একটা মানুষের মনে ক’জনকে স্থান দেয়া যায়? গত ক’দিন হল এই চিন্তাটাই মাথায় ধপসিয়ে(অর্থাৎ, ধপাস করে) পড়েছে।
অনেকে বলেন- “ছোট থাকতেই ভালো ছিলাম।” হয়তোবা। আমিও অনেকসময় নিজেকে একথা বলি। ছোট থাকতে ভাবতাম- বড় হলে এই করব, সেই করব, যত জনের উপর মনে রাগ আছে, ঝাল মিটিয়ে নেব, এইসব ;) এখন, যখন কিছুটা বড় হয়েছি, তখন মনে হয়- ছোট থাকতেই ভালো ছিলাম, এত কিছু বুঝতাম না, ঝামেলাও ছিলো না, চিন্তাও ছিল না।
কিন্তু মানুষ বড় হয়ে যায়।
সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের ভালোবাসা সবসময়ই থাকে। জীবনের এক একটা ধাপে এসে সেটা বুঝতে পেরে মানুষ অবাক হয়ে যায়- জীবনটা এত মায়াময়! ভাই-বোনদের মাঝের ভালোবাসাটাও অনেকটা সেরকম। সবসময় প্রকাশ পায় না, কিন্তু মাঝে মাঝে।
ছোট থাকতে এগুলোর কিছুই বুঝতাম না। বরং নানান কারণে আব্বু-আম্মু কিংবা ভাইয়া, বড়াপু, মেজাপুর উপর রাগ হয়ে থাকতাম। মনে হত- এরচেয়ে মামা/খালা কিংবা অমুকই তো ভালো, আমার সাথে ‘এমন’ করে না, আদর করে। কিংবা- “আমি মরে গেলে তখন কেমন লাগবে? হুঁহ, তখন আমার কথা মনে করে কান্না করা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।”
একটা বাচ্চা সবার মনে স্থান করে নেয় খুব সহজে, খুব দৃঢ়ভাবে। কিন্তু কাউকে মনে স্থান দিতে শেখে না। একটু একটু করে যখন বড় হতে থাকে, তখন হঠাৎ হঠাৎই ভালোবাসার মঙ্গল প্রদীপগুলো আবিষ্কার করে বিস্মিত হয়ে যায়। তারপর নিজের অজান্তে তাকে মনে স্থান দিয়ে দেয়! তখন শত অভিযোগ-অনুযোগ, সবকিছু একহাতে ঠেলে সরিয়ে আরেকহাতে তাকে তুলে আনে, মনের মাঝে কোন একটা সুন্দর কোঠায় বসিয়ে দেয়।
টিন-এজার একটা ছেলে বা মেয়ে যখন কোন মেয়ে/ছেলেকে ভালোবেসে ফেলে, তখন কিন্তু ঐসব মঙ্গল প্রদীপকে ভুলে যায় খুব সহজে। ভাবে, ওকেই আমি সারাজীবন ভালোবাসবো, যত ভালোবাসা ওর কাছেই পাব- এই মানুষটিকে সাথে নিয়েই আমি সারাজীবন পার করে দেব নিশ্চিন্তে। তীব্র আবেগের বশে কয়েক মিনিটের চিন্তায় সারাজীবনের ছক কেটে ফেলে- “এখন শুধু জীবনটা যাপন করাটা বাকী!” ঐ মানুষটির একটা মূর্তি এনে তখন মনের মাঝের আরেক কোঠায় বসিয়ে দেয়- “এইতো আমার মনের মণিকোঠা। এখানে আর কেউ আসবে না, সারাজীবন এমনি অটুট থাকবে।”
আরেকটু বড় হবার পর ভাবে- “ধুর, কী ছেলেমানুষিটাই না করেছিলাম ওকে ভালোবেসে। আসলে ঐটা কোন ভালোবাসাই ছিল না!” তারপর সামনে এগোতে থাকে।
একসময় হঠাৎ খেয়াল করে- একটা ছেলে/মেয়েকে ছাড়াও আরো কাউকে ভালোবাসা যায়, সেটা হল বন্ধু। তারপর মানুষ বন্ধুকে ভালোবাসে। তার একটা মূর্তি এনে রাখে মনের মাঝে। চোখ বন্ধ করে সেই চেহারাটা কল্পনা করে সুখে ভাসে।
কী আশ্চর্য! মনের মাঝে মানুষকে স্থান দেবার মত জায়গার অভাব হয় না। হয়তো আমরা ভুলে যাই মঙ্গল প্রদীপগুলোকে। তারা কিন্তু তখনও মনের চমৎকার সব চিলেকোঠায় বসে আলো দিতে থাকে.....। সে আলোর শক্তিতেই মানুষ এগিয়ে যায়, আরো কাউকে মনের মাঝে এনে বসায়।
মানুষ প্রায়ই একটা ভুল করে- নতুন কাউকে মনে স্থান দেবার পর আগের মানুষগুলোর কথা ভুলে যায়- “আর কেউ কি কখনো আমার মনের মাঝে ছিল?” নবাগত মূর্তিকে ঘষে-মেজে চকচকে করে রাখে প্রতিদিন। মঙ্গল প্রদীপগুলো কিন্তু তখনও আলো দিতে থাকে। হয়তো তার গায়ে ধুলো জমে। কিন্তু কখনোই মানুষ তাদের মন থেকে সরাতে পারে না। মানুষ একবার যখন কাউকে ভালোবেসে ফেলে, তার জন্যে মনে একটা অটুট স্থান তৈরী হয়ে যায়। এ স্থানের ধ্বংস নেই। হয়তো বিস্মৃতি আছে। কিন্তু ধ্বংস নেই।
মাঝে মাঝে যখন মনে হয়, আমি কাউকে ভালোবাসি না, কেউ আমাকে ভালোবাসে না, কাউকে আমার দরকার নেই, তখন মানুষ কিছুটা অলস সময় পেয়ে যায়, তাই না?
মনের দূর্গটার আর্চওয়ে দিয়ে এলোমেলো পায়ে হাঁটতে থাকে তখন। এখান থেকে সেখানে। তারপর আবার নতুন করে আবিষ্কারের আনন্দ- না, মূর্তিগুলো চলে যায়নি। মঙ্গল প্রদীপগুলো তেমনি আছে- একতরফাভাবে আলো দিয়ে যাচ্ছে।
আবার তার ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এঘর-ওঘর ঘুরে ধুলো ঝাড়ে। মূর্তিগুলোকে ঘষে-মেজে চকচকে করে তোলে নতুন করে। শুধু থমকে যায় প্রদীপগুলোর কাছে এসে- তারা অবিরাম আলো দিয়ে যাচ্ছে, সে শক্তির অভাব নেই তাদের। প্রদীপগুলোর কাছে এত দায়বদ্ধতা, কিন্তু তবু তাদের আলো দেবার বিরাম নেই। তারা কিছুই চায় না- না জ্বালানী, না গায়ে জমা ধুলো পরিষ্কার করে দেয়া।
“তুমি, তোমরা এত ভালো কেন?”
তারপর সে নিজেও প্রদীপ হতে শেখে। শত দূর্গ আলোকিত করে একাই। চমৎকার দেখতে সে মঙ্গল প্রদীপ। নিখুঁতভাবে গড়া, শ্রেষ্ঠ কারিগরের কাজ যেন।
সাদা কাপড়ের সলতে, বিশুদ্ধ মাটির প্রদীপ আর জলপাই এর তেল।
এর চেয়ে সুন্দর কিছু আর হয় না।
তারপর প্রদীপের পথচলা.....
আজ এ পর্যন্তই থাক।
নূরে আলম।
ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১১।
valoi likhso.... lekhata sundor hoise... phylosophy tao valo.
উত্তরমুছুনtomra bhai bon shobgula bhalo likho! kintu shobai ulta palta theory dao lol. but interesting theory. :)
উত্তরমুছুনহুম.... সেজাপুর কাছ থেকে ভালো কমেন্ট পাওয়া! বড়ই সৌভাগ্যের ব্যাপার বলিয়া ভাবিতে হইবেক ;)
উত্তরমুছুনL, ভালো লিখি, আবার উল্টাপাল্টা থিয়োরী দেই? একইসাথে ভালোমানুষ, আবার পাগল? হা হা হা.....
ভালো লিখি, একথা বলার জন্য ধন্যবাদ।
আমাদের ভাইবোনদের লেখার ধরণে কি মিল আছে? তোমাদের দুই বোনের কিন্তু লেখায় কোন মিল পাওয়া যায় না.....
tai? apur lekha kirokom ar amar lekha kirokom? tomader lekhar milta hocche tomra shobai khub guchay lekho, ar ja lekho ta khub drastic kichu hoy! :)
উত্তরমুছুনdrastic? hmm..... obak hoilam !
উত্তরমুছুনtomar apur lekhao drastic, tomar lekha pani pani.... :(
pani pani?? amar lekha pore amar apu bole je ami je teenager eta khub bhalo kore bujha jay. ekbar low ekbar high!
উত্তরমুছুনpani pani??? :@
ya, pani pani. mone hoy, panir upor diye vashte vashte lekha! :)
উত্তরমুছুনi mean, tomar lekha onek smooth.... that's good. beshi jotilota valo na.
aar, lekhay teen ager bojha gele kharap ki!
lekhata valo hoise
উত্তরমুছুন:) ভাবতেসি ব্লগিং বন্ধ রাখবো কিনা কিছুদিনের জন্য। :(
উত্তরমুছুনgood post. keep up!
উত্তরমুছুনধন্যবাদ!
উত্তরমুছুন