সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বন্ধু - বন্ধুত্ব - জন্মদিন

ডিসট্র্যাকটেড মানুষের সাথে কথা বলা কঠিন। অনেকটা কথা বলার পর দেখা যায়, আমার কথা সে কিছুই খেয়াল করে নাই। তখন রাগ হয়। আর যে মানুষের সাথে রাগ করা যায় না, তার ক্ষেত্রে হয় কষ্ট। কিন্তু কিছু করার থাকে না।
*                                        *                                        *                                        *
ব্লগ লেখার সময় হঠাৎ করে উঠে যেতে হলে কিংবা কারেন্ট চলে গেলে পরে আবার বসলে সেই আগের মুড আর থাকে না। ভালোলাগার মুডে যখন-তখন যাওয়া যায় না, কিন্তু দুঃখ-বিষাদকে যেকোনো পরিস্থিতিেত মনের ভিতর থেকে টেনে বের করা যায়। যাহোক, আমি মনে হয় না দুঃখ-বিষাদের গল্প লিখব এখন।
*                                        *                                        *                                        *
গত ৫ই জুন আমার বয়স একুশ হলো। বন্ধু-বান্ধবদের কারণে দিনটা খুব ভালো কেটেছে। তবে ব্লগ লেখা হয় নি। অভ্যাসমত ডায়রিও না। সেদিন থেকে প্রতিদিন চেষ্টা করে আজ একটু লিখতে বসেছি। ভেবেছিলাম জন্মদিনের ঘোরাঘুরির ছবিসহ সুন্দর করে সাজিয়ে বেশ মজার একটা ব্লগ লিখব। কিন্তু করা হয় নি। এখন আর সেই মুড নেই। আনন্দানুভুতি তো আর বেশিক্ষণ ধরে রাখা যায় না। আর সেদিনের কোনো বিষাদের গল্পও নেই যে তা লিখব। তাই আমার একুশতম জন্মবার্ষিকী নিয়ে কিছু লেখার নেই। তবে একটা লগ রাখা দরকার। সেটা হলো, আমি বড় হয়েছি। একেবারেই না পারলেও কিছু শত্রু-মিত্র বানিয়েছি। সে গল্প করে কাজ নেই। তবে ১৮-১৯-২০-২১ -- এই চারটি জন্মবার্ষিকী আমার life-graph এ খুব সিগনিফিক্যান্ট। কখনো গিফট পেয়েছি, কখনো পাই নি, কখনো বন্ধু পেয়েছি, কখনোবা হারিয়েছি -- বেশ, বেশ। জীবনটা নিতান্তই পানসে হবার চেয়ে একটু ঘটনাবহুল হওয়া ভালো। নইলে জীবনটা পাঠ্যবইয়ের ভালো ছাত্রের মত নিরানন্দ হয়ে যায়।

একটা সময় ছিলো (নাকি এই সময়টা কোনো নির্দিষ্ট বয়সের জন্য নির্ধারিত, সবারই আসে ?), যখন রাত বারোটার পর "উইশ" আশা করতাম (মনে মনে, খুবই লুকিয়ে), আর মোবাইলের দিকে খেয়াল রাখতাম, "টুং" শব্দে কোনো মেসেজ আসে কিনা। কিংবা -- ঐ ফোনের আলো জ্বলে উঠলো কিনা !
সে সময় শেষ।
এই "বারোটার পর জন্মদিনের উইশ" নিয়ে খুব কষ্টের একটা গল্প শুনেছি। সেতো টিনেজ কষ্ট -- এখন হাস্যকর লাগতে পারে; কিন্তু কোনো কষ্টই কম নয়, যে ভোগ করে তার কাছে। গল্পটি এমন : "অমুক মেসেজ দিলো, অমুক ফোন করে উইশ করলো, আমি শুধু দেখতেসি রাত বারোটা পেরিয়ে যাচ্ছে, ও তো মেসেজ দেয় না। ফোনও করে না। একটা মিনিট করে আমি ওয়েইট করতেসি -- এভাবে বারোটা পাঁচ, দশ, সোয়া বারোটা -- না, ও তো উইশ করলো না। আমার তখন বুকের ভিতরটায় মোচড় দিচ্ছে শুধু। সাড়ে বারোটা বেজে গেলো -- কষ্টে আমি ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেললাম। শুয়ে পড়লাম, দেখি আমার চোখ ভিজে গেসে...।" ভালোবাসার চারা গল্পও বলা চলে একে !
তবে ভালোবাসা ভালো। যারা এমন ভালোবাসে, তাদের ভালোবাসার ক্ষমতা বাড়ে। আমার মত সবকিছুকে "শতভাগ সত্য-সঠিক" এর সাথে তুলনা করা মানুষদের মাঝে এই বিষয়টা ঘটে না। তাদের জটিলতা বাড়ে। অনেক গুনই হয়তো বাড়ে, কিন্তু সহজ-সাধারণ জীবন যাপনের যোগ্যতা শেষ হয়ে যায়।
হয়তো একে মনুষ্যত্বের উন্নতি বলবে কেউ কেউ, কিন্তু -- কে জানে !
এসব তত্ত্বকথা থাক।

যা বলছিলাম -- এখন আর কেউ উইশ না করলেও দুঃখ পাই না ! এমনকি খেয়ালও হয় না।
*                                        *                                        *                                        *
"বন্ধু" বিষয়ক আমার কিছু ব্যক্তিগত তত্ত্ব কপচাই, যদি কিছু মনে না করেন। হয়তো তত্ত্ব বলবো না, তবে স্কুলে থাকতে আমার বন্ধু হয়েছিলো খুব কম, বোধহয় ক্লাস নাইনের শেষটা কি টেন এর শুরুতে। সবার সাথেই আমার ভালো সম্পর্ক ছিলো, তবে আমার আরোপিত বন্ধুত্বের শর্তানুযায়ী রোবট আবিষ্কৃত হয় নি তখনও, তাই শেষমেষ একজনকে ডায়রির কাছে "বন্ধু" হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলাম ! তবে বাইরে এসব কিছু ছিলো না, কেউ বন্ধু বললেও তাতে আমার আপত্তি থাকতো না। এসবই আমার মনে মনে হিসাব ছিলো।
তারপর কলেজে উঠে বেশ কতগুলো বন্ধু হলো ! ও হ্যাঁ, স্কুলের সেই বন্ধুটির সাথে দীর্ঘদিন যোগাযোগ ছিলো না টেকনোলজির অভাবে, আর পরে যে কানেকশান এস্টাবলিশ হলো, তাও ক্ষীণ। যাহোক, কলেজের বন্ধুদের নিয়ে আমি মেতে উঠলাম, এবং এটা আমার প্রথম "মেতে ওঠা"।
তারপর আমি বড় হতে থাকলাম। কিন্তু ছেলেমানুষি অনুভুতিগুলো কারো উপর চাপিয়ে দিয়ে পুরোপুরি বড় হতে পারলাম না ! যাহোক, কিছুটা বড় হবার পর উপলব্ধি করলাম -- আদর্শের ভিত্তিতে যে বন্ধুত্ব হয়, সেটাই সবচে' দীর্ঘস্থায়ী হয়, আর অন্যান্য বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকতে হয় !
কিন্তু আমার কলেজের বন্ধুত্বগুলো সেই নীতির ভিত্তিতে ছিলো না। তারপর আদর্শিক কারণে বন্ধুগুলো ছুটে যেতে লাগলো ! আমি অবশ্য এই বন্ধুগুলির ক্ষেত্রে মনে মনে আর কোনো "বন্ধুত্বের সংজ্ঞা" ঠিক করি নাই। একটা বৃত্ত ছোট হতে হতে প্রায় বিন্দুতে ঠেকলো। ছোট হয়ে যাওয়া বৃত্ত পাশে রেখে ডায়রির কলম হাতে তুলে কি একটু কষ্ট বোধ করলাম ?
*                                        *                                        *                                        *
আমি বড় হতে থাকলাম। তারপর আমার বয়স একুশ হলো। এখন কেউ মেসেজ না দিলে দুঃখ পাই না, মোবাইলের দিকে মেসেজ / ফোনের আশায় তাকিয়ে থাকি না, বার্থডে উইশের জন্য ফেসবুক চেক করি না কিংবা রাত বারোটা পর্যন্ত জাগি না। ইউনিভার্সিটিতে উঠেও আরো বন্ধু হয়েছে, সারা জীবন-ব্যাপী-ই বুঝি এমনটা হতে থাকবে। বন্ধু তৈরী হবে, ছুটে যাবে, কাউকে বা আমি নিজেই নখ কাটার মত করে বিনা-ব্যথায় ফেলে দিই, কেউবা আবার যাবার সময় হৃৎপিন্ডের কিছু শেকড় ছিঁড়ে রক্তপাত ঘটিয়ে যায় !

মানুষের জীবন যে !




নূরে আলম,
জুন ৮, ২০১২।

মন্তব্যসমূহ

  1. জীবনের পথটাই যেন কেমন এখন আর তখনের কোন মিল পাওয়া যায় না ।তবুও পথ চলতে হবে এই পথের শেষ শুধু মৃত্যুই ঘটাতে পারে । আর পৃথিবীর কাছে চিরদিন বাঁচতে চাও যদি তবে তাকে কিছু দিয়ে যাও তাহলে তোমাকে সে স্মরণ রাখবে । ভাল লিখেছো ...

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[ব্লগে কমেন্ট পোস্ট করার পরও যদি না দেখায়, তাহলে দ্বিতীয়বার পোস্ট করার প্রয়োজন নেই। খুব সম্ভবত স্প্যাম গার্ড সেটাকে সরিয়ে নিয়েছে, আমি পাবলিশ করে দেবো।]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা