এখন থেকে প্রায় সাত মাস আগে- পাঁচই অগাস্ট পাবনায় গিয়েছিলাম। সেখানে, ছয়ই অগাস্ট আম্মুর সাথে আম্মুর আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করেছিলাম। অনেকদিন পর আজ সেখানে দেখা দুটো চোখ কেন যেন বারবার মনের মাঝে ভেসে উঠছে।
আমাদেরই দূর সম্পর্কের আত্মীয় হবে কোনভাবে, আমি ঠিক বলতে পারব না কীভাবে। সেই 'আত্মীয়ের' মেয়ের নাম ছিল নাজিফা।
না না, কোন প্রেম ভাব জাগেনি আমার- বসিনি মনের মাঝে কলি হয়ে থাকা কোন প্রেমের গল্প করতে।
যা বলছিলাম। সেখান থেকে ঘুরে এসে আমি যে ব্লগটা লিখেছিলাম, সেই ব্লগে মেয়েটার কথা বিশেষভাবে লিখেছিলাম শুধু তার চোখদুটোর কারণে। কী লিখেছিলাম তার সম্পর্কে? লিখেছিলাম-
“.... কতগুলো ছোট ছোট বাচ্চা একটু দূরত্ব বজায় রেখে দেখতে লাগল আমাদেরকে। আমরা এসেছি বলে একটু জোর করেই যেন খেলতে খেলতে আমাদের সামনে এসে পড়ছিল। তাদের মাঝে একটা ছোট মেয়ে,তার কথাটা বিশেষভাবে মনে আছে। চোখগুলো খুব বড় বড় আর সুন্দর, একটা পায়জামা পরে দৌড়ে বেড়াচ্ছে, পায়জামার কোমরের অংশে নানান সম্পত্তি গুঁজে রাখা আছে আর তেলবিহীন চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। সে আর তার বন্ধুরা একসাথে খেলছিল। মেয়েটার নাম জিজ্ঞাসা করেছিলাম। বেশ পরিষ্কার ভাবেই বলেছিল নামটা। .....তার কথা বিশেষভাবে মনে আছে একারণে যে তার চোখদুটো বড় অদ্ভুত ছিল।
হুঁ, নামটা মনে পড়েছে। নাজিফা। 'জ' টা বেশ পরিষ্কারভাবে জোর দিয়েই উচ্চারণ করেছিল সে।”
এই মেয়েটির কথাই আজ মনে পড়ছে।
ছোট বাচ্চাদের আমার খুব ভালোলাগে। কেমন নিষ্পাপ আর আপন-মনে খেলায় ব্যস্ত থাকে সবসময়।
কিন্তু, মেয়েটার চোখে যেন কী ছিল। আমি নিজেই বিস্মিত হই- কী করে এতদিন পর তার কথা আমার মনে পড়ল?
আমার খুব জানতে ইচ্ছা হয়, ঐ মেয়েটি কী করছে এখন, এই ভর দুপুরে? কিংবা- এখনও কি সে বন্ধুদের সাথে খেলতে খেলতে হঠাৎ-ই দাঁড়িয়ে যায়, দূরে তাকিয়ে দেখে- কে যেন আসছে রাস্তা দিয়ে, আর তার তেলবিহীন চুলগুলো বাতাসে উড়তে থাকে...... এখনও কি তার চোখের মণিতে খোলা মাঠের ছবি খেলা করে?
হয়তো এখন সে দুপুরের ধুলোমাখা গায়ে আনাড়ি হাতে পানি ঢালছে, চাপকলের পাড়ে দাঁড়িয়ে। তারপর ঘরে উঠছে- মাটির মেঝেতে ছোট ছোট পায়ের ছাপ ফেলে। হয়তো তার মা তাকে কোন কৃত অপরাধের জন্য বকাবকি করছে। কিংবা- আবার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছে চাপকলের পাড়ে- ভালো করে গোসল করিয়ে দিচ্ছে। তারপর ঘরে এনে পরিষ্কার জামা পরিয়ে চোখে কাজল দিয়ে দিচ্ছে।
মেয়েটার চোখে তখন তার মায়ের মুখ খেলা করতে থাকে.....
নাকি এখন সে আখের ক্ষেত থেকে নরম মাটি তুলে আনছে, তারপর বন্ধুদের সাথে মাটির 'পর বসে খেলনা বানাচ্ছে আর পরক্ষণেই সেটাকে ভেঙে নতুন করে নতুন কিছু গড়ছে?
আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে।
নাজিফা যেখানে সেখানে ছুটে বেড়ায়। দুরন্ত বাতাস তার চুলগুলো নিয়ে খেলা করে। কেউ নিষেধ করে না, এলোমেলো চুলগুলোতে ক্নিপ এঁটে দেয় না। তারপর সে কাদামাটি নিয়ে খেলতে বসে যায়। কিংবা এমনি ভর দুপুরে কোন এক নারিকেল গাছের ছায়ায় বসে চশমা বানায়। হাতঘড়ি বানায়। নারিকেল গাছের ঋজু পাতাগুলোর ফাঁক দিয়ে রোদ এসে পড়ে তার মুখে। রোদে পোড়া তামাটে চেহারায় নতুন করে আর রোদের ছাপ পড়ে না। নারিকেল পাতার চশমার মাঝেও তার মায়াবী চোখদুটো জেগে থাকে.....।
আমার জানতে মন চায়- নাজিফার দুনিয়াটা কেমন? খুব কি আলাদা- আমার কল্পনার বাইরে? নাকি একেবারে পানসে, ইনসিগনিফিক্যান্ট?
আমার ভাবতে ভালো লাগে- প্রথমটা।
আমি ইন্টারনেটের দুনিয়ায় বসে থাকি। পৃথিবীর চেয়েও বড় এই দুনিয়াটা। কিন্তু তবু কেন যেন মনে হয়, আমার দুনিয়াটা খুব ছোট, এতটুকুন। আর নাজিফার দুনিয়া অনেক বড়, বিস্তৃত। যদিও ও অনেক ছোট, তবুও।
আমি কখনো আখের ক্ষেত থেকে কাদা তুলে আনিনি, খালি পায়ে খোলা মাঠে দৌড়ে বেড়াইনি, চাপকলের পাড়ে দাঁড়িয়ে খোলা জায়গায় গোসল করিনি কিংবা বানাইনি নারিকেল পাতার চশমা। আমি অনেক যত্নে বড় হয়েছি- আমার পায়ে কখনো কাঁকর পড়েনি, কাঁটা বিঁধেনি- হাজার টাকার জুতো আমার পায়ের যতন করেছে। আমার চুলগুলো নিয়মিত পাট পাট করে আঁচড়ে দেয়া হয়েছে। অযতনে, প্রকৃতির হাতে বড় হওয়া মনগুলো তাই কেমন হয়, জানতে ইচ্ছে করে।
আমার খুব জানতে ইচ্ছা হয়- এমন মেয়েরা কীভাবে বড় হয়ে ওঠে..... কীভাবে নাজিফা বড় হয়ে ওঠে.....। তখনও কি তার চোখে খোলা মাঠের ছবি খেলা করে? নাকি ততদিনে সে শরৎচন্দ্রের 'নারী' হয়ে ওঠে-সর্বংসহা, অন্নপূর্ণা?
হয়তো ততদিনে সে চোখের মণি থেকে খোলা মাঠটিকে তুলে এনে বুকের মাঝে বসায়.....। আমার জানতে ইচ্ছা হয়- তার মনটাও কি তখন ঐ মাঠের মত হয়ে ওঠে? যে মাঠে দুপুর রৌদ্রে পা ফেলা বড় কঠিন হয়ে পড়ে, কিন্তু অলস বিকেলে বন্ধুর সাথে বসে হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠা যায়, যে মাঠে কন্যা-সুন্দর-আলোয় কারো চোখে তাকিয়ে সুখ-কল্পনায় ভাসা যায়.....
যে মাঠে সবকিছু হয় মনের মত করে.......।
নূরে আলম
মার্চ ৩, ২০১১।
স্বর্গের প্রেমে নাই বিরহ অনল/ সুন্দর আঁখি আছে/ নাই আঁখি জল.....
উত্তরমুছুনউপরে ছিল, 'কপি পেষ্ট' করে দিলাম।
আমার ব্লগে কপি-পেস্ট এর মত জটিল কাজটি করবার জন্য ধন্যবাদ! :)
উত্তরমুছুনlekhata valo hoise no dought.........
উত্তরমুছুনkintuuuuu......
churi kora lekha......(ektu ektu pother pachalir durgar moto hoise)
kedona babu...lekha valo hoechhe...
যে মাঠে কন্যা-সুন্দর-আলোয় কারো চোখে তাকিয়ে সুখ-কল্পনায় ভাসা যায়.....
যে মাঠে সবকিছু হয় মনের মত করে.......etuku aro valo hoise.
আরে গাধা, doubt, dought না। :)
উত্তরমুছুনমোটেও চুরি করি নাই। সম্পূর্ণ নিজে থেকে। তোমার মতো দুর্বোধ্য যে লিখি নাই, তাই ভাগ্যি! ;)