আমার পীর লা-মাকাম এর মানুষ ছিলেন। অন্ততঃ তাঁকে যারা দেখেছেন, তারা এমনটাই বলেন। আমার দুর্ভাগ্য, আমি তাঁকে দেখিনি। কিন্তু যারা দেখেছেন, তারা বলেছেন। নিজের বাড়ি থেকে শেষবারের মত বের হবার সময় প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি বলেছিলেন, "খানম, খোদা হাফেজ! চিরদিনের জন্য তোমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি, আর ফিরে আসব না...।" কারণ তিনি জানতেন, তিনি কোথায় যাচ্ছেন, কখন যাবেন। আরও বলেছিলেন, "দুনিয়ার জীবন বড়ই কন্টকাকীর্ণ।"
আমি মাঝে মাঝে তাঁর কথা ভাবি। সাগরের মত বিশাল, অথচ পর্বতের মত অটল। আমরা সাধারণ মানুষেরা তাঁদের ভালোবাসা বুঝতেও পারব না। মায়ার জগতে বন্দী এই আমরা পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব আর দুই-চারটা প্রিয়জনের ভালোবাসার ছোট্ট ডোবায় হাবুডুবু খেতে খেতেই জীবনটা পার করে দিই। অথচ এর বাইরেও যে আরো কত রকমের ভালোবাসা আছে, আছে তার প্রাবল্যের কত মাত্রা!
এইবার দেশ থেকে আসাটা আমার জন্যে বেশ কঠিন হয়েছে। কারণ খোদাতায়ালা আমাকে একটি সুন্দর গল্প উপহার দিয়েছিলেন, আর আমি তাকে মেহনত করেছি। আমি মৃতদেহে প্রাণ সঞ্চার হতে দেখেছি...
তারপর তাকে আলিঙ্গনপাশ-মুক্ত করে এতদূরে আসতে আমার কষ্ট হয়েছে।
কোন্ ভালোবাসার জন্যে দুনিয়ার অসংখ্য জিনিসকে তুচ্ছজ্ঞান করা যায়?
যে ভালোবাসায় খোদাতায়ালার বাসগৃহ উষ্ণ হয়ে ওঠে: তিনি ফিরে আসেন,
মৃতদেহে প্রাণ সঞ্চার হয়। তেমন ভালোবাসা দেবার বা নেবার সুযোগ --
তা আপনি যে-ই হন, যদি পান, তবে গোটা পৃথিবীর বিনিময়ে হলেও তা গ্রহণ করুন।
আমি লা-মাকাম (নির্মোহ স্তর)-এর মানুষ নই। অতএব আমার পথচলায় মায়া তৈরী হয়; বন্দীত্ব তৈরী করি। এটা আমি বুঝি। আমাকে যারা ভালোবাসেন (এবং আমিও তাদেরকে ভালোবাসি)-- তারা এই বন্দীত্ব অনুভব না করলেও আমি করি, এবং দেখি। তবে--
একটা ভোর তো হয়েছে! দ্বিতীয় ভোর-ও আমরা দেখব, ইনশাআল্লাহ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
[ব্লগে কমেন্ট পোস্ট করার পরও যদি না দেখায়, তাহলে দ্বিতীয়বার পোস্ট করার প্রয়োজন নেই। খুব সম্ভবত স্প্যাম গার্ড সেটাকে সরিয়ে নিয়েছে, আমি পাবলিশ করে দেবো।]