সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মায়া: নতুন ভোরের অপেক্ষা

আমার পীর লা-মাকাম এর মানুষ ছিলেন। অন্ততঃ তাঁকে যারা দেখেছেন, তারা এমনটাই বলেন। আমার দুর্ভাগ্য, আমি তাঁকে দেখিনি। কিন্তু যারা দেখেছেন, তারা বলেছেন। নিজের বাড়ি থেকে শেষবারের মত বের হবার সময় প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি বলেছিলেন, "খানম, খোদা হাফেজ! চিরদিনের জন্য তোমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি, আর ফিরে আসব না...।" কারণ তিনি জানতেন, তিনি কোথায় যাচ্ছেন, কখন যাবেন। আরও বলেছিলেন, "দুনিয়ার জীবন বড়ই কন্টকাকীর্ণ।"

আমি মাঝে মাঝে তাঁর কথা ভাবি। সাগরের মত বিশাল, অথচ পর্বতের মত অটল। আমরা সাধারণ মানুষেরা তাঁদের ভালোবাসা বুঝতেও পারব না। মায়ার জগতে বন্দী এই আমরা পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব আর দুই-চারটা প্রিয়জনের ভালোবাসার ছোট্ট ডোবায় হাবুডুবু খেতে খেতেই জীবনটা পার করে দিই। অথচ এর বাইরেও যে আরো কত রকমের ভালোবাসা আছে, আছে তার প্রাবল্যের কত মাত্রা!

এইবার দেশ থেকে আসাটা আমার জন্যে বেশ কঠিন হয়েছে। কারণ খোদাতায়ালা আমাকে একটি সুন্দর গল্প উপহার দিয়েছিলেন, আর আমি তাকে মেহনত করেছি। আমি মৃতদেহে প্রাণ সঞ্চার হতে দেখেছি...

তারপর তাকে আলিঙ্গনপাশ-মুক্ত করে এতদূরে আসতে আমার কষ্ট হয়েছে।
কোন্ ভালোবাসার জন্যে দুনিয়ার অসংখ্য জিনিসকে তুচ্ছজ্ঞান করা যায়?
যে ভালোবাসায় খোদাতায়ালার বাসগৃহ উষ্ণ হয়ে ওঠে: তিনি ফিরে আসেন,
মৃতদেহে প্রাণ সঞ্চার হয়। তেমন ভালোবাসা দেবার বা নেবার সুযোগ --
তা আপনি যে-ই হন, যদি পান, তবে গোটা পৃথিবীর বিনিময়ে হলেও তা গ্রহণ করুন।

আমি লা-মাকাম (নির্মোহ স্তর)-এর মানুষ নই। অতএব আমার পথচলায় মায়া তৈরী হয়; বন্দীত্ব তৈরী করি। এটা আমি বুঝি। আমাকে যারা ভালোবাসেন (এবং আমিও তাদেরকে ভালোবাসি)-- তারা এই বন্দীত্ব অনুভব না করলেও আমি করি, এবং দেখি। তবে--

একটা ভোর তো হয়েছে! দ্বিতীয় ভোর-ও আমরা দেখব, ইনশাআল্লাহ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা