আমার ক্লাস টেন পর্যন্ত আম্মু আমাকে স্কুলে আনা-নেওয়া করেছে। আমার ক্লাসমেটদের কাছে এটাকে স্বাধীনতা খর্ব করা বলে মনে হতো, কিন্তু আমার এতে কোনো আক্ষেপ ছিল না। কারণ বাসার বাইরে থেকে আমার পাবার মত কিছু ছিল না: আমার প্রয়োজনীয় সবকিছু আমি বাসাতেই পেয়েছি। না, এমন না যে আমাদের অনেক টাকা পয়সা ছিল আর খেলনা দিয়ে ঘর বোঝাই থাকত! বরং কোনো খেলনা বা কোনোকিছুর জন্য আবদারই করতাম না আমরা ভাইবোনেরা। কারণ আমরা ছোটবেলা থেকেই জানতাম, আমাদের সেই সামর্থ্য নেই। খুব টাকা-পয়সা কখনোই ছিল না, এখনও নেই। মাঠে-ঘাটে খেলতে যাওয়া নেই, ঘরভর্তি খেলনা তো দূরের কথা, একটা টিভি পর্যন্ত নেই -- কেবল ঘরের ভিতরে আর ঘরের দরজা-জানালা দিয়ে আম্মুর চোখ যতদূরে যায়, ততদূর পর্যন্ত ছিল আমাদের চলাফেলার সীমানা। সমবয়েসী প্রতিবেশীদের সাথে খেলা বা গল্প -- সেটাও ঐ সীমানার ভিতরেই। শুনলে খুব নিরানন্দ মনে হতে পারে, কিন্তু আমাদের আনন্দের জায়গাটা ছিল অন্যখানে। চিলের থেকে ছানাকে বাঁচানোর জন্য মা মুরগি ডানা দিয়ে বাচ্চাগুলোকে ঢেকে রাখে: সেই ডানার নিচেই আমাদের একটা ছোট্ট বাসা ছিল, ভাড়া বাসা। সেখানের একটা ঘরে মেঝে থেকে ছ
১. “ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদ” -- নানাজীর মুখ থেকে এই কথাটাই আমি সর্বশেষ শুনেছি। দরুদের শুরুর অংশটা পড়ছিলাম আমি, আর শেষ অংশটা নানাজী। ঠাণ্ডা লেগে বুকে কফ বসে গিয়েছিল; কারো সাথে কোনো কথা বলছিলেন না, শুধু মাথা নেড়ে আর ইশারায় কথা। কিন্তু আমি যখন বললাম, নানাজী, আমার সাথে সাথে দরুদ পড়েন, দরুদ পড়লে চোখের জ্যোতি বাড়ে -- তারপর আমরা অর্ধেক-অর্ধেক করে দরুদ পড়লাম। ওটাই ছিল নানাজীর সাথে আমার শেষ কথা। কতই না সুন্দর সে কথা! “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ” - “ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদ।” মুহাম্মদের (সা.) উপর দরুদই হলো সেই একটিমাত্র কাজ, যা আল্লাহ নিজে করেন, তাঁর ফেরেশতাকুল করেন এবং পাশাপাশি মুমিনগণকে সেই কাজে শামিল হতে আদেশ করেন। দরুদের অনেক মর্তবা। নানাজী এসব জানেন। তারপর আমার তসবিটা নানাজীর হাতে দিয়ে দিলাম। চলে আসার আগদিয়ে দেখলাম নির্জীব হয়ে শুয়ে আছেন, কিন্তু তসবি পড়ছেন। সেদিন ঢাকা মেডিকেলে নানাজী ভর্তি হবার দ্বিতীয় দিন; ছোট খালা আর আমার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম। প্রথমদিনও গিয়েছিলাম, আম্মুকে নিয়ে। তখন দেখেছি সাততলায় ৩ নং লিফটের সামনে মেঝেতে নানাজীকে রেখেছে। চারিদিকে পুলিশ, কাছে যাওয়া যা