অনেকদিন ব্লগ লেখা হচ্ছে না। আমি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম নাকি আবার ? নিজেকে ব্যস্ত ভাবতে ইচ্ছা হয় না। মনে হয়, আমি যেনো কখনোই ব্যস্ত না হই। প্রতিদিনই যেনো ব্লগ লেখার জন্যে একটু করে সময় থেকে যায়।
কিন্তু তা আর হয় না। সেই চার তারিখের পর, আজ রাত বারোটা দশে প্রোগ্রামিং বই আর আইডিই ক্লোজ করে ভাবলাম- ঘুমাতে যাবার আগে একটা গান শুনে যাই।
প্রথমে প্লে করলাম Beethoven's Ode to Joy, তারপর প্লে করলাম 9th Symphony, তারপর দেখি B দিয়ে যত গানের তালিকায় আইয়ুব বাচ্চুর "বেলা শেষে" গানটা।
এমনিতেই গান শোনা হয় না, তার 'পর আবার আইয়ুব বাচ্চু- যে কিনা আর এখনকার যুগের নয়- কিন্তু গানটা শুনতে শুনতে মনে হল- সাহস করে আরেকটু রাত জেগে একটা ব্লগ নাহয় লিখেই ফেলি !
কম্পিউটার কেনা হলো আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি। তখন থেকে গান শোনার মিডিয়া হয়ে গেলো এই পিসি, কিন্তু গান শুনতাম আরো ছোটোবেলা থেকে। যখন গানের কিছুই বুঝতাম না, কথার অর্থও না, তখনও শুধু সুরের জন্যই শুনতাম। একটা বিশাল বড় ক্যাসেট প্লেয়ার ছিলো আমাদের। একেবারে ছোটোবেলা থেকেই সেটায় রেডিও শোনা কিংবা দু-চারটা ক্যাসেট শোনা হত। বাংলা গানই শোনা হত, হিন্দি গানের দু-একটা ছিলো বোধহয়। কথাগুলো কিছুই বুঝতাম না (অবশ্যই বাংলা গানের কথা, কারণ হিন্দি এখনও বুঝি না), তবুও শুনে যেতাম। আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, হাসান, আরো কে কে যেনো ছিলো, খেয়াল নেই। আমি আর বড়াপু পছন্দ করতাম হাসানের গান। ভাইয়া আর সেজাপু জেমস-এর। মেজাপু আর যীনাত ছিল মাইলস এর ভক্ত। হিন্দি কিছু শোনা হলেও সেগুলো খুব একটা পাত্তা পেতো না।
প্রথম ইংলিশ গান শোনা হলো মাইকেল জ্যাকসনের গান দিয়ে। কোন গানটা, তা এখন ঠিক মনে পড়ছে না। খুব সম্ভব Beat It। মাঝে মাঝে রেডিওতে গান শোনা হত- কী যেনো একটা চ্যানেল ছিলো...। বেলা তিনটার দিকে হতো। আমি বিকেল পাঁচটায় স্কুল থেকে ফিরে যীনাত আর মেজাপুর মুখে (কারণ তাদের স্কুল আগেই শেষ হয়ে যেতো) নতুন গান শুনে বিরক্ত হতাম। প্রতিদিন বিকেলে নতুন নতুন গান- আর আমি সপ্তাহে দুইদিন ছাড়া বাকি সব দিনই মিস করতাম ! মেট্রো ওয়েভ না কী যেনো একটা নাম ছিলো অনুষ্ঠানটার।
একসময় মানুষের বাসায় আরেকটা আধুনিক মিডিয়া এলো- সিডি প্লেয়ার। আমরা কিন্তু তখনও সেই পুরনো ক্যাসেট প্লেয়ারে নানাভাবে কাগজ, সুঁই ইত্যাদি দিয়ে তার প্রাণ বাঁচিয়ে রেখে গান শুনতাম ! কিংবা, রেডিও স্টেশন যখন কোনমতেই ধরা যেতো না, তখন কাগজ দুইপাশ থেকে ঠেসে দিয়ে মেট্রো ওয়েভ, আর রাতের বেলায় আম্মুর জন্য ভোয়া (VOA- Voice of America)।
ভাইয়া মাঝে মাঝে নতুন কিছু গান নিয়ে এলে শুনতাম। আমার মনে আছে, ক্লাস সিক্সের ডায়রিতে একদিন পরিবেশের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছিলাম- "পায়ের কাছে ক্যাসেট প্লেয়ারে বেজে চলেছে..."।
টিভি তো নষ্ট হয়েছিলো আরো আগেই। আর টিভিই কেনা হলো না আমাদের ! ( কেনো যেনো মনে হয় আমি নিজের বাসাতেও কোনো টিভি রাখবো না ! ) ক্যাসেট প্লেয়ারটা অনেক উন্নতমানের ছিলো, সহজে নষ্ট হতে চায় নি, আমরাও দিই নি। প্রথমে সম্ভবত নষ্ট হলো ক্যাসেট প্লেয়ার, তারপরে আরেকদিন রেডিও। মাঝে অনেকদিন খাটের নিচে পড়ে থাকার পর একদিন এমনিতেই কী মনে করে যেনো বের করে চালিয়েছিলাম- ক্যাসেট বেজে ওঠায় আমাদের সেকি আনন্দ ! কিন্তু আবার তার সেই একই অবস্থা... বহুদিন বন্ধ থাকায় কিছুটা প্রাণ সঞ্চয় করেছিলো আরকি !
রেডিওটাও গেলো নষ্ট হয়ে, টিভি তো নেই-ই, আর তখনকার মিডিয়া- সিডি প্লেয়ারও না। এই সময়টা কিছুটা কষ্টেই কেটেছে ! আমরা যারা কম্পিউটারকে নিত্যসঙ্গী করে ফেলেছি, তারা যদি মাসখানেক গান ছাড়া থাকবার চিন্তা করে দেখি, তাহলে কষ্টটা হয়তো কিছুটা বোঝা যাবে !
কয়েকবছর পর কম্পিউটার কেনা হলো। তারপর থেকে সেই যে গান শোনা চলছে, আর থামে নাই... থামার কোনো লক্ষণও নাই... আর ডিজিটাল ডিভাইসের এখন যে অগ্রগতি হয়েছে, তাতে আমরা চাইলেই কি আর গান আমাদের ছাড়ে ? আপনি না চাইলেও প্রতিবেশীরা জোর ভলিউমে আপনােক গান শুনিয়ে দেবে, সেই সাথে bass এর ধুম ধুম- দুর্বল হার্টের মানুষ হলে আপনি শেষ !
এখন তো অনেক ডিভাইসে গান শোনা যায়- ডেস্কটপ পিসি, নোটবুক, নেটবুক, ট্যাবলেট, এমপিথ্রি প্লেয়ার, মোবাইল- আরো কত কী ! গান শোনা বোধহয় আর কোনোদিন থামবে না...
এই ব্লগটা লেখা না হলে হয়তো আর কখনোই এসব গল্প করা হতো না। মানুষ আরাম-আয়েশের সাথে খুব সহজে মিশে যায়...। এখন, যখন চাইলেই Beat It শুনতে পাই, তখন কি আর সেই দিনগুলোর কথা খেয়াল হয়, যখন Beat It মনে মনে গাইতে গাইতে হঠাৎ রাস্তায় কাউকে গানটা বাজাতে শুনলে মনটা খুশিতে ভরে উঠত !
সেই আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, হাসান, মাইলস, আরো কতগুলো নাম, এখন তো সব মনে নেই। তারপর হাবিব, বালাম, অর্ণব। অর্থহীন, শিরোনামহীন...। আসছে আর যাচ্ছে... বিরাম নেই।
লেখা শেষ করতে পারছি না। আপাতত এখানেই থাক।
নূরে আলম
সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১১।
আমি এখনও আইয়ুব বাচ্চু, জেমস আর মাইলস এর গান শুনি। কিছু গান আসলে ভোলা যায়না। আমরা চাইলেও ভুলতে পারিনা। সেদিনও আইয়ুব বাচ্চুর "এখন অনেক রাত......"গানটা শুনেছি।
উত্তরমুছুনলেখাটা পড়ে আমারও অনেক কথা মনে পরে গেল।
রেডিওটার মৃত্যুর ঘটনাটা সযত্নে এড়িয়ে গেলেন যে বড়!
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক কথা মনে হচ্ছে।
আমি এমনিতে বুড়ো মানুষ। ওসব গান ছেড়ে ঝাকানাকা "রুপবানের কোমরের গান" শুনে আধুনিক হতে পারি নি এখনও !
উত্তরমুছুনরেডিওর মৃত্যু ? ওরে...
aha.. amar to mone hoy radio tar mrittu vaijaner hatei ghotechhilo...
উত্তরমুছুনতেব্রো প্রোতিবাদ ! রেডিওটার মৃত্যুর পরে পোস্টমর্টেমটা আরকি... ;)
উত্তরমুছুনকতজন এলো গেলো গানের জগতে! এখন আর কারো ফ্যান হইতে মঞ্চায় না। জেমস, বাচ্চু, হাসানদের প্রতাপময় সময়টার কথা মনে পড়ে মাঝে মাঝে
উত্তরমুছুনসবই একসময় অতীত হয়ে যায়, ম্লান হারিয়ে যায় প্রবল সুন্দরীদের রূপের ঝলকানি :(
হুম... সবই একসময় অতীত হয়ে যায়।
উত্তরমুছুনতবে, রবীন্দ্র-নজরুল এখনও অতীত হতে পারে নি- আমি এখনও শুনি- বাংলা ভাষা যতদিন আছে, মানুষ শুনে যাবে...
ami o akta ক্যাসেট প্লেয়ারটা k mare falsilam... :D
উত্তরমুছুনblog er shironam ta kon vashar shobdo?
উত্তরমুছুনপ্রথম কথা, আপনি আমার ব্লগ পড়িয়াছেন বলিয়া আমি বড়ই আনন্দিত বোধ করছি।
উত্তরমুছুনদ্বিতীয় কথা, আপনার মত সাহিত্যিকের কাছে আমাকে সে উত্তর করিতে হইবে ? ;)
রবীন্দ্র নজরুল আমিও এখনো শুনি কালে ভদ্রে। বাংলা গান শুনলে এই সংগীত বিনা আর কিছু শোনা হয়না বলেই আমার স্মৃতি আমাকে জানাইতেছে :D
উত্তরমুছুন