সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গানেতিহাস - ২

আমার গান শোনার স্মৃতি ছোটবেলা থেকে। তখন বাসায় রেকর্ডার ছিলো। সেটাতে ক্যাসেট লাগালেই বেশ গান শোনা যেতো !
ভাইয়া যা আনতো, তা-ই শোনা হতো। মাঝে মাঝে খালা-মামাদেরটা ধার করে এনে চালানো হতো। আমাদের রেকর্ডারটা বহু পুরনো ছিলো, কিন্তু ভালোই চলতো। আমার চেয়েও বয়স বেশি ছিলো সেটার।
গান শোনা হতো মাইলস, এলআরবি, সোলস এবং আরো কিছু ব্যান্ডের গান। নাম মনে আসছে না। হাসান এর গানও শোনা হতো। সে তো এখন মিডিয়া থেকে উধাও।
ইংলিশ গানও শোনা হলো সেই ক্যাসেটেই। প্রথম গান ছিলো মাইকেল জ্যাকসনের। এরপর থেকে যে কত গান চলেছে !
আবার আমি যখন ক্লাস 6-7 এ উঠলাম, ততদিনে ঐ রেকর্ডারটা ঘুম দিয়েছে, নিউজ শোনার জন্য একটা জিনিস কেনা হলো, যেটাকে বোধহয় ট্রানজিস্টর বলাই ভালো। সেখানে VOA Music Mix শুনতাম আমি, স্কুলে যাবার আগে। যাক, রেডিওর মাধ্যমে চার্ট টপার অনেক চমৎকার চমৎকার গান শোনা হতো। এখনও হয় নাকি ঐসব অনুষ্ঠান ? কে জানে !

হায়রে এসব কথা ভুলেই গিয়েছি ! এমনভাবে ভুলেছি যেনো জীবনটা মাত্র এই ২০১০ সাল থেকে শুরু হয়েছে।
ভিডিও সং দেখলাম প্রথম নানাজীর কম্পিউটারে। সেসময় বাংলাদেশেই কম্পিউটার নতুন। টেক-প্রিয় নানার বদৌলতে কম্পিউটারের চেহারা জানা হলো। একটা সাদা রঙের টিভি, কিন্তু ভিতরে তাজমহলের ছবি। আর বিশেষ কিছুই না ! :P
সেখানে একটা গান খুব শোনা হতো -- BSB এর As Long As You Love Me। কতগুলো ছেলে এসে গান গায়। আর কয়েকটা মেয়ে এসে বসে। রিমোটে চাপ দেয় আর ছেলেগুলো স্ক্রিনে চেইঞ্জ হয়ে যায় :P
শেষে আবার ছেলেগুলোও একই কাজ করে ! :P
সে যাক। মুভি দেখা হলো বোধহয় ম্যাট্রিক্স। তাও আবার সেই কী যেনো মিডিয়া প্লেয়ার ছিলো ? সেইটা দিয়ে। মনে পড়েছে। Hero Soft. ওটা দিয়ে ফাইল মেন্যুতে গিয়ে ওপেন করতে হতো। কিন্তু কাজটা খুবই জটিল ছিলো (তখন এই উবুন্টু ১২.০৪ ওএসটা থাকলে সহজ হতো ! )। বিশেষত ফাইল ব্রাউজ করে বের করা।
যাকগে।

নিজের বাসায় কম্পিউটার আসার পর নানান রকমের গান শুনলাম। শেষমেষ বোধহয় রবীন্দ্র-নজরুলে এসে ঠেকলাম। এখন যখন মাঝে মাঝে random playlist এ গান শুনি, তখন যদি হঠাৎ জেমস এর একটা গান চলে আসে -- "আরো কিছুক্ষণ কী রবে বন্ধু, আরো কিছু কথা কী হবে", কিংবা BSB এর "As long as you love me, baby..." বেজে ওঠে, তখন পুরনো দিনের কথা মনে পড়তে চায় !
অর্থাৎ আমি বুড়ো হচ্ছি।

ওহ, ভালো কথা। মাঝে তো ব্রিটনি স্পিয়ার্স এর ভিডিও সং দেখে পাগল হয়েছিলাম :P
এমনকি স্কুলে পরীক্ষা দিতে যাবার আগেও ব্রিটনির Baby One More Time অথবা Oops I... গান শুনতে হবে ! LOL
এখনতো ভিডিও দেখাই হয়ে ওঠে না। ক্বচিৎ দু-একটা গান কিংবা মুভি।

তবে সেই দিনগুলি গানে গানে ছিলো। বাসা থেকে বের হয়ে হঠাৎ শুনি কোনো অভদ্র ছেলে তার বাসায় প্রচণ্ড জোরে গান ছেড়েছে। কিন্তু মনে মনে অভিশাপ না দিয়ে এক মিনিটের জন্য দাঁড়িয়ে যাই -- কারণ তখন বাজছে : Listening to the wind of change...
আর যখন প্রিয় গানের সুরটা কোনো লোকের ফোনের রিংটোন হিসেবে বেজে ওঠে, তখন তার উপর বিরক্ত হই। কারণ সেই গানের সাথে অনেক আবেগ জড়িয়ে রেখেছিলাম !

যখন গান এত সহজে শোনা যেতো না, তখন মানুষ কিভাবে স্মৃতিতে পেছনে ফিরে যেতো ? ঠিক জানি না। তবে আমি পেছনে যেতে হলে কিছু গান শুনি। এই যেমন Wind Of Change, কিংবা আরো কিছুক্ষণ কী রবে বন্ধু, আরো কিছু কথা কী হবে...।
অথবা স্বল্প অতীতের জন্য Cat Stevens এর Wild World

স্মৃতিহীন মানুষ আমি। আগে এই কথাগুলো ব্লগে লিখেছিলাম কিনা চেক করা হয় নাই, তবে মনে হলো এখন লিখে না রাখলে আর কোনোদিন মনে করতে পারবো না !

গান দিয়েই লেখটা শেষ করা দরকার।

Baby, I love you
But if you wanna leave, take good care,
Hope you make a lot of nice friends out there
But just remember there's a lot of bad and beware...



নূরে আলম
অক্টোবর ৩, ২০১২।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা