? সকালে উঠে পড়তে বসতে হবে না ? তখন খুব খারাপ লাগতো।
ছোটবেলায় বাজ পড়লেও আব্বুর জন্য খুব ভয় লাগতো। হয়তো আব্বুর বাসায় আসার সময় বৃষ্টি হচ্ছে। বাজ পড়ছে। তখন শুধু মনে মনে আল্লাহকে ডাকতাম যে আল্লাহ তুমি আমার আব্বুকে নিয়ে যেও না।
আমার আব্বু অবশ্য খুব শক্ত মানুষ। তাকে আমার লাইফে কাঁদতে দেখি নাই। এমনকি আমার চাচার মৃত্যুর সময়েও না। তবে সে যে খুব আঘাত পেয়েছিলো, তা নিশ্চিত।
যাই হোক, সেসব অনেক আগের কথা।
রাত তিনটা পঁচিশ।
মাসুদ সেহরি খাওয়ার জন্য উঠলো। ওর মামা এসেছে, তার সাথে সেহরি করবে এখন।
ওদের ওখানে বৃষ্টি হচ্ছে, আর আকাশ আলো করে বাজ পড়ছে। আমার এখানে বৃষ্টি হচ্ছে না। হয়ে গিয়েছে মেবি। রাস্তায় অনেক পানি দেখছি।
সেই ফ্রেন্ডটা এসএমএস করেছে একটু আগে।
আমি এখন ফেসবুকে ঢুকবো।
রাত চারটা।
এখন বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। একটু আগে একটা ডিম ভাজি খেলাম।
এই জায়গাটা আমার খুব চেনা। কলেজে পড়তে এখানে আসতাম। সাইকেল নিয়ে বিকেলে বের হলে এখানে আসা হতো। এদিকে একটা দোকানে সিঙ্গারা তৈরী করে, আমার লাইফে আমি আর কোথাও এত ভালো সিঙ্গারা খাই নাই।
সেহরি শেষ করে এইমাত্র মাসুদ নেটে আসলো আবার।
ভোর পাঁচটা।
এখন রাজাপুর পার হচ্ছি। ফোনের চার্জ কমে এসেছে। ভোর হয়ে আসছে। আকাশ একটু একটু করে আলো হয়ে যাচ্ছে। আরো ঘন্টাখানেক পর পৌঁছাবো ইনশাল্লাহ। বাস থেকে নেমে আবার মোটর সাইকেলে উঠতে হবে -- এদিকে আবার ভাড়ায় পাওয়া যায়। সেটাতে করে নানু বাড়ি।
সকাল ছ'টা দশ।
বাস থেকে নামলাম এইমাত্র। একটা ছবি তুলতে গিয়ে ফোনটা বন্ধ হয়ে গেলো। অন্য ফোনটা দিয়ে মাসুদকে ফোন দিলাম।
এখন একটা মোটরসাইকেলের খোঁজ করতে হবে। তারপর নানু বাড়ি।
নিনা কি এখন জেগে আছে ? অথবা আব্বু ?
কি জানি।
আমি এখন বাড়ি যাচ্ছি...
ফয়সাল আহমেদ
অগাস্ট ৮, ২০১২।
ফয়সাল আহমেদ
অগাস্ট ৮, ২০১২।
এই ব্লগটা আমি টাইপ করেছি। কিন্তু কথাগুলো কমবেশি প্রায় পুরোটাই নাহিদের। লেখার খাতিরে কোথাও কোথাও কিছু জিনিস দিতে হয়েছে, যা না দিলেই নয়। ব্লগ তো -- "যেমন ইচ্ছে লেখার আমার ভার্চুয়াল খাতা।" তাই প্রথম এমন একটা ব্যতিক্রমী ব্লগ লিখলাম।
উত্তরমুছুনমাসুদ।
সুন্দর ব্লগ পোস্ট.
উত্তরমুছুনডিফারেন্ট
হুম, ডিফরেন্ট।
মুছুনভালো হয়েছে। আমিও বুঝেছি একটু পরই যে এটা নাহিদের perspective থেকে লেখা।
উত্তরমুছুনঅবশ্য কেউ কেউ বোঝে নাই।
মুছুনলেখাটা ভিন্ন আঙ্গিকে....ধরন ভাল লেগেছে। যথেষ্ট ভাল লেগেছে :) লেখার শুরুর তিন চারটা লাইন যাবার পরই বুঝতে পেরেছি (এইটা আমার ক্রেডিট) কার ভাষায় কার গল্প। লেখার দুচারটা জিনিস ছাড়া পুরোটাই চমৎকার। একটু এডিটিং করলে ভাল হতো। ভুলও আছে দুএক জায়গায়।
উত্তরমুছুনলেখার সব জিনিসই আমার কাছে চমৎকার। নিজের দু-একটা লেখা ছাড়া কোনো লেখাকেই খারাপ লাগে না।
মুছুন