এই রুমের কার্পেটটা ছোট। পিসিতে বসে মেঝেতে পা রেখে বেশ ঠান্ডা লাগছে। দরজা খুলে বারান্দায় গেলেই আবার একটু রোদ পাওয়া যাবে।
ঢাকায় শীত আসে দেরীতে। যায় সবার আগে। ফিল করার আগেই শীত চলে যায়। কিন্তু এই শীতকালটা আমার খুবই প্রিয়। যদিও প্রায়ই কাবু হয়ে পড়ি, দশের নিচে তাপমাত্রা নামলেই। তবুও, আজকে ব্লগ লিখতে বসে হঠাৎই মনে হচ্ছে, শীতকালটা যেন চলে যাচ্ছে। ধরে রাখা দরকার।
এখন তো রোজা প্রায় গরমের মধ্যেই এসে পড়েছে, কিন্তু আমার ছোটবেলায় রোজাটা ছিল শীতের মধ্যে। কড়া শীত। সেহরীতে আম্মু ডাকতে চাইত না আমাকে আর যীনাতকে। এই ষড়যন্ত্র(!) আমাদের খুবই অপছন্দ ছিল। ওত্যুৎসাহের কারণেই বোধহয় ঘুমটা পাতলা হত, সেহরির টাইম হলেই উঠে পড়তাম নিজে থেকে। আম্মু, বড়াপু বলত- "এখন উঠসো কেনো? কেবল তো ভাত বসাচ্ছি। ঘুমাও, আমি পরে ডেকে দেব।"
কিন্তু ঘুম কি আর আসে? তখন প্রতিদিন রোজা রাখা(অর্থাৎ, ছোটমানুষের কাছে- না খেয়ে থাকা এবং মজার মজার ইফতারের জন্য অপেক্ষা করা) ছিল এখনকার ইদের মত আনন্দের।
সেহরিতে ঘুম থেকে উঠে খেতে বসতাম। সবাই একসাথে।
আব্বু। আম্মু। ভাইয়া। বড়াপু। মেজাপু। সেজাপু। আমি। যীনাত।
ঠিক আটজন মানুষ। গায়ে জড়িয়ে বসতাম আম্মুর চাদর, যেগুলো ইরানে থাকতে ব্যবহার করত। আযান হবার পরেও ঘুম পেত না। সেজাপুর নেতৃত্বে আমরা ছোট দুইজন ছবি আঁকতে বসে যেতাম।
আর এখন? ঘুম চোখে কোনমতে খেয়ে নামাজ সেরেই আবার ঘুম। নইলে বদহজম মাস্ট!
আবার, আম্মুকে মাঝে মাঝে দেখতাম চুলায় অল্প করে আগুন জ্বালিয়ে উপরে হাত এনে হাত গরম করতে। দেখাদেখি আমিও করতাম!
একদিন হঠাৎ পোড়া গন্ধ পেলাম- কী ব্যাপার? মুরগির পা-পোড়া গন্ধ আসছে কোথা থেকে?
খেয়াল করে দেখি হাতের পশম পুড়ে গেছে চুলার আগুনে!
শীতের স্মৃতিটার সাথে রোজার ঘটনাগুলো জড়িয়ে আছে..... রোজার সাথে ইদ..... সে গল্প নাহয় পরে হবে।
আর কিছু শীতের কথা মনে পড়ে। নানাজীর বাসায়। আমরা ভাইবোনরা খালাদের সাথে গল্প করতাম। রাতেই ঠিক করা হত, সকালে জিয়া উদ্যানে হাঁটতে যেতে হবে। সেই আগ্রহে সকালে আপনা থেকেই ঘুম ভেঙে উঠে পড়তাম। আমি, যীনাত, ভাইয়া, খালাদের কেউ কেউ থাকত সাথে। সেজাপু, বড়াপু, কিঙবা মেজাপু।
হেঁটেই চলে যেতাম জিয়া উদ্যান। ভোরবেলা সব দৌড়বিদদের দৌড়াদৌড়ি! প্রফেশনাল দৌড়বিদ না, ডাক্তারের আদেশে দৌড়বিদ। বেশিরভাগই মধ্যবয়স্ক। তারা দৌড়াতো, আমরা হাঁটতাম।
বেশ খানিক হাঁটাহাঁটি করে বাসায় ফিরেই দেখি টেবিলে খিচুড়ি রেডি!
নানীর রান্না করা খিচুড়ি খুব সুস্বাদু ছিলো। এখন তো নানী নেই, তাই সেই খিচুড়িও নেই। আর সেই কথাটিও নেই - "ও কিডা, কালাভাই নাকি?"
আর? আর কি শীতের স্মৃতি নাই?
দুর্বল মস্কিষ্ক আমার। লিখে না রাখলে কিছু মনে থাকে না। ডায়রী ঘাঁটলে অনেক কিছু পাই। এখন স্মৃতি থেকে লিখতে গিয়ে নিজের অক্ষমতা বেরিয়ে পড়ল।
তাতে কী!
স্মৃতিগুলো সব শিকলের মত। একপ্রান্ত যখন হাতে এসে পড়েছে, টানলে শেষ পর্যন্ত পৌঁছনো যাবেই! এখানে শেকলটার একটা প্রান্ত রেখে দিলাম। অলস সময়ে ব্লগে রোমিং করতে করতে এই লেখাটি যখন আবার পড়ব, তখন অন্য প্রান্তটি পর্যন্ত টেনে বের করব নিশ্চিত। সেটা আমার জন্যই থাক।
নূরে আলম।
ডিসেম্বর ১১, ২০১১।
Brother tomar blog ta pore amar-o akta blog lekhar icche korche... Kal-i akta blog lekhbo
উত্তরমুছুনhmm. :)
উত্তরমুছুন:)
উত্তরমুছুনতোর ব্রেইন এত খারাপ কেন?
উত্তরমুছুনআমার তো এখনই অনেএএএএক কথা মনে পড়ে গেল।
লেখাটা অনেক ভাল হয়েছে।
ধইন্যবাদ। :)
উত্তরমুছুন