সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ব্ল্যাক ম্যাজিক ও পথ

১.
ব্ল্যাক ম্যাজিক মানুষ করে থাকে দুইভাবে: জ্বীন ব্যবহার করে ও শক্তির জগতের কিছু বিশেষ key এর মাধ্যমে। এর বাইরে জ্বীনদের ভিতর থেকে কেউ কেউ নিজে থেকে এসেই মানুষকে ডিসটার্ব করে থাকে। আপনি জ্বীন স্বীকার করেন বা না করেন, ব্ল্যাক ম্যাজিককে সত্য জানেন বা না জানেন, ধার্মিক হন কি নাস্তিক হন -- আপনি এগুলো দ্বারা অ্যাফেক্টেড হতে পারেন, আপনি এর বাইরে নন।

২.
মডার্ন টাইমে এসবের প্র্যাকটিস কমে গেছে (luckily)। তবুও কিছু মানুষ যাদু-বান-টোনা ইত্যাদির চর্চা করে থাকে এবং টাকার বিনিময়ে কিংবা নিজে থেকেই কারো প্রতি শত্রুতা করে ব্ল্যাক ম্যাজিক থ্রো করে। এগুলো কাটানোর উপায় কী?
দেখা গেছে, দেশ ছেড়ে সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে বসবাস করছে, তাকেও দেশ থেকে যাদু করেছে এবং নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। ব্ল্যাক ম্যাজিক ইত্যাদিকে অস্বীকারকারী নিতান্তই নাস্তিক টাইপ মানুষও ব্ল্যাক ম্যাজিকের শিকার হয়ে নাচার হয়ে পড়েছেন, এমন ঘটনাও আছে। এগুলো থেকে উদ্ধার পাবার উপায় কী? কিংবা প্রতিরোধমূলক কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে?

৩.
ব্ল্যাক ম্যাজিক জিনিসটা কোনো বিশেষ ধর্মের সাথে জড়িত নয়। জ্বীন জাতির সাথে কমিউনিকেইট করাটা হিন্দু-মুসলিম কিংবা যেকোনো মানুষই করতে পারে, তাদেরকে কাজে লাগাতে পারে; কিংবা এনার্জির জগতের কিছু key ব্যবহার করে ব্ল্যাক ম্যাজিক করতে পারে। যাদের উপর এগুলো করা হয়, সাধারণতঃ তাদের 'এনার্জি ব্যালেন্স' দুর্বল থাকে, যেকারণে তারা ভালনারেবল থাকে বেশি।

৪.
আমি খুব কাছে থেকে ঢাকা-শহরে বসেই মানুষকে জ্বীন দ্বারা ডিসটার্বড হতে দেখেছি। এগুলোর মোকাবিলায় ঝাঁড়-ফুঁক, তাবিজ বা ট্র্যাডিশনাল মেথডগুলো খুব বেশি কার্যকরী নয়। আসল ব্যাপার হলো, আপনার শরীরের যদি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা পর্যাপ্ত না থাকে, তাহলে যতক্ষণ কোনো জীবানুর আক্রমণ না হচ্ছে আপনি ভালোই আছেন, কিন্তু জীবানু আক্রমণ করলেই আপনি শেষ। গাদা গাদা ওষুধ আপনার ঐ জীবানুগুলো মেরে ফেলে, কিন্তু আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ১০০% করে দেয় না: নতুন জীবানু এসে আপনাকে আবার অসুস্থ করে দিতে পারে। কোনো ম্যাজিক ওষুধে এক ঘন্টায় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্টিলের মত হয়ে যায় না।

ব্ল্যাক  ম্যাজিক, জ্বীন ইত্যাদির ব্যাপারগুলোও সিমিলার। আপনি যতক্ষণ এগুলো দ্বারা আক্রান্ত না হচ্ছেন, ততক্ষণ আপনি জানেনই না যে আপনি দুর্বল, ভালনারেবল। যদি আক্রান্ত হন, কেবল তখনই বুঝতে পারবেন, কিন্তু করার খুব বেশি কিছু থাকবে না। Luckily, এসবের চর্চাকারী দিনদিন কমে যাচ্ছে, যেকারণে আপনাকে কেউ ব্ল্যাক ম্যাজিক করে ক্ষতি করার চান্স কম। তবে অনেকে জাস্ট তাদের এই 'ক্ষমতা' চর্চা করে 'ক্ষমতার সুখ' পেতে এগুলো অনেকসময় করে থাকে। এগুলো খুবই অন্যায়।

৫.
ব্ল্যাক ম্যাজিকের বিপরীতে সহজ ভাষায় যেটাকে হোয়াইট ম্যাজিক বলা যেতে পারে -- সেটা করা ইসলামে জেনারেলি নিষিদ্ধ। একারণে কেউ ব্ল্যাক ম্যাজিকের শিকার হলেও তাকে হেল্প করার জন্য আমরা পাল্টা ম্যাজিক করতে পারি না (বিশেষ ক্ষেত্র ব্যতীত), বা সাজেস্ট করতে পারি না।

৬.
যেহেতু কোনো জ্বীন নিজে থেকে আপনাকে ডিসটার্ব করার চান্স কম, কিংবা কেউ শত্রুতা করে আপনাকে ব্ল্যাক ম্যাজিক করবে এমন ঘটার চান্স কম, এবং যেহেতু আপনি আশেপাশে এমনটা খুব বেশি ঘটতে দেখেন না, সেহেতু স্বাভাবিকভাবে এই বিষয়টা আপনার কাছে গুরুত্ব পাবে না; এবং এগুলোর বিরুদ্ধে 'প্রতিরোধ-ক্ষমতা' অর্জনের জন্য আপনি খুব একটা চেষ্টাও করবেন না, বা এই বিষয়টাকে গুরুত্বও দেবেন না। তা আমি জানি।

৭.
স্পিরিচুয়াল পারস্পেক্টিভের ধর্মীয় জীবন যাপন করলে আপনার এমনিতেই যে 'ইন্টার্নাল এনার্জি ব্যালান্স' অর্জিত হবে, তা আপনাকে এধরণের আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে। এবং এটা একটা গোটা 'লাইফ-স্টাইল' এর ব্যাপার। "কোনোদিন যদি ব্ল্যাক ম্যাজিকের শিকার হই, তাহলে যেন টিকে থাকতে পারি"  -- শুধুমাত্র এই কারণে কোনো মানুষ তার লাইফ স্টাইলকে বদলে ফেলে না। বরং নিজের লাইফ-স্টাইলকে তারাই বদলে ফেলে, এবং স্পিরিচুয়াল পারস্পেক্টিভে জীবন যাপন করে, যারা একবার হলেও এর সুমধুর স্বাদ পেয়েছে। তখন ন্যাচারালি তাদের ভিতরে সেই দৃঢ়তা অর্জিত হয়ে যায়, এসব ব্ল্যাক ম্যাজিক কাজ করে না (সাধারণতঃ)।

৮.
আধ্যাত্মিক জগত সম্পর্কে আমার জ্ঞান ও অর্জন নেই বললেই চলে: আমি কেবল অন্ধকার জঙ্গলে দূর থেকে টিমটিম করে জ্বলতে থাকা বাতি দেখেছি এবং এতটুকু জানি যে, ঐ বাতির দিকেই হাঁটতে হবে: এটাই একমাত্র পথ, অন্যসব পথের শেষ প্রান্তে আলো নেই। সেইসাথে এরকম আরো দুই-চারজন মানুষের মত দুর্বল পায়ে হাঁটার চেষ্টা করি। আমি কেবল তা-ই বলতে পারব, যা আমি জানি। যা আমি জানি না, তা আমি বলতে পারব না। আমি কেবল ততটুকুই পথ দেখাতে পারব, যতটুকু আমি নিজে পথ হেঁটেছি। যা আমি হাঁটি নাই, তা আমি দেখাতে পারব না।

আমি যে ক'জন মানুষকে ভালোবাসি, তাদেরকে সেই পথটিই দেখাতে চেষ্টা করি। আর সে প্রিয়জনেরাও এটা অপছন্দ করেন না। ফেইসবুকে এসব বিষয়ে যতটুকু লিখি, সেটাও ঐ কিছু মানুষের জন্যই: 'ধর্মকথা লিখে সেলেব্রিটি' হবার জন্য নয়।

৯.
আমার পরিচিত যারা রিসেন্টলি কিংবা আগে ব্ল্যাক ম্যাজিক বা জ্বীন দ্বারা ডিসটার্বড/ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বা হচ্ছেন, এবং তারা এই লেখাটি পড়ছেনও আমি জানি -- আমার কাছ থেকে তাদের কিছু এক্সপেক্টেশান আছে/  ছিল, তাই এই কথাগুলো বলা। পাবলিকলি বলছি একারণে যে, যদি তাতে আর দু-দশজনের কিছু উপকার হয়। এবং আমি বরাবরই লাইফস্টাইল চেইঞ্জ করাকে সাজেস্ট করে এসেছি, এখনও করব। শুধু তারাই নন, আমি আশা করি আমরা সকলেই নিজেদের মানদণ্ডগুলোকে খোদায়ী মানদণ্ডে পরিণত করব, এবং স্পিরিচুয়াল পারস্পেক্টিভ থেকে জীবন যাপনের সুমধুর স্বাদ গ্রহণ করব। সেজন্যে প্রাথমিকভাবে খাদ্য, নিঃশ্বাস, চিন্তা ও ধ্যান -- এই বিষয়গুলিকে সুনিয়ন্ত্রিত করতে হয়, যা নিয়ে আমি মাঝে মাঝে কথা বলার চেষ্টা করেছি।

১০.
এ পথের শেষে আলো আছে। দুনিয়ার হাজারো মানুষকে ভিন্ন পথে চলতে দেখে হতাশ হবেন না যেন, কিংবা এই পথকে ভুল ভাববেন না যেন।
এ পথের শেষে আলো আছে। আপনার হৃদয়ও তা জানে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিয়া-সুন্নি বিরোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উভয় পক্ষের জবাব

শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও দ্বন্দ বহু পুরনো বিষয়। এই দ্বন্দ নিরসনে ইতিহাসে বহু দ্বীনি ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। বিপ্লবের পরপর ডা. জাকির নায়েকের ওস্তাদ আহমদ দীদাত ইরানের যান এবং সেখান থেকে ফিরে এসে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা আমি এক সপ্তাহ আগে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলাম । যা-ই হোক, এই দ্বন্দ নিশ্চিতভাবেই মুসলমানদের জন্য একটি নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক। এমনকি তা অনেককে চরমপন্থার দিকেও নিয়ে গিয়েছে। আগে যেই শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ আলেমসমাজ ও কতিপয় জানাশোনা ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, বর্তমান সহজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা প্রায় সকল লেভেলে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, একদল আরেক দলকে এমন অনেক অভিযোগ করছে, যেগুলো হয়তো শিয়া-সুন্নি উভয় আলেমই অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেবেন। তবে তথ্যের অবাধ প্রবাহের একটি সুবিধা হলো, এতে মিথ্যার প্রচার যেমন অতি সহজ, তেমনি একইভাবে মানুষের দ্বারে সত্যকে পৌঁছে দেওয়াও খুব সহজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিয়া ও সুন্নি উভয়কেই মুসলিম ভাই বলে গণ্য করি। কিন্তু তাদের বৃহত্তর ঐক্যে পৌঁছানোর ব্যর্থতা, পরস্পর শত্রুতা ও প্রেজ

ইমাম খোমেনীর জীবন : এক ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাস

রুহুল্লাহর গল্প ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আল খোমেনী। বিশ্ব ইমাম খোমেনীকে প্রথমবারের মত চিনেছে ১৯৭৮ সালের শেষাশেষি , যখন ইরানের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণে তিনি ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন। প্যারিসের অদূরে বসে ইরানের শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভীর বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ঘোষিত যুদ্ধ এবং আমেরিকা বিরোধী কঠোর বক্তব্য এক অভূতপূর্ব মিডিয়া কাভারেজ এনে দিলো , এবং ইমামকে বিংশ শতকের অন্যতম বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে পরিচিত করলো। পত্র - পত্রিকা আর নিউজ বুলেটিনে তাঁর ছবি ভরে উঠলো। এই ছবি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে , বিশেষতঃ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিতান্তই অপরিচিত ছিলো। সাদা দাড়ি এবং কালো পাগড়িধারী এই মানুষটিকে দেখে মনে হতো যেনো ইতিহাসের পাতা থেকে সময় অতিক্রম করে বর্তমানে চলে এসেছেন। তাঁর সমস্তকিছুই ছিলো নতুন আর অপরিচিত। এমনকি তাঁর নামটিও : রুহুল্লাহ। আর দুনিয়ার অসংখ্য পলিটিশিয়ান ও সাংবাদিকদের মনে যে প্রশ্নটি নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো , তা ছিলো : কী ধরণের বিপ্লবী মানুষ এই খোমেনী ?

শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগ এবং আহমেদ দিদাতের ইরান অভিজ্ঞতা

(লেখাটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। ) আহমেদ দিদাত ( ১৯১৮ - ২০০৫ ) এর নাম হয়তো অনেকের অজানা থাকবে। তবে ডা . জাকির নায়েকের নাম নিশ্চয়ই অজানা নয়। ডা . জাকির নায়েকের বর্তমান কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হলেন আহমেদ দিদাত। আহমেদ দিদাত , যিনি কিনা ডা . জাকির নায়েকের নাম দিয়েছিলেন " দিদাত প্লাস " – পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দেয়া ছিলো তাঁর কাজ। যাহোক , ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইসলামী ইরানের জন্ম হয়। বিপ্লব - পরবর্তী ইরানে ভিজিট করেন আহমেদ দিদাত , সাক্ষাৎ করেন ইমাম খোমেইনীর সাথে এবং নিজদেশে ফিরে এসে ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেন। আহমেদ দিদাতের নানা বিষয়ে বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা বাংলা ভাষায় কিছু না কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু শিয়া - সুন্নি ঐক্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চমৎকার বক্তব্যের অনুবাদ কোথাও না পেয়ে সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই অনুবাদ করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূল অডিও কোথাও কোথাও শুনতে বা বুঝতে অসুবিধা