আমাকে বাসা থেকে গতকাল জিজ্ঞাসা করেছে, কিছু টাকা দিতে পারব কিনা: বাসায় বাজার করার টাকা নেই। এদিকে আমার হাতও শূন্য। সবাইকে রোজা থাকতে বলে দিয়েছি। তবে, ঈদের দিনতো রোজা রাখা যাবে না। আমি অবশ্য রোজা থাকলেও দুবেলা খাই, না থাকলেও দুই বেলাই খাই। কিন্তু বাসার সবাই রোজা থাকলেও সেই দুই বেলার খাবারই বা আসবে কোথা থেকে?
সে আল্লাহ জানেন। তাঁর বান্দা, তিনি খাওয়াবেন। আমি তা নিয়ে চিন্তিত নই। আমি কেবল এটুকু ভাবছি যে, তিনিতো অন্য বান্দার মাধ্যমে খাওয়ান, সেজন্যে কুরআনে কঠোর আদেশও করেন। যারা তা করে না, তাদের নামাজই হয় না বলে ধ্বংসের কথাও বলেন। কিন্তু সেই বান্দারা আমাকে "ভাই, গরু কিনেছেন?" প্রশ্ন আর ইনবক্সে গণ-ফরোয়ার্ডের "ঈদ মোবারক" জানাচ্ছেন।
আমি ভাবলাম, তাইতো! আমারও তো সবাইকে ঈদ মোবারক জানানো দরকার। তাই বহুদিন পর ফেইসবুকে একটু লিখতে বসলাম।
আপনাদেরকে ঈদ মোবারক!
তারপর আমি ভাবলাম, আমি নাহয় এটা সেটা খেয়ে নেক্সট বেতন পাওয়া পর্যন্ত দিনগুলো চালিয়ে নিতে পারব। কিংবা -- যদিও কুরবানির ঈদের সময় টাকা ধার পাওয়া কঠিন, তবুও নানাজনের কাছে হাত পেতে বাজারের টাকা যোগাড় করতে পারব -- কিন্তু যাদের সে সামর্থ্যটুকুও নেই, তাদের খোঁজ কি আমি নিয়েছি?
না। তাদের খোঁজ আমি নেইনি, রাখিওনি। আর তাইতো ঈশ্বরও আমার খোঁজ রাখেননি। বাসায় বাজার নেই রান্না নেই, লোকে জানায় ঈদ মোবারক!
তবুও, আপনাদের সবাইক ঈদ মোবারক।
কুরবানির ঈদ বছরে এক দিন। আর চল্লিশ প্রতিবেশীর খোঁজ নেয়া, আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ নেয়া বছরের ৩৬৫ দিনের দায়িত্ব। আমি কি সেই খোঁজ রেখেছি?
না। তাই খোদাতায়ালাও আমার খোঁজ রাখেননি। তাই আমার ইনবক্সে লোকে গরুর খোঁজ নেয়, আমার বাজার আছে কিনা, সেই খোঁজ নেয় না।
তবুও, ঈদ মোবারক!
……………………………………………………
ফেইসবুকে আমার প্রিয়জনেরা আবার বিব্রত কিংবা ব্যথিত-চিন্তিত হয়ে পড়বেন না। এরকম মাসের মাঝামাঝি এসে "বাজারের টাকা শেষ, এদিক ওদিক ধার করে চলা" বিষয়টাতে আমরা বহু লোকেই অভ্যস্ত। কেবল আমি ভাবছি, বছরের একদিনের ইবাদত কুরবানির ৬০-৭০ হাজার টাকাটা হয়ত অনেকেরই জমত না, যদি তারা বছরের প্রতিদিনকার ইবাদত 'আত্মীয় ও প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর রাখার' কাজটা করত।
যাহোক, তবুও আমরা বছরে একদিন কুরবানির ইবাদত পালন করি, এটুকু তো অন্ততঃ ভালো!
তাই সবাইকে ঈদ মোবারক।
আর সপ্তাহে একদিন হলেও নামাজের ইবাদতটা তো পালন করি, এটুকু তো অন্ততঃ ভালো!
তাই সবাইকে জুম্মা মোবারক!
……………………………………………………
তবে এর মধ্যে আরো একটা মজার ব্যাপার আছে।
"কয়দিন আগেই না কিছু টাকা দিলাম, এত তাড়াতাড়ি শেষ?" টানাটানির সংসারে যা হয় আরকি।
-- "ওমুকের সাথে ভাগে গরু কোরবানি দেয়ার জন্য টাকা দেয়া হয়েছে…।"
আচ্ছা! বেশতো! ভাগে হলেও গরু কোরবানি দিতে হবে? আর সেটা দিতে গিয়ে দৈনিক বাজারের টাকা শূন্য করে উপোস থাকছেন? বেশ, বেশ।
তা, এই না খেয়ে থেকে হলেও গরু কোরবানি দেবার জরুরতটা কেন?
কারণ এত হাই সোসাইটির মধ্যে বসবাস করে ঈদের দিনে বাড়িঅলা ও প্রতিবেশীরা গোস্ত পাঠালে আমরা যদি আমাদের কোরবানির গোস্ত তাদেরকে দিতে না পারি, সেটা খারাপ দেখাবে। তারা মনে করবে, আমরা গরিব। এমনিই গ্যারেজে সারাবছর গাড়ি রাখতে পারি না, কোনো গাড়ি নেই। বছরে একদিন গ্যারেজে অন্ততঃ একটা গরু তো রাখব, নাকি?
ওকে! তাহলে রোজা থাকেন। কী আর করবেন। যে পরিবার ঋনমুক্ত নয়, যার দৈনিক বাজার খরচ নেই, সে কোন বিধানে গরু কুরবানি দেয়?
সে বিধানতো খোদাতায়ালার নয়।
সে বিধানতো সমাজের।
আল্লাহর ইবাদত করা আমরা সেই কবেই ছেড়ে দিয়েছি! সমাজের ইবাদতই আমরা করি।
আমি জানি, এই সমাজের অগণিত মানুষ এই একইভাবে কুরবানির ঈদ পালন করছেন, 'আত্মত্যাগের মহান দিবস' উদযাপন করছেন। তাদেরকেও আমার পক্ষ থেকে ঈদ মোবারক!
আমি বহুদিন ফেইসবুকে কিছু লিখি না, ব্যস্ততা বেড়েছে, আর ইচ্ছেও হয় না। তবু হুট করে একটু লিখলাম, কারণ আমি জানি দু-চারজন হলেও মানুষ এখানে আমার সাথে অ্যাড আছেন, যারা এই সমাজের ইবাদতের শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসার শক্তি রাখেন। যারা ৩৬৫ দিনের ইবাদত পালন করতে গিয়ে হাত শূন্য করে ফেলেন, তাই আর শো-অফের গরু কেনার মত ৬০-৭০ হাজার টাকা বছর ঘুরে হাতে জমা থাকে না।
কুরবানীর হাকীকতের আলোচনাটা দরবারের জন্য তোলা থাকল। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
ঈদ মোবারক!
ওয়াসসালামু আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন।
সে আল্লাহ জানেন। তাঁর বান্দা, তিনি খাওয়াবেন। আমি তা নিয়ে চিন্তিত নই। আমি কেবল এটুকু ভাবছি যে, তিনিতো অন্য বান্দার মাধ্যমে খাওয়ান, সেজন্যে কুরআনে কঠোর আদেশও করেন। যারা তা করে না, তাদের নামাজই হয় না বলে ধ্বংসের কথাও বলেন। কিন্তু সেই বান্দারা আমাকে "ভাই, গরু কিনেছেন?" প্রশ্ন আর ইনবক্সে গণ-ফরোয়ার্ডের "ঈদ মোবারক" জানাচ্ছেন।
আমি ভাবলাম, তাইতো! আমারও তো সবাইকে ঈদ মোবারক জানানো দরকার। তাই বহুদিন পর ফেইসবুকে একটু লিখতে বসলাম।
আপনাদেরকে ঈদ মোবারক!
তারপর আমি ভাবলাম, আমি নাহয় এটা সেটা খেয়ে নেক্সট বেতন পাওয়া পর্যন্ত দিনগুলো চালিয়ে নিতে পারব। কিংবা -- যদিও কুরবানির ঈদের সময় টাকা ধার পাওয়া কঠিন, তবুও নানাজনের কাছে হাত পেতে বাজারের টাকা যোগাড় করতে পারব -- কিন্তু যাদের সে সামর্থ্যটুকুও নেই, তাদের খোঁজ কি আমি নিয়েছি?
না। তাদের খোঁজ আমি নেইনি, রাখিওনি। আর তাইতো ঈশ্বরও আমার খোঁজ রাখেননি। বাসায় বাজার নেই রান্না নেই, লোকে জানায় ঈদ মোবারক!
তবুও, আপনাদের সবাইক ঈদ মোবারক।
কুরবানির ঈদ বছরে এক দিন। আর চল্লিশ প্রতিবেশীর খোঁজ নেয়া, আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ নেয়া বছরের ৩৬৫ দিনের দায়িত্ব। আমি কি সেই খোঁজ রেখেছি?
না। তাই খোদাতায়ালাও আমার খোঁজ রাখেননি। তাই আমার ইনবক্সে লোকে গরুর খোঁজ নেয়, আমার বাজার আছে কিনা, সেই খোঁজ নেয় না।
তবুও, ঈদ মোবারক!
……………………………………………………
ফেইসবুকে আমার প্রিয়জনেরা আবার বিব্রত কিংবা ব্যথিত-চিন্তিত হয়ে পড়বেন না। এরকম মাসের মাঝামাঝি এসে "বাজারের টাকা শেষ, এদিক ওদিক ধার করে চলা" বিষয়টাতে আমরা বহু লোকেই অভ্যস্ত। কেবল আমি ভাবছি, বছরের একদিনের ইবাদত কুরবানির ৬০-৭০ হাজার টাকাটা হয়ত অনেকেরই জমত না, যদি তারা বছরের প্রতিদিনকার ইবাদত 'আত্মীয় ও প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর রাখার' কাজটা করত।
যাহোক, তবুও আমরা বছরে একদিন কুরবানির ইবাদত পালন করি, এটুকু তো অন্ততঃ ভালো!
তাই সবাইকে ঈদ মোবারক।
আর সপ্তাহে একদিন হলেও নামাজের ইবাদতটা তো পালন করি, এটুকু তো অন্ততঃ ভালো!
তাই সবাইকে জুম্মা মোবারক!
……………………………………………………
তবে এর মধ্যে আরো একটা মজার ব্যাপার আছে।
"কয়দিন আগেই না কিছু টাকা দিলাম, এত তাড়াতাড়ি শেষ?" টানাটানির সংসারে যা হয় আরকি।
-- "ওমুকের সাথে ভাগে গরু কোরবানি দেয়ার জন্য টাকা দেয়া হয়েছে…।"
আচ্ছা! বেশতো! ভাগে হলেও গরু কোরবানি দিতে হবে? আর সেটা দিতে গিয়ে দৈনিক বাজারের টাকা শূন্য করে উপোস থাকছেন? বেশ, বেশ।
তা, এই না খেয়ে থেকে হলেও গরু কোরবানি দেবার জরুরতটা কেন?
কারণ এত হাই সোসাইটির মধ্যে বসবাস করে ঈদের দিনে বাড়িঅলা ও প্রতিবেশীরা গোস্ত পাঠালে আমরা যদি আমাদের কোরবানির গোস্ত তাদেরকে দিতে না পারি, সেটা খারাপ দেখাবে। তারা মনে করবে, আমরা গরিব। এমনিই গ্যারেজে সারাবছর গাড়ি রাখতে পারি না, কোনো গাড়ি নেই। বছরে একদিন গ্যারেজে অন্ততঃ একটা গরু তো রাখব, নাকি?
ওকে! তাহলে রোজা থাকেন। কী আর করবেন। যে পরিবার ঋনমুক্ত নয়, যার দৈনিক বাজার খরচ নেই, সে কোন বিধানে গরু কুরবানি দেয়?
সে বিধানতো খোদাতায়ালার নয়।
সে বিধানতো সমাজের।
আল্লাহর ইবাদত করা আমরা সেই কবেই ছেড়ে দিয়েছি! সমাজের ইবাদতই আমরা করি।
আমি জানি, এই সমাজের অগণিত মানুষ এই একইভাবে কুরবানির ঈদ পালন করছেন, 'আত্মত্যাগের মহান দিবস' উদযাপন করছেন। তাদেরকেও আমার পক্ষ থেকে ঈদ মোবারক!
আমি বহুদিন ফেইসবুকে কিছু লিখি না, ব্যস্ততা বেড়েছে, আর ইচ্ছেও হয় না। তবু হুট করে একটু লিখলাম, কারণ আমি জানি দু-চারজন হলেও মানুষ এখানে আমার সাথে অ্যাড আছেন, যারা এই সমাজের ইবাদতের শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসার শক্তি রাখেন। যারা ৩৬৫ দিনের ইবাদত পালন করতে গিয়ে হাত শূন্য করে ফেলেন, তাই আর শো-অফের গরু কেনার মত ৬০-৭০ হাজার টাকা বছর ঘুরে হাতে জমা থাকে না।
কুরবানীর হাকীকতের আলোচনাটা দরবারের জন্য তোলা থাকল। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
ঈদ মোবারক!
ওয়াসসালামু আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
[ব্লগে কমেন্ট পোস্ট করার পরও যদি না দেখায়, তাহলে দ্বিতীয়বার পোস্ট করার প্রয়োজন নেই। খুব সম্ভবত স্প্যাম গার্ড সেটাকে সরিয়ে নিয়েছে, আমি পাবলিশ করে দেবো।]