সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Don't Settle

কিছুদিন আগে এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম। তার বোন এবার এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছে। সরকারি ইউনিভার্সিটিগুলোতে পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে, আবার প্রাইভেটে ভর্তি হবার চিন্তাও করছে। আমি তার সাথে দু-চারটা কথা বললাম।
"আব্বু চেয়েছিলো ডাক্তার হবো।"
"আপু বলছে ফার্মাসিতে পড়তে।" ..... এইসব কথা। আমি বললাম, "তুমি কী পড়তে চাও ?" সে -- "ঠিক জানে না" কী নিয়ে পড়বে। তখন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্টিভ জবসের দেয়া সেই কথাটা মনে ding দিয়ে গেলো - Don't settle. Keep looking for it.... আমি বললাম, "Don't live anyone else's life."
হয়তো সে-ও একসময় "কিছু একটা" হবার স্বপ্ন দেখত...। সময় আর বাস্তবতা সেই স্বপ্নগুলোকে প্রথমে মনের আড়াল করেছে, পরে মেরে ফেলেছে। এখন হয়ত তার দূরতম স্মৃতিতেও সেই স্বপ্নগুলো নেই...।

আজ হঠাৎই সেই দিনটার কথা মনে করে ভাবলাম- "আরে, তাইতো ! আমিও একসময় স্বপ্ন দেখতাম !" সময় এখন আর সেই না-হবার-স্বপ্নগুলোর কথা ভাববার অবকাশ দেয় না। আজ কিভাবে যেনো বেশ খানিকটা অলস সময় পেয়ে মন সেই পুরনো ভাবনাগুলোকে তুলে এনেছে। আজ না লিখলে হয়ত আর কখনোই লেখা হবে না, হয়ত বন্ধুর সেই বোনের মত করেই সেগুলো মনের আড়ালে থেকে থেকে একসময় ধুলোচাপা পড়ে মারা যাবে !

আমি খুব সহজে অতীতের কথা ভুলে যাই -- একদম ছোটবেলায় কী হতে চেয়েছিলাম, তা এখন মনে নেই। হয়ত আব্বু-আম্মু কিংবা বড় ভাই-বোন বলতে পারবে। "বড় হয়ে কী হবে ?" -- বড়দের করা এই প্রশ্নের কী উত্তর দিতাম কে জানে ! তবে যদ্দুর মনে পড়ে, আমি "সমাজ-সেবক" হতে চেয়েছিলাম। যখন থেকে একটু বুদ্ধি হলো, আর দেখলাম, মানুষের জন্য কাজ করাটা কী গৌরবের ব্যাপার, তখন থেকে খুব মন চাইত মানুষের জন্য কাজ করতে।
এই ইচ্ছাটার শুরু হয়েছিলো কোথায় ? হয়ত আরো আগে -- কিন্তু আমার মন যতটুকু মনে রেখেছে, তাতে সেটা ছিলো কোনো এক বিকেল। ছোট্ট প্রাইভেট কারটা ফেরিতে উঠেছে কেবল। গাড়ির দরজা খোলার শিশুসুলভ আগ্রহ চোখেমুখে নিয়ে গাড়িটা পুরোপুরি থামার অপেক্ষা করছিলাম। এক পুলিশ এসে দরজা খুলে দিলো। তক্ষুনি আমার মনে হলো- সাংসদ হবো !
তারপর থেকে আরো অনেকবার এমন দৃশ্য দেখা হয়েছে। কিংবা যখন "সিল দেয়া" গাড়িতে মহানন্দে "সামনের সিট" -এ বসে যেতে যেতে "বি.রোড" এ ঢোকার সময় স্যালুট পেতাম (আসলে স্যালুট পেত ঐ লাল-হলুদ সিলটা), তখন আর তর সইত না-- কবে আমি ঐ মানুষটির মত হবো ! কবে নিজের গাড়িতে করে যাবার সময় এমন করে স্যালুট পাবো; কিংবা -- সাধারণ মানুষের সালামের জবাব দেবার জন্য জানালার গ্লাসটা নামাবো !
মনে মনে কত কী পরিকল্পনা-ই না করে ফেলতাম। মাত্র কয়েক মিনিটের চিন্তায় ছক কেটে ফেলতাম -- কিভাবে কী করতে হবে। ব্যস, এখন শুধু পরিকল্পনা মত জীবন যাপন করা বাকি !

কিন্তু আমার সেই স্বপ্নটা মনের মধ্যে খুব গোপন করে রেখেছিলাম। প্রকাশ করামাত্র -- "সর্ব্বোনাশ ! এর মাথায় তো ভাইরাস ঢুকেছে !", এমন চেহারা করে ভাই-বোন কিংবা আম্মুর সেই ভুত তাড়ানোর প্রক্রিয়ার কথা চিন্তা করে ভয়েই আর কখনো বলা হয়ে ওঠে নি। এখন সেই ভুত তো নেমেছেই, বরং এর অনেকটা reverse-ভুত ঢুকেছে মাথায়। সুতরাং, এখন নিশ্চিন্তে সেই "বোকা-বোকা ভাবনাগুলোর" কথা বলা যায়।

আমার "স্বপ্নের" একটা বড় অংশ জুড়ে ছিলো শুধু এই-ই। ছোটবেলার অনেকটা সময় এই স্বপ্ন নিয়ে পার করলাম।

তারপর একটা সময় কোনো এক সুন্দর চেহারা দেখে তার সাথে সংসারটা কতখানি সুন্দর হবে, আর সেই সংসারটা কিভাবে গুছাতে হবে, সেই স্বপ্নে পার করলাম। "আম্মু, আমাকে এমন একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দেবেন, যে কালো ছেলেকে পছন্দ করে।" হা হা হা... সেই সুন্দর চেহারা "কালো ছেলে" কে পছন্দ করত কিনা কে জানে !

তারপর আরো অনেকগুলো দিন পার হয়ে গেলো। সংসার ভেঙে দিয়ে (!) রাজনীতি নিয়ে আবারো পড়লাম। তার সাথে নতুন যোগ হলো ইসলাম-ভাবনা। স্বপ্নে আমি অনেক বড় ইসলামিক স্কলার হয়ে গেলাম -- বড় বড় জায়গায় অনেক বক্তৃতা দিয়ে ফেললাম, পত্র-পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিলাম, আরো কত কী !

এরপর বছর খানেক স্বপ্নবিহীন জীবন যাপন করলাম। তখন কোনো স্বপ্ন ছাড়াই দিন পার করতাম -- প্রতিদিনকার দিন যাপন করতাম।

এরপর জীবনে বেশ বড় একটা পরিবর্তন আসলো। আমি নিজের "ধরণ" বদলে ফেললাম। ইংলিশে যাকে বলে- type। সময়টা এমন হয়ে গেলো যে আমি আর আমার স্বপ্ন পরিবর্তন করছি না -- দায়িত্বটা 'নৈতিকতা' আর 'বিবেক' নিয়ে নিলো। খুবই নিশ্চিন্ত দিন ছিলো সেগুলো।

ও হ্যাঁ, এর মাঝে একবার বড় মাপের জ্যোতিষী হবার স্বপ্নও দেখেছিলাম। সেটা ছিলো ঐ -- । বলব, কীসের আগে ? নাহ, তাহলে যীনাত অনেক যোগ-বিয়োগ হিসেব করে tease করে আমার জীবন যন্ত্রণা করে দেবে !

যাহোক, যা বলছিলাম। এরপরে, অর্থাৎ সেই "বড় ধরণের পরিবর্তন" এর পর কয়েকটা দিন কিংবা বছর পেরোলো। আমি মানুষের মন নিয়ে পড়লাম। এই নিয়ে স্বপ্নটা 'ক্যারিয়ার' এর স্বপ্ন ছিলো না, এটা ছিলো অন্যরকম স্বপ্ন। ভালোবাসার স্বপ্ন।
এই স্বপ্নে অনেকটা সময় কেটে গেলো। এই স্বপ্ন আমার মাথায় চিন্তার ঝড় তুলে দিলো। এই স্বপ্ন কিন্তু কোনো বিশেষ মানুষের ভালোবাসা পাবার স্বপ্ন ছিলো না, এটা ছিলো 'অন্যকিছু'।

বেশ ক'দিন হলো সেই স্বপ্নটিকে মাটিতে আছড়িয়ে তার জান বের করে দিয়েছি। আর সেই ক্লাস নাইনে দেখা স্বপ্নটাই বাস্তবায়ন করে চলেছি -- এঞ্জিনিয়ার হচ্ছি - কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ার। আমি জানি এটাই আমার জন্যে, আমার এ-ই হতে হবে। আমাকে কারো কাছ থেকে শুনতে হবে না-- If you haven't found it yet, keep looking for it. Don't settle.

...................................

I have found my way.
তবুও, এরপরেও কিছু 'কিন্তু' থেকে যায়...। কিন্তু সে গল্প আজকের জন্য নয়।


নূরে আলম,
অক্টোবর ১৯, ২০১১।

মন্তব্যসমূহ

  1. লেখাটা যতটা ভাল হতে পারত ঠিক ততটা ভাল হয়েছে বলে মনে হল না।

    উত্তরমুছুন
  2. :( ভালো না হলে কিছু করার নাই।

    উত্তরমুছুন
  3. আমি অন্যের জীবনকেও ধারণ করিনা। সময় যেদিকে গড়িয়ে চলে, আমি সেদিকেই গড়াই। আমার পছন্দ বলে কিছু করিনা, কোন চ্যালেঞ্জে যাইনা। আমার স্বপ্ন নেই। আমার হয়ত কোনদিন কোন 'ইচ্ছে' ছিলো। ভেবেও দেখিনা এখন। আমি অনেক কিছুই কেবল কিছু মানুষের জন্য বরাদ্দ বলে বিশ্বাস করি। কিছু জিনিস, কিছু শব্দ, কিছু অনুভূতি সবার জন্য না

    উত্তরমুছুন
  4. হ হ হ ??? ও, ও, ও :(
    @স্বপ্নচারী, সময় যেদিকে গড়িয়ে চলে, আপনি সেদিকে গড়ান ? গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসার মাঝে যেমন কিছুই নেই, তেমনি, আমার মতে, এইভাবে সময়ের সাথে গড়ানোর মাঝেও কিছু নেই। আপনি হয়ত খারাপ দিকে যান না, কিন্তু কিছু করেনও না !
    নিতান্তই সাধারণ জীবন-যাপন ? মনের চাহিদা পূরণ হয় না।

    উত্তরমুছুন
  5. হ ভাই।
    আমার ঠিক এই দৃষ্টিভঙ্গিটাকে যাতে "অবাস্তব দর্শন" হিসেবে মনে করি আমি, তার জন্য তো আমার ফ্যামিলি কম পেইন নেয় নাই। এখন মনে হচ্ছে স্টিভ জবস একই কথা বলায় কথাটার দাম বেড়েছে।
    দু:খটা ওইখানেই।

    উত্তরমুছুন
  6. স্টিভ জবস আর আমাদের কনটেক্সট অবশ্যই আলাদা।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[ব্লগে কমেন্ট পোস্ট করার পরও যদি না দেখায়, তাহলে দ্বিতীয়বার পোস্ট করার প্রয়োজন নেই। খুব সম্ভবত স্প্যাম গার্ড সেটাকে সরিয়ে নিয়েছে, আমি পাবলিশ করে দেবো।]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা