সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

যাহ- শেষই হয়ে গেল ক্লাসটা!

হুম। গতকালই শেষ হয়ে গেল আমার কলেজ লাইফের ক্লাসগুলো। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে অদ্ভুত অনুভুতি হয়। এই অনুভুতিটাকে আমি কখনোই মনমতন বর্ণনা করতে পারি না। কেমন যেন ঘোর লাগা অনুভুতি। দাঁতের গোড়ায় কেমন শিরশির অনুভুতি।

গতকাল, ২০ অক্টোবর ২০০৯- এ আমি আর যীনাত সকালে কলেজে গেলাম। বায়োলজি কুইজ ছিল। কুইজ শেষে দো'তলায়, আমাদের A সেকশানের ক্লাসরুম- ২১২ নাম্বার রুমে আমরা সবাই গেলাম। তারপর অনেক কাহিনী হল। যেগুলো ব্লগস্পটে লেখার নয়-
আমার ডায়েরীর জন্য। যেগুলোকে গতরাতেই ডায়েরীর এগারোটি পাতার ভাঁজে যত্ন করে তুলে রেখেছি।

আমরা কেক কাটলাম, খাওয়া দাওয়া করলাম, গিটার বাজালাম, বালিশ খেলা খেললাম। শেষ দিন ছিল বলে অনেকেই গান গাইল।
তিক্ত ঘটনাগুলোর কারণে কেউ আর বিদায়ের দুঃখী-আনন্দের কথা চিন্তা করতে পারেনি। তারপরও- দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখল সবাই।
একটা কথা না বললেই নয়- আমরা A সেকশানের ৪০-৪৩ জন ছেলেমেয়ে দিনটাকে খারাপ কাটাইনি। অন্তত আমার খারাপ কাটেনি। সাধারণত কলেজের অনুষ্ঠানগুলোতে যেটা হয়- কিছু অনভ্যস্ত ছেলেমেয়ে, পশ্চিমা কালচারের অনুকরণ করতে চায়- যেটা হয়ে যায় কাকের পেখম গোঁজার মত। দিনটাতে সেধরণের উল্লেখযোগ্য কিছু হয়নি।

আজ সকালে হয়েছে কী- ঘুম ভাঙতেই তাকালাম ঘড়ির দিকে- নয়টা বাজে।
- "হায় হায়, কলেজ?" ক্লাস মিস হয়ে গেল- এমন একটা চিন্তায় আমার মাথায় বাজ পড়ল। আজ পর্যন্ত একবারও দেরী করে কলেজে যাই নি। এসব চিন্তা হল এক সেকেন্ডেরও অনেক কম সময়ে- শুয়ে থাকা অবস্থাতেই।
তারপরই মনে হল- ওহ হো! গতকাল তো ছিল লাস্ট ক্লাস। এখন আর ক্লাসে যাবার দরকার নেই।
এরপর থেকেই এই চিন্তা মাথা জুড়ে আছে। দাঁত শিরশির করছে। কোনমতেই ব্লগস্পটে না লিখে শান্তি পাচ্ছিলাম না। তাই লিখতে বসা।

আমাদের ক্লাসের গল্পই নাহয় করি। হয়তো আর কখনো এ গল্প করা হবে না- হয়তো আজই এই গল্প করার উপযুক্ত দিন।

আমাদের ক্লাসে টিচার আসলে ক্যাপ্টেন কমান্ড দিত- "ক্লাস, বসে বসে সাবধান হবে- সাআ....বধান।"
ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিল ফয়জুল, ডেপুটি ক্যাপ্টেন ছিল মার্জিয়া। একবার ফয়জুল কমান্ড দিতে গিয়ে হেসে দিয়েছিল- কমান্ড কমপ্লিট করতে পারেনি। আর একবার- আক্কাস স্যার আসছে দেখে লিমন দৌড় দিয়ে জানালা দিয়ে চুইংগাম ফেলেছে- তাই দেখে হাসতে হাসতে মার্জিয়া কমান্ড কমপ্লিট করতে পারেনি।
ফার্স্ট ইয়ারে একবার-
মার্জিয়া আর সিফাত গিয়েছিল লাইব্রেরীতে। আসতে আসতে আক্কাস স্যারের ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছিল। স্যার দরজা বন্ধ করে ক্লাস নিচ্ছে। এমন সময় ওরা দরজা ঠেলে এসে দাঁড়াল। সিফাত বলল- "স্যার, আসতে পারি?"
- "কোন জাহান্নাম থেকে আসছ? একটা লাথি দিয়ে বের করে দেব। যাও বস।"
আমাদের কাছে বিখ্যাত হয়েছিল "কোন জাহান্নাম থেকে...." এই ডায়লগটা।
ফাতিমা মালিক ম্যাডামের সবসময়কার ডায়লগ- "আমি রিভিউ করে দিব, কোশ্চেন দিয়ে দিব।" আর তাই গতকাল যখন A & B combined party তে উপস্থাপক নাহিয়ান ফাতিমা মালিক ম্যাডামকে কিছু বলার জন্য আহ্বান জানাল, তখন রাফসানজানী আমাকে বলছে- "এবার কোশ্চেন না দিলে হয়!"
সুরাইয়া গুলশান ম্যাডামের ইংরেজী উচ্চারণ ছিল এইরকম- "চ্যাঞ্চেলর" "বেহিকেল" "ভাইছ চেয়ারম্যান" ইত্যাদি..... কলেজের শেষদিকে এগুলো খুব বিখ্যাত হয়েছিল। সম্ভবত এখনও বিখ্যাত আছে।
আমি সিরাজ স্যারের নাম দিয়েছিলাম "লিমনের বন্ধু।" লিমন তার কাছে প্রাইভেট পড়ত তো, তাই সে এভাবে বিক্রিয়া বলত- "লিমন H2SO4.... অমুকের সাথে বিক্রিয়া করে ......" আর লাইব্রেরীয়ান ম্যাডাম- লিমনের বান্ধবী। এই নামটাও আমার দেয়া। কারণ ও দুই মাস পর বই দিলেও লাইব্রেরীয়ান ম্যাডাম কিছু বলত না।
ফাতিমা মালিকের প্রিয় ছাত্র ছিল "ফয়সাল"।
বিজন কুমার বালা- শেষদিকে যার নাম হয়েছিল ধর্মপ্রচারক।

এইসব টিচারের গল্প বেশি একটা করার নেই।

গতকাল বালিশ খেলায় শেষ ৮ কিংবা ১০ জনকে পুরস্কার দেয়া হল- সূক্ষ্ম দাঁতের চিরুনি, টুথব্রাশ, চেইন, প্লাস্টিকের রেজর, কটন বাড- এইসব.....। ক্লাসের জিসান পেয়েছিল কটন বাড। ফয়সাল টুথব্রাশ। যীনাত চেইন।... আমি অনেক আগেই আউট! খেলা শুরুর আগে আমি রুম থেকে বেরিয়ে তিনতলায় উঠবার সিঁড়িতে বসে গিটার বাজাচ্ছিলাম। পরে লিমন এসে জোর করে খেলায় নিল। কিন্তু খেলার পূর্বশর্ত- সবাইকে শার্টের ইন খুলতে হবে! কলেজে প্রথমবারের মত শার্টের ইন খুললাম!

আমি লাইব্রেরীতে বসে দুই বারে লিখেছি। প্রথমবার জলির ডায়েরীতে। তারপর লিমনের। আমি কোন কিছু অল্প কথায় সারতে পারি না। দু- তিন পৃষ্ঠা লেগে যায়। তেমনি করে ওদেরকে উইশ করলাম। কিন্তু সবাই সবারটাতে লিখতে পারি নাই। হ- য- ব- র- ল অবস্থা ছিল- নানা ধরণের নাটকীয়তা, মান অভিমান, কান্নাকাটি- A & B সেকশান আলাদাভাবে আর একসাথে ক্লাস পার্টি করা নিয়ে।


এইতো। আর কিছু মন পড়ছে না। শিরোনামহীনের গান শুনছি। আর লিখবার দরকার নাই।
.....যদি তোমাদের অনেক শব্দ আমার জানালায়
ছোট ছোট আনন্দের স্পর্শে আঙুল রেখে যায়.....
.....যদি সহস্র শব্দে উৎসব থেমে যায়
সারাবেলা বন্ধ জানালায়.....


............................................................................................

গতকাল সহস্র শব্দ ছিল.....



নূরে আলম
২১ অক্টোবর, ২০০৯।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা