বেশ ক'দিন হলো ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নিচ্ছি। ক'দিন মানে মোটামুটিভাবে এই সিমেস্টারের শুরু থেকে। এতে আমার বেশ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে। একটা ক্লাস শেষে পরবর্তী ক্লাস কিভাবে নিলে আরও ইফেক্টিভ হবে, তা চিন্তা করেছি। প্রশ্ন / নোট তৈরীর সময় স্টুডেন্ট সাইকোলজি নিয়েও একটু ভেবেছি।
শিক্ষকতার মাঝে আনন্দ আছে। কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ারিং দুনিয়ায় সত্যিকারের কাজ না করলে যেনো কিছুই করা হয় না -- এমন ধারণা অনেকের। আমারও অনুভুতি অনেকটা তেমনই। কিন্তু মানুষকে পড়ানোর মাঝেও অনেক আনন্দ ! খুব ভালোভাবে কাউকে কিছু বুঝাতে পারলে ভালোই লাগে !
আমাদের স্কুল অব সায়েন্সের ডিন একরাম স্যার অত্যন্ত অভিজ্ঞ ব্যক্তি। পরীক্ষার খাতা দেখে উনি এভাবে বলে দিতে পারেন -- অমুকের খাতা দেখেছে অমুক, আর তারটা থেকে দেখেছে এ। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা মানুষের সাইকোলজি বোঝেন সহজে।
নিতান্তই অ-ভালো ছাত্র ছাড়া আর সবারই হয়তো এমন অভিজ্ঞতা আছে যে টিচার সারাটা ক্লাস তার দিকে তাকিয়েই পড়া বুঝিয়েছে। এমন হলে একটু অস্বস্তি লাগে। Integral Calculus ক্লাসটা ছাড়া মোটামুটি অন্যান্য ক্লাসে স্যার আমার দিকে তাকিয়ে পড়া বুঝান প্রায়ই।
এখন, যখন আমি নিজে টিচারের টেবিলে দাঁড়িয়ে পড়া বুঝাচ্ছি, খেয়াল করলাম আমি নিজেও একই কাজ করছি।
সেদিন ক্লাস শেষে চিন্তা করলাম, কেনো আমি বিশেষভাবে দু-একজন, কিংবা একজনের দিকেই বারবার তাকাচ্ছি, পড়া বুঝানোর সময় ?
বেশ খানিক চিন্তা করার পর বুঝলাম -- আসলে যে ছাত্র ভালো রেসপন্স করে, তাকে টিচাররা পছন্দ করে ফেলে !
এতে করে শুধু ক্লাসেই ঐ ছাত্রের সাথে শিক্ষকের আলাদা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমন সম্পর্কের দু-জন মানুষ পরস্পরের সাইকোলজি সহজে ধরতে পারে, কারণটা বোধহয় এখানে ভাবের আদান প্রদান হয় অনেকটাই চোখের ইশারায়।
এতে করে শুধু ক্লাসেই ঐ ছাত্রের সাথে শিক্ষকের আলাদা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমন সম্পর্কের দু-জন মানুষ পরস্পরের সাইকোলজি সহজে ধরতে পারে, কারণটা বোধহয় এখানে ভাবের আদান প্রদান হয় অনেকটাই চোখের ইশারায়।
সর্বশেষ ক্লাসে আমার ঠিক সামনে বসে এক ছেলে ঘুমিয়ে গিয়েছে। আমি বোর্ডের দিকে ফিরতে ফিরতে বললাম, "না বুঝলে আমাকে বলবেন। একজন দেখছি ঘুমিয়ে গিয়েছে।"
ক্লাসে যখন কোনো ছাত্র ঘুমায়, তখন সে তার সেন্সরিং সিস্টেমকে বলে রাখে, ঘুম সংক্রান্ত শব্দ শুনলে জাগিয়ে দিেত। তাই ছেলেটা জেগে উঠলো।
এক ছাত্রীকে খেয়াল করেছি দেড় - দু-ঘন্টার ক্লাসের শেষটায় প্রথম আলো ব্রাউজ করতে। সেদিন ক্লাস শুরু করেই Hub এর পাওয়ার প্লাগটা খুলে দিলাম। কেউ কেউ মনক্ষুণ্ণ হলো বলে মনে হলো।
গত ক্লাসটা চলাকালীন সময়ে হঠাৎ দেখি যীনাত দরজা ঠেলে উঁকি দিচ্ছে। "আমি একটু আসছি", বলে বাইরে গিয়ে বললাম, কী ব্যাপার ? এক কাজিনকে নিয়ে সে আমাদের ইউনিভার্সিটি দেখতে এসেছে। "ক্লাস করি ?" আমি বললাম, "না, বুঝবে না। দরকার নাই।"
"তুই একটু ব্রেক দিস। নাহলে স্টুডেন্টরা সব মরে যাবে।"
আমার পড়া বুঝানোয় নাকি ছাত্রদের মরার মত অবস্থা হয় !
কী জানি। তবে, আমি যখন সাজিদকে ইংরেজী পড়াই, তখন মনেই হয় না যে কিছু পড়ালাম। শুধু মনে হয় গল্পই করলাম বেশি।
আমি ছোটবেলায় চশমা পরতাম। পরে বোধহয় ঠিক হয়ে যাওয়ায় আর চশমা লাগে নি। কিন্তু আমার চশমা পরা মানুষদেরকে কেনো যেনো ভালো লাগে। চশমা বোধহয় এমনটা বুঝায় যে -- আমি পড়াশুনা করি অনেক ! কিংবা -- ।
বুঝেছি। চশমা থাকার কারণে চোখের এক্সপ্রেশান ভালোমত বোঝা যায় না। তখন স্বাভাবিকভাবেই জানার আগ্রহটা বেড়ে যায়।
এই তত্ত্বটা এইমাত্র ভেবে বের করলাম। এটা সত্য-মিথ্য যা-ই হোক না কেনো, এ ব্যাপারটা সত্য যে কোনো মানুষ যখন নিজেকে খোলসে ঢেকে রাখে, তখন মানুষ তাকে উন্মোচন করতে আগ্রহী হয় ! অর্থাৎ অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষের প্রতি সবার একটা সাধারণ আগ্রহ থাকে।
এখন আবার মনে হচ্ছে এই তত্ত্বটাও ভুল হতে পারে।
সে যাক। চশমা পরা ভালো। যারা চশমা পরে, তাদেরকে বলছি -- চশমা-ই পরুন। ল্যাসিক-ট্যাসিক করানোর দরকার নেই। চশমা একটা সুন্দর জিনিস।
আমার ক্লাসের CSE-214 ছেলেটার অনেক চুল পাকা। সে সুন্দর করে মেহেদী দিয়ে রাঙিয়ে রাখে। আবার বলে, "এ হলো অভিজ্ঞতার ছাপ।"
আমার চুল পাকা নেই। তবে চুল কমে যাচ্ছে। টাক পড়লে নাকি বিয়ে হয় না। :p
অনেকদিন পর একটা ব্লগ লিখে বেশ ভালো লাগছে।
আমি এখন কী শুনছি ?
Cat Stevens এর Wild World গানটা। এই গানটার সাথে আমার বেশ কিছু কাতর স্মৃতি আছে, অনেকদিন পর নিঃশব্দ রাতে যখন শুনছি, তখন সেই স্মৃতিগুলো জেগে উঠতে চাইছে।
মানুষ কিছুতেই কোনো স্মৃতিকে জেগে উঠা থেকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ নাকে কোনো একটা পারফিউম ভেসে আসে, সেই সাথে কোত্থেকে শত শত মাইল নিউরন পেরিয়ে এক-একটা স্মৃতি জেগে ওঠে।
কোনো কোনো মানুষের হাঁটার ভঙ্গি খুব চেনা মনে হয়। কারো কণ্ঠস্বর খুব পরিচিত লাগে।
আর এলোমেলো স্মৃতিচারণের গানগুলো যখন অনেকদিন পর আবার শোনা হয়, তখন এমনি করে কাতর স্মৃতিরা জেগে ওঠে।
স্মৃতিরা পুরনো হয়ে গেলেই তারা কাতর-স্মৃতি হয়ে যায়।
অন্তত আমার কাছে তো তাই মনে হয়।
নূরে আলম,
এপ্রিল ২১, ২০১২।
পুরো লেখাই মোটামুটি ভাল লেগেছে....
উত্তরমুছুনশেষের প্যারাটা এভাবে উল্লেখ করার পেছনে কি কোন রহস্য আছে!!! কার হাটা ভঙ্গি আজও লেখককে তাড়া করে ফেরে সেটা ভেবে দেখার বিষয়। :)
লেখকে তাড়া করে ফেরে না কিছুই। কোনো গোপন রহস্য নাই। পারফিউমের কথা জিগাইলা না ?
মুছুন