বহুকাল যাবৎ মানুষ সুরের সন্ধান করে আসছে। সেজন্যে বানিয়েছে কত বাদ্যযন্ত্র, লিখেছে কত গান, কত সুর। তবু মনে শান্তি নেই। এক গান শেষে আরেক গান। এক সুর ছেড়ে আরেক সুর। অস্থির অশান্ত মানব মন। সব গান আর সব সুর শোনা শেষ হয়, তবু তৃপ্তি নেই।
..... ..... ..... ..... ..... ..... ..... ..... ..... .....
তারপর একদিন সব গান আর সুরের জগত মন্থন শেষে সুরপাগল শুনল নতুন এক সুর। পাখির গান, পাতার শব্দ, জলের কোলাহল আর মাটির ঘ্রাণের সাথে শিশিরভেজা ঘাসের স্পর্শ আর ভোরের আলো-আঁধারির লুকোচুরি একত্রে মিশালে হয় সেই সুর। আর সুশীতল এক বাতাস বয়ে নিয়ে যাবে সেই সুরকে। সেই সুরেলা বাতাসের গতি অনুসরণ করে সুরপাগল পৌঁছে গেল সাত আসমানের ‘পার। খোদার আরশ আছে সেইখানে। সুরপাগল তখন দেখে বেহেশতের রঙ।
..... ..... ..... ..... ..... ..... ..... ..... ..... .....
খোদাতায়ালা কথা বলেন না। তিনি কেবল ইশারা করেন। তিনি হাসেন। ভালোবাসেন। মানব-হৃদয়ের গভীরে, রক্তে ঢেউ তোলেন। তিনি সুরপাগলের নাম দিলেন বাঁশিওয়ালা।
বাঁশিওয়ালা ফিরে আসে। মানুষকে ডেকে বলে, খোদাতায়ালা আমার নাম দিয়েছেন বাঁশিওয়ালা। আমাকে শিখিয়েছেন সুর। এসো, আমরা একসাথে সুর তুলি, গান গাই। আমাদের সুরের তানে মানুষের পায়ে ছন্দ উঠুক। সবাই দুঃখ ভুলে যাক। আমি তোমাদের মুক্তির পথ দেখাব। আমিও একসময় বন্দী ছিলাম!
কিন্তু মানুষ মুখ ঘুরিয়ে নেয়। ফিরে যায়। বাঁশিওয়ালার কত অনুরোধ, কত অশ্রুসজল আবদার -- সব প্রত্যাখ্যান করে। বোকা মানুষ কেবল পুরনো সুরের মাঝে আশ্রয় খোঁজে। পুরনো গল্পে নিজেকে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করে। চেনা অন্ধকারে ফিরে যায়।
..... ..... ..... ..... ..... ..... ..... ..... ..... .....
বাঁশিওয়ালা বললো, আয় খোদা! এরা যে সুর বোঝে না। এরা কেবল খায় আর ঘুমায়, আর সেটারই সন্ধান করে। আমি আর সুর তুলবো না। আর গাইব না।
খোদাতায়ালা হাসেন। বাঁশিওয়ালার হাতে তুলে দেন নতুন কিছু সুর। বাঁশিওয়ালা ফিরে আসে। মুগ্ধ হয়ে শোনে, বারবার শোনে। তারপর মনের অজান্তে বাঁশিতে তোলে সেই সুর। বড় মনোমুগ্ধকর সেই সুর। অপূর্ব তার ছন্দ। হৃদয়ের গভীরে, রক্তে ঢেউ তোলে যেন।
তার হাতে যে এই মোহন সুর বেজে উঠবে, তা কি বাঁশিওয়ালা নিজেই জানত? সে কেবল বাঁশিতে ঠোঁট লাগিয়েছে, সেতারে দিয়েছে টোকা, আর তবলায় করেছে স্পর্শ -- বাকি গল্পটুকু খোদাতায়ালা লিখে দিয়েছেন। আর কী আশ্চর্য! সেই মোহন সুরে মানুষ পাগল হয়েছে। বলেছে, আমি তোমায় ভালোবাসি। বাঁশিওয়ালা তখন হেসেছে। ঠিক যেভাবে খোদাতায়ালা হেসেছিলেন।
নূরে আলম
জুন ৮, ২০১৬।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
[ব্লগে কমেন্ট পোস্ট করার পরও যদি না দেখায়, তাহলে দ্বিতীয়বার পোস্ট করার প্রয়োজন নেই। খুব সম্ভবত স্প্যাম গার্ড সেটাকে সরিয়ে নিয়েছে, আমি পাবলিশ করে দেবো।]