সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

I know you’re tired, but...

Parallel Universe

বিভিন্ন জগতে উঁকি দেবার মত ব্যাপার যেমন ঘটতে পারে, তেমনি চর্চার মাধ্যমে ভিন্ন জগতে সচেতন বিচরণের মত ব্যাপারও ঘটা সম্ভব। আবার অনেকসময় কোনো জগত বিদ্যুৎ ঝলকের মত এসে দেখা দিয়ে যায়।
কোয়ান্টাম ফিজিক্স এজাতীয় কিছু বিষয় আলোচনা করে। তারা কেবল এধরণের সম্ভাব্যতা সাজেস্ট করে। অথচ এই ব্যাপারে ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্ম অনেক গভীরে প্রবেশ করেছে আরো আগেই। আলটিমেটলি, মানুষের জ্ঞানই তো! কোয়ান্টাম ফিজিক্স দিয়ে প্যারালেল ইউনিভার্স না বুঝে ইরফান (অধ্যাত্মবাদ) দিয়ে বুঝলে দোষ কী? যেখানে কোয়ান্টাম ফিজিক্স কেবল ইন্টেলেকচুয়ালি পসিবিলিটি ‘সাজেস্ট’ করে, ইরফান সেখানে (জ্ঞানের চেয়ে) উচ্চতর স্তরে বিষয়টাকে ‘নিশ্চিত’ করে। যারা কোয়ান্টাম ফিজিক্স দিয়ে প্যারালেল ইউনিভার্সের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছেন, সেটাকে আমার কাছে অনেকটা ব্লেড দিয়ে ফল কাটার মত মনে হয়, অথচ ব্লেড দিয়ে কখনোই ছুরির মত সহজে সুন্দরভাবে ফল কাটা সম্ভব নয়।
তো, অন্য একটি জগত যখন বিদ্যুত চমকের মত এসে উঁকি দিয়ে যায়, তখন ঐ মুহুর্তের জন্য উভয় জগতের অস্তিত্ব সন্দেহাতীতভাবে পরিস্ফূট হয়। কিন্তু বিদ্যুত চমক বন্ধ হয়ে যাবার পর চারিদিক আবার অন্ধকার। এরপর তার এই অন্ধকার জগতে অবস্থান করাটা যতই দীর্ঘায়িত হবে, ততই অপর জগতটাকে তার কাছে ভ্রম বলে মনে হবে, এবং একসময় সে হয়ত অপর জগতের অস্তিত্বই অস্বীকার করে বসবে। আর ঠিক এই মুহুর্তেই যেন তার হৃদয়টা তালাবদ্ধ হয়ে গেল, এখন আর সেখানে আলো প্রবেশের কোনো সম্ভাবনা নাই; কারণ সেতো আর ঐ জগতে প্রবেশের চেষ্টাই করবে না! কিন্তু যদি সে আধ্যাত্মিক ইয়াক্বিন অর্জন না করুক, অন্ততঃ ইন্টেলেকচুয়ালি নিজের কাছে এটুকু স্বীকার করে রেখে দেয় যে, হ্যাঁ, আরেকটি জগতের অস্তিত্ব আছে, আমি এক ঝলক দেখেছিলাম, সেই পথে অগ্রসর হলে আবারো হয়ত দেখতে পা’ব -- তবে সে দরজাটি দেখতে পায়। যদিও দরজাটি তালাবদ্ধ এবং তার কাছে হয়ত এই মুহুর্তে কোনো চাবি নেই, কিন্তু সে জানে যে চাবি পাওয়া সম্ভব, তালা খোলা সম্ভব, এবং এর মাধ্যমে অপর জগতের সত্যগুলিকে উদঘাটন করা সম্ভব, বিচরণ করা সম্ভব।
“My soul is from elsewhere, I'm sure of that, and I intend to end up there.” -- Rumi

সাইর ওয়া সুলুক

ইরফানে এই গোটা ব্যাপারটাকে ‘সাইর ওয়া সুলুক’ বলা হয়। অর্থাৎ পথিক (সালিক) ও তার অভিযাত্রা (সাইর)। যখন সে আল্লাহর ইচ্ছায় বিদ্যুৎ চমকের মত অপর একটি জগতকে দেখতে পায়, তখন ঐ জগতের আলোকে সে দুনিয়াটাকে দেখে। যেন অনেকটা এমন যে, অমাবশ্যার রাতে ঘুটঘুটে অন্ধকারে জঙ্গলের মধ্যদিয়ে একজন পথ চলছে, সে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না, তবু সামনের দিকে হাঁটছে, এমন সময় হঠাৎ আকাশে বিজলি চমকালে চারিদিক আলোকিত হয়ে উঠলো, আর সামনে পিছনে ডানে বামে সাপ, বিচ্ছু, বাঘসহ নানান ভয়ানক প্রাণী দেখতে পেল, সেইসাথে বড় বড় খাদ, গর্ত দেখতে পেয়ে আঁতকে উঠলো। ঐ বিদ্যুত চমক ছাড়া সে এগুলো দেখতেই পেত না, বরং নির্ভাবনা হয়ে পথ চলত। আর এই অন্ধকারে চলতে চলতে হঠাত খাদে পড়ে ধ্বংস হয়ে যেত। এখন সে খুবই অজানা আশঙ্কায় আছে। কে জানে আবারও এই অন্ধকারে পথ চলতে চলতে হয়ত সে কোনো একমুখী পথে ঢুকে পড়েছে, যেটার সামনেই আছে বড় এক খাদ! এমতাবস্থায় সে বারবার বিদ্যুত চমকের আশা করে, আর হয়ত মাঝে মাঝে তা পেয়েও যায় : অপর জগতটিকে সে দেখতে পায়। তখন ঐ জগতের আলোকে সে এই দুনিয়ায় সাবধানে পথ চলে। আল্লাহর উপর ভরসা করে এভাবে অগ্রসর হতে থাকলে একসময় বিদ্যুত চমক আরো বেশি বেশি ঘটে, এবং খোদামুখী যাত্রার পথিক মোটামুটিভাবে পাপ এড়িয়ে দুনিয়াতে পথ চলে। কিন্তু সে এখনও হাঁটার ছন্দ, গতি ও কৌশল রপ্ত করতে পারেনি, একইসাথে সে যে গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, সেই গন্তব্য সম্পর্কেও তার ভালো ধারণা নেই। এগুলো সবই সে ধীরে ধীরে অর্জন করে।
“বিদ্যুতালোকে যখন সামান্য আলোকিত হয়, তখন কিছুটা পথ চলে। আবার যখন অন্ধকার হয়ে যায়, তখন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।...” সূরা বাকারা, ২:২১
এভাবে করে পথ চলতে চলতে একসময় বিদ্যুত চমকের বদলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে একটি আলো উপহার দেয়া হয়। আর সেটা খুব ছোট, টিমটিমে আলো, যেন ছোট্ট এক কুপিবাতি। এই আলোতে সে শুধু পায়ের সামনের একটুখানি দেখতে পায়, কিন্তু এর বেশি কিছু বুঝতে পারে না। তবু সে মোটামুটিভাবে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট না করে পথ চলে। এভাবে সালিক (পথিক) নানান স্তর অতিক্রম করে, এবং আল্লাহ তায়ালা তাকে আরো আলো দান করেন। একসময় সূর্যের আলোর মত দুনিয়ার সবকিছু সে স্পষ্ট দেখতে পায়।
“আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের জ্যোতি, তাঁর জ্যোতির উদাহরণ যেন একটি কুলঙ্গি, যাতে আছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাঁচপাত্রে স্থাপিত, কাঁচপাত্রটি উজ্জ্বল নক্ষত্র সদৃশ্য। তাতে পুতঃপবিত্র যয়তুন বৃক্ষের তৈল প্রজ্বলিত হয়, যা পূর্বমুখী নয় এবং পশ্চিমমুখীও নয়। অগ্নি স্পর্শ না করলেও তার তৈল যেন আলোকিত হওয়ার নিকটবর্তী। জ্যোতির উপর জ্যোতি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ দেখান তাঁর জ্যোতির দিকে।…” সূরা আন নূর, ২৪:৩৫
(আধ্যাত্মিক) আলোবিহীন মানুষ দুনিয়ার যেটাকে খুব আকর্ষণীয় ভাবে, যার পিছনে ছোটে, সালিক হয়ত সেখানে বিপদ দেখতে পায়, আগুন দেখতে পায়। আবার আলোবিহীন মানুষ যেটাকে দুঃখ-কষ্টের পথ ও বোকামি মনে করে, সেখানে হয়ত সালিক মণিমুক্তা দেখে, আল্লাহকে দেখে, রাসূলকে দেখে, ওলি-আউলিয়াদের দেখে। আল্লাহর ইচ্ছায় এই আলোর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে তা চোখ ঝলসানো আলোতে পরিণত হয়, এবং অন্ধকার থেকে হঠাত আলোতে এসে পড়লে মানুষের যে অবস্থা হয়, সালিকের তেমন অবস্থা হয়, এবং সে আলো ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না। তখন সে নেশাগ্রস্ত (সুকারা) অবস্থায় চলে যায়। অবশ্য ধাতস্থ হলে ‘পর সে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
“The moment you accept what troubles you’ve been given, the door will open.” -- Rumi
এই পথ চলতে চলতেই সে তার গন্তব্য (আল্লাহ তায়ালা) সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে, তাঁকে জানার চেষ্টা করে। কিন্তু মানুষের ‘জানা’, অর্থাৎ ‘জ্ঞান অর্জন করার’ পদ্ধতিতে আল্লাহ তায়ালাকে যেভাবে জানা হয়, সেটাকে সে পর্যাপ্ত মনে করে না, এতে সে তৃপ্ত হয় না। কারণ মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক সীমাবদ্ধতা আছে; আর এই সীমার মধ্যে থেকে যে সীমিত জ্ঞান অর্জন করা হয়, তা পরিপূর্ণ নয়।
এই পর্যায়ে এসে সালিকের নতুন যাত্রা শুরু হয়। এতক্ষণ পর্যন্ত তার যে যাত্রা ছিল, তা আসলে তার নিজের থেকে নিজের দিকেই। কিন্তু এখন সে নিজের থেকে আল্লাহর দিকে যাত্রা শুরু করে। অর্থাৎ নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা, নিজের থেকে নিজেই আলাদা হয়ে যাওয়া এবং নিজেকে আর ফিরে পাবার কোনো আশা না রেখে পরিপূর্ণভাবে ত্যাগ করে আল্লাহর দিকে যাত্রা। এটাই সালিকের হিজরত। কিন্তু এই অবস্থা (হাল) যে আসলে কেমন, এই অভিযাত্রার (হিজরতের) স্বরূপ-ই বা কী, সেটার বর্ণনা কোনো মানবীয় ভাষা ধারণ করতে পারে না। কারণ এই হিজরতে সালিক নিজেকেই ত্যাগ করেছে (মানবীয় সীমাবদ্ধতাগুলি থেকে মুক্ত হবার জন্য)।
বাকি বর্ণনাটুকু খুবই সংক্ষিপ্ত। হিজরত শেষে সে আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়, এবং আল্লাহতে বিলীন (ফানা) হয়ে যায়। বড় বড় আ’রেফগণ বলে গেছেন যে, এই ফানাফিল্লাহ অবস্থাটি স্থিতিশীল নয়, বরং এরও পরবর্তী স্তর হলো বাক্বাবিল্লাহ (আল্লাহতে স্থায়ী হওয়া)।
এরপর আল্লাহর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সালিক দুনিয়াতে ফিরে আসেন এবং মানবজাতিকে ইসলামে পথে দীক্ষিত করেন। তবে এই হিজরত, ফানাফিল্লাহ ও বাক্বাবিল্লাহ, সবই একজন সালিকের মাঝে ঘটে থাকে দুনিয়াতে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড করা জীবনেই। এবং “মানুষকে ইসলামে দীক্ষিত করার জন্য আল্লাহর কাছ থেকে দুনিয়াতে ফিরে আসা” কথাটা দ্বারা এটা বুঝানো হয়নি যে সে তার পূর্বে অর্জিত অবস্থা ত্যাগ করে, বরং সে আল্লাহতে বিলীন ও স্থায়ী হওয়া অবস্থাতেই মানুষের মাঝে ইসলামের আলো ছড়ানোর কাজ শুরু করে। আর এটাই তাঁর দুনিয়ায় ফিরে আসা।

Parallel Consciousness

এখন বোঝা যায় যে, যখন একজন আ'রেফ বলেছিলেন, বিগত ত্রিশ বছর যাবৎ মানুষ মনে করেছে আমি তাদের মাঝেই ছিলাম, অথচ আমি তাদের মাঝে ছিলাম না -- কথাটার কী তাৎপর্য থাকতে পারে। কিংবা একজন সূফী কিভাবে তার প্রতিটা শ্বাস-প্রশ্বাস সম্পর্কে প্রতি মুহুর্তে সচেতন থেকে parallely দুনিয়ার সমস্ত কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে। অথচ কোনোটাতেই বিঘ্ন ঘটে না। এ অবস্থায় তাঁরা সত্যিকারের parallel consciousness অর্জন করেন।

ওস্তাদ / পীর / ইনসানে কামেল

একজন সালিক এই পথ অতিক্রম করতে গিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানান সমস্যায় পড়ে। এমনকি ভুল পথে চলে যাবার আশঙ্কাও থাকে। তাই সালিকের এই আধ্যাত্মিক অভিযাত্রা যদি একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে ঘটে, তাহলে মোটামুটি আশঙ্কামুক্ত হওয়া যায়, ধৈর্য্য ধারণ করে আশাবাদী হয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। এই অভিজ্ঞ ব্যক্তি, যিনি ইতিমধ্যেই খোদামুখী আধ্যাত্মিক যাত্রার বিভিন্ন স্তর পার করে ফেলেছেন, এবং যিনি নবীন অভিযাত্রিককে চলার পথে গাইড করেন, তাঁকেই ইসলামী পরিভাষায় পীর (বয়স্ক ব্যক্তি), ইনসানে কামেল (পূর্ণতাপ্রাপ্ত মানব) ইত্যাদি বলা হয়। ‘পীর ধরা’ কথাটার আসল অর্থ হলো একজন ইনসানে কামেল এর তত্ত্বাবধানে জীবন পরিচালনা করা। তবে ইসলাম ও আধ্যাত্মিক চর্চার নামে ব্যবসা ফেঁদে বসা ভণ্ড লোকেরা এই কথাটার অপব্যবহার করে থাকে।
[প্রসঙ্গতঃ, ‘পীর না ধরলে মুক্তি নাই’, এজাতীয় কথাকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করায় অনেক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্যই একজন ইনসানে কামেলের তত্ত্বাবধানে দীক্ষা নিলে সেখানে সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি ও ভুল-ভ্রান্তির আশঙ্কা কম, কিন্তু তার মানে এই নয় যে ইনসানে কামেলের গাইডেন্স ছাড়া মানুষ কখনো আল্লাহর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য অর্জন করতে পারবে না, জান্নাত লাভ করতে পারবে না। বরং এজাতীয় কথার মূল তাৎপর্য হলো, পীরের গাইডলাইন ছাড়া চলা খুবই কঠিন। কারণ আল্লাহ তায়ালার অন্যতম গুণ ‘ন্যায়বিচারক’ এর অন্যতম তাৎপর্য এই যে, প্রতিটা মানুষ, তা সে যে পরিবেশেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন, আল্লাহ তায়ালা ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভ করতে সক্ষম।
ঠিক তেমনি শিয়া মাযহাবের প্রচলিত একটা কথা: ‘যে তার যামানার ইমামকে চিনলো না এবং মারা গেলো, সে যেন জাহেলিয়াতের মৃত্যু বরণ করলো’। আসলে একথার মানে এই নয় যে যামানার ইমামকে (বর্তমানে ইমাম মাহদী (আ.)) চেনে না এমন প্রতিটা ব্যক্তির মৃত্যুই জাহেলিয়াতের মৃত্যু। বরং এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনেকটা এমন যে, যামানার ইমামকে না চিনলে একজন ব্যক্তি (অর্থাৎ যার কাছে ইমামের পরিচয় পৌঁছায়নি, সে) অনেক আলো (অর্থাৎ ইমাম মাহদী (আ.)) থেকে বঞ্চিত হলো, আর যে ব্যক্তির কাছে ইমামতের জ্ঞান পৌঁছেছে, সে যদি যামানার ইমামের আনুগত্য না করলো, তবে তার মৃত্যু অন্ধকারের মৃত্যুর মত হলো।
একইভাবে ‘বায়াতবিহীন মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু’ কথাটির ক্ষেত্রেও আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। যে ব্যক্তির কাছে ‘বায়াত’ এর প্রকৃত ইসলামী কনসেপ্ট পৌঁছায়নি, তার ক্ষেত্রে কথাটি প্রযোজ্য নয়। কিন্তু যে ব্যক্তি ইসলামে বায়াতের সঠিক কনসেপ্ট জানে, এবং আনুগত্য করবার মত উপযুক্ত আধ্যাত্মিক, চারিত্রিক ও জ্ঞানগত বৈশিষ্ট্যের মানুষও তার নাগালের মধ্যেই আছে, তখন যদি সে তার আনুগত্য না করলো, তাহলে তার এই বায়াতবিহীন মৃত্যু হলো গোঁড়ামি ও অন্ধত্বের মৃত্যু, জাহেলিয়াতের মৃত্যু।]
যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা ইনসানে কামেল (পূর্ণতাপ্রাপ্ত মানব, যেমন নবী-রাসূল) প্রেরণ করেছেন, যাঁরা মানবজাতিকে এই পথে গাইড করেছেন। তবে এটাও সত্য যে, পৃথিবীর ইতিহাসে কম মানুষই নবী রাসূলগণের শিক্ষাকে পূর্ণরূপে আয়ত্ত করতে পেরেছে। ইতিহাসের অনেক নবীকে উগ্র লোকেরা হত্যা করেছে, আবার কোনো কোনো নবীর সারাজীবন ইসলাম প্রচার সত্ত্বেও অল্প কিছু সত্যান্বেষী মানুষ ছাড়া বাকি সবাই অন্ধকারেই রয়ে গেছে। এমনকি শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-কেও আধ্যাত্মিক যাত্রার পথপ্রদর্শক হিসেবে খুব কম মানুষই গ্রহণ করেছে। তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের মাঝেও কম মানুষই তাঁর আলো পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে পেরেছিলেন।

প্রচলিত ধর্মচর্চা

এদেশে প্রকৃত ইসলামের আলো গ্রহণের পথে সবচে' বড় অন্তরায় হয়ে আছে প্রচলিত (বিকৃত) ইসলাম চর্চা। শুধু আমাদের দেশে না, দুনিয়ার মোট ধর্মচর্চার সিংহভাগই এমন। অন্ধ আবেগ, অসংযত অযৌক্তিক আচরণ ও অনমনীয়তা -- আমাদের প্রচলিত ধর্মচর্চার সাথে এই শব্দগুলো জড়িয়ে গেছে। আসলে, প্রচলিত অধিকাংশ ধর্মচর্চাই মানুষকে বদ্ধ করে ফেলেছে; রুদ্ধ করে দিয়েছে আত্মিক-আধ্যাত্মিক-বুদ্ধিবৃত্তিক মুক্তির দ্বার। সেটা কি শিয়া কি সুন্নি, কি মাযহাবী-লা মাযহাবী কিংবা বিভিন্ন নামের দল। চিন্তা ও অনুভূতির জগতে স্বাধীন বিচরণ করে নিজহাতে মণিমুক্তা অন্বেষণের পথকে শিরক, বিদআতসহ নানান আখ্যা দিয়ে মানুষকে জান্নাত হারানোর ভয় দেখিয়ে এবং বদ্ধ জ্ঞান ও অনুভূতির দলীয়/গোত্রীয় ধারার ধর্মচর্চাকে জান্নাতের একমাত্র উপায় হিসেবে লোভ/ভয় দেখিয়ে মানুষকে বন্দী করে রাখছে, শেকলবন্দী দাসে পরিণত করছে। মুক্তির পথে কাউকে ডাকলে তাই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়। যদি বলি, Come! Let us step outside of this captivity, together -- let us explore, let us talk, let us think, feel and embark on a journey towards God, a new adventure, a miracle every moment -- তখন তা হয়ত মাটিতে গিয়ে পড়ে, কিংবা রুক্ষ জবাব হয়ে ফিরে আসে। তবু আল্লাহর অশেষ রহমত যে, এমন মানুষ তিনি দান করেছেন, যার পাশে বসে "মানুষ নিজেই নিজের জ্ঞানের উৎস হতে পারে" একথা বললে কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাথা নেড়ে বলে, "হুম..."। অস্থির হয়ে কুরআন, হাদীস কিংবা ধর্মশাস্ত্রের মর্যাদা ও অপরিহার্যতা প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যত হয় না।
“প্রচলিত অর্থের ধার্মিক” মানুষদের চেয়ে “প্রচলিত অর্থের সেকুলার” মানুষদেরকে তাই প্রায়ই বেশি উদারমনা হিসেবে দেখতে পাই: তারা নিজেদের সহজাত জ্ঞানকে “অর্জিত ধর্মীয় জ্ঞানের” পর্দা দ্বারা আবৃত করে ফেলেনি...।
এটা খুবই বেদনাদায়ক, কিন্তু প্রচলিত ধর্মচর্চা হয়ে গিয়েছে অনেকটা পৌত্তলিকতার মতই: কোনোকিছু অন্ধভাবে আঁকড়ে ধরা! যেই বিচারবুদ্ধি প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষ পৌত্তলিকতা ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলো, যেই অন্ধত্ব ত্যাগের ফলে ইসলামের আলো পেয়েছিলো, ইসলামে এসে আবারও সেই অন্ধত্বকেই আঁকড়ে ধরেছে, সেই বিচারবুদ্ধিকে ত্যাগ করেছে। আর এখন শয়তান সেটার সুযোগ নিয়ে ভুল ভ্রান্তি প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে, আর মানুষও তা প্রাণপনে “ইসলাম, আল্লাহ, রাসূল” ভেবে আঁকড়ে ধরে রাখছে!
“I know you’re tired, but come! This is the way.” -- Rumi

জ্ঞানের উৎস

এক দৃষ্টিকোণ থেকে জ্ঞান দুই প্রকার: সহজাত ও অর্জিত।
মানুষের সহজাত জ্ঞান কমপক্ষে তিনটি: বিবেক, বিচারবুদ্ধি এবং স্রষ্টার ব্যাপারে আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণা। আর এই সহজাত জ্ঞান ব্যবহার করেই মানুষ জ্ঞান অর্জন করে, অর্থাৎ ‘অর্জিত জ্ঞান’ এর অধিকারী হতে থাকে। নামাজ, রোজা ইত্যাদিসহ ইসলামের যে বিষয়গুলোতে আমাদেরকে জ্ঞান ‘অর্জন’ করতে হয়, যা আমরা আপনা আপনি বুঝে ফেলি না, তা-ই অর্জিত ধর্মীয় জ্ঞান। আল্লাহ তায়ালা পরকালে মুক্তির জন্য ও তাঁর কাছে গৃহীত হবার জন্য সহজাত জ্ঞানের বাইরে কোনো অর্জিত ধর্মীয় জ্ঞানকে বাধ্যতামূলক করেননি।
আমরা যদি আমাকের অর্জিত জ্ঞানকে আঁকড়ে ধরি, তবে আশঙ্কা আছে যে আমরা আমাদের সহজাত জ্ঞানের বিপরীতে যাবো। কিন্তু আমরা যদি আমাদের সহজাত জ্ঞানকে আঁকড়ে ধরি, তবে সম্ভাবনা আছে যে, আমরা জ্ঞান অর্জন করতে পারব।
মানুষ নিজেই নিজের জ্ঞানের উৎস হতে পারে। ধ্যান করার মাধ্যমে এটা অর্জন করা সম্ভব।
মানুষের বুদ্ধিমত্তা আল্লাহর এক বিস্ময়কর দান। এ দ্বারা হৃদয়ের পর্দা উন্মোচন করা সম্ভব হয়। আবার হৃদয়ের চর্চার দ্বারা জ্ঞানের পর্দা উন্মোচন সম্ভব হয়। তবে জ্ঞানের পর্দা উন্মোচন ছাড়া অপর জগতে প্রবেশ অসম্ভব-প্রায়, কারণ জ্ঞান হলো হৃদয়ের জগতে প্রবেশের দ্বার। একারণেই বলা হয়েছে : জ্ঞানের পর্দা হলো সবচে' বড় পর্দা।
মারেফাতুল্লাহ অর্জনের মাধ্যমে জীবনের সকল জিজ্ঞাসার জবাব পাওয়া সম্ভব।

Blindness of the Heart: to Lose Vision after the Vision

মানুষের ব্রেইনের সাথে সম্পর্কযুক্ত যেমন চোখ, কান, মুখ আছে, যা দিয়ে আমরা দেখতে, শুনতে ও বলতে পারি, তেমনি মানুষের হৃদয়েরও দর্শন, শ্রবন ও বাকশক্তি আছে। যা দ্বারা সে আল্লাহ ও তাঁর বন্ধুদেরকে দেখে, তাদের সাথে কথা বলে, তারা জবাব দিলে তা শুনতে পায়। প্রতিটা মানুষের সহজাত জ্ঞানই তাকে হৃদয়ের দর্শন, শ্রবণ ও বাকশক্তি দিয়ে থাকে। কিন্তু মানুষ নিজের উপর জুলুম করে তা হারিয়ে ফেলে। তাই যখন সে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তখন আল্লাহর সেই ওয়াদার বাস্তবায়ন দেখতে পায় না, যেখানে আল্লাহ বলেছেন যে, তাঁর বান্দা আর্তি জানালে তিনি জবাব দিয়ে থাকেন। সেই জবাব আর শুনতে পায় না। কারণ সে জবাব তো কানে নয়, সে জবাব তো এসেছে হৃদয়ে।
আজকে আমরা চোখ দিয়ে সবকিছু দেখছি। চক্ষুষ্মান কোনো মানুষ যদি আগামীকাল হঠাৎ অন্ধ হয়ে যায়, তার জীবনটা কতই না দুর্বিষহ হয়ে উঠবে! কতই না সে মিস করবে সবকিছু, আবার এই সুন্দর পৃথিবীর যত রঙ দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকবে প্রতিটা মুহুর্ত।
আমরাও তেমনি করে হৃদয়ের আয়নায় খোদাকে দেখতে পেতাম, তাঁর কাছে হৃদয় থেকে প্রার্থনা করতে পারতাম, এবং খোদা জবাব দিলে ‘পর হৃদয়ের মাঝে তা ধারণ করতে পারতাম। কিন্তু আফসোস! আমাদের সেই দৃষ্টিশক্তিই যে আমরা শুধু হারিয়ে ফেলেছি তা-ই নয়, আমরা আমাদের হৃদয়ের বাকশক্তি ও শ্রবণশক্তিও হারিয়েছি। তাই আমাদের প্রার্থনা হৃদয় থেকে না এসে মস্তিষ্ক থেকে আসে, প্রার্থনার জবাব আমরা হৃদয়ে শুনতে না পেয়ে রক্তমাংসের চোখ দিয়ে দুনিয়ার ভিতরে খোঁজার চেষ্টা করি। আমরা আমাদের এই বধির, বোবা ও অন্ধ অবস্থাতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি, অথচ একবারও ভেবে দেখছি না, আমিও একসময় আধ্যাত্মিক জগতের সবকিছু দেখতাম, কথা বলতাম, শুনতাম। কতইনা আফসোস, আমরা দৃষ্টিশক্তি পাবার পরেও তা হারিয়ে ফেলেছি, অন্ধ হয়ে গিয়েছি!
“Everyone sees the unseen in proportion to the clarity of his heart, and that depends upon how much he has polished it. Whoever has polished it more, sees more - more unseen forms become manifest to him.” -- Rumi

গায়েবে বিশ্বাস ও আমাদের প্রার্থনা

“গায়েবে বিশ্বাস” এর বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন ভিন্ন তাৎপর্য আছে। আমার কাছে এর একটা অনুভূতি এমন: “জ্ঞানের ঊর্ধ্ব”। এমনকি অনুভবেরও ঊর্ধ্ব। কোনো প্রকার ধারণা, পরিকল্পনা -- কোনো কিছুতেই যাকে ধারণ করা যায় না। যেটাকে মানুষ miracle-ও বলে!
গায়েবী সাহায্য আমি কিভাবে প্রার্থনা করব? আমি জানি যে, আমার বুদ্ধিতে যা কুলায়, আমি যেটাকে সর্বোচ্চ পাওয়া মনে করি, মানুষের জন্য আল্লাহর ভাণ্ডার তার চেয়েও অনেক বেশি। নিজের এই সীমাবদ্ধতা জেনে তবুও কি নিজ বুদ্ধিতে প্রার্থনা করব? নানান ‘কথা’ আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদন করব? বলব যে, এটা চাই ওটা চাই, এমন হোক অমন হোক? কেন আমি এত অল্পে সন্তুষ্ট থাকব, যেখানে অজানা সব উপহার অপেক্ষা করছে আমার জন্য?
তাই আল্লাহর কাছে যদি কিছু চাইতেই হয়, আমি বলি কি, কিছু চেয়ো না। যদি আমি কিছু চেয়ে বসলাম তো আমি আসলে খুব কমদামী কিছু চাইছি। কারণ আল্লাহর কাছে যে এর চেয়েও বেশি কিছু আছে! জান্নাত কামনা করব? কেন জান্নাত কামনা করব? আল্লাহর কাছে যে এর চেয়েও বেশি কিছু আছে! কুরআনে আমরা সর্বোচ্চ পুরস্কারের কথা পড়েছি। সেটা চাইবো প্রার্থনায়? কেন চাইবো? এর চেয়ে কি বেশি কিছু নেই? কী আছে? আসলে গায়েবে কী আছে?
আমি জানি না। কিন্তু আমি তা চাই। আমি তা-ই চাই, যার সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই নাই। যদি কোনোকিছু আমার মস্তিষ্ক চিন্তা করে ফেলল তো সেটা আমি আর চাই না। আমি তা-ই চাই, আমার বুদ্ধিবৃত্তি যা ধারণ করতে অক্ষম। তাহলেই কেবল আল্লাহর ভাণ্ডার থেকে পানীয় পান করতে পারব! নিশ্চয়ই পারব! এই দুনিয়াতেই পারব!
“Never lose hope, my heart, miracles dwell in the invisible.” -- Rumi
কিন্তু হায়, আজীবন শুধু বুদ্ধিবৃত্তি দিয়ে প্রার্থনা করে এসেছি। গায়েবে বিশ্বাস ও গায়েবী উপহার/সাহায্য সম্পর্কে কিছুমাত্র ধারণা পাবার সাথে সাথে আজ মনে হচ্ছে, বৃথাই এত প্রার্থনা! এযাবৎ যত যা প্রার্থনা করেছি -- হায়রে, কী প্রার্থনা করেছি! কিন্তু আমি কিভাবে এই গায়েবী উপহার, এই miracle এর জন্য প্রার্থনা করব? তা-ও জানি না। শুধু জানি যে, এই প্রার্থনার সময়টুকু অন্ততঃ নিজেকে ত্যাগ করতে হবে। নিজের বুদ্ধিবৃত্তিকে ছেড়ে দিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়া। তখন কলিজাটা মুচড়াতে থাকে শুধু! তখন যে কী হয়, সে সম্পর্কে মানুষ বেখবর। ভাষা তা ধারণে অক্ষম। মস্তিষ্ক তখন স্থবির। সেই প্রার্থনা তাই কেউ কাউকে শিখাতে পারে না। সেটার বর্ণনাও আজ পর্যন্ত কোনো ভাষা দিতে পারেনি, দেয়নি। যুগে যুগে আরেফগণ শুধু পথ দেখিয়ে গেছেন : এই দরজা অতিক্রম করো। কিন্তু দরজার ওপারে যে কী, তা রহস্যই র’য়ে গেছে। তা রহস্যই থেকে যাবে। এ এক অদ্ভুত বাজি! তবু মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মত ঐ দরজার দিকে না গিয়ে পারে না।
“We can't help being thirsty, moving towards the voice of water.” -- Rumi
“Nothing I say can explain to you Divine Love. Yet all of creation cannot seem to stop talking about it.” -- Rumi
“Let silence take you to the core of life.” -- Rumi
“Silence is the language of God, all else is poor translation” -- Rumi
“If words come out of the heart,
they will enter the heart.” -- Rumi
“Don't scare us of being deprived of intellect, because the faculty of intellect, in our province, has no position.” -- Hafiz

কুরআন: বুদ্ধিবৃত্তি-ঊর্ধ্ব অনুভুতি

কুরআন নিছক একটি গ্রন্থ নয়। এটি একটি একক অনুভূতি, যা কেবল হৃদয়ই (heart - ক্বলব) পরিপূর্ণভাবে ধারণ করতে সক্ষম, বুদ্ধিবৃত্তি (intellect- আক্বল) নয়। এই একক অনুভূতি (কুরআন) প্রথমে নাযিল হয়েছে নবীজির হৃদয়ে, একত্রে। এটি হলো প্রথম অবতরণ। অতঃপর বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আল্লাহর নির্দেশে সেই অনুভূতি থেকে নবীজি মানুষের ভাষায় প্রকাশ করেছেন। এটা হলো দ্বিতীয় অবতরণ। কুরআন অধ্যয়নের সময়ে আমরা একে সর্বনিম্ন স্তরে বন্দী হিসেবে পাই, যার মূল অনুভূতি (বা মেসেজ) অনেক উপরের বিষয়। তো, এই ভাষায় বন্দী কুরআন থেকে নবীজির অন্তরের নাযিলকৃত সেই অনুভূতির স্তরে পৌঁছা এবং কুরআনকে সেই অনুভূতির মত করে বুঝা -- এটা হলো কুরআনের পথে প্রথম মে’রাজ। দ্বিতীয় মে’রাজ হতে পারে সেই অনুভূতি থেকে আল্লাহর দিকে।
নাস্তিকেরা এত কুরআন পড়েও যে তা থেকে কিছুই অর্জন করতে পারে না, এর মূল কারণ হলো তারাতো মে’রাজ করতে আসেনি। তারাতো নবীজির অন্তরে নাযিলকৃত সেই একক অকাট্য অনুভূতিতে পৌঁছানোর দুয়ার হিসেবে আরবি ভাষার এই কুরআনের কাছে আসেনি। শুধু তারা কেন, আমরা অধিকাংশ মুসলমানই কুরআনের বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানে পড়ে র’য়েছি। আমরা দরজার কাছে এসে দরজার সূক্ষ্ম নকশা নিয়ে পর্যালোচনায় ব্যস্ত, অথচ বুঝতেই পারছি না যে এটা একটা দরজা! আরেফগণ সূক্ষ্ম নকশা দেখেছেন ঠিকই, কিন্তু দরজা খুলে প্রবেশ করেছেন অপর জগতে। মে’রাজ করেছেন নবীজির হৃদয়ে। দরজার গোড়ায় পড়ে থেকে নকশার কারুকাজের আলাপ তাদের আর ভালো লাগে না, কেবলই দরজার ওপারের নেশায় ডুবে থাকতে ইচ্ছে করে!
“Open the door of the tavern and let us go there day and night, For I am sick and tired of the mosque and seminary. ” -- Imam Khomeini
কুরআনের কাছে তাই প্রতিদিন যেতে হবে। তবে কেবলমাত্র হালাল হারাম আর বিধিবিধান জানার জন্যে নয়। দরজার নকশার আলাপে ব্যস্ত থাকার জন্যে নয়, বরং যেতে হবে, বারেবারে কুরআনের কাছে যেতে হবে, দরজার গোড়ায় দিয়ে বসে থাকতে হবে: এই বুঝি ঘটে গেল একটা miracle, এই বুঝি দরজাটা খুলে গেল!

Nonlinear path এ multi-level platform এ মানুষের অবস্থান

"And it's no sacrifice
Just a simple word
It's two hearts living
In two separate worlds"
-- Elton John.
গানটাই ব্যাখ্যা করে দিচ্ছে...। আসলে নতুন কিছুতো আবিষ্কার করিনি আমি। সবই ছিলো, শুধু হারিয়ে ফেলেছিলাম! এটা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টামাত্র...।

মানুষের সাথে সম্পর্ক

মানুষের সম্পর্কের উত্থান-পতন থাকে। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত। অনেকসময় পরিবেশ-পরিস্থিতিই এসব উত্থান-পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চাইলেও কোনো সম্পর্ককে একই মাত্রার ঘনিষ্ঠতায় ধরে রাখা যায় না। মানুষ নিজেই পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনশীল তার জ্ঞান, তার অনুভূতি। কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে সে অপরকে বিচার করবে, কিংবা নিজেকে?
অনেক সুসম্পর্কের শেষ হয় তিক্ততার মধ্যদিয়ে। আবার পারফেক্ট ডুয়েল এর মত একই সময়ে উভয় পক্ষ থেকে মন উঠে যেতে পারে। কিংবা অন্ততঃ বাহ্যিকভাবে সম্পর্কটাকে একত্রে শেষ করা যেতে পারে। ঠিক যেন এমন যে: “আচ্ছা, আজ থেকে বিদায়, ঠিক আছে?” -- দু’জন একত্রে বলে ওঠা, কিন্তু মনে মনে।

To love, itself is self-rewarding…

এই কথাটা আমার সেদিন মনে হয়েছে। ঠিক যেমন সত্য কথাটা বলতে পারাটাই সফলতা, কেউ সেটা গ্রহণ করুক বা না করুক, তেমনি।
কত প্রিয়মুখ গিয়াছে চলি! বিচ্ছেদে বিরহ বিধুর হওয়া মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য, আবার কষ্ট ভুলে নতুন ভালোবাসায় জড়ানো-ও মানুষেরই কাজ। এসবই দুনিয়ার জীবনে পথচলার নানান গল্প। কখনো মানুষ নিজহাতে রচনা করে, কখনো আর কেউ এসে রচনা করে দিয়ে যায়। কখনোবা রচনা করে একসাথে। এসব উত্থান-পতনের জোয়ার-ভাঁটায় কেউবা পুঁটি মাছের মতন মরে যায়, কেউ আবার টিকে যায় কই মাছের মতন। আর কেউ হয়ে থাকে আধমরা!
আমি এক বিস্ময়কর মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি। তার আছে দীর্ঘদিনের লালিত এক বিশ্বাস, আর আমার আছে দুই-এক খণ্ড নিশ্চিত অনুভূতি। এই দুইটার সমন্বয়ে কিছু একটা হবে। সেটা যে কেমন, তা প্রকাশের ভাষা আমার নেই। তবে সেজন্যে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি।
মানুষ পরিবর্তনশীল। প্রতিটা মুহুর্ত, দিন আর বছরেই মানুষ তার পরিবর্তনের এক একটা ধাপে অবস্থান করে, স্তর অতিক্রম করতে থাকে। যদি সে তার এই প্রতিটা প্ল্যাটফর্ম অনুধাবন করতে পারে, পিছনে তাকাতে পারে যে সে কোথা থেকে এসেছে, কত পথ কিভাবে অতিক্রম করে এসেছে, এখন কোথায় কিভাবে আছে আর সামনের দিনগুলি তাকে কিভাবে কোথায় নিয়ে যাবে -- তাহলে সে ধৈর্য্য ধারণ করতে পারে। নিজের বর্তমান যেকোনো অবস্থায়ই সন্তুষ্ট ও স্থির থাকতে পারে।
যখন দু'জন মানুষের click করে, দু'জনের চাওয়া একই হয় -- তখন সুন্দর একটা গল্প রচনা হয়। কিন্তু যখন একজনের ইচ্ছার সাথে অপরজনেরটা অমিল হয়ে পড়ে, তখনই একটা ট্র্যাজিক গল্প হয়ে যায় সেটা। এইতো দুনিয়ার ট্র্যাজেডি। নিস্তার নেই।
সবচে’ বড় প্রতারণার গল্পটি রচিত হয় সবচে’ আস্থাভাজন মানুষটির দ্বারাই। তা না হলে সেটা সবচে’ বড় প্রতারণা হয় না। এটা দুনিয়ার ট্র্যাজেডি। অনাকাঙ্খিত আঘাতটাও আসে ভালোবাসার দুর্বলতম জায়গা থেকেই। এ এক অনিবার্য ট্র্যাজেডি।
যা একবার ঘটে গেল তাতো ঘটে গেলই। অতীতকে বদলানো সম্ভব না। মানুষ সময়ের সীমায় বন্দী অসহায় এক সৃষ্টি। তবে যিনি সময়ের ঊর্ধ্বে, সময়ের নিয়ন্ত্রণ যাঁর হাতে, ভবিষ্যতের মোড় যিনি ঘুরিয়ে দেন -- সেই সত্ত্বার কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে অতীতকে বদলানো যেতে পারে। কারণ সময়ের সীমার ঊর্ধ্বে ঘটনা ও কর্মের অবস্থিতি পরিবর্তন-অযোগ্য নয়।

মানুষের প্রকৃতিগত দুর্বলতা

মানুষ যেই অপূর্ণতার দ্বারা পরিচালিত হয়ে সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করে, সেই একই অপূর্ণতার কারণে মানুষ কোনো জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, দল, ব্যানার ইত্যাদির নিচে আশ্রয় নেয়। আমার মনে হয় এটা মানব প্রকৃতির সহজাত দুর্বলতা ও অপূর্ণতা থেকে উৎসরিত। সমাজের দ্বারা সে উপকৃত হয়, সমাজ তার এমন অনেক অভাব পূরণ করে যা সে নিজে করতে পারছে না, এমতাবস্থায় সমাজে সে টিকে থাকার চেষ্টা করে, এমনকি সেজন্যে যদি সমাজের অনেক অন্যায়ের বিপরীতে নীরব থাকতে হয়, তবুও। বিভিন্ন ধরণের জাতীয়তাবাদ লালন করা, বিভিন্ন ধর্মীয়/রাজনৈতিক দলের দোষত্রুটি জানা সত্ত্বেও তার সাথে লেগে থাকা -- এগুলোর অধিকাংশই প্রতিটা ব্যক্তির মানুষ হিসেবে যে সহজাত দুর্বলতা ও অপূর্ণতা, তার কারণে ঘটে থাকে। এমনকি অপর মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করাটাও বহুলাংশে মানুষ করে থাকে আপন দুর্বলতার কারণে।
ব্যক্তিগত মুক্তি অর্জনের পথে একজন মানুষ যত এগিয়ে যাবে, অর্থাৎ মানবিক দুর্বলতা ও অপূর্ণতাগুলিকে জয় করবে, ততই সে দলীয়/গোত্রীয়/সামাজিক সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারবে। বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতিই এই মুক্তি এনে দেবে। তখন একজন মানুষ তার চাহিদা পূরণের জন্য আল্লাহ ছাড়া আর কারো উপর নির্ভরশীলতা অনুভব করবে না।

মানুষের গুণাবলী: ঝর্ণাধারাকে বাধাগ্রস্ত না করা

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তাঁর গুণের উপর সৃষ্টি করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই তাই মানুষের মাঝে ঐশী আলো থাকে। আমাদের দায়িত্ব কেবল সেই গুণাবলীর চর্চা করা। দুনিয়ার বুকে আল্লাহর খলিফা হিসেবে মানুষের দায়িত্ব এটাই।
এ যেন এক ঝর্ণাধারার মত। যার হৃদয় যত কলুষিত, তার ঝর্ণার পথে তত বেশি পাথরের বাধা। তার কাছে গেলে পথিকের তৃষ্ণা মেটে না, কোথাও এক আঁজলা পানি পর্যন্ত নেই। আর যাদের হৃদয় পরিষ্কার -- আহ, তেমন মানুষকে একটু দেখলেই যেন তীব্র রোদের মাঝে একঝলক সুশীতল পরশ এসে ছুঁয়ে যায়। তৃষিত পথিক তৃষ্ণা মেটায়। আলহামদুলিল্লাহ বলে।

Importance of Gathering: Spreading of the Spark

“O the morning bird! Learn the etiquette of love from the moth, for it found content in quietly burning once it found its beloved the flame.”
মানুষ একে অপরকে প্রভাবিত করে। প্রভাবিত হয়। সচেতনভাবে কিংবা অসচেতনভাবে। এটা সবসময় ঘটতেই থাকে। ইসলামে জামা’আত এর এত গুরুত্ব কেনো? এটাতো এজন্যেই যে, যেন একে অপরকে প্রভাবিত করতে পারে। ঈমানের বিভিন্ন স্তরে অবস্থানকারী মানুষেরা নিয়মিত একত্রিত হবার মাধ্যমে পরস্পরের ঈমান থেকে উপকৃত হবে। একজনের মাঝে যে ঈমানের আগুন প্রজ্বলিত, তার ফুলকি গিয়ে পড়বে আরেকজনের গায়ে, আর ওমনি তার মাঝেও ঈমানের আলো প্রজ্বলিত হয়ে উঠবে..। Religious gatherings is nothing but sharing of these sparks…।
এখন এটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার যে, আমি কোন স্ফূলিঙ্গের আশেপাশে থাকবো। এমন মানুষদের সাথে থাকবো, যাদের স্ফূলিঙ্গ আমার গায়ে এসে পড়লে আমার ঈমান উন্নত হয়, খোদার দিকে অগ্রসর হই, আত্মা পরিশুদ্ধ ও নম্র হয়; নাকি এমন মানুষের সাথে থাকবো, যার স্ফূলিঙ্গ কেবল অন্ধকারে টেনে নিয়ে যায়, হৃদয়কে দুনিয়ায় মত্ত, অহঙ্কারী, উদ্ধত, খোদাবিমুখ করে তোলে?

Anti-ism প্রসঙ্গে

সত্য সুপ্রতিষ্ঠিত, স্বতঃপ্রতিষ্ঠিত। মিথ্যা দুর্বল ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। মিথ্যার বিরোধিতা করা কোনো মৌলিক কাজ হতে পারে না, কারণ মিথ্যা স্বয়ং দুর্বল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। তবে সত্যের প্রকাশের অংশ হিসেবে মিথ্যার বিরোধিতা আসতে পারে। Anti-ism তাই কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

খোদামুখী যাত্রা

সকল সমস্যার সমাধান হলো আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা, তাঁর সান্নিধ্যঘনিষ্ঠ হওয়া, আর সবকিছু চেয়ে তাঁকেই বেশি ভালোবাসা। এই পথে অগ্রসর হবার সাথে সাথে সমস্যাগুলির সমাধান হতে শুরু করে। সাইর ওয়া সুলুকের কোনো বিকল্প নেই...।
You have escaped the cage. Your wings are stretched out. Now fly. -- Rumi

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা