সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, জিহাদ, হারানো মুসলিম গৌরব এবং সেই আদিম বিরোধ

অহিংসা মুসলমানের পরম ধর্ম নয় !
আমরা মুসলমানেরা যোদ্ধার জাতি। এই দুনিয়ায় যদি কারো যুদ্ধ করা সাজে তো সেটা মুসলমানদের। কারণ আমরা যুদ্ধ করি আল্লাহর রাহে। আর খোদার রাহে যে যুদ্ধ, তার চেয়ে অধিক সঙ্গত যুদ্ধ আর কী হতে পারে ! অহিংসা তো আমাদের পরম ধর্ম নয় !
হ্যাঁ, এটা সত্য যে আমরা সদা সহিংস নই। আমরা অনেক সময় ইসলাম প্রচারের জন্য শত অত্যাচার নির্যাতন নীরবে সহ্য করে যাই। দশ কোটি অমুসলিমের মাঝে যখন আমি একা মুসলমান, তখন আমার হাতের অস্ত্র হবে শুধুই কুরআন। আর সেই কুরআনের বাণী প্রচারের জন্য যদি আমাকে মৃত্যুও বরণ করতে হয়, তবুও আমি সশস্ত্র সংগ্রাম করবো না। এ হলো আমাদের নবীর শিক্ষা, আল্লাহর আদেশ।
আবার এ-ও সত্য যে আমরা চির-অহিংস নই। যখন আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল রয়েছে, যখন দশ কোটির মাঝে আমরা নয় কোটিই মুসলমান; তখনও আমরা মুখ বুঁজে নির্যাতন সয়ে যাবো, এ আমাদের নীতি নয়। তখন প্রতিষ্ঠিত ইসলামকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ আমাদের উপর ফরজ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করেছেন, যদিওবা আমরা তা অপছন্দ করি (কুরআন, :২১৬)। আবার কখনো কখনো যুদ্ধ নিষিদ্ধও করেছেন, যদিওবা সীমাহীন নির্যাতন আমাদেরকে অস্ত্র ধরতে উদ্বুদ্ধ করে।
যুদ্ধবাজ জাতি মানে এই নয় যে আমরা দুনিয়ার সকল অমুসলিমকে হত্যা করবো। বরং মুসলমানের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ। দায়িত্ব হলো দুনিয়ায় একজন অমুসলিম অবশিষ্ট থাকলেও তার কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়া। নির্বিচারে বিরোধী মতাবলম্বী হত্যা করা মুসলমানের কাজ নয় !
তবে শত্রুদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ইসলামের বাণী পাবার পরেও যারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে, যারা কাফির হয়েছে, তারা আমাদের সাথে প্রকাশ্য শত্রুতায় লিপ্ত হয়। শত্রুর ব্যাপারে উদাসীন জাতি নয় মুসলমানেরা ! বরং মুসলিম জাতি এমনই যুদ্ধবাজ যে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে হোক কিংবা শান্তির সময়েই হোক, সর্বদা তারা সর্বোচ্চ যুদ্ধপ্রস্তুতিতে থাকে। এমনই সে যুদ্ধপ্রস্তুতি, যা দেখে আল্লাহর শত্রু এবং মুসলমানদের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য শত্রু সকলেই ভীত হয়ে পড়ে ‍! দুনিয়ার বুকে আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিষ্ঠাতা ও রক্ষক হলো মুসলিম জাতি। আল্লাহ আদেশ করেছেন :
আর প্রস্তুত করো তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পারো নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্য থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেনো প্রভাব পড়ে আল্লাহর শত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও, যাদেরকে তোমরা জানো না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।” (সূরা আনফাল, :৬০)

অহিংস, অনিরাপদ, নির্যাতিত, ভীত জাতি তো মুসলিম জাতি নয় ! বরং মুসলিম জাতি হলো সেই জাতি, যার কাছে দুনিয়ার তাবৎ নির্যাতিত মানুষ আশ্রয় খুঁজবে ! দুনিয়ার বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী, আল্লাহর সৃষ্টির নিরাপত্তা বিধানকারী জাতি হলাম আমরা ! তবে কোথায় আজ সেই জাতি ? তবে আল্লাহর সেই ওয়াদার কী হলো যে একশ জন দৃঢ়পদ মুসলিমকে জয়ী করবে দুইশ কাফিরের উপর (সূরা আনফাল, :৬৫-৬৬) ? আজ কি দুনিয়ার নির্যাতনকারী ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর অর্ধেক সংখ্যক দৃঢ় মুসলিমও নেই যাদের দ্বারা আল্লাহ তায়ালা তাঁর কৃত ওয়াদা পূরণ করবেন ?
আমরাই তো সেই জাতি যার এক হাতের কুরআন প্রচার করবে ইসলাম, অপর হাতের অস্ত্র করবে শত্রু নিধন ! যে এক হাতের অস্ত্র দিয়ে নির্যাতিতকে নিরাপত্তা দেবে, আর অপর হাতে করবে দরিদ্রকে অর্থ দান। আবার কখনোবা যার দুই হাতের অস্ত্র যুদ্ধের ময়দানে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় সেই হাতই টেবিলে অস্ত্র নামিয়ে রেখে শান্তিচুক্তিতে করবে স্বাক্ষর ! কিংবা সেই একই হাত আবার কখনো সেবা করবে যুদ্ধবন্দী শত্রুর, শুনাবে শান্তির বাণী, অতঃপর সশস্ত্র নিরাপত্তা দিয়ে নিরাপদে পৌঁছে দেবে তাকে (সূরা আত-তাওবাহ, :)

কোথায় আজ সেই মুসলিম জাতি ! দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের কেউ কেউ চির-অহিংসার পথ বেছে নিয়েছে, সুতরাং লোকবল থাকা সত্ত্বেও শত্রুর ট্যাঙ্ক ও গুলির মুখে নিরস্ত্র দাঁড়িয়ে আত্মহুতি দিচ্ছে। অথচ না আল্লাহ আমাদের চির-অহিংসার শিক্ষা দিয়েছেন, আর না দিয়েছেন তাঁর রাসূল। তবুও ইসলামের শত্রুদের শেখানো কথা ও মতবাদ অনুযায়ী আমাদের অসংখ্য লোক “শান্তিপূর্ণ” ও “অহিংস” “গণতান্ত্রিক” আন্দোলনের নামে নিরস্ত্র অবস্থায় জীবন দিচ্ছে। অথচ আল্লাহর রাসূল তো এমনটি করেননি ! তিনি যখন অহিংস থেকেছেন, তখন শত নির্যাতনের বিপরীতে একটি ঢিল কেনো, একটি রাগের শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। আবার যখন তিনি যুদ্ধ করেছেন, তখন পূর্ণোদ্যমে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ করেছেন আল্লাহর রাহে। সর্বোচ্চ যুদ্ধপ্রস্তুতি নিয়ে শত্রুর হৃদয়ে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছেন (সূরা আনফাল, :৬০)। 
আল্লাহর সহায়তায় কাফিরের উপর তীব্র আঘাত হেনেছেন (সূরা আনফাল, :১২)। যুদ্ধের ময়দানে নামাজ পড়িয়েছেন একদলকে, যখন অপর দল সশস্ত্র অবস্থায় চারিদিকে নিরাপত্তা দিয়েছে। আর নামাজের সময়ও থেকেছেন সশস্ত্র (সূরা আন-নিসা, :১০২)। আল্লাহ চান না যে মুসলিম জাতি কখনো অসতর্ক থাকুক, আর সেই সুযোগে কাফিররা একযোগে হামলা করে বসে (সূরা আন-নিসা, :১০২)। বরং আল্লাহ তায়ালা তো চান মুসলিম জাতিকে সর্বদা যুদ্ধপ্রস্তুতিতে রাখতে (সূরা আনফাল, :৬০), যা শত্রুকে করবে ভীত।
এটা সত্য যে আল্লাহ তায়ালা আমাদের ঈমানের পরীক্ষা করতে চান (সূরা আনকাবূত, ২৯:)। আবার এটাও সত্য যে আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের কিছু অংশকে শহীদী মর্যাদা দিয়ে জান্নাতে দাখিল করতে চান (সূরা আলে ইমরান, :১৪০)। কিন্তু আল্লাহ এ-ও চান না যে আমাদের যেনো কোনোরূপ যুদ্ধ প্রস্তুতি না থাকে (:৬০) এবং শত্রুরা আমাদেরকে অসতর্ক ও নিরস্ত্র অবস্থায় আক্রমণ করে (:১০২)। সুতরাং নিরস্ত্র অবস্থায় “অহিংস” থেকে শত্রুর হাতে মুসলমানের মৃত্য হোক, এটা আল্লাহ তায়ালা চান না। অর্থাৎ নিরস্ত্র অবস্থায় আত্মাহুতি দিয়ে শহীদ হওয়াকে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের জন্য পছন্দ করেননি। সুতরাং, শত্রুর মুখোমুখি হবো, অথচ আক্রমণ না করে “শান্তিপূর্ণ”, “অহিংস”, “গণতান্ত্রিক” ইত্যাদি আন্দোলনের নাম করে নীরবে আত্মাহুতি দেবো – মুসলিম জাতির জন্যে এমন লাঞ্ছনা নিশ্চিতভাবেই আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়। গণতন্ত্র, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, ইত্যাদির নামে যোদ্ধার জাতি মুসলমানকে এমন নখদন্তহীন বাঘে পরিণত করার পরিকল্পনা নিশ্চিতভাবে ইসলামের শত্রুদের। আল্লাহ এটা চান না, আর তাঁর রাসূল কখনো এটা চাননি।

অপরদিকে কেউবা বেছে নিয়েছে চির-হিংসার পথ : অবিবেচকের মত যত্র তত্র না জেনে না বুঝে অস্ত্র চালনা করে যাচ্ছে। তাদের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নেই, তবু তারা যুদ্ধ করে যাচ্ছে। যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের সঠিক দ্বীনি জ্ঞান-ই নেই, বরং তারা অন্ধ বিশ্বাসী মুসলমান; যেখানে অবিশ্বাসীদের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো মুসলমানদের কাছেই ইসলামের প্রকৃত রূপ তুলে ধরা, সেখানে তারা করছে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে যুদ্ধ, যা কিনা ইসলামের অনেক পরের পর্যায় ! তারা জানে না তাদের অস্ত্রের উৎস কী, তারা জানে না তাদের অর্থের উৎস কী। তারা জানে না তাদের নেতা কে। নেতার সাথে কখনো তারা যুদ্ধ করেনি, নিজচোখে কখনো দেখেনি তাদের নেতাকে; জিহাদের আদেশ দেবার মত দ্বীনি এখতিয়ার ও যোগ্যতা সেই ব্যক্তির আছে কিনা, তা-ও তারা জানে না। অসংখ্য সদুত্তরবিহীন প্রশ্নে বিদ্ধ এই “জিহাদে” অংশ নিচ্ছে তারা এই ভেবে যে তারা নির্যাতিতের পক্ষে যুদ্ধ করেছে, অথচ ইতিহাসের কত নবী রাসূল কেবল নির্যাতিতই হয়েছেন ! নিপীড়িতের পক্ষে অস্ত্র ধারণের মত অবস্থায় উপনীত হবার পূর্বেই তাঁরা চলে গিয়েছেন আল্লাহর সান্নিধ্যে ! কিন্তু এতসব বাছবিচার না করেই তারা “জিহাদ” এর নামে অস্ত্র ধারণ করছে, অথচ সেই অস্ত্র আসছে ইসলামবিরোধী শক্তির কাছ থেকে ! বর্তমান দুনিয়ার বড় বড় অস্ত্র নির্মাতা দেশগুলির একটিও কি ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করতে রাজি ? না তারা অর্থের বিনিময়ে হলেও তা দিচ্ছে ? কখনোই নয় ! বরং তাদের অস্ত্র-ই তো হলো ইসলামকে প্রতিরোধ করার জন্য। তবুও এই বাস্তবতাগুলোকে উপেক্ষা করে ইসলামের নামে অন্ধ বিশ্বাস ও এক প্রকার কূপমণ্ডূকতায় লিপ্ত হয়েছে তারা। নিজেদের প্রয়োজনে “জিহাদকে” যুদ্ধের সমার্থক করে ফেলেছে তারা, অথচ তারা এক্ষেত্রে প্রথম কাজটিই সম্পন্ন করেনি, আর তা হলো কুরআনের সাহায্যে জিহাদ, যার আদেশ আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন (সূরা আল ফুরকান, ২৫:৫২)। একই কুরআনে আল্লাহ তায়ালা কাফিরদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণের আদেশ দিয়েছেন, আবার সেই একই কুরআনে কাফিরদের বিরুদ্ধে কুরআন দিয়ে জিহাদ করতে বলেছেন (২৫:৫২)। এই বিষয়গুলি কি তাদেরকে ভাবায় না ? তারা কি কুরআন অধ্যয়ন করে না ? নাকি তাদের অন্তরও তালাবদ্ধ ?

কোথায় আমাদের সেই পাঞ্জেরী, আর কোথায় আল্লাহর ওয়াদা পূরণকারী সেই দৃঢ়পদ যোদ্ধা ?

কোথায় আজ মুসলিম জাতির সেই গৌরব ! নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য গৌরব ভুলে তারা কাফির-মুশরিকদের কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে। দুনিয়ার বুকে শ্রেষ্ঠ বিচারক মুসলিম জাতি আইন ও বিচারের জন্য আজকে শরণাপন্ন হচ্ছে তাগুতের। ইসলামের পথে সঠিক কাজটি থেকে বিরত থাকছে শুধু এই ভয়ে যে, না জানি অমুসলিম বিশ্ব আমাদের গায়ে “জঙ্গি” তকমা লাগিয়ে দেয় ! অথচ পাগল থেকে শুরু করে হেন অপবাদ নেই যাতে আমাদের নবী-রাসূলগণকে অভিযুক্ত করা হয়নি ! তবু তো সিরাতুল মুস্তাকিমের সাথে তাঁরা কম্প্রোমাইজ করেননি। হিকমতের নাম করে সত্য পথ থেকে এতটুকু বিচ্যুত হননি। বলুক দুনিয়ার মানুষ জঙ্গী কিংবা আরো যত কিছু ! প্রকৃত সম্মানিত তো সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর কাছে সম্মানিত। আর যারা কাফির-মুশরিকের কাছে সম্মানিত হতে চায়, নিশ্চিতভাবে তাদের সমস্ত কর্ম ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে এবং তাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা প্রস্তুত রেখেছেন বেদনাদায়ক আযাব (সূরা আন নিসা, :১৩৮-১৩৯)
আজকে দেখি মুসলমানেরা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থনা করে। ন্যায়বিচার আশা করে অমুসলিম কিংবা মুসলিম নামধারী মুনাফিকের কাছে ! অথচ তারা কি কুরআন পড়ে না, যেখানে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে নিষেধ করেছেন (সূরা আন নিসা, :৬০)!
বরং মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা তাগুত নিয়ন্ত্রিত হলেও মুসলমানেরা যদি বিচারের জন্য তাদের আদালতের সম্মুখীন না হতো, বরং পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আইন, যা রয়েছে মুসলমানদের গ্রন্থে এবং ইতিহাসে, সেই শ্রেষ্ঠ আইন দ্বারা নিজেরাই নিজেদের বিচারকার্য সম্পন্ন করতো, তবে তো তাগুতের আদালতগুলো এতদিনে ব্যর্থ হয়ে যেতো ! কিন্তু আমরা দেখছি দুনিয়ার অসংখ্য মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় শাসন করছে স্বৈরাচারী ইসলামবিরোধী শাসক, আর সেখানের মুসলমানেরা আল্লাহর আদেশের বিপরীতে সেই তাগুতের আদালতেই বিচারপ্রার্থী হচ্ছে ! আমাদের আলেম-ওলামাগণও কি মুসলিম জাতিকে এই শিক্ষা দিতে পারেন না যে, তাগুতি আদালতকে বর্জন করাই হলো স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে, শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদের একটি ধাপ ? তারা কি এই শিক্ষা দেন না যে, মুসলমানদের জন্য বৈধ নয় বিচারের জন্য অমুসলিম কাফির-মুশরিক-মুনাফিকের শরণাপন্ন হওয়া ?

মুসলিম জাতি হলো জ্ঞানী জাতি। সৃষ্টির আদিতে আল্লাহ তায়ালা আদমকে (.) দিলেন সকল বস্তুর জ্ঞান। আর সকলে আল্লাহর আদেশে সেজদা করলেও সেজদা করতে অস্বীকার করলো ইবলিস। শুধু “আগুনের সৃষ্টি” হওয়ার অহংকারে সে জ্ঞানীকে সেজদা করলো না। সৃষ্টির আদি থেকেই তো জ্ঞানের সাথে অজ্ঞতার বিরোধ। মুসলমানের সাথে শয়তানের বিরোধ। মুসলিমরা হলো জ্ঞানচর্চাকারী জাতি; আর বিপরীতে শত্রুরা তো কেবল চায় আমাদেরকে অজ্ঞতার মাঝে ধরে রাখতে। কিন্তু কোথায় আজ তাদের জ্ঞানচর্চা ? কোথায় জ্ঞান-বিজ্ঞান-চিকিৎসা-আধ্যাত্মিকতায় সমগ্র দুনিয়া আমাদের শরণাপন্ন হবে, আর তা না হয়ে ঘটছে উল্টোটা ! আমাদের কেউবা পড়ে আছে মাটির নিচের ও আকাশের উপরের বিষয় নিয়ে, কেউবা আবার সেগুলো বাদ দিয়ে নিছক দুনিয়াবি বিষয়ে লিপ্ত। ইসলাম ও মুসলিমের সামগ্রিক চিত্রের দিকে আলোকপাত কি করছে কেউ ? কেউবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নির্দিষ্ট কিছু দিকে আলোকপাত করে জিহাদের নামে মানুষকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অবিবেচক যুদ্ধের দিকে, আর কেউবা আবার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নামে মুসলিম জাতিকে নখদন্তহীন বাঘে পরিণত করছে ! কেউবা ইসলামকে পরিণত করেছে ধ্যানমগ্ন সন্নাস্যীদের ধর্মে।

মুসলিম জাতিকে এই দুরবস্থা থেকে উদ্ধার করতে হলে আমাদের শুরু করতে হবে সেই গোড়া থেকে। যেখান থেকে শয়তানের সাথে আমাদের বিরোধ শুরু হয়েছিলো। সেই জ্ঞানচর্চার দিকে আমাদের ফিরতে হবে। আর তার আগে প্রয়োজন আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণ নিরহংকার আত্মসমর্পন। বিনয় হলো ইসলামের প্রথম শিক্ষা। “সদাপ্রভুর ভয় থেকে জ্ঞানের আরম্ভ”, আর জ্ঞানের সাথেই আসবে প্রজ্ঞা।
আমরা অস্থির অবিবেচক যুদ্ধবাজ জাতিও নই, আবার নখদন্তহীন অহিংস বাঘও নই। আমরা হলাম দুনিয়ার বুকে শ্রেষ্ঠ জাতি। হারিয়ে ফেলা মুসলিম গৌরব পুনরুদ্ধারে তাই আমাদের শুরু করতে হবে বিশ্বব্যাপী জ্ঞানচর্চার এক বিস্ময়কর বিপ্লব।

...বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে ? উপদেশ তারা-ই গ্রহণ করে, যারা বুদ্ধিমান।(সূরা আয-যুমার, ৩৯:, আল কুরআন)

নূরে আলম
ডিসেম্বর ২৭, ২০১৩।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা