সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

UNTITLED-8

বেশ ক'দিন হলো ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নিচ্ছি। ক'দিন মানে মোটামুটিভাবে এই সিমেস্টারের শুরু থেকে। এতে আমার বেশ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে। একটা ক্লাস শেষে পরবর্তী ক্লাস কিভাবে নিলে আরও ইফেক্টিভ হবে, তা চিন্তা করেছি। প্রশ্ন / নোট তৈরীর সময় স্টুডেন্ট সাইকোলজি নিয়েও একটু ভেবেছি।

শিক্ষকতার মাঝে আনন্দ আছে। কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ারিং দুনিয়ায় সত্যিকারের কাজ না করলে যেনো কিছুই করা হয় না -- এমন ধারণা অনেকের। আমারও অনুভুতি অনেকটা তেমনই। কিন্তু মানুষকে পড়ানোর মাঝেও অনেক আনন্দ ! খুব ভালোভাবে কাউকে কিছু বুঝাতে পারলে ভালোই লাগে !

আমাদের স্কুল অব সায়েন্সের ডিন একরাম স্যার অত্যন্ত অভিজ্ঞ ব্যক্তি। পরীক্ষার খাতা দেখে উনি এভাবে বলে দিতে পারেন -- অমুকের খাতা দেখেছে অমুক, আর তারটা থেকে দেখেছে এ। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা মানুষের সাইকোলজি বোঝেন সহজে।

নিতান্তই অ-ভালো ছাত্র ছাড়া আর সবারই হয়তো এমন অভিজ্ঞতা আছে যে টিচার সারাটা ক্লাস তার দিকে তাকিয়েই পড়া বুঝিয়েছে। এমন হলে একটু অস্বস্তি লাগে। Integral Calculus ক্লাসটা ছাড়া মোটামুটি অন্যান্য ক্লাসে স্যার আমার দিকে তাকিয়ে পড়া বুঝান প্রায়ই।
এখন, যখন আমি নিজে টিচারের টেবিলে দাঁড়িয়ে পড়া বুঝাচ্ছি, খেয়াল করলাম আমি নিজেও একই কাজ করছি।
সেদিন ক্লাস শেষে চিন্তা করলাম, কেনো আমি বিশেষভাবে দু-একজন, কিংবা একজনের দিকেই বারবার তাকাচ্ছি, পড়া বুঝানোর সময় ?
বেশ খানিক চিন্তা করার পর বুঝলাম -- আসলে যে ছাত্র ভালো রেসপন্স করে, তাকে টিচাররা পছন্দ করে ফেলে !
এতে করে শুধু ক্লাসেই ঐ ছাত্রের সাথে শিক্ষকের আলাদা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমন সম্পর্কের দু-জন মানুষ পরস্পরের সাইকোলজি সহজে ধরতে পারে, কারণটা বোধহয় এখানে ভাবের আদান প্রদান হয় অনেকটাই চোখের ইশারায়।
তবে চশমা এর মাঝে একটু বাধা -- প্রায়ই আলো রিফ্লেক্ট করে বলে চোখটা ভালো বোঝা যায় না ! :p


সর্বশেষ ক্লাসে আমার ঠিক সামনে বসে এক ছেলে ঘুমিয়ে গিয়েছে। আমি বোর্ডের দিকে ফিরতে ফিরতে বললাম, "না বুঝলে আমাকে বলবেন। একজন দেখছি ঘুমিয়ে গিয়েছে।"
ক্লাসে যখন কোনো ছাত্র ঘুমায়, তখন সে তার সেন্সরিং সিস্টেমকে বলে রাখে, ঘুম সংক্রান্ত শব্দ শুনলে জাগিয়ে দিেত। তাই ছেলেটা জেগে উঠলো।

এক ছাত্রীকে খেয়াল করেছি দেড় - দু-ঘন্টার ক্লাসের শেষটায় প্রথম আলো ব্রাউজ করতে। সেদিন ক্লাস শুরু করেই Hub এর পাওয়ার প্লাগটা খুলে দিলাম। কেউ কেউ মনক্ষুণ্ণ হলো বলে মনে হলো।

গত ক্লাসটা চলাকালীন সময়ে হঠাৎ দেখি যীনাত দরজা ঠেলে উঁকি দিচ্ছে। "আমি একটু আসছি", বলে বাইরে গিয়ে বললাম, কী ব্যাপার ? এক কাজিনকে নিয়ে সে আমাদের ইউনিভার্সিটি দেখতে এসেছে। "ক্লাস করি ?" আমি বললাম, "না, বুঝবে না। দরকার নাই।"
"তুই একটু ব্রেক দিস। নাহলে স্টুডেন্টরা সব মরে যাবে।"
আমার পড়া বুঝানোয় নাকি ছাত্রদের মরার মত অবস্থা হয় !
কী জানি। তবে, আমি যখন সাজিদকে ইংরেজী পড়াই, তখন মনেই হয় না যে কিছু পড়ালাম। শুধু মনে হয় গল্পই করলাম বেশি।

আমি ছোটবেলায় চশমা পরতাম। পরে বোধহয় ঠিক হয়ে যাওয়ায় আর চশমা লাগে নি। কিন্তু আমার চশমা পরা মানুষদেরকে কেনো যেনো ভালো লাগে। চশমা বোধহয় এমনটা বুঝায় যে -- আমি পড়াশুনা করি অনেক ! কিংবা -- ।
বুঝেছি। চশমা থাকার কারণে চোখের এক্সপ্রেশান ভালোমত বোঝা যায় না। তখন স্বাভাবিকভাবেই জানার আগ্রহটা বেড়ে যায়।
এই তত্ত্বটা এইমাত্র ভেবে বের করলাম। এটা সত্য-মিথ্য যা-ই হোক না কেনো, এ ব্যাপারটা সত্য যে কোনো মানুষ যখন নিজেকে খোলসে ঢেকে রাখে, তখন মানুষ তাকে উন্মোচন করতে আগ্রহী হয় ! অর্থাৎ অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষের প্রতি সবার একটা সাধারণ আগ্রহ থাকে।
এখন আবার মনে হচ্ছে এই তত্ত্বটাও ভুল হতে পারে।

সে যাক। চশমা পরা ভালো। যারা চশমা পরে, তাদেরকে বলছি -- চশমা-ই পরুন। ল্যাসিক-ট্যাসিক করানোর দরকার নেই। চশমা একটা সুন্দর জিনিস।

আমার ক্লাসের CSE-214 ছেলেটার অনেক চুল পাকা। সে সুন্দর করে মেহেদী দিয়ে রাঙিয়ে রাখে। আবার বলে, "এ হলো অভিজ্ঞতার ছাপ।"
আমার চুল পাকা নেই। তবে চুল কমে যাচ্ছে। টাক পড়লে নাকি বিয়ে হয় না। :p


অনেকদিন পর একটা ব্লগ লিখে বেশ ভালো লাগছে।
আমি এখন কী শুনছি ?

Cat Stevens এর Wild World গানটা। এই গানটার সাথে আমার বেশ কিছু কাতর স্মৃতি আছে, অনেকদিন পর নিঃশব্দ রাতে যখন শুনছি, তখন সেই স্মৃতিগুলো জেগে উঠতে চাইছে।
মানুষ কিছুতেই কোনো স্মৃতিকে জেগে উঠা থেকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ নাকে কোনো একটা পারফিউম ভেসে আসে, সেই সাথে কোত্থেকে শত শত মাইল নিউরন পেরিয়ে এক-একটা স্মৃতি জেগে ওঠে।
কোনো কোনো মানুষের হাঁটার ভঙ্গি খুব চেনা মনে হয়। কারো কণ্ঠস্বর খুব পরিচিত লাগে।
আর এলোমেলো স্মৃতিচারণের গানগুলো যখন অনেকদিন পর আবার শোনা হয়, তখন এমনি করে কাতর স্মৃতিরা জেগে ওঠে।
স্মৃতিরা পুরনো হয়ে গেলেই তারা কাতর-স্মৃতি হয়ে যায়।


অন্তত আমার কাছে তো তাই মনে হয়।



নূরে আলম,
এপ্রিল ২১, ২০১২।

মন্তব্যসমূহ

  1. পুরো লেখাই মোটামুটি ভাল লেগেছে....
    শেষের প্যারাটা এভাবে উল্লেখ করার পেছনে কি কোন রহস্য আছে!!! কার হাটা ভঙ্গি আজও লেখককে তাড়া করে ফেরে সেটা ভেবে দেখার বিষয়। :)

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. লেখকে তাড়া করে ফেরে না কিছুই। কোনো গোপন রহস্য নাই। পারফিউমের কথা জিগাইলা না ?

      মুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[ব্লগে কমেন্ট পোস্ট করার পরও যদি না দেখায়, তাহলে দ্বিতীয়বার পোস্ট করার প্রয়োজন নেই। খুব সম্ভবত স্প্যাম গার্ড সেটাকে সরিয়ে নিয়েছে, আমি পাবলিশ করে দেবো।]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা