অনেকদিন থেকে একটা ব্লগ লিখতে মন চাইছিল। তাও আবার যেমন তেমন ব্লগ না- সুপার ডুপার ব্লগ।
গতকাল সত্যিই লেখার কিছু পেয়ে গেলাম।
সেকথাই বলি।
বিকেলে হঠাৎই নানাজীর সাথে দেখা করতে গেলাম। আসরের নামাজ পড়ে বেরোলাম। গিয়ে দেখি নানাজী ইফতার সামনে নিয়ে বসে আছেন। রোজার মাসের পরের মাসে নানাজী ছয়টা রোজা রাখেন। ওটা ছিল ৫ম টা।
নানাজীর সাথে ইফতার করেই উপরে গেলাম। সেখানে ছোট মামার ছেলে মুহিত তার চেয়ে বয়সে দু-এক বছরের বড় ফুফাতো বোন লুবাইনার সাথে খেলছে। লুবাইনা-ই পড়ে কেজিতে। আর মুহিত( সে নিজেকে বলে 'ইপপাইডার ম্যান') তো সব কথা এখনও স্পষ্ট বলতেই পারে না।
যা বলছিলাম।
এই মুহিত ছেলেটা কীভাবে যেন আমার খুব ভক্ত হয়েছে। আমি নিজেই জানি না কী কারণে। সেদিন আম্মু নানাজীর বাসা থেকে আসার পর মুহিতের গল্পটা এই যে নানাজী মুহিতকে বললেন- "কীরে মুহিত, তোর মাসুদ ভাইয়া আসবে।"
তখন মুহিত লাফানো শুরু করে দিল- "মাতুব বাইয়া আসবে।"
আম্মু জিজ্ঞাসা করায় উত্তর- "আমি মাতুব বাইয়ার সাথে খেলব।"
!!!!!
সেজাপু ঘটনা শুনে বলছে- "মাসুদ, কী জাদু করেছো.....।" আমি আর কী বলব। আমি তো নিজেই জানি না সে আমার এত ভক্ত হয়েছে কীভাবে।
৫টা চকলেট নিয়ে গিয়েছিলাম। ২-২ করে দু'জনকে দিলাম(বাচ্চাদের মন খুশি করতে এক টাকাও লাগে না!)। আর একটা ছিল পকেটে।
বাসায় কেউ আসলেই মুহিত সাধারণত নানান ধরণের 'অকাম' শুরু করে দেয়। সেটারই অংশ হিসেবে প্রথমে তার বাইসাইকেল (বাইসাইকেল না বলে টেট্রাসাইকেল বলা দরকার, পেছনের চাকার সাথে দুটো ছোট সাপোর্টিং চাকা লাগানো থাকে) আর একটা কাঠের টুল নিয়ে 'জ্যাম' আর 'অ্যাকসিডেন্ট' খেলা খেলল(এই অদ্ভুত প্রকারের খেলা তার মাথায় কোত্থেকে এসেছে কে জানে!)। এরপর বেতের সোফা নিয়ে টানাটানি করতে লাগল। সোফা, টি টেবিল- সব ডিসপ্লেসড করে ফেলল। তারপর যেই আমি ঐ শেষ চকলেটটা পকেট থেকে বের করলাম- সাথে সাথে চেহারার ভঙ্গি চেঞ্জ হয়ে গেল- যেন ওর চেয়ে ভালো মানুষ আর পৃথিবীতে নেই।
-"আমাকে দেন না, দেবেন? মাতুব বাইয়া?" ইত্যাদি। খাবারের প্রতি ওর বিশেষ আকর্ষণ, আর তাই খাবার দেখলেই চেহারা চেঞ্জ করে পৃথিবীর সেরা ভালো মানুষটি হয়ে যায়।
চকলেটের লোভ দেখিয়ে সোফা আর টি টেবিল রিপ্লেস করালাম। বাহ! কী চমৎকার কথা- "আমি তোত(ছোট) মানুসতো, তাই পাব্বো না।"
রাত আটটার দিকে মামার মাথা ব্যাথার জন্য 'নাপা এক্সট্রা' কিনতে নামছি লিফট দিয়ে। ফোর্থ ফ্লোরে এসে লিফট থামলো। দু'জন মহিলা আর তিনটা বাচ্চা উঠল। সাথে তাদের টেট্রাসাইকেল, আর আরও একটা অদ্ভুত ধরণের জিনিস- ওটাও নাকি সাইকেল! তারা যাবে গ্রাউন্ড ফ্লোরে।
বাচ্চাগুলোর নাম মীম(ক্লাস 3), মাইমুনা(কোনো কিলাসে পড়ি না) আর সজীব(ক্লাস 1)।
মীম আর মাইমুনার মা সারা মাথায় মেহদী পাতা বেঁটে লাগিয়ে রেখেছেন। লিফট নামতে নামতে মীম বলছে- "তুমি আজকে গোসল করবা না মা? তাহলে আজকে আমি তোমার সাথে শুব না।"
আমাকে জিজ্ঞাসা করল- "এইযে, আপনি কোথায় যাবেন?" (আসলে তার ইচ্ছা যে আমি 0 ছাড়া আগে কোথাও নামি, তাহলে লিফট-এর বাটন প্রেস করার সুযোগ পায়।) আমি বললাম- "তুমি যেখানে যাবে, আমিও সেখানে যাবো।"
ততক্ষণে লিফটের দরজা খুলেছে। মীম বলছে- "ভালো, কথা, কোথায় যাবেন তা বললেই হয়, এত প্যাক প্যাক করেন কেন?"
!!!!!
বাপরে! এতো ভয়ংকর মেয়ে দেখছি! নিশ্চয় কর্কট রাশি হবে- মনে মনে ভাবলাম।
গেটের বাইরেই বিশাল বড় ওষুধের দোকান। ওষুধ কিনে ফিরে দেখি বাচ্চাগুলো পার্কিঙের ড্রাইভওয়েতে খেলছে। সাথে কেয়ারটেকারের বাচ্চাটাও আছে। ভাবলাম দুই মিনিট জ্বালাতন করে যাই।
সজীব সাইকেলে বসে আছে- মীম তাকে ঠেলছে। আমি সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম- "এই, অ্যাকসিডেন্ট হবে কিন্তু!" (অ্যাকসিডেন্টের আইডিয়া মুহিতের থেকে ধার করা!)
-"আহ! সরেন তো!" মীম আমাকে সরিয়ে দিচ্ছে। সজীব বলল- "ফাজিল!"
!!!!! ততক্ষণে আমি ভাবছি- অবাক হবার আছে আরো বাকি!
যাহোক, আমি মামাকে ওষুধ দিয়ে নানাজীর সাথে ভাত খেয়ে নিলাম। বাসায় গিয়ে আম্মুকে আনতে হবে- ড্রাইভারের মোবাইল বন্ধ(বেচারার মোবাইলে চার্জ ছিল না!) নিচে গেলাম খুঁজতে। গাড়ির মধ্যে, গাড়ির বাইরে, গেটে, গেটের বাইরে- সব জায়গায় খুঁজলাম। নাই- কোথায় গিয়েছে আল্লাহ মালুম।
তখনও কিন্তু ওরা খেলছে।
মীম : "আপনি কারে খুজতেসেন?"
- "ঐযে, ঐ সাদা গাড়িটা আছে না, ওটার ড্রাইভারকে খুঁজছি।"
আমার কাজ তো শেষ, ড্রাইভার সাহেবকে পাওয়া গেল না, আবার ভাবলাম একটু জ্বালাতন করে নেই। কিন্তু মীম এবার বেশ ভালোমানুষের মত আমাকে জিজ্ঞাসা করল, প্লাস ওর জন্মতারিখটাও জানা দরকার, কর্কট রাশি কিনা- তাই ভাবলাম- ভাব জমাই।
- "আচ্ছা, তোমার বার্থডে কবে?" (ভেবে-চিন্তে জন্মদিন না বলে বার্থডে-ই বললাম, কারণ এখনকার বাচ্চারা তো ক্লাস ফোর-ফাইভের আগেই পারলে ইংলিশ ডিকশানরি মুখস্ত করে ফেলে স্কুলে, প্লাস আধুনিক যুগ বলে কথা!)
- "৫ মে। আমার বার্থডে চলে গেসে।" (নাহ! বৃষ রাশি। তবে ৫ সংখ্য্যা! আমিও তো ৫ সংখ্যা। আর ৫ সংখ্যার মানুষ আমি কমই দেখেছি। ভাবলাম- আরও কিছু গল্প করা যাক।)
- "ও, ৫ মে? খুব ভালো কথা। আচ্ছা, তোমার আব্বু কী করে?"
- "আমার আব্বুর একটা গার্মেন্টস আছে।"
- "আর তোমার আম্মু কী করে?"
- "আমার আম্মু গৃহিণী।" (বাচ্চাদের যেভাবে শেখানো হয়, ঠিক-ঠিক সেভাবেই বলে দিল।)
- "আর ঐ মেয়েটা কে?"
- "আমার বোন, মাইমুনা।"
- "তুমি কোন ক্লাসে পড়?"
- "আমি ক্লাস 3 তে পড়ি। আর ও (সজীব) ক্লাস 1 এ পড়ে।"
- "তোমরা কয় তলায় থাকো?"
- "4D।"
মাইমুনা মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করায় সে কাটা কাটা উত্তর দিল- "আমি কোন কিলাসে পড়ি না।" এই মেয়েটার সাইকেলটা পায়ে ঠেলা- অদ্ভুত ধরণের। ঐটাতে কেয়ারটেকারের মেয়েটাকে বসিয়ে সে টানছিল।
- "তোমার এই সাইকেলে তো পিছনের চাকা নাই, ঘষা লেগে লোহা নষ্ট হয়ে যাবে। অ্যাকসিডেন্ট হবে।"
- "কিছু হবে না।" আমি আর বেশি ঘাঁটালাম না। এর কাটাকাটা কথায় বুঝলাম- বেশি ঘাঁটালে হিতে বিপরীত হতে পারে।
হঠাৎই মাইমুনার ঘুম পেয়েছে। সে আম্মুর কাছে যাবে। এক লোক লিফটে উঠে গিয়েছে অলরেডি- তাকে একটু হোল্ড করতে বললাম। "ধরেন, ধরেন"(অর্থাৎ লিফটটা হোল্ড করেন) বলতে বলতে মীম মাইমুনাকে আর তার সাইকেল নিয়ে এল। ওকে লিফটে উঠিয়ে দিল মীম, সাথে ওর সাইকেল- "ওকে একটু চাত্তালায় নামায় দিয়েন।"
সে-ও বেশ ভালোমানুষের মত উঠল লিফটে। তারপর যেই লিফট ওঠা শুরু করেছে, সে কান্না শুরু করে দিল- "আহাহা(কান্নার শব্দ), আম্মুর কাছে যাব।"
গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে ফোর্থ ফ্লোরে যেতে আর কতক্ষণ লাগে- কিন্তু এই বাচ্চা যে কান্না জুড়ে দিয়েছে, তাতে মনে হচ্ছিল মহাকাল পেরিয়ে যাচ্ছে। আর কান্না শুরু করার সাথে সাথে তার চোখ দিয়ে একেবারে ট্যাপের মত পানি বেরোনো শুরু করল। আমি জীবনে এমন কান্না দেখি নাই। বাচ্চারা সাধারণত জোর করে কাঁদে, কিন্তু বিনা পরিশ্রমেই তার চোখ দিয়ে বন্যা বইতে শুরু করল। আমার আবার সমস্যা হল- কারো চোখে পানি দেখলেই আমার চোখে পানি চলে আসে। এমনকি এখন লিখতে গিয়ে সেটা স্মরণ করতেই চোখে কেমন যেন অস্বস্তি লাগতে শুরু করেছে।
যাহোক, চারতলায় বাচ্চাটাকে নামিয়ে দিতে চাইলাম ওর বাসায়- সে লিফট থেকে নামবে না। আমি ওর সাইকেলটা নামিয়ে দিলাম- "চলো, আম্মুর কাছে দিয়ে আসি তোমাকে।" সে যাবে না। কী আর করা- সাইকেল ভিতরে নিয়ে আসলাম। এদিকে তার কান্না চলছেই। সাথে যে লোকটা উঠেছে, সে আবার যাবে অষ্টম ফ্লোরে। তারমানে চার থেকে আট। আবার আট থেকে শূন্য! মনে হল আরেক মহাকাল শুরু হতে যাচ্ছে। এতো খুব ভালো লিফট না যে কমান্ড আনডু করা যাবে, নইলে আবার তাড়াতাড়ি গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে যেতাম। যাহোক, অষ্টম ফ্লোরে উনি নেমে গেলেন।
কান্না চলছে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে দেখি মীম দাঁড়িয়ে আছে লিফটের সামনে। আমরা ওঠার সময়েই ও বলছিল- "দাঁড়ান, দাঁড়ান" কিন্তু মান্ধাতা আমলের লিফটের অপারেটিং বাটনগুলো কাজ করে না- দরজা বন্ধ হবার সময় একশবার হাত নাড়লেও খোলে না- ভয়ংকরভাবে বন্ধ হয়ে যায়। নাহলে এত কাহিনী-ই হত না!
আমি আবার উপরে চলে গেলাম- "ড্রাইভারকে দেখলাম না।" আরো কয়েকবার ফোনে ট্রাই করলাম। ফোন বন্ধ। মামা একটা দোকানের কথা বলায় আবার সেখানে গেলাম খোঁজ নিতে। লিফট থেকে নামতেই সজীব বলল- "আঙ্কেল, আপনি আবার আসছেন?"
আঙ্কেল??? খুব রাগ লাগল। আমাকে আঙ্কেল আঙ্কেল দেখায়?
ড্রাইভওয়ে দিয়ে হাঁটা শুরু করেছি। মীম তখন সজীবকে সাইকেলে ঠেলছে। সে খুব সুন্দর করে আমাকে বলল- "ভাইয়া, ও তখন আপনাকে খারাপ কথা বলসে। সেজন্য আমি স্যরি।"
বাহ! বেশতো! ভাবলাম আমি।
ও আরও কয়েকবার নানাভাবে apologize করতে লাগল। ভাবলাম- ক্লাস থ্রি এর বাচ্চা যদি বড়দের মত এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে, তাহলে আমারও উচিত ওর সাথে বড়দের মত কথা বলা।
- "না, ঠিক আছে। ও তো এখন ছোট মানুষ, কেবল ক্লাস ওয়ানে পড়ে, আরেকটু বড় হলেই সব শিখে যাবে।"
- "হ্যাঁ, আমি তো ছোট, তাই ঐ কথা বলসিলাম।"
!!!!! সত্যিই, অবাক হবার আরো ছিল বাকি!
তারপর দোকান-টোকান ঘুরে এসে যখন আবার উপরে চলে যাচ্ছি, তখন দূর থেকে ছোট-খাট অবয়বটা দেখে ড্রাইভারকে চিনতে পারলাম। তাকে সাথে করে যখন উপরে যাচ্ছি, লিফটে, তখন পিচ্চিগুলোর কথা বললাম।
- "হুঁ, খুব দুষ্টু।"
ড্রাইভারকে ছোট পিচ্চিটার কাহিনী বলতে গিয়ে খেয়াল করে তাকেও দেখিয়ে আমি নিজেই অবাক হয়ে গেলাম- "এই দেখেন, এখানে চোখের পানি পড়ে আছে।" সত্যিই লিফটের মেঝেতে চার-পাঁচ ফোঁটা চোখের পানি পড়ে ছিল!!!
বাসা থেকে সবাইকে খোদা হাফেজ বলে আবার নেমে এলাম। ড্রাইভার গাড়ি বের করতে গেল। ড্রাইভওয়ে থেকে ওদের সাইকেল নিয়ে সরতে বললাম, নইলে যে অ্যাকসিডেন্ট হবে!
মীম হাতে একটা ছোট নোটবুক আর লাল কালির কলম নিয়ে ঘুরছিল।
- "আমার নাম লিখে দেই?"
সে খুব সম্মতিতেই নোটবুক, তারপর খেয়াল করে কলমটা এগিয়ে দিল। আমি বাংলায় 'মাসুদ' লিখতে লিখতে জিজ্ঞাসা করলাম- "তুমি বাংলা পড়তে পারো?" (খেয়াল ছিল না যে ক্লাস থ্রি তে পড়ে, তারপর আবার একটা ভালো স্কুলেই পড়ে।)
- "হ্যাঁ।"
মোবাইল নাম্বার দিতে গিয়ে মনে হল- ওহ হো! আমার তো মোবাইল নাই!
মাথায় কী বুদ্ধি চাপল- নামের নিচে ইমেইল অ্যাড্রেস লিখতে লিখতে আবার গাধার মত জিজ্ঞাসা করলাম- "তুমি ইংরেজী পড়তে পারো?"
- "হ্যাঁ!"
- "এটা আমার ইমেইল অ্যাড্রেস। তোমাদের কম্পিউটার আছে? তুমি বড় হলে এখানে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।" নোটপ্যাড আর কলমটা হাতে নিয়ে সে আবার অন্যদের দিকে মনোযোগ দিল।
ততক্ষণে গাড়ি চলে এসেছে সামনে। আমি দরজা খুলে ঢুকতে ঢুকতে ভাবছিলাম- ওদেরকে 'বিদায়' জানিয়ে আসলে মন্দ হত না।
ভাবছি, আর তখনই মীম হাত নেড়ে বলল- "ভাইয়া, তুমি অনেক ভালো, থ্যাংক ইউ!"
আমার বাম হাত তখন দরজাটা লাগিয়ে দিচ্ছিল, আমি ডান হাত নেড়ে বললাম- "খোদা হাফেজ!"
দরজা লাগানো মাত্রই গাড়িটা একটানে বেরিয়ে এল।
আমি সিটবেল্ট লাগাতে লাগাতে ভাবলাম- আমার ব্লগ আমি পেয়ে গেছি।
নূরে আলম
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১০।
গতকাল সত্যিই লেখার কিছু পেয়ে গেলাম।
সেকথাই বলি।
বিকেলে হঠাৎই নানাজীর সাথে দেখা করতে গেলাম। আসরের নামাজ পড়ে বেরোলাম। গিয়ে দেখি নানাজী ইফতার সামনে নিয়ে বসে আছেন। রোজার মাসের পরের মাসে নানাজী ছয়টা রোজা রাখেন। ওটা ছিল ৫ম টা।
নানাজীর সাথে ইফতার করেই উপরে গেলাম। সেখানে ছোট মামার ছেলে মুহিত তার চেয়ে বয়সে দু-এক বছরের বড় ফুফাতো বোন লুবাইনার সাথে খেলছে। লুবাইনা-ই পড়ে কেজিতে। আর মুহিত( সে নিজেকে বলে 'ইপপাইডার ম্যান') তো সব কথা এখনও স্পষ্ট বলতেই পারে না।
যা বলছিলাম।
এই মুহিত ছেলেটা কীভাবে যেন আমার খুব ভক্ত হয়েছে। আমি নিজেই জানি না কী কারণে। সেদিন আম্মু নানাজীর বাসা থেকে আসার পর মুহিতের গল্পটা এই যে নানাজী মুহিতকে বললেন- "কীরে মুহিত, তোর মাসুদ ভাইয়া আসবে।"
তখন মুহিত লাফানো শুরু করে দিল- "মাতুব বাইয়া আসবে।"
আম্মু জিজ্ঞাসা করায় উত্তর- "আমি মাতুব বাইয়ার সাথে খেলব।"
!!!!!
সেজাপু ঘটনা শুনে বলছে- "মাসুদ, কী জাদু করেছো.....।" আমি আর কী বলব। আমি তো নিজেই জানি না সে আমার এত ভক্ত হয়েছে কীভাবে।
৫টা চকলেট নিয়ে গিয়েছিলাম। ২-২ করে দু'জনকে দিলাম(বাচ্চাদের মন খুশি করতে এক টাকাও লাগে না!)। আর একটা ছিল পকেটে।
বাসায় কেউ আসলেই মুহিত সাধারণত নানান ধরণের 'অকাম' শুরু করে দেয়। সেটারই অংশ হিসেবে প্রথমে তার বাইসাইকেল (বাইসাইকেল না বলে টেট্রাসাইকেল বলা দরকার, পেছনের চাকার সাথে দুটো ছোট সাপোর্টিং চাকা লাগানো থাকে) আর একটা কাঠের টুল নিয়ে 'জ্যাম' আর 'অ্যাকসিডেন্ট' খেলা খেলল(এই অদ্ভুত প্রকারের খেলা তার মাথায় কোত্থেকে এসেছে কে জানে!)। এরপর বেতের সোফা নিয়ে টানাটানি করতে লাগল। সোফা, টি টেবিল- সব ডিসপ্লেসড করে ফেলল। তারপর যেই আমি ঐ শেষ চকলেটটা পকেট থেকে বের করলাম- সাথে সাথে চেহারার ভঙ্গি চেঞ্জ হয়ে গেল- যেন ওর চেয়ে ভালো মানুষ আর পৃথিবীতে নেই।
-"আমাকে দেন না, দেবেন? মাতুব বাইয়া?" ইত্যাদি। খাবারের প্রতি ওর বিশেষ আকর্ষণ, আর তাই খাবার দেখলেই চেহারা চেঞ্জ করে পৃথিবীর সেরা ভালো মানুষটি হয়ে যায়।
চকলেটের লোভ দেখিয়ে সোফা আর টি টেবিল রিপ্লেস করালাম। বাহ! কী চমৎকার কথা- "আমি তোত(ছোট) মানুসতো, তাই পাব্বো না।"
রাত আটটার দিকে মামার মাথা ব্যাথার জন্য 'নাপা এক্সট্রা' কিনতে নামছি লিফট দিয়ে। ফোর্থ ফ্লোরে এসে লিফট থামলো। দু'জন মহিলা আর তিনটা বাচ্চা উঠল। সাথে তাদের টেট্রাসাইকেল, আর আরও একটা অদ্ভুত ধরণের জিনিস- ওটাও নাকি সাইকেল! তারা যাবে গ্রাউন্ড ফ্লোরে।
বাচ্চাগুলোর নাম মীম(ক্লাস 3), মাইমুনা(কোনো কিলাসে পড়ি না) আর সজীব(ক্লাস 1)।
মীম আর মাইমুনার মা সারা মাথায় মেহদী পাতা বেঁটে লাগিয়ে রেখেছেন। লিফট নামতে নামতে মীম বলছে- "তুমি আজকে গোসল করবা না মা? তাহলে আজকে আমি তোমার সাথে শুব না।"
আমাকে জিজ্ঞাসা করল- "এইযে, আপনি কোথায় যাবেন?" (আসলে তার ইচ্ছা যে আমি 0 ছাড়া আগে কোথাও নামি, তাহলে লিফট-এর বাটন প্রেস করার সুযোগ পায়।) আমি বললাম- "তুমি যেখানে যাবে, আমিও সেখানে যাবো।"
ততক্ষণে লিফটের দরজা খুলেছে। মীম বলছে- "ভালো, কথা, কোথায় যাবেন তা বললেই হয়, এত প্যাক প্যাক করেন কেন?"
!!!!!
বাপরে! এতো ভয়ংকর মেয়ে দেখছি! নিশ্চয় কর্কট রাশি হবে- মনে মনে ভাবলাম।
গেটের বাইরেই বিশাল বড় ওষুধের দোকান। ওষুধ কিনে ফিরে দেখি বাচ্চাগুলো পার্কিঙের ড্রাইভওয়েতে খেলছে। সাথে কেয়ারটেকারের বাচ্চাটাও আছে। ভাবলাম দুই মিনিট জ্বালাতন করে যাই।
সজীব সাইকেলে বসে আছে- মীম তাকে ঠেলছে। আমি সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম- "এই, অ্যাকসিডেন্ট হবে কিন্তু!" (অ্যাকসিডেন্টের আইডিয়া মুহিতের থেকে ধার করা!)
-"আহ! সরেন তো!" মীম আমাকে সরিয়ে দিচ্ছে। সজীব বলল- "ফাজিল!"
!!!!! ততক্ষণে আমি ভাবছি- অবাক হবার আছে আরো বাকি!
যাহোক, আমি মামাকে ওষুধ দিয়ে নানাজীর সাথে ভাত খেয়ে নিলাম। বাসায় গিয়ে আম্মুকে আনতে হবে- ড্রাইভারের মোবাইল বন্ধ(বেচারার মোবাইলে চার্জ ছিল না!) নিচে গেলাম খুঁজতে। গাড়ির মধ্যে, গাড়ির বাইরে, গেটে, গেটের বাইরে- সব জায়গায় খুঁজলাম। নাই- কোথায় গিয়েছে আল্লাহ মালুম।
তখনও কিন্তু ওরা খেলছে।
মীম : "আপনি কারে খুজতেসেন?"
- "ঐযে, ঐ সাদা গাড়িটা আছে না, ওটার ড্রাইভারকে খুঁজছি।"
আমার কাজ তো শেষ, ড্রাইভার সাহেবকে পাওয়া গেল না, আবার ভাবলাম একটু জ্বালাতন করে নেই। কিন্তু মীম এবার বেশ ভালোমানুষের মত আমাকে জিজ্ঞাসা করল, প্লাস ওর জন্মতারিখটাও জানা দরকার, কর্কট রাশি কিনা- তাই ভাবলাম- ভাব জমাই।
- "আচ্ছা, তোমার বার্থডে কবে?" (ভেবে-চিন্তে জন্মদিন না বলে বার্থডে-ই বললাম, কারণ এখনকার বাচ্চারা তো ক্লাস ফোর-ফাইভের আগেই পারলে ইংলিশ ডিকশানরি মুখস্ত করে ফেলে স্কুলে, প্লাস আধুনিক যুগ বলে কথা!)
- "৫ মে। আমার বার্থডে চলে গেসে।" (নাহ! বৃষ রাশি। তবে ৫ সংখ্য্যা! আমিও তো ৫ সংখ্যা। আর ৫ সংখ্যার মানুষ আমি কমই দেখেছি। ভাবলাম- আরও কিছু গল্প করা যাক।)
- "ও, ৫ মে? খুব ভালো কথা। আচ্ছা, তোমার আব্বু কী করে?"
- "আমার আব্বুর একটা গার্মেন্টস আছে।"
- "আর তোমার আম্মু কী করে?"
- "আমার আম্মু গৃহিণী।" (বাচ্চাদের যেভাবে শেখানো হয়, ঠিক-ঠিক সেভাবেই বলে দিল।)
- "আর ঐ মেয়েটা কে?"
- "আমার বোন, মাইমুনা।"
- "তুমি কোন ক্লাসে পড়?"
- "আমি ক্লাস 3 তে পড়ি। আর ও (সজীব) ক্লাস 1 এ পড়ে।"
- "তোমরা কয় তলায় থাকো?"
- "4D।"
মাইমুনা মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করায় সে কাটা কাটা উত্তর দিল- "আমি কোন কিলাসে পড়ি না।" এই মেয়েটার সাইকেলটা পায়ে ঠেলা- অদ্ভুত ধরণের। ঐটাতে কেয়ারটেকারের মেয়েটাকে বসিয়ে সে টানছিল।
- "তোমার এই সাইকেলে তো পিছনের চাকা নাই, ঘষা লেগে লোহা নষ্ট হয়ে যাবে। অ্যাকসিডেন্ট হবে।"
- "কিছু হবে না।" আমি আর বেশি ঘাঁটালাম না। এর কাটাকাটা কথায় বুঝলাম- বেশি ঘাঁটালে হিতে বিপরীত হতে পারে।
হঠাৎই মাইমুনার ঘুম পেয়েছে। সে আম্মুর কাছে যাবে। এক লোক লিফটে উঠে গিয়েছে অলরেডি- তাকে একটু হোল্ড করতে বললাম। "ধরেন, ধরেন"(অর্থাৎ লিফটটা হোল্ড করেন) বলতে বলতে মীম মাইমুনাকে আর তার সাইকেল নিয়ে এল। ওকে লিফটে উঠিয়ে দিল মীম, সাথে ওর সাইকেল- "ওকে একটু চাত্তালায় নামায় দিয়েন।"
সে-ও বেশ ভালোমানুষের মত উঠল লিফটে। তারপর যেই লিফট ওঠা শুরু করেছে, সে কান্না শুরু করে দিল- "আহাহা(কান্নার শব্দ), আম্মুর কাছে যাব।"
গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে ফোর্থ ফ্লোরে যেতে আর কতক্ষণ লাগে- কিন্তু এই বাচ্চা যে কান্না জুড়ে দিয়েছে, তাতে মনে হচ্ছিল মহাকাল পেরিয়ে যাচ্ছে। আর কান্না শুরু করার সাথে সাথে তার চোখ দিয়ে একেবারে ট্যাপের মত পানি বেরোনো শুরু করল। আমি জীবনে এমন কান্না দেখি নাই। বাচ্চারা সাধারণত জোর করে কাঁদে, কিন্তু বিনা পরিশ্রমেই তার চোখ দিয়ে বন্যা বইতে শুরু করল। আমার আবার সমস্যা হল- কারো চোখে পানি দেখলেই আমার চোখে পানি চলে আসে। এমনকি এখন লিখতে গিয়ে সেটা স্মরণ করতেই চোখে কেমন যেন অস্বস্তি লাগতে শুরু করেছে।
যাহোক, চারতলায় বাচ্চাটাকে নামিয়ে দিতে চাইলাম ওর বাসায়- সে লিফট থেকে নামবে না। আমি ওর সাইকেলটা নামিয়ে দিলাম- "চলো, আম্মুর কাছে দিয়ে আসি তোমাকে।" সে যাবে না। কী আর করা- সাইকেল ভিতরে নিয়ে আসলাম। এদিকে তার কান্না চলছেই। সাথে যে লোকটা উঠেছে, সে আবার যাবে অষ্টম ফ্লোরে। তারমানে চার থেকে আট। আবার আট থেকে শূন্য! মনে হল আরেক মহাকাল শুরু হতে যাচ্ছে। এতো খুব ভালো লিফট না যে কমান্ড আনডু করা যাবে, নইলে আবার তাড়াতাড়ি গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে যেতাম। যাহোক, অষ্টম ফ্লোরে উনি নেমে গেলেন।
কান্না চলছে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে দেখি মীম দাঁড়িয়ে আছে লিফটের সামনে। আমরা ওঠার সময়েই ও বলছিল- "দাঁড়ান, দাঁড়ান" কিন্তু মান্ধাতা আমলের লিফটের অপারেটিং বাটনগুলো কাজ করে না- দরজা বন্ধ হবার সময় একশবার হাত নাড়লেও খোলে না- ভয়ংকরভাবে বন্ধ হয়ে যায়। নাহলে এত কাহিনী-ই হত না!
আমি আবার উপরে চলে গেলাম- "ড্রাইভারকে দেখলাম না।" আরো কয়েকবার ফোনে ট্রাই করলাম। ফোন বন্ধ। মামা একটা দোকানের কথা বলায় আবার সেখানে গেলাম খোঁজ নিতে। লিফট থেকে নামতেই সজীব বলল- "আঙ্কেল, আপনি আবার আসছেন?"
আঙ্কেল??? খুব রাগ লাগল। আমাকে আঙ্কেল আঙ্কেল দেখায়?
ড্রাইভওয়ে দিয়ে হাঁটা শুরু করেছি। মীম তখন সজীবকে সাইকেলে ঠেলছে। সে খুব সুন্দর করে আমাকে বলল- "ভাইয়া, ও তখন আপনাকে খারাপ কথা বলসে। সেজন্য আমি স্যরি।"
বাহ! বেশতো! ভাবলাম আমি।
ও আরও কয়েকবার নানাভাবে apologize করতে লাগল। ভাবলাম- ক্লাস থ্রি এর বাচ্চা যদি বড়দের মত এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে, তাহলে আমারও উচিত ওর সাথে বড়দের মত কথা বলা।
- "না, ঠিক আছে। ও তো এখন ছোট মানুষ, কেবল ক্লাস ওয়ানে পড়ে, আরেকটু বড় হলেই সব শিখে যাবে।"
- "হ্যাঁ, আমি তো ছোট, তাই ঐ কথা বলসিলাম।"
!!!!! সত্যিই, অবাক হবার আরো ছিল বাকি!
তারপর দোকান-টোকান ঘুরে এসে যখন আবার উপরে চলে যাচ্ছি, তখন দূর থেকে ছোট-খাট অবয়বটা দেখে ড্রাইভারকে চিনতে পারলাম। তাকে সাথে করে যখন উপরে যাচ্ছি, লিফটে, তখন পিচ্চিগুলোর কথা বললাম।
- "হুঁ, খুব দুষ্টু।"
ড্রাইভারকে ছোট পিচ্চিটার কাহিনী বলতে গিয়ে খেয়াল করে তাকেও দেখিয়ে আমি নিজেই অবাক হয়ে গেলাম- "এই দেখেন, এখানে চোখের পানি পড়ে আছে।" সত্যিই লিফটের মেঝেতে চার-পাঁচ ফোঁটা চোখের পানি পড়ে ছিল!!!
বাসা থেকে সবাইকে খোদা হাফেজ বলে আবার নেমে এলাম। ড্রাইভার গাড়ি বের করতে গেল। ড্রাইভওয়ে থেকে ওদের সাইকেল নিয়ে সরতে বললাম, নইলে যে অ্যাকসিডেন্ট হবে!
মীম হাতে একটা ছোট নোটবুক আর লাল কালির কলম নিয়ে ঘুরছিল।
- "আমার নাম লিখে দেই?"
সে খুব সম্মতিতেই নোটবুক, তারপর খেয়াল করে কলমটা এগিয়ে দিল। আমি বাংলায় 'মাসুদ' লিখতে লিখতে জিজ্ঞাসা করলাম- "তুমি বাংলা পড়তে পারো?" (খেয়াল ছিল না যে ক্লাস থ্রি তে পড়ে, তারপর আবার একটা ভালো স্কুলেই পড়ে।)
- "হ্যাঁ।"
মোবাইল নাম্বার দিতে গিয়ে মনে হল- ওহ হো! আমার তো মোবাইল নাই!
মাথায় কী বুদ্ধি চাপল- নামের নিচে ইমেইল অ্যাড্রেস লিখতে লিখতে আবার গাধার মত জিজ্ঞাসা করলাম- "তুমি ইংরেজী পড়তে পারো?"
- "হ্যাঁ!"
- "এটা আমার ইমেইল অ্যাড্রেস। তোমাদের কম্পিউটার আছে? তুমি বড় হলে এখানে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।" নোটপ্যাড আর কলমটা হাতে নিয়ে সে আবার অন্যদের দিকে মনোযোগ দিল।
ততক্ষণে গাড়ি চলে এসেছে সামনে। আমি দরজা খুলে ঢুকতে ঢুকতে ভাবছিলাম- ওদেরকে 'বিদায়' জানিয়ে আসলে মন্দ হত না।
ভাবছি, আর তখনই মীম হাত নেড়ে বলল- "ভাইয়া, তুমি অনেক ভালো, থ্যাংক ইউ!"
আমার বাম হাত তখন দরজাটা লাগিয়ে দিচ্ছিল, আমি ডান হাত নেড়ে বললাম- "খোদা হাফেজ!"
দরজা লাগানো মাত্রই গাড়িটা একটানে বেরিয়ে এল।
আমি সিটবেল্ট লাগাতে লাগাতে ভাবলাম- আমার ব্লগ আমি পেয়ে গেছি।
নূরে আলম
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১০।
[avro khuje pelam na... nahole banglay comment ditam :( ... shala ubuntu.]
উত্তরমুছুনekta chhoto meyer sathe vobishshoter kotha mone kore j apni eto sundor kore take nijer nam thikana diye aschhen.... eta jene amar khub e ''anando'' hochche....
asholei next generation sob somoy e advanced :-S mane amader cheye tomra fast, tomader cheye meem ra fast.... ahhh
উবুন্টুতে অভ্র খুঁজে পাওয়া লাগবে না, উইন্ডোজের মত F12 চাপ দিলেই বাংলা লিখতে পারবেন- anytime, anywhere.
উত্তরমুছুনভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে?
হাহাপগে।
ajkalkar polapain...
উত্তরমুছুনতাও তো রক্ষা যে বাংলাদেশের পিচ্চিরা এখনও অতটা অ্যাডভান্সড(!) হয়ে উঠতে পারে নাই। মেজাপুর কাছে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক বাঙলাদেশী বলেছেন যে তার পিচ্চি মেয়ে নাকি স্কুলে 'Date Date' খেলে!
উত্তরমুছুন