১.
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেছি অনেক দেরীতে। গতরাতে পৌনে চারটায় ঘুমিয়েছিলাম যে! রাত একটা-দেড়টা থেকে ডাইনিং টেবিলে বসে একটু একটু করে লবণ দিয়ে তেঁতুল খেয়েছি আর যীনাতের সাথে কথা বলেছি ।
এভাবে খেতে খেতে অনেক তেঁতুল খেয়ে ফেললাম। যীনাত বলল যে ঠোঁট সাদা হয়ে গিয়েছে!
অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল, আম্মু ঘুম থেকে উঠে আমাদের জীবনের হুমকি দিল ।
তারপরও, আরও রাত জেগে পৌনে চারটায় ঘুমালাম।
গতকাল মিড টার্ম পরীক্ষা শেষ হয়েছে যে!
সকালে ঘুম ভেঙেছে মুহিত-লুবাইনার শব্দে। হঠাৎই আমাদের বাসায় ঘুরতে এসেছে। ছোট মামা, ছোট খালা, মুহিত, লুবাইনা। এই চারজন। মুহিত আর লুবাইনা, দু-জনই আমার ভক্ত, তারমাঝে মুহিত আবার অতি ভক্ত।
ক'দিন আগের কথাই বলি।
খুব ব্যস্ত দিন ছিল সেটা। ভার্সিটি থেকে বিকেলে বাসায় এসেই আবার আব্বুর সাথে বেরোতে হল মার্কেটে। যাবার আগে ড্রেস না ছেড়েই এক প্লেট ভাত খেয়ে নিলাম কোনমতে- বড়াপু বেড়ে দিল।
সন্ধ্যায়, রিকশায় আসতে আসতে যীনাতের ফোন- "আপনার স্টুডেন্ট এসে বসে আছে।" বললাম- "ওকে Adverb পড়তে বলো, আমি আসছি।"
এসে স্টুডেন্টকে আধাঘন্টামতন পড়িয়ে আবার আব্বু-আম্মুর সাথে বেরোতে হল। রাতে বাসায় এলাম ন'টার দিকে। তারপর দশটা-এগারোটায় বাসার আরো কিছু কাজ শেষে ক্লান্ত শরীরে কেবল কাপড় ছেড়ে বসেছি, যীনাত বলল- "আপনার টাকা পাইসেন?"
- "কীসের টাকা?"
- "আজকে বিকালে নানাজী এসছিলো, মুহিতকে সাথে নিয়ে। ও আপনার জন্য টাকা দিয়ে গেসে। বড়াপুর কাছ থেকে নিয়ে নেন।"
আমি তো বিস্মিত! আমার জন্য মুহিত টাকা রেখে গিয়েছে!
বড়াপুকে জিজ্ঞাসা করলাম(যত যা-ই হোক, টাকা পয়সার ব্যাপার তো..... )। বড়াপু বলল যে ও এসে অনেক্ষণ আমার খোঁজ করেছে, শেষে যাবার আগ দিয়ে দুই টাকার দুটো নোট বড়াপুর হাতে দিয়ে বলেছে- "এটা মাতুব বাইয়াকে দেবেন।"
এখন ভাবছি বাচ্চাদের পীর হয়েই টাকা কামাই করব কিনা, তাহলে আর কষ্ট করে কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ার হওয়া লাগবে না ।
২.
এবার রাইয়ানার কথা বলি। মুহিত-লুবাইনাকে তো চকলেট খাইয়ে ভক্ত বানিয়েছি। কিন্তু এই মেয়েটিকে আমি কোন ঘুষ না দিতেই আমার ভক্ত হয়ে গিয়েছে।
আজ রেবেকা আপুর বাসায় গিয়েছিলাম। উনার পিসিতে কী যেন একটা প্রবলেম হয়েছিল, তাই দেখতে। সেই সাথে গোটা পঞ্চাশেক(!) মুভি নিয়ে গেলাম- রাইয়ানা তাহলে পিসিতে কার্টুন দেখবে, আর উনি টিভিতে আরাম করে ক্রিকেট দেখতে পারবেন!
আমি গিয়ে দেখি কম্পিউটার একাই ঠিক হয়ে বসে আছে। ভালোই হল, আমার আর ঝামেলা করতে হল না। মুভিগুলো কপি করতে লাগলাম।
(রাইয়ানা কিন্তু এখনও স্কুলে যাওয়া শুরু করে নাই, আপাতত জীবনের দর্শন তত্ত্ব নিয়ে ভাবছে )
- "মাসুদ মামা, মাসুদ মামা, আমি না এইটা দিয়ে আব্বুর সাথে কথা বলসি, জানো?"
- "তাই? খুব ভালো তো!"
- "মাসুদ মামা, তুমি আমাকে কার্টুনগুলো দিয়ে যেও তো।"
- "হ্যাঁ, এইতো আমি কার্টুন কপি দিচ্ছি।"
- "ডাউনলোড শেষ হইসে?"
এইসব কথাবার্তা।
আমি মনোযোগ দিয়ে copy speed দেখছিলাম আর ফোল্ডার কাস্টমাইজ করে দিচ্ছিলাম, যেন ও ছবি দেখেই কার্টুন বের করে নিতে পারে।
এমন সময় হঠাৎই খেয়াল করলাম- সে আমার কোলের মধ্যে এসে বসেছে!
আমি রাইয়ানাকে ডান পায়ের 'পর বসিয়ে কাজ করতে লাগলাম আর ওর কথার জবাব দিতে থাকলাম- "তাই? খুব ভালো তো!"
তারপর যা বলল, তাতে আমার আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেল।
- "মাসুদ মামা, আমার না এখন খুব ঘুম পাচ্ছে।"
- "মাসুদ মামা, আমার যখন ঘুম পায় আমার খুব তোমার সাথে ঘুমাতে ইচ্ছা করে।"
!!!
অতঃপর আরও আক্কেল গুড়ুম:
- "তুমি কিন্তু আম্মুকে বলবে না যে আমি বলসি তোমার সাথে ঘুমাতে ইচ্ছা করে। তাহলে আম্মু হাসবে।"
- "আম্মু যদি এসে জিগাস (জিজ্ঞাসা) করে, রাইয়ানার সাথে এতক্ষণ কী কথা বলসো? তুমি বলবে, কাজের কথা বলসি।"
- "তারপর আম্মু যদি বলে- কী কাজের কথা বলসো? তুমি কিসু বলবা না। চুপ থাকবা। ঠিক আসে?"
আমি বললাম- "তাই? আচ্ছা, ঠিক আছে আমি কিছু বলব না।"
এবার আমার একটা গোপন কথা ফাঁস করে দিই - আমি কিন্তু আগেও একজনের কাছ থেকে এই কথা শুনেছি- "তোমার সাথে ঘুমাতে ইচ্ছা করে।"
এবং সে কিন্তু কোন ছোট মানুষ ছিল না!
(কী ভয়ানক কথা লিখে ফেললাম ব্লগিঙের নেশায়- সেজাপু বা যীনাত এইটা পড়লে Adam teasing করে আমার ভুত ছাড়িয়ে দেবে )
৩.
সকালে মুহিত-লুবাইনা আসার পর দোকানে গেলাম।
বাম হাতে বাজারের ব্যাগ, মাথায় seven rings cement এর ক্যাপ আর ডান হাত পকেটে। হঠাৎ বেশ বড় একটা ফুটবল ডানদিক থেকে এসে নাকের সামনে দিয়ে রাস্তায় বাউন্স করে বামে চলে গেল আর একই সাথে খুব সুইট বাচ্চা কন্ঠে শুনতে পেলাম- "ভাইয়া বলটা একটু দেন তো!"
ঐ মুর্হুতে আমি শার্লক হোমসের মত দ্রুত চিন্তা করে নিজেকে অপমান থেকে বাঁচালাম।
কীভাবে?
এইভাবে যে ডানপাশে ছিল একটা বাড়ির বাউন্ডারি ওয়াল। অর্থাৎ বলটা এসেছে বাড়িটার দো'তলা বা তে'তলার খোলা বারান্দা থেকে। তাই, আমি যদি আসমানের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাটাকে রেসপন্স করি, তাহলে আমাকে বলটা বাউন্স করে দো'তলায়/ তে'তলায় পাঠাতে হবে- যে কাজটা আমি মোটেও পারি না। তাতে বাচ্চাটার কাছে মান-সম্মান তো যাবেই, সেইসাথে রাস্তার এবং আশপাশের দোকানের লোকজনেরও হাসির পাত্র হতে হবে।
তখন আমার 'বিশেষ হাসি' দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।
বলটা আমার বাঁ পাশ থেকে নাকের সামনে দিয়ে বাউন্স করে বামে গেল এবং একই সাথে বাচ্চাটার কথা শুনলাম আর উপরের কথাগুলো চিন্তাগুলো করলাম। তারপর নিজেকে অপমান থেকে বাঁচাতে না শুনবার ভান করে হাঁটার এতটুকু ছন্দপতন না করে বেশ কৌশলের সাথেই রাস্তার বাঁকটুকু পর্যন্ত গেলাম।
রাস্তার বাঁকেই মসজিদ। নানান লোক পার হচ্ছে। ততক্ষণে আমি বাচ্চাটার দৃষ্টির আড়াল হয়ে গিয়েছি। So, হাঁটার যে ছন্দটা এতক্ষণ কষ্ট করে ধরে রেখেছিলাম, সেটার পতন হয়ে গেল। নিজেরই যেন একটু অপরাধবোধ হল- আহারে, বাচ্চাটা কতই না মনের সুখে খেলছিল; আমি যদি বলটা back করতাম, তাহলে তার আনন্দে কোন বিশেষ ব্যাঘাত না ঘটিয়েই সে মজাসে খেলতে থাকত। বলটা নেবার জন্য যে তাকে আবার উপর থেকে নামতে হবে। কিন্তু আমি যে বল লোফালুফি পারি না !
আমি ক্রিকেট বুঝি না। শুধু এতটুকু বুঝি যে এই খেলায় মুরগির ডিম ব্যবহার করা হয় না, নইলে এতদিনে মুরগিরা breeding বন্ধ করে দিত!
এই ক্রিকেটের সাথে সম্ভবত পৌরুষের কোন ব্যাপার জড়িত আছে। নইলে- 'ক্রিকেট বুঝি না', একথা বলতে ইদানিং এত মুখে বাধে কেন আমার?
কারণ অনেক সময়ই এমন হয়েছে যে বলেছি- 'ক্রিকেট বুঝি না', তখন এমন রিপ্লাই(রিপ্লাই মানে হল মুখের কথা + বডি ল্যাঙ্গুয়েজ) পেয়েছি, যার অর্থ হল- "আরে, ক্রিকেট বুঝলি না তো ব্যাডা হইলি ক্যামনে?"
তাই আমি ইদানিং বলি না যে আমি ক্রিকেট বুঝি না। সেজন্য বেশ কৌশল অবলম্বন করতে হয় অবশ্য।
যেমন, আজ দোকানে গেলাম- ছেলে দুটো টিভিতে ক্রিকেট দেখছিলো সম্ভবত। সম্ভবত বললাম এই কারণে যে এবারের ক্রিকেটের গানটা কানে আসছিলো। গানটাও আবার বড় অদ্ভুত। আমি ঠিক বুঝি না কোন ভাষার। কখনো মনে হয় বাংলা, কখনো মনে হয় হিন্দি। যা বুঝি তা হল এই টাইপের কিছু একটা- 'উড়িয়ে ধুড়িয়ে' ।
যাহোক, আমি যাওয়ামাত্রই তারা আমাকে বেশ কিছু জ্ঞান দিয়ে দিল। আমি এমন একটা হাসি দিলাম, যার অর্থটা এই- "তাইতো, ঠিকই বলেছো তো!"
তাড়াতাড়ি লিস্টটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে বিভিন্ন টয়লেট্রিজের গায়ের লেখা পড়তে লাগলাম, যেন আমাকে আর বেশি কিছু না বলে !
অবশ্য ইদানিং মনে হয় একটা সুবিধার আভাস পাচ্ছি, তা হল আমি কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি। তখন মানুষ যদি শোনে যে ক্রিকেট বোঝে না, তখন বলবে- "হুম, কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ার তো, তাই।" এতে বেশ সুবিধে। আমার পৌরুষও রক্ষা হইল !
(ইমোটিকন কৃতজ্ঞতা : সেজাপুর ব্লগ)
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেছি অনেক দেরীতে। গতরাতে পৌনে চারটায় ঘুমিয়েছিলাম যে! রাত একটা-দেড়টা থেকে ডাইনিং টেবিলে বসে একটু একটু করে লবণ দিয়ে তেঁতুল খেয়েছি আর যীনাতের সাথে কথা বলেছি ।
এভাবে খেতে খেতে অনেক তেঁতুল খেয়ে ফেললাম। যীনাত বলল যে ঠোঁট সাদা হয়ে গিয়েছে!
অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল, আম্মু ঘুম থেকে উঠে আমাদের জীবনের হুমকি দিল ।
তারপরও, আরও রাত জেগে পৌনে চারটায় ঘুমালাম।
গতকাল মিড টার্ম পরীক্ষা শেষ হয়েছে যে!
সকালে ঘুম ভেঙেছে মুহিত-লুবাইনার শব্দে। হঠাৎই আমাদের বাসায় ঘুরতে এসেছে। ছোট মামা, ছোট খালা, মুহিত, লুবাইনা। এই চারজন। মুহিত আর লুবাইনা, দু-জনই আমার ভক্ত, তারমাঝে মুহিত আবার অতি ভক্ত।
ক'দিন আগের কথাই বলি।
খুব ব্যস্ত দিন ছিল সেটা। ভার্সিটি থেকে বিকেলে বাসায় এসেই আবার আব্বুর সাথে বেরোতে হল মার্কেটে। যাবার আগে ড্রেস না ছেড়েই এক প্লেট ভাত খেয়ে নিলাম কোনমতে- বড়াপু বেড়ে দিল।
সন্ধ্যায়, রিকশায় আসতে আসতে যীনাতের ফোন- "আপনার স্টুডেন্ট এসে বসে আছে।" বললাম- "ওকে Adverb পড়তে বলো, আমি আসছি।"
এসে স্টুডেন্টকে আধাঘন্টামতন পড়িয়ে আবার আব্বু-আম্মুর সাথে বেরোতে হল। রাতে বাসায় এলাম ন'টার দিকে। তারপর দশটা-এগারোটায় বাসার আরো কিছু কাজ শেষে ক্লান্ত শরীরে কেবল কাপড় ছেড়ে বসেছি, যীনাত বলল- "আপনার টাকা পাইসেন?"
- "কীসের টাকা?"
- "আজকে বিকালে নানাজী এসছিলো, মুহিতকে সাথে নিয়ে। ও আপনার জন্য টাকা দিয়ে গেসে। বড়াপুর কাছ থেকে নিয়ে নেন।"
আমি তো বিস্মিত! আমার জন্য মুহিত টাকা রেখে গিয়েছে!
বড়াপুকে জিজ্ঞাসা করলাম(যত যা-ই হোক, টাকা পয়সার ব্যাপার তো..... )। বড়াপু বলল যে ও এসে অনেক্ষণ আমার খোঁজ করেছে, শেষে যাবার আগ দিয়ে দুই টাকার দুটো নোট বড়াপুর হাতে দিয়ে বলেছে- "এটা মাতুব বাইয়াকে দেবেন।"
এখন ভাবছি বাচ্চাদের পীর হয়েই টাকা কামাই করব কিনা, তাহলে আর কষ্ট করে কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ার হওয়া লাগবে না ।
২.
এবার রাইয়ানার কথা বলি। মুহিত-লুবাইনাকে তো চকলেট খাইয়ে ভক্ত বানিয়েছি। কিন্তু এই মেয়েটিকে আমি কোন ঘুষ না দিতেই আমার ভক্ত হয়ে গিয়েছে।
আজ রেবেকা আপুর বাসায় গিয়েছিলাম। উনার পিসিতে কী যেন একটা প্রবলেম হয়েছিল, তাই দেখতে। সেই সাথে গোটা পঞ্চাশেক(!) মুভি নিয়ে গেলাম- রাইয়ানা তাহলে পিসিতে কার্টুন দেখবে, আর উনি টিভিতে আরাম করে ক্রিকেট দেখতে পারবেন!
আমি গিয়ে দেখি কম্পিউটার একাই ঠিক হয়ে বসে আছে। ভালোই হল, আমার আর ঝামেলা করতে হল না। মুভিগুলো কপি করতে লাগলাম।
(রাইয়ানা কিন্তু এখনও স্কুলে যাওয়া শুরু করে নাই, আপাতত জীবনের দর্শন তত্ত্ব নিয়ে ভাবছে )
- "মাসুদ মামা, মাসুদ মামা, আমি না এইটা দিয়ে আব্বুর সাথে কথা বলসি, জানো?"
- "তাই? খুব ভালো তো!"
- "মাসুদ মামা, তুমি আমাকে কার্টুনগুলো দিয়ে যেও তো।"
- "হ্যাঁ, এইতো আমি কার্টুন কপি দিচ্ছি।"
- "ডাউনলোড শেষ হইসে?"
এইসব কথাবার্তা।
আমি মনোযোগ দিয়ে copy speed দেখছিলাম আর ফোল্ডার কাস্টমাইজ করে দিচ্ছিলাম, যেন ও ছবি দেখেই কার্টুন বের করে নিতে পারে।
এমন সময় হঠাৎই খেয়াল করলাম- সে আমার কোলের মধ্যে এসে বসেছে!
আমি রাইয়ানাকে ডান পায়ের 'পর বসিয়ে কাজ করতে লাগলাম আর ওর কথার জবাব দিতে থাকলাম- "তাই? খুব ভালো তো!"
তারপর যা বলল, তাতে আমার আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেল।
- "মাসুদ মামা, আমার না এখন খুব ঘুম পাচ্ছে।"
- "মাসুদ মামা, আমার যখন ঘুম পায় আমার খুব তোমার সাথে ঘুমাতে ইচ্ছা করে।"
!!!
অতঃপর আরও আক্কেল গুড়ুম:
- "তুমি কিন্তু আম্মুকে বলবে না যে আমি বলসি তোমার সাথে ঘুমাতে ইচ্ছা করে। তাহলে আম্মু হাসবে।"
- "আম্মু যদি এসে জিগাস (জিজ্ঞাসা) করে, রাইয়ানার সাথে এতক্ষণ কী কথা বলসো? তুমি বলবে, কাজের কথা বলসি।"
- "তারপর আম্মু যদি বলে- কী কাজের কথা বলসো? তুমি কিসু বলবা না। চুপ থাকবা। ঠিক আসে?"
আমি বললাম- "তাই? আচ্ছা, ঠিক আছে আমি কিছু বলব না।"
এবং সে কিন্তু কোন ছোট মানুষ ছিল না!
(কী ভয়ানক কথা লিখে ফেললাম ব্লগিঙের নেশায়- সেজাপু বা যীনাত এইটা পড়লে Adam teasing করে আমার ভুত ছাড়িয়ে দেবে )
৩.
সকালে মুহিত-লুবাইনা আসার পর দোকানে গেলাম।
বাম হাতে বাজারের ব্যাগ, মাথায় seven rings cement এর ক্যাপ আর ডান হাত পকেটে। হঠাৎ বেশ বড় একটা ফুটবল ডানদিক থেকে এসে নাকের সামনে দিয়ে রাস্তায় বাউন্স করে বামে চলে গেল আর একই সাথে খুব সুইট বাচ্চা কন্ঠে শুনতে পেলাম- "ভাইয়া বলটা একটু দেন তো!"
ঐ মুর্হুতে আমি শার্লক হোমসের মত দ্রুত চিন্তা করে নিজেকে অপমান থেকে বাঁচালাম।
কীভাবে?
এইভাবে যে ডানপাশে ছিল একটা বাড়ির বাউন্ডারি ওয়াল। অর্থাৎ বলটা এসেছে বাড়িটার দো'তলা বা তে'তলার খোলা বারান্দা থেকে। তাই, আমি যদি আসমানের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাটাকে রেসপন্স করি, তাহলে আমাকে বলটা বাউন্স করে দো'তলায়/ তে'তলায় পাঠাতে হবে- যে কাজটা আমি মোটেও পারি না। তাতে বাচ্চাটার কাছে মান-সম্মান তো যাবেই, সেইসাথে রাস্তার এবং আশপাশের দোকানের লোকজনেরও হাসির পাত্র হতে হবে।
তখন আমার 'বিশেষ হাসি' দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।
বলটা আমার বাঁ পাশ থেকে নাকের সামনে দিয়ে বাউন্স করে বামে গেল এবং একই সাথে বাচ্চাটার কথা শুনলাম আর উপরের কথাগুলো চিন্তাগুলো করলাম। তারপর নিজেকে অপমান থেকে বাঁচাতে না শুনবার ভান করে হাঁটার এতটুকু ছন্দপতন না করে বেশ কৌশলের সাথেই রাস্তার বাঁকটুকু পর্যন্ত গেলাম।
রাস্তার বাঁকেই মসজিদ। নানান লোক পার হচ্ছে। ততক্ষণে আমি বাচ্চাটার দৃষ্টির আড়াল হয়ে গিয়েছি। So, হাঁটার যে ছন্দটা এতক্ষণ কষ্ট করে ধরে রেখেছিলাম, সেটার পতন হয়ে গেল। নিজেরই যেন একটু অপরাধবোধ হল- আহারে, বাচ্চাটা কতই না মনের সুখে খেলছিল; আমি যদি বলটা back করতাম, তাহলে তার আনন্দে কোন বিশেষ ব্যাঘাত না ঘটিয়েই সে মজাসে খেলতে থাকত। বলটা নেবার জন্য যে তাকে আবার উপর থেকে নামতে হবে। কিন্তু আমি যে বল লোফালুফি পারি না !
আমি ক্রিকেট বুঝি না। শুধু এতটুকু বুঝি যে এই খেলায় মুরগির ডিম ব্যবহার করা হয় না, নইলে এতদিনে মুরগিরা breeding বন্ধ করে দিত!
এই ক্রিকেটের সাথে সম্ভবত পৌরুষের কোন ব্যাপার জড়িত আছে। নইলে- 'ক্রিকেট বুঝি না', একথা বলতে ইদানিং এত মুখে বাধে কেন আমার?
কারণ অনেক সময়ই এমন হয়েছে যে বলেছি- 'ক্রিকেট বুঝি না', তখন এমন রিপ্লাই(রিপ্লাই মানে হল মুখের কথা + বডি ল্যাঙ্গুয়েজ) পেয়েছি, যার অর্থ হল- "আরে, ক্রিকেট বুঝলি না তো ব্যাডা হইলি ক্যামনে?"
তাই আমি ইদানিং বলি না যে আমি ক্রিকেট বুঝি না। সেজন্য বেশ কৌশল অবলম্বন করতে হয় অবশ্য।
যেমন, আজ দোকানে গেলাম- ছেলে দুটো টিভিতে ক্রিকেট দেখছিলো সম্ভবত। সম্ভবত বললাম এই কারণে যে এবারের ক্রিকেটের গানটা কানে আসছিলো। গানটাও আবার বড় অদ্ভুত। আমি ঠিক বুঝি না কোন ভাষার। কখনো মনে হয় বাংলা, কখনো মনে হয় হিন্দি। যা বুঝি তা হল এই টাইপের কিছু একটা- 'উড়িয়ে ধুড়িয়ে' ।
যাহোক, আমি যাওয়ামাত্রই তারা আমাকে বেশ কিছু জ্ঞান দিয়ে দিল। আমি এমন একটা হাসি দিলাম, যার অর্থটা এই- "তাইতো, ঠিকই বলেছো তো!"
তাড়াতাড়ি লিস্টটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে বিভিন্ন টয়লেট্রিজের গায়ের লেখা পড়তে লাগলাম, যেন আমাকে আর বেশি কিছু না বলে !
অবশ্য ইদানিং মনে হয় একটা সুবিধার আভাস পাচ্ছি, তা হল আমি কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি। তখন মানুষ যদি শোনে যে ক্রিকেট বোঝে না, তখন বলবে- "হুম, কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ার তো, তাই।" এতে বেশ সুবিধে। আমার পৌরুষও রক্ষা হইল !
(ইমোটিকন কৃতজ্ঞতা : সেজাপুর ব্লগ)
oslish.......
উত্তরমুছুনki bolag porlam je amar kan gorom hoya gelo!!!!
ar jodi gesish rebeka apuder basay! ami aj i ammuke bole debo:D
কেন, আমি কী দোষ করসি?
উত্তরমুছুন:) সবে তো শুরু, আরো অনেক গোপন কথা ফাঁস করব, অপেক্ষা করো শুধু। ;)