সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অগুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় বিষয়ে বিবাদ করা প্রসঙ্গে

হে মানবজাতি ! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।” (সূরা আল হুজুরাত, ৪৯:১৩)
তারা যখন অবাঞ্ছিত কথাবার্তা শ্রবণ করে, তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, আমাদের জন্যে আমাদের কাজ এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কাজ। সালামুন আলাইকুম। আমরা অজ্ঞদের সাথে জড়িত হতে চাই না।” (সূরা আল-কাসাস, ২৮:৫৫)
আর অবশ্যই আমার প্রেরিত ফেরেশতারা ইব্রাহীমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিলো, তারা বললো – 'সালাম', তিনিও বললেন – 'সালাম'...” (সূরা হুদ, ১১:৬৯)
এবং তাদের (ছেলেদের) দিক থেকে তিনি (ইয়াকুব) মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন : হায় আফসোস ইউসুফের জন্যে! এবং দুঃখে তাঁর চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গেলো। এবং অসহনীয় মনস্তাপে তিনি ছিলেন ক্লিষ্ট।” (সূরা ইউসুফ, ১২:৮৪)
তিনি বললেন : আমি তো আমার দুঃখ ও অস্থিরতা আল্লাহর সমীপেই নিবেদন করছি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি যা জানি, তা তোমরা জানো না !” (সূরা ইউসুফ, ১২:৮৬)
যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গোনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারো, তবে আমি তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দেবো এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাবো।” (সূরা আন নিসা, :৩১)

অগুরুত্বপূর্ণ ও তুচ্ছ বিষয়ে ধর্মীয় বিবাদে জড়িয়ে পড়াটা একদিকে যেমন খুবই প্রোভোকিং, অপরদিকে তেমনি সহজ। এখন, এমন অনেককেই দেখা যায় যে, তারা কিছু কিছু তুচ্ছ বিষয়ে বিবাদ করছেন এবং কিছু কিছু তুচ্ছ বিষয়কে “অগুরুত্বপূর্ণ” বলে বিতর্ক করা থেকে বিরত থাকছেন। এই বিশেষ ধরণের কিছু ব্যক্তিসহ সামগ্রিকভাবে তুচ্ছ বিষয়ে ধর্মীয় বিবাদকারী প্রায় সকল ব্যক্তির ক্ষেত্রেই যে সমস্যাটি প্রধান, তা হলো কোনটি গুরুত্বপূর্ণ ও কোনটি অগুরুত্বপূর্ণ, তা নির্ণয় করতে না জানা। ইসলামের কোন বিষয়গুলো মৌলিক, প্রধান, অবশ্য পালনীয় ও ভিত্তিস্বরূপ – এগুলোর সংক্ষিপ্ত জ্ঞান না থাকা। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, জীবন চলার পথে অসংখ্য তুচ্ছ বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত থেকে হঠাৎ হঠাৎই নানাভাবে তারা আবিষ্কার করেন যে, “তাইতো ! এটা তো তুচ্ছ বিষয়” এবং তখন ঐ বিষয় থেকে মুক্তি লাভ করেন। কিন্তু অন্যান্য তুচ্ছ বিষয়ে সিরিয়াসনেস এবং অবস্থাভেদে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া অব্যাহত থাকে। যাহোক, তাত্ত্বিক কথা ছেড়ে উদাহরণে চলে আসি, কারণ দীর্ঘ তাত্ত্বিক আলাপে অধিকাংশের ধৈর্য্য কম।

কারো সাথে দেখা হলে, ফোনে কথা শুরু করলে কিংবা বাসায় ঢুকলে সালাম বলার অভ্যাস আমার। আমি সালাম দিই এভাবে : “সালাম”। আর ফোন রাখার সময়, বিদায় নেবার সময় কিংবা ঘর থেকে বেরোবার সময় বলি : “খোদা হাফেজ”। এই নিয়ে অনেকের কাছেই কথা শুনেছি। “সালাম” বললে উত্তরে সালাম না পেয়ে বরং “তোমাদের এই সালাম...” কিংবা “সালাম আবার কী ?” এজাতীয় কথা শুনেছি। তবুও বিষয়টি নিয়ে লেখার প্রয়োজন বোধ করিনি, কারণ এটা অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজকেও শুধুমাত্র এই বিষয়ে লিখছি না, বরং এক বৃহত্তর টপিকে লিখছি।

জানিনা লেখাটি কে কে পড়ছেন, তবে নিশ্চয়ই তাদের মাঝে এমন লোক থাকবেন, যিনি এজাতীয় বিষয়কে হেসেই উড়িয়ে দেবেন : “নামাজের বৈঠকে বসে থাকার সময় আঙ্গুলের যতটুকু হাঁটুর বাইরে সামনে এগিয়ে যাবে, ততটুকু আগুনের কেচি দিয়ে কাটা হবে পরকালে।” কিংবা : “বাম হাতে খাবার খাওয়া হারাম” অথবা “দাঁড়িয়ে পানি খেলে শয়তানের পেশাব খাওয়া হয়” ইত্যাদি। এখন, যারা এগুলোকে সঠিক নয় বলছেন, এসব উদ্ভট কথা শুনে হাসছেন, তাদের কেউ কেউ আবার এই বিষয়গুলিকে সিরিয়াসলি নেন : “নামাজের সময় টাখনু অবশ্যই বের করে রাখতে হবে” কিংবা “সালাম বলা যাবে না, আসসালামু আলাইকুম বলতে হবে” ইত্যাদি।

এসব তুচ্ছ বিষয়ে বিবাদের একটা bigger picture দেখানোর জন্য আরো কয়েকটা বিষয়ের অবতারণা করছি। কিছুদিন আগেই ১০ই মহররম পার করলাম আমরা। তখন কিছু মানুষের বিবাদের বিষয় হয়ে উঠেছিলো শোক প্রকাশ করা আদৌ ঠিক কিনা, শোক প্রকাশে বুক চাপড়ানো যাবে কিনা, মাথা চাপড়ানো ঠিক কিনা, ইত্যাদি।
ইউনিভার্সিির হেডস্যার একদিন ক্লাসে বলেছিলেন, বিয়ের দিনে বিশাল খাওয়া দাওয়া, এসব কী ? বিয়ে করে মসজিদে কিছু খেজুর বিলিয়ে দেবেন, ব্যস।
আযানের সময় চুল না ঢাকলে শয়তান মেয়েদের চুলের ভিতরে লুকায়।
নখে নেইল পলিশ থাকলে ওজু হবে না, আঙটির নিচে পানি না গেলে ওজু হবে না; এবং আরো অনেক, অনেক কিছু।

এখন, যে মানুষটা আজানের সময় শয়তান কোথায় লুকায়, এই “উচ্চস্তরের” জ্ঞানের অধিকারী, সেই মানুষটাকে মুসলিম বিশ্বের শত্রুদের শনাক্ত করতে দিলে সে দুঃখজনকভাবে ব্যর্থ হয়। বাম হাতে খাবার খাওয়াকে হারাম ফতোয়া দানকারী ব্যক্তি বিভিন্ন জায়গায় 'ঘুষ' নয়, বরং স্বেচ্ছায় 'খুশি' হয়ে কয়েক শ' কিংবা হাজার খানেক টাকা দিচ্ছেন কাউকে, যেনো তার কার্য উদ্ধার হয়। আবার, তিনতলার বারান্দা থেকে কোরবানির মাংস ছুঁড়ে ছুঁড়ে গরীব মানুষকে বিলানো “ধনী” ব্যক্তিটি কিন্তু ঠিকই গরুর মাংসকে তিন ভাগ করে গরীবকে এক ভাগ দিয়ে দিচ্ছে।

যাহোক, সেই সালামের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। কিছুদিন আগে আমি নই, আমার এক ব্ন্ধু 'সালাম' বলে বিপাকে পড়লো। পরদিন আমার সাথে দেখা করার সময় গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলছে : “এখন মাথা দুইদিক গিয়ে গরম।” জিজ্ঞাসা করলাম, “একদিকে তো 'সালাম' গরম করলো, আরেকদিকে আবার কীসে ?”
াহোক, ব্যক্তি উল্লেখ না করে সংক্ষেপে ঘটনাটি এই :
সালাম মানে শান্তি। এখন কেউ যদি আমার দিকে তাকিয়ে বলে : শান্তি। তাহলে আমি কী বুঝবো ? এইজন্য আমি কোনো জবাব দেই নাই।”
– “এটা তো বোঝাই যায় যে সে আপনাকে সালাম দিচ্ছে। আমরা কি কারো সাথে দেখা হলে বলি, 'জনাব ওমুক সাহেব, আপনি কেমন আছেন ?' আমরা বলি, 'কী খবর ?' এতেই বোঝা যায় যার দিকে তাকিয়ে বলছি, তার খবর জানতে চাইছি।”
..
কোরআনের সূরা কাসাসের ৫৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, সালামুন আলাইকুম।”
– “এইযে দেখেন, সূরা হুদ এর ৬৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ইব্রাহীম নবী দুইজন ফেরেশতার উদ্দেশ্যে বললেন, 'সালাম' এবং সেই দুইজনও তাঁর উদ্দেশ্যে বললেন, 'সালাম'।”
আমাদের দেখতে হবে নবী-রাসূলগণ কী বলেছেন, সাহাবীগণ, তাবে-তাবেঈগণ কী করেছেন...।”
– “হাদীসের অকাট্যতা ও সংরক্ষণশীলতা বেশি নিশ্চিত, নাকি কোরআনের অকাট্যতা বেশি নিশ্চিত ? তাহলে অধিক অকাট্য সূত্র কোরআন যেটাকে বৈধ করেছে, সেটাকে মেনে নিতে সমস্যা কোথায় ?”
খন এই দুইটার মাঝে তুমি কোনটা নেবে ?
– “দুইটাই বৈধ। সালাম বলাও বৈধ, সালামুন আলাইকুম বা আসসালামু আলাইকুম বলাও বৈধ। আপনি যেটায় কমফর্ট ফিল করেন, যেটায় অভ্যস্ত, সেটাই ব্যবহার করবেন।”
আমাদের দেখতে হবে নবী-রাসূলগণ কী বলেছেন, সাহাবীগণ, তাবে-তাবেঈগণ কী করেছেন...।”
– “আরে ভাই কোরআন যেটাকে বৈধ করেছে, তার জন্য হাদীসে যাচ্ছেন কেনো ? আর যে হাদীস আনছেন, সেটা যে সত্যিই নবীজী (সা.) করেছেন, সেটা ১০০% নিশ্চিত হয়েছেন তো ?
খন অথেনটিসিটি নিয়ে কথা বললে তো...। কুরআনও...
অর্থাৎ, অথেনটিসিটি বিচার করার দরকার নাই, অন্ধ বিশ্বাস করতে হবে।

কয়েকটি কল্পিত প্রশ্ন।
'বাম হাতে খাবার খাওয়া হারাম' – এটা কি আল্লাহ কুরআনে হারাম করেছেন ? না। হাদীসে আছে ? কোন্ হাদীসে আছে ? ঐ হাদীসের অথেনটিসিটি বিচার করেছেন ? লোকে “সিহাহ সিত্তাহ” বললে আপনিও তাকে সহীহ বলে মেনে নেবেন ? ওগুলো যে সহীহ, তার প্রমাণ কী ? কেউ সহীহ লেবেল লাগিয়ে দিলেই কি তা সহীহ হয়ে যায় ?”
খানে এসে বিষয়টা অন্ধ বিশ্বাসে ঠেকবে নিশ্চিত।

'বাম হাতে খাবার খাওয়া হারাম' – এটা তো কুরআনে নেই। কোথায় পেয়েছেন ? ওমুক হুজুর বলেছে ? হুজুর বললেই তা হারাম হয়ে গেলো ? হালাল-হারাম কি হুজুরের কথায় নির্ধারণ হয় ? হুজুর কি ভুল করতে পারে না ? একবারও কি দেখেছেন যে এটাকে আল্লাহ কুরআনে হারাম করে নাই ?
খানে এসে অন্ধ ব্যক্তি পূজার মত ব্যাপারে ঠেকবে বিষয়টা।

'টাখনু বের না করলে নামাজ হবে না' – আল্লাহ বলেছেন ? তাহলে কোথায় পেয়েছেন ? ঐ সোর্সের অথেনটিসিটি বিচার করেছেন ? করেননি। নিশ্চিত না জেনেই একটা বিষয় প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। আল্লাহ যে একাজ নিষেধ করেছেন, তা জানেন ? শীতের দেশের মানুষেরাও কি প্রচণ্ড শীতে টাখনু বের করে নামাজ পড়বে ? নাকি তারা মোটা মোজা পরতে পারবে ? তাহলে কি তাদের জন্য এক নিয়ম, আমাদের জন্য আরেক নিয়ম ? আল্লাহ কি নামাজ কবুলের শর্ত শীত-গ্রীষ্মের উপর নির্ভর করিয়েছেন ?
খানে এসে বিষয়টা ঠেকবে ইসলামকে কেবল আচার-অনুষ্ঠান হিসেবে পালন করাতে : “লোকে করে, তাই আমিও করি।”

এই বাস্তব ঘটনাটি দিয়ে উপসংহার টানতে চাই।
কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (.) র শাহাদাতের ঘটনা থেকে শিক্ষাগ্রহণ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত এক পোস্টে এই কমেন্ট পেয়েছিলাম : যদি কারবালার সেই বিয়োগান্তক ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে গিয়ে আমাদের শোক পালন করতে হয়, মাতম করতে হয়, কপাল চাপড়াতে হয় তাহলে সেটা কেমন ধরণের শিক্ষা রে ভাই?
উত্তরে লিখেছিলাম :
"শোক পালন করা", "মাতম করা", "কপাল চাপড়ানো" এই কাজগুলোর কোনো সংজ্ঞায়ন না করেই বললেন : "সেটা কোন ধরণের শিক্ষা রে ভাই ?"কে বললো যে কারবালার শিক্ষা হলো কপাল চাপড়ানো, মাতম করা, শোক করা ?বরং শোক করা, বুক-কপাল চাপড়ানো তো মানুষের দুঃখ প্রকাশের একটি স্বাভাবিক উপায়। মানুষের প্রিয়জন যখন মারা যায়, বাবা-মা, সন্তান মারা যায়, তখন মানুষ রোবটের মত অশ্রুবিহীন চোখে দাঁড়িয়ে থেকে বলে না : "আল্লাহর মাল আল্লায় নিয়ে গেছে"। বরং কষ্টের কারণে সে অশ্রুসজল হয়, বারবার কেঁদে ওঠে। আমাদের দেশে গ্রামের মানুষকে দেখেছেন, বিশেষ করে মহিলাদের, আত্মীয়-স্বজন মারা গেলে বাড়ির উঠানে মাটিতে বসে একটি বিশেষ ভঙ্গিতে মাটিতে এক দফা হাত ঘুরিয়ে তারপর কপালে সেই হাত দিয়ে আঘাত করে এবং কান্না করে ? ঐ মহিলারা কি তাহলে গুনাহের কাজ করছে ?কোনো বাড়িতে ডাকাতি হলে কিংবা দোকানে বড় ধরনের চুরি হলে মানুষকে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। "হায় আমার কী হলো" "আমার সর্বনাশ হয়ে গেলো" "ও আল্লারে, কী হলো আমার" ইত্যাদি বলে মাথা চাপড়ায় (মাথায় হালকা আঘাত করা)। ঐ মানুষ কি গুনাহের কাজ করছে ?নদীতে বাড়ি-ঘর-ভিটা-মাটি নিয়ে গেলে নদীর পাড়ে গালে হাত দিয়ে মানুষকে বসে থাকতে দেখা যায়। ঐ ব্যক্তি কি গুনাহ করছে ?বছর বছর মৃত সন্তানের মৃত্যুদিবসে মাকে মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কাঁদতে দেখা যায়। ঐ মা কি গুনাহ করছে ? বাবা হয়তো আর কাউকে অশ্রু দেখতে দিতে চায় না বলে নিজের ঘর আটকে বসে অশ্রুবিসর্জন করছে সন্তানের মৃত্যু দিবসে। ঐ বাবা কি গুনাহ করছে ?এতো কেবল বাংলাদেশের মধ্যেই মানুষের বিভিন্ন প্রকার শোক প্রকাশের ধরণ।
আর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ কত বিচিত্রভাবে যে শোক প্রকাশ করে
! তাই বলে কি তারা গুনাহ করছে ? শিরক করছে ? কিংবা অন্যকিছু ?আমাদের মা-খালা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে শোক করলে সেটাকে আমরা কিছু বলবো না, কিন্তু ভিনদেশী কোনো মুসলমান যদি শোকের কারণে বুক চাপড়ায়, মাথা চাপড়ায়, তাহলেই বলবো : "সেটা কোন ধরণের শিক্ষা রে ভাই ?"
ভাই
, দুঃখ পেলে কী করতে হবে, রাস্তায় যেতে যেতে নাকে গন্ধ লাগলে কী মুখভঙ্গি করতে হবে, কোনো সুন্দর ফুল-পাখি-ব্রিজ দেখলে কত পার্সেন্ট আনন্দ-বিস্ময় প্রকাশ করতে হবে, তার জন্যও কি আপনারা "রেফারেন্স" খুঁজবেন ? নাকি কেউ হাতিরঝিল ব্রিজ দেখে "ওয়াও ! কী চমৎকার !" বলে উঠলে বলবেন : "এটা আবার কোন ধরণের শিক্ষা রে ভাই ?"
মহানবী মুচকি হাসতেন বলে আমরা কেউ যদি সবগুলি দাঁত বের করে হাসি
, তবে কি বলবেন : "এ কোন ধরণের শিক্ষা রে ভাই ? নবীর সুন্নাত পালন করো না তুমি।" ???
শোক প্রকাশ মানুষের একটি স্বভাগগত বিষয়। ব্যাপার হলো
, যারা ইমাম হুসাইনের (.) শাহাদাতের সেই মর্মান্তিক ঘটনায় দুঃখ বোধ করে না, কষ্ট বোধ করে না, সেই ঘটনার স্মরণে যাদের বুক বেদনায় ব্যথিত হয়ে পড়ে না, তারাই অন্যদের দিকে, যারা কিনা সেই ঘটনার স্মরণে শোকার্ত হয়ে পড়ে, তাদের দিকে আঙুল তুলে বলে : "এ কেমন শিক্ষা রে ভাই ?" আর বলে : "শোক পালন করা, মাতম করা, কপাল চাপড়ানো" ইত্যাদি সুন্নাহ বহির্ভুত কাজ।” “

এই উদাহরণ দিয়েই উপসংহারে আসতে চাই।
যেসব ঘটনার রেফারেন্স দিলাম, এগুলো কূপমণ্ডূকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এই সমস্যার মূল হলো ইসলামের বেসিক বিষয় কী, সে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকা এবং শাখা-প্রশাখাগত অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সিরিয়াসলি পালন করা। তখন এজাতীয় প্রশ্নের উদ্ভব হতে পারে : “আমার বয়ফ্রেন্ড নামাজ পড়ে না। এমতাবস্থায় ওর সাথে আমার সম্পর্ক রাখা ঠিক হবে কিনা ?” যদিও অনেকেই বলে থাকেন যে, হ্যাঁ, আমি ঈমানের মূল বিষয়গুলি জানি, আর তা হলো ঈমানে মুফাসসাল – “আমানতু বিল্লাহি ওয়া মালাইকাতিহী ওয়া কুতুবিহী....” কিন্তু যদি প্রশ্ন করেন যে “ঈমান” কী ? কেনো পাঁচটি হলো না ? কেনো ওমুক বিষয়টা থাকলো না ? ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর হবে : “ছোটবেলায় পড়েছি, তাই এগুলো ইমানের মূল স্তম্ভ।” কিন্তু “কেনো ?” এই প্রশ্নের সদুত্তর তাদের কাছে নেই। আসলেই কি মুসলমান হবার মূল ভিত্তি ছয়টি, সাতটি নাকি তিনটি – তা তারা রিজনিং করে দেখেনি কখনো। ফলস্বরূপ মুখস্থ পারলেও ঈমানের স্তম্ভগুলো সম্পর্কে “কেনো” এর সদুত্তর দিতে পারে না, আর বেসিক বিষয়ে এধরণের আচার-অনুষ্ঠানমূলক, অন্ধ বিশ্বাসমূলক ধ্যান-ধারণার কারণে শাখা-প্রশাখাগত তুচ্ছ বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হয় – টাখনু, চুল, নেইল পলিশ, খেজুর, বাম হাতে খাওয়া, চুলের ভিতরে শয়তান ঢোকা, নামাজের কাতারে ফাঁকা স্থানে শয়তানের নামাজ পড়া, বুক-মাথা চাপড়ানো, দাড়ি এক বোতল পরিমাণ রাখা... ইত্যাদি। মৌলিক বিষয়কে বিচারবুদ্ধির সর্বজনীন দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করে বিশ্বাস করা যে জরুরি, এই কথা যদিওবা তাদেরকে বলেন, তারা বুঝুক বা না বুঝুক, সেই অগুরুত্বপূর্ণ ও তুচ্ছ বিষয়েই বিবাদে লিপ্ত থাকে। এর কারণ হলো, এসব তুচ্ছ বিষয়ে বিবাদ করতে তেমন কোনো দৃঢ় জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। এসব বিষয়ে বিবাদ করলে নিজেকে কঠোর ইসলাম চর্চাকারী বলে প্রমাণ করা যায়। এসব বিষয়ে বিতর্ক করে সহজে মানুষের নজর কাড়া যায়। আর এসব বিতর্কে দৃঢ় ভিত্তির প্রয়োজন হয় না, কারণ এগুলো হলো অপযুক্তি (ফ্যালাসি) নির্ভর, সুতরাং এক টপিক থেকে আরেক টপিক, এক অপ্রমাণিত রেফারেন্স থেকে আরেক রেফারেন্স, সেখান থেকে আরেক জায়গায়, এভাবে করে চালিয়ে যাওয়া যায়।

বিয়ে করলে যে আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবকে মাংস পোলাও খাওয়ানো যাবে না, এমন কোনো বাধ্য বাধকতা ইসলামে নেই। আর নবীজি (সা.) খেজুর খেতেন বলে আমাদেরও খেজুর খেতে হবে, খেজুরের মধ্যে অসংখ্য রহমত ও সওয়াব নিহিত আছে, এমন কথারও কোনো যৌক্তিকতা নেই। খাবার খাওয়ার সময় ডান হাতে কি বাম হাতে খাওয়া হলো, এটি মুখ্য নয়, মুখ্য নয় খাবার গালের ডানদিকে কিংবা বামদিকে পুরে দেয়া। বরং আল্লাহর দেয়া সব খাবারই নেয়ামত, আর এই অসংখ্য নেয়ামতের যেটি-ই আমি খাই না কেনো, তা হালাল উপার্জনের মাধ্যমে পাওয়া কিনা, এটিই গুরুত্বপূর্ণ।

সালাম (৪৯:১৩) বললাম কি সালামুন আলাইকুম (২৮:৫৫) বললাম, সেটি গুরুত্বপুর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো আমি মুখে “সালাম” বা “সালামুন আলাইকুম” উচ্চারণ করার সাথে সত্যিই আল্লাহকে স্মরণ করে ঐ ব্যক্তির জন্য শান্তি প্রার্থনা করছি কিনা, নাকি মনে মনে গালি দিচ্ছি।

নামাজের সময় টাখনু বের হয়ে থাকলো কিনা, এর কোনো গুরুত্ব নেই। বরং গুরুত্বপূর্ণ হলো পবিত্র অবস্থায় পবিত্র পোশাকে নামাজ পড়া এবং নামাজের বলা কথাগুলোর অর্থ জানা (:৪৩)

ওজুর সময় আঙটির নিচে পানি গেলো কিনা, কিংবা নেইল পলিশ থাকলো কিনা, এগুলো তুচ্ছ বিষয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ওজুর মূল উদ্দেশ্য অর্জন করা, যা হলো মানসিক পবিত্রতা ও প্রস্তুতি।

শোকগ্রস্ত হয়ে বুক-মাথা চাপড়ানো কিংবা তীব্র দুঃখে কাতর হয়ে পড়ায় কোনোই দোষ নেই (১২:৮৪), িন্তু গুরুত্বপূর্ণ হলো সেই শোকগ্রস্ত অবস্থায়ও আল্লাহকে স্মরণ রাখা (১২:৮৬)

টাখনু বের না করলে নামাজ হবে না, টুপি না পরলে নামাজ হবে না, আঙটির নিচে পানি না গেলে নামাজ হবে না, বাম হাতে খাবার খাওয়া হারাম, নারী নেতৃত্ব হারাম, গান-বাজনা হারাম, ইত্যাদি কোরআন বহির্ভূত বানোয়াট হারাম মানার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কুরআনে নিষিদ্ধ বড় বড় গুনাহ থেকে বিরত থাকা (:৩১)। আল্লাহ যাকে কুরআনে হারাম করেন নাই, কোনো ব্যক্তির অন্ধ অনুসরণে সেটাকে নিজের জন্য হারাম করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আল্লাহর দেয়া কুরআন পড়ে সেখানে উল্লিখিত হালাল-হারাম মেনে চলা।
জোরে আমিন বলা কিংবা দাঁড়িয়ে মুনাজাত করা, রাফে ইয়াদান করা কিংবা জামা'আতের নামাজে গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়ানোর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো হালাম উপার্জন দ্বারা পুষ্ট শরীরকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেজদায় নত করা, নামাজের কথাগুলো বুঝে বুঝে পড়া, এবং এমনভাবে নামাজ পড়া, যেই নামাজ গোটা জীবনটাকে অশ্লীলতা মুক্ত করে দেয় (২৯:৪৫)

যে ব্যক্তির ইসলামী পড়াশুনার সিংহভাগেই কুরআন নেই, যে ব্যক্তির উপস্থাপিত ইসলামী দলীলের সিংহভাগেই কুরআনের রেফারেন্স নেই, কিংবা যে ব্যক্তি কখনোই কুরআন পড়েনি, সে কী করে এসব ভ্রান্তি দূর করবে ! কুরআন থেকে দূরে থাকার কারণে এসব ব্যক্তি কূপমণ্ডূকতায় আপতিত হয়। তখন দুনিয়ার অসংখ্য হালাল খাবারের মাঝেও খেজুরকে বিশেষ পুন্যময় খাবার মনে করে, কিংবা মিসওয়াক করলে সওয়াব পাওয়া যাবে ইত্যাদি মনে করে। দুনিয়ার অসংখ্য মুসলিমের দুঃখ কষ্ট প্রকাশের ধরণ যে অসংখ্য রকম হতে পারে, কিন্তু তা সত্ত্বেও যে তারা আমাদের মুসলিম ভাই-বোন – তা মনে না করে অসংখ্য ভ্রান্তিযুক্ত দলীলে শোক করার নিয়ম খুঁজে বেড়ায়। এই কূপমণ্ডূকতার ফসল হলো এমন ধারণা যে : দুনিয়ার সকল মুসলমান কারখানায় তৈরী একদল রোবটের মত ঠিক একই ভঙ্গিতে নামাজ পড়বে, একইভাবে একই স্বরে আমীন উচ্চারণ করবে, একইরকম পোষাক পরবে এবং একইরকম সম্ভাষণ ব্যবহার করবে। হয়তোবা সবার মুখের ভাষাও হবে আরবী ! এজাতীয় অলীক কল্পনায় মেতে থাকে তারা। একারণেই নিজেদের পছন্দের বাইরের কিছু দেখলেই সেই মুসলমানকে কাফির পর্যন্ত বলতে দ্বিধা করে না। অথচ এইযে দুনিয়ার বুকে হাজার প্রকারের মানুষ, শত রকম বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান, শোক প্রকাশের অসংখ্য ধরণ, নামাজের বিভিন্ন প্রকারভেদ, পোষাক-আশাকের বৈচিত্র্য, সম্ভাষণের বিচিত্রতা, ইত্যাদি সত্ত্বেও ইসলামের মৌলিক বিষয়ের ভিত্তিতে মুসলমানকে চিনে নেয়াই হলো আল্লাহর পরীক্ষা। ইসলামের শাখা-প্রশাখাগত বিষয়ে মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও তাকওয়ার ভিত্তিতে পরস্পর ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি করাই হলো মুমিনের জন্য আল্লাহর পরীক্ষা। আল্লাহ তায়ালা বলেন :
হে মানবজাতি ! মি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।(সূরা আল হুজুরাত, ৪৯:১৩)

আর অগুরুত্বপূর্ণ তুচ্ছ বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকতে হলে গভীরভাবে জানা প্রয়োজন, ইসলামের কোন বিষয়গুলো মুসলিমদের ঐক্যের গাঁথুনি প্রচলিত ছয়-সাতটি বিষয় নয়, কোন বিষয়গুলি প্রকৃতই ইসলামের মূল ভিত্তি। আর সেজন্যে ক্ষেত্রবিশেষে কুরআনের উর্ধ্বে উঠে শুধুমাত্র বিচারবুদ্ধি (আক্বল – reason) এর দ্বারা স্রষ্টা, আখিরাত ও রিসালাত বিষয়ে প্রয়োজনীয় অকাট্য জ্ঞানে উপনীত হতে হবে। তবে সেটা ভিন্ন আলোচনার বিষয়।

নূরে আলম

ডিসেম্বর ১, ২০১৩।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা